#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা – জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩০.
~
নেহা কাচুমাচু করতে করতে বললো,
‘ পরে বলি?’
মিথি কর্কশ গলায় বললো,
‘ না পরে কেন এখনি বল।’
‘ না আসলে, ও বলেছে এখনি যেনো আমি কাউকে ওর ব্যাপারে না বলি। ও নাকি কিছুদিন পর নিজ থেকে এসেই সবার সাথে কথা বলবে। তার আগে ওর পরিচয় কাউকে দিতে বারণ করেছে।’
মিথি চেঁচিয়ে উঠলো। নেহা চোখ বুজে ফেলল। মিথি রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ কোথাকার কোন প্রধানমন্ত্রী উনি, যে উনার পরিচয় জানতে আমাদের এত অপেক্ষা করতে হবে। কে এই ছেলে বল? কোথায় থাকে? পড়াশোনা করে নাকি চাকরি? মা বাবা কি করেন? ছেলে দেখতে কেমন? খুব সুন্দর নাকি মোটামুটি?
মিথির এত এত প্রশ্নের তোড়ে নেহা অনেক বিরক্ত হলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। মিথির এই আচরণ স্বাভাবিক। আজ যদি সেও মিথির জায়গায় থাকতো তবে সেও এমনি করতো।
নেহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ এত হাইপার হচ্ছিস কেন? বলেছি তো সব বলবো তোকে। আমাকে কিছুদিন সময় দে প্লীজ!’
কথাটা একেবারেই পছন্দ হলো না মিথির। একে তো এই মেয়ে এতদিন তার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে গিয়েছে এখন আবার বলছে তার আরো সময় লাগবে। সে এখনি তার প্রেমিক পুরুষের পরিচয় তাকে দিতে পারবে না। কত বড়ো মাপের বেয়াদব মেয়ে। এই মেয়েকে তো এক্ষুনি ফাঁসিতে চড়ানোর দরকার। মিথির রাগ কমলো না। সে খানিক চুপ থেকে বললো,
‘ তাহলে তুই কিছু বলবি না তাইতো?’
নেহার যদিও কষ্ট হচ্ছিল তাও সে বললো,
‘ না রে দোস্ত।’
মিথি আর কথা বাড়ালো না। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে ফট করে কলটা কেটে দিলো। মুখ ভার হলো তার। আজ পর্যন্ত সে একটা সুতোও নেহার কাছ থেকে লুকাইনি। অথচ নেহা, কি সহজেই সব কিছু তার থেকে লুকিয়ে গেছে। ইনফ্যাক্ট এখনও তাকে কিছু বলছে না। অদ্ভুত!
বন্ধুত্বে এসে হানা দিলো অভিমানের বীজ। মিথি কষ্ট পেয়েছে খুব। কান্না পেয়ে যাচ্ছিল। কি করে নেহা তাকে এত কিছু না বলে থাকলো? কি করে? মিথি ফোনটা সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেয় যেনো নেহা তাকে আর কল দিয়ে বিরক্ত করতে না পারে। ও থাক ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে। মিথিও আর কিছু বলবে না। আর কোনো কথা বলবে না। কারো সাথে কথা বলবে না। মিথি রুমে গিয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো। একপর্যায়ে ঘুমিয়েও গেলো সে।
‘জল ছবি, রঙমশাল, স্কুল ছুটির হজমিরা
রূপকথার পায়রাদের গল্প বল
বন্ধু চল,
রামধনু, ঝালমুড়ি, হাফ টিকিট, আব্বুলিশ
বিটনুন আর চুরমুরের গল্প বল
বন্ধু চল,
বন্ধু চল রোদ্দুরে,
মনকেমন মাঠজুড়ে
খেলবো আজ ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে
ফুটকড়াই, এন্টেনা, হাতচিঠি, হাফ পেডেল
আয়না আর জলপরীর গল্প বল
বন্ধু চল,
সাপ লুডো, চিত্রহার, লোড – শেডিং, শুকতারা
পাঁচসিকের দুঃখদের গল্প বল
বন্ধু চল,
,,,
…..
ঘুম ভেঙে গেলো মিথির। চোখের ভারী পাতা গুলো মেলে সামনের দিকে তাকালো। অবাক হলো। চমকালো। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে রইল। তার সামনে নেহা বসা। হাতে গিটার, তার মিষ্টি সুর। কণ্ঠে তাদের প্রিয় গান। এ যেনো মিথির এক কল্পনার জগৎ। আসলেই বন্ধুত্ব সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। নেহা গানটা মাঝপথে থামিয়ে দিল। তারপর সে উঠে মিথির পাশে বসলো। হেসে বললো,
‘ চল একসাথে গাই?’
মিথি হাসলো। সুর তুললো দুই বন্ধু,
বন্ধু চল, বলটা দে
রাখবো হাত তোর কাঁধে
গল্পেরা ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে,,,
মিথি নেহাকে জড়িয়ে ধরলো। নেহাও জড়িয়ে ধরলো তাকে। অনেকক্ষণ দুইজন ঐভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। মিথি ছাড়লো। অভিমানটা আবারও মাথা চেরে উঠলো তার। সে নাক ফুলিয়ে বললো,
‘ কেন এসছিস এখানে?’
নেহা ঠোঁট উল্টে বললো,
‘ এখনও রেগে আছিস বান্ধবী? আমি সরি।’
মিথি মুখ ঘুরিয়ে নিল। বললো,
‘ থাক সরি বলতে হবে না। আমি রেগে থাকি বা না থাকি তাতে কি কারো কিছু যায় আসে নাকি?’
নেহা মিথির গাল দুটো টেনে আহ্লাদীর সুরে বললো,
‘ আহারে আমার বাবুটা রাগ করেছে? আচ্ছা বাবু এই দেখো কানে ধরছি। আর এমন করবো না। আর জীবনেও তোমার কাছ থেকে কিচ্ছু লুকাবো না। প্রমিজ।’
মিথি ঠোঁট উল্টে বসলো। নাক টেনে বললো,
‘ তাহলে বল ছেলেটা কে?’
নেহা মুচকি হেসে বলে,
‘ কাল তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। এখনি কিছু না বলি?’
মিথি বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘ চ ‘ শব্দের মত আওয়াজ করে বললো,
‘ এখন আবার কালকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আজ বললে কি হয়?’
‘ প্লীজজজ, আজকের রাতটায় তো!’
মিথি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে, মেনে নিলাম তোর কথা। শুধুমাত্র এত কষ্ট করে আমাদের বাসায় এসে এই মিষ্টি গানটা উপহার দিয়েছিস বলে তোকে মাফ করে দিয়েছি। নয়তো জীবনেও মাফ পেতি না। বাই দ্যা ওয়ে, কার সাথে এলি বলতো?’
‘ ভাইয়া দিয়ে গিয়েছে। বলেছিলাম বাসায় আসার জন্য। কিন্তু অফিস করে এসে অনেক টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিল তাই আমাকে নামিয়ে দিয়েই আবার বাসায় চলে গিয়েছে।’
‘ তো উনি জানতে চায় নি হঠাৎ এই সময় তুই এখানে কেন আসতে চেয়েছিস?’
‘ জিগ্যেস করেছিল। উল্টাপাল্টা বলে ম্যানেজ করে নিয়েছি।’
‘ ভালোই হয়েছে। আজ তাহলে রাতে আমার সাথে থাকবি। তারপর কাল আমাকে তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি। বুঝেছিস?’
নেহা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ জ্বি ম্যাডাম, সব বুঝেছি।’
.
.
রাতের খাবার শেষে সবাই যার যার রুমে শুয়ে পড়লো। মিথি আর নেহাও শুয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘুম আসছে না কারো চোখেই। দুইজনেই চুপচাপ মাথার উপর ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা কিছু একটা ভাবছে। সে ঘুরে মিথির দিকে তাকালো। ডিম লাইটের নীল আলোতে মিথিকেও নীল নীল লাগছে। নেহা মাথার নিচে একহাত রেখে মাথাটা কিছুটা উচুঁ করে মিথির দিকে ঘুরে শুলো। তারপর উদ্বেগ নিয়ে বললো,
‘ আচ্ছা মিথি, আমাকে একটা কথা বলবি?’
মিথি তার দিকে ঘুরে তাকালো। প্রশ্ন করলো,
‘ কি কথা?’
নেহা বললো,
‘ তুই একবার একটা ছেলেকে দেখে সিফাত সিফাত বলে পাগল হয়ে উঠেছিলি। পরে আঙ্কেল অনেক কষ্ট করে তোকে থামিয়ে ছিলেন। আচ্ছা কে ঐ সিফাত? তোর কি হয় বলতো?’
মিথির মুখটা বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল। ছোট্ট একটা ঢোক গিলে সে বললো,
‘ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।’
নেহা অনেকটা অবাক হলো। বললো,
‘ তুই তো ওর ব্যাপারে আমাকে আগে কিছু বলিসনি?’
‘ ইচ্ছে হয়নি। ও আমার কাছে নেই। কোথায় আছে তাও জানি না। আমার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগও নেই। তবে জানিস তো ওকে আমি এখনো অনেক মিস করি। ভীষণ মিস করি।’
কথা গুলো বলে থামে মিথি। নেহার দিকে আবারও ঘুরে তাকায়। বলে,
‘ তুই আসার আগে আমার জীবনে ঐ সব ছিল। বড্ড ভালোবাসতো আমাকে জানিস। সবসময় আগলে রাখতে। কিন্তু হঠাৎ একদিন সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ও আলদা হয়ে যায় আমার থেকে। আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়। যেই দূরত্বটা এতটাই বিশাল ছিল যে আমি এখনো সেটা গুজাতে পারিনি।’
নেহা ক্ষীণ সুরে বলে,
‘ কি হয়েছিল? কেনো সিফাত তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল?’
মিথি চোখ বুজে নিঃশ্বাস নেয়। পুরনো স্মৃতিগুলো তাজা হয়ে উঠে মস্তিষ্কের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। চোখ মেলে তাকিয়ে মিথি বলতে আরম্ভ করে। তাদের বন্ধুত্ব শুরুর গল্প, তাদের আনন্দের মুহূর্তগুলো, তাদের সুখ দুঃখ গুলো, সব শেষে তাদের আলাদা হওয়া সব বলে মিথি। দম ফেলে সে। গলাটা ধরে এসেছে তার। বুকটা পুরনো ব্যাথায় আবারও চিন চিন করে উঠে। নেহা জড়িয়ে ধরে মিথিকে। সরব গলায় বলে,
‘ আমি সিফাতকে খুঁজে এনে দেবো। তুই একদম মন খারাপ করিস না। সিফাত ঠিক ফিরে আসবে। আর ঠিক তোকে ক্ষমা করে দিবে।’
মিথি হাসে। নেহার মাথায় হাত রেখে বলে,
‘ তোর কথাই যেনো সত্যি হয় নেহু।’
চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বটা হয়তো একটু বেশিই অগোছালো। আসলে হয়েছে কি, আমি যেই ফোনে গল্প লিখি সেই ফোনটা তে কি যেনো সমস্যা হয়েছে, কোনোমতেই অন হচ্ছে না। এইদিকে ঐ ফোন ছাড়া আমি টাইপ ও করতে পারি না। ভেবেছিলাম আজকে ঠিক হয়ে যাবে তাই কালকে গল্প দেয়নি। কিন্তু আফসোস, হলো না ঠিক। এখন বাধ্য হয়ে খুব কষ্ট করে আমাকে আমার নতুন ফোনে টাইপিং করতে হয়েছে। আসলে এক ফোনে টাইপিং করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাওয়ার পর আবার নতুন ফোনে টাইপিং করতে কষ্ট হয়ে যায়। সব ফোনের কিবোর্ড তো আর এক না। যায় হোক দোয়া করবেন আমার আগের ফোনটা যেনো ঠিক হয়ে যায়। আমি ঐ ফোনটা ছাড়া টাইপিং করে শান্তি পাই না🥺😭)