তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব-৩১

0
1048

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফরিয়া প্রত্যাশা
৩১.
~
সকালের নাস্তা সবেই শেষ হলো। তারপর থেকেই মিথি নেহার মাথা খেয়ে ফেলছে। তাকে এক্ষুণি সেই মানুষটার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য। অপেক্ষার প্রহর যেন আর কাটছে না। বেস্ট ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড বলে কথা, একটু বেশি এক্সাইটেড তো হওয়ারই কথা। নেহার এবার মাথা ধরে গেছে। মিথিকে ধমক দিয়ে সে বললো,

‘উফফ, আমি ম্যাসেজ দিয়েছি তো। ও বললো এখন নাকি ও একটু বিজি আছে। বিকেলে দেখা করবে।’

মিথি নাক মুখ কুঁচকে ফেলল। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

‘কি এমন ব্যস্ততা উনার? কি কাজ করেন উনি? উনাকে দেখতে গেলে তো মনে হচ্ছে আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখতে হবে। আর বাই দ্যা ওয়ে উনার নাম কি? নাম টা তো অন্তত বলতে পারিস?’

নেহা মিথির দিকে ঘুরে বসলো। বললো,

‘হ্যাঁ পারি। ওর নাম সাদ। এখন এই নাম নিয়েই তুই আপাতত খুশি থাক। বিকেলে না হয় এই নামের মানুষটার সাথেও পরিচয় হয়ে নিস।’

মিথি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’

ঘড়ির কাটা এগারোটা ছুঁয়েছে হয়তো। মাহি তার বাবার সাথে কোথাও একটা গিয়েছে। আমিরা বেগম দুপুরের রান্না করাতে ব্যস্ত। মিথি আর নেহা টিভি দেখছে। তখনই নেহার ফোনে নৈরিথ কল দেয়।

‘হ্যালো, ভাই!’

‘হ্যাঁ নেহা, তুই আসবি কখন? নিতে আসবো তোকে?’

‘না ভাই। এখন আসিস না। আমি সন্ধ্যার দিকে আসবো। আর আসার আগে তোকে কল দিব, চিন্তা করিস না।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আর ম্যাডাম কোথায়? উনার তো একটু পর কোচিং মনে আছে তো?’

নেহা কোনো জবাব না দিয়ে ফোনটা মিথির হাতে ধরিয়ে দিল। টিভি দেখায় ব্যাঘাত ঘটল তাতে। মিথি বিরক্ত হলো। ব্রু কুঁচকে নেহাকে বললো,

‘কে?’

‘আরে ভাই। কথা বল।’

মিথি ফোনটা কানে ধরলো। সালাম দিল। নৈরিথ সালামের জবাব দিয়ে বললো,

‘কি করছো?’

‘টিভি দেখছিলাম।’

নৈরিথ তপ্ত গলায় বললো,

‘ভালো তো, তুমি টিভি দেখো। আর তোমার কোচিং টা না হয় আমি করে আসি। কি বলো, ভালো হবে না?’

মিথি চট করেই মনে পড়ল তার কোচিং এর কথা। কিছুক্ষণের জন্য তো ভুলেই গিয়েছিল সে। মিথি শুকনো মুখে বললো,

‘আসলে মনে ছিল না। রেডি হচ্ছি। রাখি তাহলে?’

নৈরিথ বাঁধা দিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘একাই যাবে?’

‘হ্যাঁ, এইটুকু পথ একাই যেতে পারবো।’

মিথির কথা শুনে নৈরিথ খানিক চুপ থেকে বললো,

‘আচ্ছা শোনো, আজ আমি দিয়ে আসবো। পরদিন থেকে না হয় তুমি একাই যেও।’

মিথির মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। উচ্ছল কন্ঠে বললো,

‘আপনি এখন আসবেন?’

‘হুম আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

কলটা কেটে দিয়ে মিথি খুশিতে নেহাকে জড়িয়ে ধরে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,

‘উফফ নেহু, তোর ভাই আমাকে নিয়ে কত ভাবে। আহা, কত কেয়ার তার!’

নেহা মুচকি হাসে। তারপর বলে,

‘তুই কোচিং কবে ভর্তি হলি? বলিস নি তো আমাকে কিছু?’

‘আরে আগেই বাবা ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে ক্লাস করতে পারেনি। কাল নৈরিথও সেখানে গিয়ে কথা বলে এসেছে। আজ থেকে যাবো। তোর ভাই বলেছে তৈরি হতে উনি নাকি আমাকে দিয়ে আসবেন।’

শেষের কথাটা বলার সময় মিথি লাজুক লাজুক হাসি দিল। নেহা হেসে তার গাল টেনে বললো,

‘আহা রে লজ্জাবতী লতিকা আমার।’
.
.
মিথি বাইরে বেরিয়ে দেখল নৈরিথ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। মিথি ধীর পায়ে তার কাছে এসে দাঁড়াল। নৈরিথ টের পায় কারো উপস্থিতি। চোখ বুজে একটা নিশ্বাস ফেলে মিথির দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই কপাল কুঁচকে ফেলে সে। গম্ভীর সুরে বলে,

‘ঠোঁটের লিপস্টিক টা মুছো।’

মিথি অবাক হয়। তাই ইতস্তত কন্ঠে বলে,

‘কেন?’

নৈরিথ থমথমে গলায় বললো,

‘লিপস্টিক দেয়ার কি আছে? তুমি তো কোচিং এ পড়তে যাচ্ছো তাই না। তো সেখানে এইসব লাগিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি। তুমি লিপস্টিক টা মুছে গাড়িতে এসো।’

এই বলে নৈরিথ গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসলো। মিথি দাঁড়িয়ে রইল। নৈরিথের এমন ব্যবহার তার মোটেও পছন্দ হয়নি। লিপস্টিকও না সামান্য লিপজেল লাগিয়েছিল যেন ঠোঁটগুলো হালকা পিংকিস পিংকিস লাগে। কিন্তু তাতেও এই ভদ্র লোকের এত সমস্যা। উফফ, অসহ্য!’

মিথি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘষে ঘষে সমস্ত লিপজেল ঠোঁট থেকে মুছে ফেলল। তারপর পেছনে নৈরিথর সাথে গিয়ে বসলো। অফিস থেকে আজ ড্রাইভার নিয়ে এসেছিল নৈরিথ, তাই আজ আর তাকে ড্রাইভ করতে হবে না।

মিথি গাল দুটো ফুলিয়ে বসে আছে। নৈরিথ জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশে যে একটা জল জ্যান্ত মানুষ এইভাবে মুখ কালো করে বসে আছে সেটা নিয়ে বিন্দু মাত্র ভাবনা নেই তার। মিথির তো এবার আরও রাগ হচ্ছে। বেটা রোবটের মতো এইভাবে বসে আছে কেন?

গাড়ি স্টার্ট দেয়। অনেকক্ষণ মিথি চুপ ছিল। কিন্তু এবার আর পারছে না। সে নৈরিথের দিকে ফিরল। দেখল সে ফোন ঘাটছে। মিথি ব্রু কুঁচকালো। তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ফোনে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে সে। দুই ব্রু’র মাঝখানের জায়াগাটায় পড়ে থাকা ভাজটা বলে দিচ্ছে কাজটা কতটা জরুরি তার। মিথি এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বললো,

‘কি সমস্যা আপনার?’

নৈরিথ তাকাল মিথির দিকে। কিছু না বুঝে বললো,

‘মানে?’

মিথি শাসিয়ে উঠে বলে,

‘ফোনে এত কি হ্যাঁ? বউ তো সামনে বসা। তাহলে বউ রেখে ফোনে কি?’

নৈরিথ চকিত হলো মিথির কথা শোনে। লজ্জাও পেল খানিক, সামনে ড্রাইভার আছে বলে। অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো,

‘মানে?’

মিথি কিছুটা এগিয়ে এলো নৈরিথের দিকে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘মানে বুঝেন না, বউয়ের সাথে মানুষ কি করে?’

নৈরিথ তির্যক গলায় বললো,

‘এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার? কি বলছো এসব? মাথায় কি গন্ডগোল হয়েছে নাকি?’

‘না, গোন্ডগোল কেন হতে যাবে। আপনি জানেন না তাই আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম। ব্যস এইটুকুই তো।’

‘হয়েছে চুপ করো। তোমাকে আর আগ বাড়িয়ে কিছু জানাতে হবে না। আর শোনো কোচিং এ গিয়েও একদম কম কথা বলবে। আজগুবি প্রশ্ন করে স্যারদের বিরক্ত করবে না। বুঝেছো?’

মিথি কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘আমি আজগুবি প্রশ্ন করি?’

‘জ্বি করেন। বই এর টপিক বাদে পৃথিবীর বাকি সবকিছু নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে। যেটা এখন আর ভুলেও করবেন না। আমার কাছে যেন কোনো কমপ্লেইন না আসে। মনে থাকে যেন।’

মিথি বিরক্ত হয়ে মাথা নাড়াল। গাড়ি গিয়ে থামল কোচিং সেন্টারের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই পার্কিং লটে আজ আবারও কালকের সেই বাইকটাকে দেখতে পেল মিথি। মিথি তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলল, এই লোকটাকে আজ সে ছাড়ছে না। আর এর মুখটাও তাকে দেখতে হবে। কেন যেন তার সন্দেহ হচ্ছে। যদিও সেটা একেবারেই কিঞ্চিত। তবে এই কিঞ্চিত সন্দেহটাকেই এখন তাকে দূর করতে হবে। নয়তো এই সন্দেহ তাকে সবসময় তাড়া করে বেড়াবে।

চলবে..

(ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে লিখেছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here