তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব-৩২

0
1017

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩২.
~
ক্লাস শেষে বের হতেই মিথির সেই ছেলেটির কথা মনে পড়ল। ছেলেটি তার ক্লাসের না। অন্য ক্লাসের হবে হয়তো। আবার নাও হতে পারে। তবে সে যে এই মুহুর্তে এই কোচিং সেন্টারেই আছে সেটা মিথি জানে। কারণ, বারান্দা দিয়ে সে ঐ ছেলের বাইকটা পুরোটা সময় খেয়াল করেছে। কিন্ত এখন সে তাকে খুঁজবে কি করে? নামটাও তো জানে না। মিথি ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। অফিস রুমের বাইরেই নৈরিথ কে দেখতে পায় সে, কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। মিথির অধর প্রসারিত হয়। মনে আনন্দ জাগে। নৈরিথ তো তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ভালোবাসাময় অপেক্ষা’টা ভীষণ সুন্দর। এই অপেক্ষার মাঝে কোনো ক্লান্তি থাকে না। যতই সময় যাক না কেন মনে হয় ক্ষণে ক্ষণে যেন অনুভূতিগুলো বেড়েই চলছে। এই অনুভূতি, এই প্রেম, এই অপেক্ষা কখনো পুরোনো হয় না।

মিথি এগিয়ে গেল নৈরিথের দিকে। পাশে এসে দাঁড়াল। নৈরিথ তখনও ফোনে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর কল কেটে নৈরিথ পাশে তাকিয়ে মিথিকে দেখে বললো,

‘ক্লাস শেষ?’

মিথি হেসে জবাবে বললো,

‘জ্বি।’

‘আচ্ছা, চল তবে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছি।’

মিথি বললো,

‘ঠিক আছে, চলুন।’

নৈরিথ বের হয়ে গাড়ির কাছে গেল। মিথিও তার পেছন পেছন গেল। যাওয়ার সময় একবার এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে গেল সেই ছেলেটির দেখা পায় কিনা।
গাড়িতে উঠল মিথি আর নৈরিথ। নৈরিথ মিথির পাশের সিটটাতে আরাম করে বসে মিথিকে বললো,

‘কেমন গিয়েছে প্রথম ক্লাস?’

মিথি নৈরিথের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। বললো,

‘ভালো। এখানকার স্যারগুলো খুব ভালো, খুব ফ্রেন্ডলি।’

নৈরিথ হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

‘হুম, ভালো টা যেন শুধু ভালো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে এর উপরে যেন না যায়।’

মিথি দাঁত কেলিয়ে হাসল নৈরিথের কথা শুনে। বললো,

‘কেন? শুধু ভালো না থেকে যদি আরেকটু উপরে যায় তাহলে কি হবে?’

নৈরিথ বাঁকা চোখে তাকাল। নাকের পাটা ফুলিয়ে বললো,

‘তখন শুধু কি না, কি কি হবে শুধুই সেটাই দেখবে। আমি যা বলেছি সেটা যেন মাথায় থাকে। উল্টা পাল্টা কোনো কাজ করলে গাল ফাটাব।’

মিথি নাক মুখ ফুলিয়ে নিল। যেন এক গাদা হাইড্রোজেন গ্যাস কেউ তার মুখে পুরে দিয়েছে। সে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘মারা ছাড়া আপনি আর কিছু পারেন না, না? আগে স্টুডেন্ট ছিলাম বলে মারলেও কিছু বলতাম না। এখন কিন্তু আমি আপনার বউ, মারামারি করতে আসলে একদম নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে দিব। তখন দেখবেন কেমন লাগে।’

মিথির কথায় সশব্দে হেসে উঠে নৈরিথ। মিথি তাকাল তার দিকে। চোখ বুজে নিশ্বাস নিয়ে বললো,

‘হাসবেন না একদম।’

নৈরিথ তাও হাসতে হাসতে বললো,

‘হাসির কথা বললে কি আর না হেসে থাকা যায়?’

কথাটা বলে নৈরিথ তার হাসি জারি রাখল। মিথি রাগ করবে কি সে তো নৈরিথের হাসিতেই ফিদা। মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে। একটা মানুষ ঠিক কতবার কতভাবে আরেকটা মানুষের প্রেমে পড়তে পারে? তার মনে হয় সেই একজন মানুষ যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক বার অন্য একজন মানুষের প্রেমে পড়েছে। এবং প্রতিনিয়ত পড়েই যাচ্ছে। কি অদ্ভুত!

গাড়ি থামল গিয়ে মিথির বাসার সামনে। মিথি গাড়ি থেকে নামতে নিলেই নৈরিথ তার বাম হাতটা চেপে ধরে। অতঃপর তার কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বলে,

‘শুনো, তোমার লাল বর্ণ অরুন রাগে আমি বরাবরই মত্ত। এত রাগলে হয় নাকি? তোমার অনুরাগে যে করুণ ভাবে সিক্ত হয়ে যাচ্ছি।’

মিথি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। নৈরিথ মুচকি হেসে তার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,

‘কি হলো? কি দেখছো?’

মিথি সরু চোখে কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার এই মাথামোটা মাথাতে এসব ঢুকে না। বিরক্ত হয়ে মিথি গাড়ি থেকে নেমে গেল। নৈরিথ তাকিয়ে রইল সেই দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর সে ড্রাইভার কে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে। যখন তার দৃষ্টির পিপাসা মিটল।

দরজায় কলিং বেল বাজতেই নেহা এসে দরজা খুললো। মিথি ভেতরে ঢুকে কাঁধ থেকে ব্যাগটা সরিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। নেহাও তার সাথে বসলো। বললো,

‘কি রে কেমন লাগল ক্লাস করে?’

‘ভালো।’

‘যাক ভালো হলেই ভালো। তোর বাবার মুখে শুনেছি কোচিং সেন্টারটা নাকি খুব ভালো। এখন তুই শুধু একটু মনোযোগ দিয়ে পড়, যেন একটা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে পারি।’

আমিরা বেগমের উদ্রেক মাখা কন্ঠস্বর শুনতে পেল মিথি। মায়ের দিকে তাকিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলো। বললো,

‘মা, এখনও রেজাল্টই দেয়নি। আগে রেজাল্ট দিক তারপর ভাববো এসব। এখন ভালো লাগছে না, আমি ফ্রেশ হতে যাই।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। নেহাও না খেয়ে বসে আছে তুই এলে একসাথে খাবে বলে।’

মিথি রাগি চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তুই এখনও খাস নি কেন গরু? যা টেবিলে গিয়ে বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
.
.
দুপুর শেষে বিকলের দেখা মিলল। রোদ এখন কিছুটা কম। বাইরে হালকা ঠান্ডা বাতাস। মিথি আর নেহা রেডি হচ্ছে, নেহার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য। মিথি তো দারুণ এক্সাইটেড। নেহাও তাই। এটা তাদেরও প্রথম দেখা। ঐ ফেসবুক প্রেম আরকি। দেখাদেখি ছাড়াই দুই যুবক যুবতী তাদের প্রেমে মত্ত। মিথি নেহাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। শেষে কানের লতিতে একটা কালো টিকা লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘আমার সুন্দরীটার যেন কারোর নজর না লাগে।’

নেহা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে। মনে মনে সেই কাঙ্খিত মানূষটাকে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা করে ফেলে। ছোট্ট একটা গিফটও কিনে নেয় তার জন্য।

মাকে এটা ওটা বুঝিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়ল। সোজা গেল সেই নির্দিষ্ট রেস্ট্ররেন্টে, যেখানে সেই মানুষটিও আছে। রেস্ট্ররেন্ট ঢুকার আগে মিথি বললো,

‘এই নেহু ভাইয়ার কি পছন্দ বলতো? আমি তো ভাইয়ার জন্য কিছুই নেই নি। কিছু একটা বলতো কি নেয়া যায়?’

নেহা না করলেও মিথি শুনলো না সে কিছু না কিছু নিবেই। মিথির জোরাজুরিতে নেহা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,

‘আচ্ছা বাবা বলছি, এতই যখন নিতে ইচ্ছে করছে তবে ঐ ফুলের দোকান থেকে দুইটা রজনীগন্ধার স্টিক নিয়ে আয়। ওর রজনীগন্ধা খুব প্রিয়।’

মিথি শুকনো মুখে হাসল। বললো,

‘জানিস তো সিফাতেরও না রজনীগন্ধা খুব প্রিয় ছিল।’
.
.
মিথি ফুলগুলো কিনে আনল। তারপর দুজন রেস্ট্ররেন্টের ভেতর প্রবেশ করলো। নেহা ভীষণ নার্ভাস। মিথি তাকে এটা ওটা বলে আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্ত প্রেমের ভয় সহজে দূর হয় না। সেক্ষেতে নেহারটাও তাই।

ওয়েল ডেকোরেট একটা রেস্ট্ররেন্ট। বেশি দিন হয়নি হয়তো এটা যে তৈরি হয়েছে। মিথি এদিক ওদিক দেখতে দেখতে রেস্ট্ররেন্টের ভেতর প্রবেশ করলো। নেহা আশে পাশে তাকিয়ে তার মানুষটিকে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই হাত তুলে সে মুচকি হেসে ডেকে উঠে,

‘হাই সাদ!’

মিথি তার কন্ঠস্বরের অনুসরণ করে সেদিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখল,

..
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here