#ধূসর_অনুভূতি
পর্ব:০৩
মা আমার ঘরে এসে দরজা আটকালো।আমি বললাম,দরজা আটকাচ্ছো কেন খামোখা?মা রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, লজ্জা করে না তোর? আবার বড় গলায় কথা বলিস…ছিঃ ছিঃ।
আমি বললাম,উফ মা।বলছি তো উনাকে ফুলদানি তে রাখার জন্য আমি ফুল দিয়েছি।
মা ব্যাঙ্গ করে বললেন,ও আচ্ছা তাই নাকি?ঐ ছেলে কি পঙ্গু?হাত নাই?তুই ছিঁড়ে দিতে হবে ক্যান?এক প্লেইট খাবার দিয়ে আসতে কয় মিনিট লাগে? বড়জোর একমিনিট। কিন্তু,২০ মিনিট ধরে ঐ ছেলের সাথে কি করছিলি?জবাব দে….আমি কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি।আজ তোর বাবা আসুক।এই ছেলেকে আমি কালকের মধ্যেই বিদায় করবো।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।মাকে বোঝানো অসম্ভব।
নিজের ঘরে চলে এলাম।মা চেঁচাতে লাগলেন।”আল্লাহ রে আমি কই যাবো?ছেলে একটা বউ পাগল,এক মেয়ে তার ছিড়া ছাগল। আরেক মেয়ে লাইলি বেগম।
চেঁচামেচি শেষ করে মা কাঁদতে লাগলেন।
আমার খুব খারাপ লাগছিল এটা ভেবে বেচারা ভালো মানুষ ছেলেটাকে এই অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয় যদি সত্যি?
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।রাতে বাবা ফিরে আসায় আমি নিজেই আগে গিয়ে বাবাকে সবকিছু বললাম।বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন, তোর মায়ের সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি।
রাতে অবশ্যি মা নিজেই খাবার নিয়ে গেলেন।আমাকে আর পাঠালেন না।
আমি ঝিনুক আপুকে বললাম, আপু জানো মেহেদী ভাইয়া রুমটা এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে। তুমি দেখলে অবাক হয়ে যাবা।
আপু বললো, আচ্ছা কালকে দেখবো।
পরের দিন সকালে আমি ,আপু আর দোতলার আসমত আংকেলের মেয়ে পরী আপু মিলে ছাদে গেলাম।পরী আপুর সাথে ঝিনুক আপুর অনেক ভাব।উনারা দুইজন মিলে প্ল্যান করছে মেহেদী ভাইয়াকে কিভাবে জব্দ করা যায়।আমি অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কি দরকার বেচারার পিছনে লাগার।সহজ-সরল একটা মানুষ। আমার কথা শুনে ঝিনুক আপু ঠোঁট উল্টিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলেছে,তোর কি প্রাণের স্বামী লাগে এই হাবলা?তোর এতো দরদ কেন?
যাই হোক, উনাদের সাথে আমিও ছাদে এসেছি।ছাদে এসে আরেক দফায় অবাক হলাম। আমাদের ছাদে অনেক গুলো নতুন ফুলের টব। নিশ্চিত এইগুলো মেহেদী ভাইয়াই এনেছেন।
আমরা তিনজন উনার রুমে প্রবেশ করলাম। ঝিনুক আপু বললো, আপনার সাথে গল্প করতে এসেছি।
মেহেদী ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলো।বললো,আ.. আমার সাথে কিসের আ.. আবার গল্প? আপনারা বাইরে যান রুম থেকে।
ঝিনুক আপু বললো, এইভাবে বের করে দিলেন আমাকে?
এটা বলে কান্না শুরু করে দিলো মিথ্যামিথ্যি।
ঝিনুক আপুর এই এক বিচিত্র স্বভাব।কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি নিয়ে আসতে পারে।পরী আপুও খুব সুন্দর শান্তনা দেওয়ার একটিং করছে।
মেহেদী ভাই প্রচন্ড ভড়কে গেছে।সে কাতরস্বরে বলছে,প্লীজ আপনি কাঁদবেন না।আসলে আন্টিই আমাকে বারণ করেছে আপনাদের সাথে কথা বলতে।
আমি খুবই স্যরি।
ঝিনুক আপু বললো, শুধু স্যরি বললে কাজ হবে না।আমি বাবার কাছে বিচার দিবো আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন।পরী আর যুথি সাক্ষী দিবে।
মেহেদী ভাইয়া আরো ভয় পেয়ে গেলো। বেচারার মুখটা দেখে মায়াই লাগছিল আমার।
বলতে লাগলো,প্লীজ বিচার দিবেন না। আংকেল মনে খুব কষ্ট পাবে।উনি আমাকে খুবই পছন্দ করে।আর, আমি তো কোনো অন্যায়ও করি নি।
ঝিনুক আপু বললো,অতোশতো বুঝি না।আমি বিচার দিবোই আর বাবা আমাদের কথাই বিশ্বাস করবে।
মেহেদী ভাইয়া মলিন ভাবে তাকিয়ে রইলো।
আপু বললো,এক শর্তে মাফ করতে পারি।আপনি নাকি অনেক বড় চিত্রশিল্পী। আমার একটা ছবি এঁকে দিবেন।তাহলে,আর বিচার দিবো না।
মেহেদী ভাইয়া বললো, দেখুন এখন আমার অনেক পড়ার চাপ।পরে,এঁকে দিবো।
– না…না বাকির নাম ফাঁকি। একদিন সময় দিলাম।
কথাটা বলেই আপু,পরী আপু আর আমি চলে যেতে লাগলাম।আপু এই কথাটা নিতান্তই মজা করে বলেছে। কিন্তু, মেহেদী ভাইয়া সেটা বুঝলো না।সে বললো,একটু দাঁড়ান।আপু অবাক হয়ে দাঁড়ালো। মেহেদী ভাইয়া আপুর দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে।
আপু অস্বস্তিতে পরে গেলো।বললো, এইভাবে দেখছেন কেন?
মেহেদী ভাইয়া বললো,ওমা না ভালো করে দেখলে আঁকবো কি করে?
ঝিনুক আপু হেসে ফেললো।এক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,নেন একটু ভালো করে দেখে নেন।নয়তো দেখা যাবে ছবিতে আমাকে নাক বোঁচা বানিয়ে ফেলবেন।
…..
রাত্রে বেলা মা আমাকে আর আপুকে ডাকলেন তার ঘরে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর।ইশু ভাবী নাকি ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে আমাদের মেহেদী ভাইয়ার রুমে দেখেছে। ঝিনুক আপু নাকি মেহেদী ভাইয়ার সাথে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়েছিল।
মা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,তোরা এতো বেহায়া আমি কল্পনাই করি নি। শুরুতে মনে করছি ছেলেটা হয়তো তোদের কাউকে ডিস্টার্ব করবে। এখন তো দেখছি উল্টা।মুরগিরাই দল বেঁধে শিয়ালের কাছে যাচ্ছে।
ঝিনুক আপু খুব খানিকটা চেঁচিয়ে উঠলো,কি সব আজেবাজে কথা বলছো?আমি তো আজকে একবারো ছাদেই উঠিনি।
ঝিনুক আপু খুব ভালো মিথ্যা কথাও বলতে পারে একদম সত্য কথার মতো।
মা বললো ,তাহলে কি ইশু মিথ্যা বলেছে?
ঝিনুক আপু বসা থেকে উঠে চেঁচাতে লাগলো।”ইশিতা ভাবী বলছে না?এতো বড় মিথ্যাবাদী মহিলা চিন্তা করছিস যুথি?কত্ত বড় মিথ্যুক।এই ঘষেটি বেগমকে আজকে সাইজ করবো আমি। আমার নামে মিথ্যা অপবাদ না?
বলতে বলতে আপু উঠে গিয়ে দরজা খুলতে লাগলো।ভাবটা এমন যেন এখুনি ইশু ভাবীদের ফ্ল্যাটে যাবে।
মা ছুটে গিয়ে আপুকে আটকালো। বললো,দাঁড়া যাস না মা। ঝামেলা করিস না।ইশু তো এমন বানোয়াট কথা বলে তুই জানিস ই।আমি ওকে ধমকাবো পরে।তুই প্লিজ ঝগড়া করিস না।
আপু তাও কিছু ক্ষন অভিনয় চালিয়ে অবশেষে নিজের রুমে গেলো। আমিও রুমে ঢুকলাম।
আপু বই নিয়ে বসলো।একটু আগের ঘটনা নিয়ে কোনো বিকার নেই আপুর।
∆
মালিহা চা বানিয়ে ফারহানের সামনে রাখলো।চায়ে চুমুক দিয়েই ফারহানের ভ্রু কুঁচকে গেল বিরক্তিতে। বললো,
মালিহা তোমাকে না কতবার বলেছি চায়ে চিনি কম দিবা। তুমি তো প্রতিবারই শরবত বানিয়ে ফেলছো।
মালিহা মাথা নিচু করে বললো,আসলে ও অনেক বেশি চিনি খেতো চায়ে। অনেক দিনের অভ্যাস বেশি চিনি দিয়ে চা বানানো তাই…….
মালিহার কথা শেষ না হতেই ফারহান তার হাতে থাকা চায়ের কাপটা ছুড়ে ফেললো ফ্লোরে।
মালিহা চমকে উঠলো খুব।
ফারহান বললো, সারাক্ষন ও ও মারাস কেনো?ওর জন্য এতোই দরদ হইলে পালায় আসছিস কেন? আরেক দিন যদি দেখি কোনো কথায় বাদশার নাম তুলিস তাহলে তোকে আমি……
ফারহান উঠে চলে গেল।মালিহা নিজের ঘরে গিয়ে খানিকক্ষণ কাঁদলো।মালিহারা সিলেট এসেছে। ফারহান চা বাগানে একটা চাকরি পেয়েছে।শুরুতে ফারহানের ব্যবহার যতটা মধুর ছিল এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই।পালিয়ে আসার আগে ফারহান বলেছিল,তিতলি মালিহার কাছেই থাকবে। কিন্তু, এখন তিতলির নামও সে সহ্য করতে পারে না।মালিহা তিতলির কথা মনে করে কিছু ক্ষন কাঁদলো….তিতলি কি এখন খুব খুঁজছে তার মামণিকে??
মালিহার পুরানো কথা মনে পরে গেলো। বিয়ের দুইমাস পরের কথা।মালিহা খুবই ঘুরা ঘুরি করতে পছন্দ করতো। কিন্তু, বাদশাহ একদমই ঘুরতে পছন্দ করতো না। একদিন কি হলো কে জানে এসে বললো, কক্সবাজার ঘুরতে যাবে।মালিহা তো প্রচুর খুশি হলো। সমুদ্র মালিহার খুবই পছন্দ।সে তোড়জোড় করে ব্যাগ গুছাতে লাগলো।যুথি এসে জিজ্ঞেস করল,কই যাবা ভাবী?মালিহা খুশি খুশি গলায় বললো,আমি আর বাদশা কক্সবাজার যাবো।অমনি যুথি বললো, ওয়াও।আমি সমুদ্র কখনো দেখিনি আমিও যাবো।
মালিহার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।মালিহা বলে,যুথি আমি আর তোমার ভাইয়া একসাথে একবার ঘুরে আসি। পরেরবার তুমিও যেও। কিন্তু,যুথি নাছোড়বান্দা।সে যাবেই।মালিহার শ্বাশুড়ি কে বলায়, তিনি বললেন, তোমাদের ঘরে যেয়ে তো ও বসে থাকবে না।যেতে চাইছে যাক।যাওয়ার দুইদিন আগে ঝিনুক বললো। সেও যাবে।আর, বাদশাহ এতে খুব খুশি। ঝিনুক,যুথিকে তো সাথে নিবেই আবার বাবা-মাকেও সাথে যাওয়ার জন্য বলছে।মালিহা বাদশাহ কে বললো,আমরা নিউলি ম্যারিড কাপল। আমাদের সাথে সবার দল বেঁধে যাওয়ার কি দরকার?
বাদশা অবাক হয়ে বললো,সবাই গেলেই তো মজা বেশি হবে।আমরা দুইজন একা একা স্বার্থপরের মত ঘুরে আসবো তা কি করে হয়?
মালিহা রেগে যায়, স্বার্থপরের কি আছে? নতুন স্বামী-স্ত্রী ঘুরতে যাবে,একান্তে কিছু সময় কাটাবে এটা স্বার্থপরতা?যারা সাথে যেতে চাইবে তারাই বরং কান্ডজ্ঞানহীন।
বাদশাহ এই কথা শুনে খুব রেগে যায়।বলে,সবাই যাবে।এটাই ফাইনাল। তোমার এতো সমস্যা হলে তুমি যেও না।
মালিহা সত্যিই যায়নি অবশ্য কারোরই আর যাওয়া হয়নি সেবার। বাদশাহ খুব পরিবারঘেষা ছিল।খালি বলতো, আমার মায়ের খেয়াল রেখো মালিহা। ঝিনুক-যুথি কিছু বললেও প্রতিউত্তর করো না।ওরা তো ছোট।
আরেক বার মালিহা গেছে তার বাবার বাসায়। না বলেই গিয়েছিল সেদিন।এক-দেড় ঘন্টার জন্যে। গিয়ে দেখে তার মা ক্ষীর বানিয়েছে।মালিহাকে সেই ক্ষীর খেতে দিলো মা।মালিহা অনেক লজ্জা মিশ্রিত গলায় মাকে বললো,মা ওর জন্য একটু দিয়ে দিও।মা হেসে বললেন,তুই আসবি জানলে তো আমি বেশি করে বানাতাম।যাওয়ার সময় খানিকটা একটা বক্সে ভরে বাদশার জন্য নিয়ে আসলো সে।কারণ, বাদশাহ ক্ষীর অনেক পছন্দ করে। কিন্তু, বাদশাহ সেই ক্ষীর খেলো না।উল্টা তাকে কথা শোনালো।বললো,”এতো কম আনছো কেন?আনলে বেশি ই আনতা না আনলে নাই।আমি একা একা খাবো ঘরে আমার ছোট দুইটা বোন আছে ওদের না দিয়ে? তোমার ক্ষীর তুমিই খাও।
মালিহার খুব মন খারাপ হয়েছিল সেদিন। ঝিনুক আর যুথি তো প্রায়ই স্কুল-কলেজ থেকে আসার সময় কত খাবার-দাবার নিয়ে আসে।এইতো দুইদিন আগেও ঝিনুক দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে ফিরলো কলেজ থেকে।সব তো একা একাই খেলো।কই ভাইয়ের নামটাও তো মনে করলো না।মালিহা এই কথাটাই বাদশাহকে বললো।শুনে বাদশার সে কি রাগ-চেঁচামেচি।মালিহা কেন এসব বলে তাদের ভাই বোনের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করে?
মালিহা খুবই কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন।বুঝেছিলো বাদশার কাছে তার কোনো দাম নেই। বাদশার সব প্রাধান্য মা-বোনদের প্রতি।ঈদে হয়তো বাদশা মালিহার জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছে। শাড়িটা মালিহার খুব পছন্দ হয়েছে। তখনই যুথি এসে বলছে,ভাবী অনেক সুন্দর তো শাড়িটা।অমনি বাদশাহ তখন বলে উঠত, তোর পছন্দ হলে নিয়ে যা।
মালিহার প্রচন্ড বিরক্ত লাগতো। বাদশাহ কেমন যেন ছিল। খুব সাজগোজ করে বাদশার জন্য বসে থাকলেও সে ফিরে এসে বলতো,এতো সেজে সময় নষ্ট না করে এই সময়টাতে ডিস গুলো ওয়াস করলেই পারতা। ঝিনুক কে দেখলাম পড়া বাদ দিয়ে কিচেনে কাজ করছে। বাদশার এমন আচরণের জন্যই দিনদিন মালিহার সব কিছু বিতৃষ্ণা লাগতো।সেই সময় ফারহানের সাথে পরিচয়। ফারহান কত প্রশংসা করতো মালিহার।বলতো,ভাবী বাদশার অনেক রাজকপাল।তাই আপনার মতো রূপবতী,গুণবতী বউ পেয়েছে।এই অধমের জন্যেও দোয়া করবেন যেন আপনারই মতো কাউকে পাই।মালিহা মনে মনে হাসতো। ফারহানের কাছে সে অলরাউন্ডার হলেও বাদশার কাছে কিছুই না।
পুরানো কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মালিহা। বাদশাহ দোষী অবশ্যই। কিন্তু,তারও কি কম দোষ ছিল?আগে সবসময় বাদশাকে অসম্ভব খারাপ মনে হলেও এখন অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি মনে পড়ে। একবার,একটু মনমালিন্য হওয়ার কারণে সে বাবার বাড়ি চলে এসেছিল। সন্ধ্যা নাহতেই বাদশাহ ফোনের উপর ফোন করছিলো। বিরক্ত হয়ে ফোন ধরার পর বাদশাহ রাগী গলায় বলেছিল, তোমার কি আক্কেল নেই?এই সময়ে বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছো।ঘরের মধ্যে কত কাজ।মা কি অসুস্থ শরীর নিয়ে করবে? এখুনি ফিরে আসো। ঝিনুক-যুথির কাজ করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
মালিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল, আমি সব রান্না বান্না করে দিয়েই এসেছি।আর কিছু বাকি থাকলে ঝিনুক কে করতে বলো।আমি একদিন না থাকলে ওদের এতো বড় কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তখন বাদশা হঠাৎ বললো,আসলে ওদের কারোরই সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে আমার। আমার তোমাকে ছাড়া ঘরটা খালি খালি লাগছে। আমাদের মধ্যে যতই ঝগড়া হোক না কেন অফিস থেকে ফিরে তোমাকে দেখলে শান্তি লাগে।আজ,সেই শান্তিটা পাচ্ছি না।
মালিহার মনটা গলে গিয়েছিল ওর কথায়। তবুও মিথ্যা কাঠিন্য বজায় রেখে বললো,পারবো না আসতে।রাত হয়ে গেছে এখন।
বাদশাহ বললো, তুমি বের হয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই আমাকে পাবে।আমি তোমাদের এলাকাতেই আছি।
ভাবনার খাতা বন্ধ করে মালিহা উঠলো। রান্না চড়াতে হবে।
…….
…….
তিতলি আমার কোলে এসে বসলো।বললো,যুথি ফুপি আমার মামণি আর কোনোদিন আসবে না তাই না?
আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম। বললাম,আসবে। তুমি বড় হলে তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে। তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও তো তুমি।
তিশি এসেছে আমাদের বাসায়। টিফিন বক্সে করে বিরিয়ানী নিয়ে।মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে বলতে লাগল, বিরিয়ানি রান্না করেছিলাম মা।খেতে গিয়ে গলা দিয়ে নামলো না। আপনার কথা মনে পরলো।তাই,চলে এলাম। আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন আমার লজ্জা নাই। ভাবলে ভাবেন আমার কিছু যায়ে আসবে না। আমার তো একটাই শান্তি আমি আপনাকে অন্তত দেখতে তো পারলাম।
মা তিশির এইসব মনভোলানো কথায় আসলেই পটে গেলেন।বলতে লাগলেন, তুমি এসেছো আমি কি যে খুশি হয়েছি মা।এসো বসো।
তিশির রান্না করা বিরিয়ানির টেস্ট পুরো হাজীর বিরিয়ানির মতো।আমি আগেও খেয়েছি। আমার মনে হচ্ছিল তিশি বিরিয়ানি দোকান থেকে কিনে এনেছে রান্না করে নি……
.
লেখক- শাপলা