ওরা ফিরেছে ( ১ম পর্ব )

0
7393

ন*গ্ন হয়ে গোসল করছে মিহিতা। এভাবে পুরোপুরি বি*বস্ত্র হয়ে শেষ কবে গোসল করেছিল ঠিক মনে করতে পড়ছে না সে।
তবে আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে কলার খোসার মতো শরীরের সমস্ত কাপড় ছুড়ে ফেলে খোলসহীন হতে।
কেন এমন বিকৃত ইচ্ছে জাগলো মিহিতার? আজ বাসর রাত ছিলো বলে? না, এটা কোনো কারণ হতে পারে না।
তাহলে কী বরকে পছন্দ হয় নি? বাসর রাতে নিজের শরীরে স্বামীর সব রকমের চিহ্ন, স্মৃতি, স্পর্শ সমস্ত কিছু বি*বস্ত্র হয়ে গোসল করে মুছে ফেলতে চাচ্ছে কী?

মিহিতা প্রথমে বাথরুমের দরজাটা লক করে নেয়।
তারপর বাতি জ্বেলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কেবল বুক অবধি দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি ন*গ্ন দেহ দেখার জন্য খানিকটা দূরে যাওয়া দরকার। সে পা টিপে টিপে পেছনে যাচ্ছে।
হ্যাঁ, এবার দেখা যাচ্ছে। মিহিতা খানিক্ষণ সেদিকে তাকাল। হঠাৎ মনে হল এই মোমের মতো কোমল উর্বর দেহ এই মূহুর্তে সে একা দেখছে না।
আরও দু’টা চোখ তার ন*গ্ন মিষ্টি দেহের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে৷
হ্যাঁ, এইতো হাই কমোডের উপরে একটা কালো কুচকুচে বিড়াল দু’পা ভাঁজ করে বসে আছে।
মিহিতা মুচকি হেঁসে বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মিষ্টি দেহে তোমার কী কাজ বিড়াল বাবা। মিষ্টিতে পিপড়ে আসুক। তুমি বরং দুধের খুঁজে বেরিয়ে যাও।’
না, বিড়াল বাবা যাচ্ছে না। মিহিতা আপন মনে হাসতে হাসতে সেদিকে পানি ছুঁড়ে বলল, ‘ঠান্ডা হও বাবা ঠান্ডা হও।’
বিড়াল খানিকটা শরীর ঝাঁকিয়ে যেভাবে আছে সেভাবে ন*গ্ন দেহে তাকিয়ে রইল।
মিহিতার মাথায় হঠাৎ একটা ভাবনা এসে শরীরের সমস্ত লোম নাড়া দিয়ে উঠল। বাথরুমে হঠাৎ বিড়াল কোত্থেকে এলো? মিহিতা চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিয়ে আবার এক চোখে তাকাল। আশ্চর্য ব্যাপার। বিড়ালটা নেই, বিড়ালের জায়গায় একটা কালো কুচকুচে সাপ ফণা তুলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহিতার আর হিতাহিতজ্ঞান থাকে না। সে চিৎকার দিয়ে ন*গ্ন অবস্থায় বের হয়েই নিয়াজের সাথে ধাক্কা খেল।
মিহিতার প্রথম চিৎকার শুনে চোখ কচলাতে কচলাতে বাথরুমের দরজায় নক করতে এসেছিল সে।
ধাক্কা খেয়ে তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে মিহিতা বলল, ‘বিড়াল সাপ, বিড়াল সাপ।’
বস্ত্রহীন মিহিতাকে দেখে নিয়াজ প্রথমে তাদের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো খোলা। নিশ্চিত চিৎকার চেচাঁমেচি শুনে বাড়ির সবাই এদিকে আসবেন।
উল*ঙ্গ মিহিতাকে সবাই এভাবে দেখে ফেলতে পারে।
তাই নিয়াজ বলল, ‘তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে আগে কাপড় পরে এসো।’ মিহিতা নড়ে না, তার বুকে একদম মিশে থাকে।
নিয়াজের কানে এলো বাড়ির সবাই ‘কীসের চিৎকার রে? কীসের চিৎকার রে” গুঞ্জন তুলে এদিকে আসছেন৷ একটানে মিহিতাকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে সে।
তারপর মিহিতাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বলল, ‘কী হয়েছে? তুমি কী ঠিক আছো মিহিতা?’
মিহিতা ঘনঘন ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কমোডের উপরে সাপ।’
নিয়াজ কমোডের উপর তাকিয়ে বলল, ‘কই, কিছুই তো নেই সেখানে।’
নিয়াজের মা বাথরুমের দরজায় নক করে বললেন, ‘বাথরুমে কে? এদিকে তো চিৎকার শুনলাম।’
‘মা আমি।’
‘আর বউ মাকে তো দেখছি না, সে কোথায়?’
‘যাও তো মা এখান থেকে।’
নিয়াজের বাবা কাজের লোক সহ স্ত্রীকে বললেন, ‘চলে এসো সবাই এখানে কিছু হয়নি।’

মিহিতা এতক্ষণে পুরো বাথরুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো কিছুই নেই। এভাবে ন*গ্ন অবস্থায় নিয়াজ দেখছে ভেবে হঠাৎ লজ্জায় তার কান গরম হয়ে গেল৷ থুতনি বুকের সাথে লাগিয়ে মাথা নীচু করে বলল, ‘নিয়াজ তুমি চোখ বন্ধ করে দরজার দিকে তাকাও আমি কাপড় পরবো।’
নিয়াজ বুঝে গেছে মিহিতা আজ স্বাভাবিক না৷ তাই কথা মতো চোখ বন্ধ করে দরজার দিকে তাকাল।
মিহিতা তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নেয়। কিন্তু ভীষণ লজ্জা করছে সাথে মাথায় প্রশ্নও জাগছে বিড়াল থেকে সাপ তারপর সাপটাই উধাও হয়ে গেল কীভাবে?
সে আপাতত এই দ্বিধাদ্বন্দ রেখে বলল, ‘কাপড় পরা শেষ আমি বের হবো।’
নিয়াজ দরজা খুলে সোজা বেলকোনিতে চলে গেল। তার ধারণা মিহিতা হেলোসিনেশনের কারণে উল্টাপাল্টা জিনিস দেখে ভয় পাচ্ছে।
নববিবাহিত মেয়েরা নানান বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে মানসিক চাপে থাকে। তাই হেলোসিনেশন হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিয়াজের চোখ পড়ল রাস্তার ওপর পাশে একটা ছেলের উপর৷ ছেলেটি এদিকেই কেমন করে জানি বারংবার তাকাচ্ছে।
নিয়াজের চোখে চোখ পড়ায় সে অন্যদিকে হাঁটা ধরেছে।
মায়ের ডাক শুনে নিয়াজ পেছন ফিরে তাকায়। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে যেতে বলছেন মা।
নিয়াজ রুমে এসে দেখলো মিহিতা শাড়ি পরেছে৷ অসম্ভব সুন্দর লাগছে শাড়িতে৷ কিন্তু শাড়ির রঙটা ঠিক ধরতে পারছে না সে। শাড়িটা কী লাল? না, এটা খয়েরী রঙের শাড়ি হবে বোধ হয়। এসব ভাবতে ভাবতে সে গোসলের জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল।
.
নিয়াজ আর মিহিতা গাড়িতে বসে আছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। চারপাশে পাহাড় আর নাম না জানা বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি৷
ওদিকেই নিয়াজদের একটা বাংলো আছে। আজ নাস্তার টেবিলে নিয়াজের বাবা বললেন ‘তোমরা চাইলে একান্তভাবে কয়েকদিন বাংলোতে গিয়ে থাকতে পারো। ইতিমধ্যে রজব আর আলেয়াকে পাঠিয়েছি সেখানে। রান্নাবান্না থেকে সবকিছু তারাই সামলাতে পারবে।’
কথাটা শুনে নিয়াজের মনটা ভরে গেল।
এই বাংলোটা তার ভীষণ রকমের পছন্দ। মাঝারি ধরনের একটা পাহাড়ের উপর বাংলো।
পাশ দিয়ে একটা আঁকাবাকা রাস্তা গেছে থানা শহরে।
নিয়াজের সৌখিন বাবা মিরাজ সাহেব শখ করে এখানে বাংলো বানিয়েছেন। গাড়িটা এসে পাহাড়ের নীচে থেমেছে।
বাংলোতে উঠার জন্য পাহাড় কেটে সিঁড়ির মতো বানানো হয়েছে৷ নিয়াজ হাত ধরে তুলছে মিহিতাকে। উপরে উঠে মুগ্ধতায় মিহিতার মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেল।
সুন্দর ছিমছাম একটা বাংলো। সামনের দুইপাশে অনেক ফুল গাছ দিয়ে সাজানো৷ বাগানে সামনে দোলনা রাখা হয়েছে। মিহিতা দোলনায় বসে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো এদিকে বিস্তৃত সবুজ মাঠ৷
তারপর একটা ছোট খাল। খালে বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট কালভার্ট। তারপর চা বাগান। ছোট ছোট সবুজ চা গাছ চাদরের মতো নীচ থেকে উঁচু পাহাড়ে গিয়ে উঠেছে।
.
গভীর রাত। হঠাৎ মিহিতার ঘুম ভেঙে গেল। চমৎকার সুরে কে জানি বাইরে বাঁশি বাজাচ্ছে।
ভেতর তোলপাড় করা করুন বাঁশির সুর। কে বাঁশিতে এমন বেদনার সুর তুলেছে আজ?
এমন সুর শুনে কেবল ইচ্ছে করে সমাজ সংসার চেনাজানা জগত ছেড়ে নিরুদ্দেশ হতে।
যে মানুষটির কোনো দুঃখ কষ্ট নেই তারও ভীষণ ইচ্ছে করে কাঁদতে।
মিহিতা আর শুয়ে থাকতে পারছে না। ইচ্ছে করছে নিজের সবটুকু সঁপে দেই বাইরের বেদনার সুর তোলা বাঁশিওয়ালার কাছে।
মিহিতা বাঁশির সুরে বুঁদ হয়ে এতক্ষণে বাংলোর বাইরে চলে এসেছে। দুই পাশের ফুল বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে সে।
দোলনা নড়ছে, নড়ছে আর নড়ছে।
দোলনায় বসে কেউ একজন বাঁশি বাজাচ্ছে।
মিহিতা দোলনার সামনে গিয়ে হাটু ভাঁজ করে বসে পড়লো।
.
আচমকা নিয়াজের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙ্গার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। কেউ কী ধাক্কা দিয়েছে? না, মনে হয় না।
নিয়াজ হঠাৎ লক্ষ করল পালঙ্কে সে একা শুয়ে আছে৷ মিহিতা কোথায়? সে বাথরুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই।
আশ্চর্য, তাহলে মিহিতা কোথায় গেল?
তাড়াতাড়ি রজব আর আলেয়া বেগমকে ডেকে তুলে ছাদে যায়, কিন্তু সেখানেও নেই।
সবাই তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে বাইরের বাতি জ্বেলে দিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। না কোথাও নেই।
হঠাৎ আলেয়া বলল, ‘দোলনা নড়ছে মনে হয়।’
তিনজন সেদিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দোলনায় একটি ছেলের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে মিহিতা।
আরেকটু এগুনোর সাথে সাথেই ছেলেটি তাদের দিকে ঘাড় ঘুরে তাকিয়ে ঝোপঝাড়ে ঝড় তুলে দৌঁড়ে পালাল।
নিয়াজ চিনতে পারে ছেলেটিকে। সেদিন রাস্তা থেকে এই ছেলেই বারবার তাকিয়েছিল তাদের বাসার দিকে।
নিয়াজের আর কোনোকিছু বুঝতে বাকি থাকে না। কাজের লোকদের সামনে এমন অপমানে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার।
মিহিতাকে টান দিয়ে দোলনা থেকে নামিয়ে বলে, ‘এই ছেলেটি কে? এখানে কী হচ্ছে এসব?’
মিহিতা অবাক হয়ে আমতা আমতা করে বলল, ‘ছেলে মানে, কোন ছেলে?’
নিয়াজ ঠাস করে মিহিতার গালে চড় দিয়ে বলল, ‘ন*ষ্টা মেয়ে, ন*ষ্টামি করে ভান ধরা হচ্ছে তাই না? আমরা তিনজন মানুষ স্পষ্ট দেখলাম তুমি দোলনায় একটি ছেলের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলে।’
.
– #ওরা ফিরেছে ( ১ম পর্ব )
– চলবে কিনা সবাই মতামত জানাবেন।
লিখা – MD Jobrul Islam ( Habib )
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here