#ওরা ফিরেছে ( ২য় পর্ব )
.
স্ত্রী এবং আপন বড় ভাইকে একসাথে অন্ত*রঙ্গ অবস্থায় দেখে লজ্জায় ঘৃণায় আত্ম*হ*ত্যা করে ফেলেছে সুয়েব খান।
.
রাত তখন প্রায় দু’টা। আচমকা সুয়েবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল ঝুমুর বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরে যাচ্ছে।
পাশ ফিরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ঘুম আসছে না।
এপাশ – ওপাশ করে অনেক্ষণ কেটে গেল।
হঠাৎ সুয়েবের মাথায় খটকা লাগে, ভেতরে বাথরুম রেখে ঝুমুর বাইরে গেল কেন? তাও আবার এতক্ষণ হল ফিরছে না।
সাথে সাথে সুয়েব বিছানা থেকে উঠে বারান্দা রান্নাঘর সবকিছু খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু ঝুমুর কোথাও নেই।
তাড়াতাড়ি সিঁড়ি ভেঙে ছাদের দিকে যায়।
ছাদের চিলেকোঠায় চোখ পড়তেই তার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে।
একদিকে ঝুমুরকে সে ভীষণ ভালোবাসে অন্যদিকে বাবার আসনে বসানো বড় ভাই সুমিত খান।
কী করবে বুঝতে পারে না সুয়েব।
চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায় সে।
বাঁচতে একদম ইচ্ছে করছে না। এক্ষুনি এই জগৎ – সংসার ছেড়ে চলে গেলেই হয়।
কিন্তু কাউকে জানিয়ে মরতে ইচ্ছে করছে। কাকে জানাবে? ভাতিজি মিহিতাকে কী ওর বাবার কথা জানাবে? না, নববিবাহিত ভাতিজিকে এমন জঘন্য সংবাদ দিতে ইচ্ছে করছে না।
সে ঠিক করে নেয় মিহিতার মা শায়লা বেগমকে বিস্তারিত মেসেজ পাঠিয়ে আত্মহত্যা করবে।
.
শায়লা বেগম ঘুম থেকে উঠে মেসেজটা সিন করে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। আজ কী এপ্রিল ফুল? না না এখন তো নভেম্বর মাস চলছে।
তাছাড়া আপন বড় ভাই আর স্ত্রীকে নিয়ে সুয়েব এমন জঘন্য কথা বলতেই পারে না।
শায়লা বেগম বিছানায় তাকিয়ে দেখলেন স্বামী সুমিত খান এখনও ঘুমাচ্ছেন।
তাড়াতাড়ি তিনি সুয়েবদের রুমের দিকে গেলেন। দরজা লক করা নেই।
রুমে ঢুকে উপরের দিকে তাকিয়েই তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। সিলিং ফ্যানে সুয়েবের জি*ভ বের করা লা*শ ঝুলে আছে।
চিৎকার শুনে ঘুম থেকে কেঁপে উঠে ঝুমুর।
চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে ভাবী?’
শায়লা বেগম আচমকা ‘মা*গীর ঘরের মা*গী’ বলেই ঝুমুরের চুল ধরে মেঝেতে ফেলে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মা*রতে শুরু করেন।
.
চিৎকার – চেচাঁমেচি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল সুমিত খানেরও। তিনি তাড়াতাড়ি সুয়েবের রুমের দিকে এলেন৷
বিস্মিত হয়ে শায়লার হাত থেকে স্যান্ডেল নিয়ে বললেন, ‘কী হচ্ছে এসব?’
শায়লা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘কী হচ্ছে জানো না! এখন অবুঝ সাজা হচ্ছে তাই না?’
সুয়েবের মেসেজ বের করে সুমিত খানের চোখের সামনে ধরে শায়লা বেগম বললেন, ‘এটা কী সুমিত, এসব দেখার আগে আমার মৃ*ত্যু হল না কেন!’
মেসেজটা পড়ে সুমিত খান চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘মানে, আমি তো সারা রাত তোমার পাশেই ছিলাম।’
শায়লা বেগম সিলিং ফ্যানের দিকে আঙুল তাক করে বললেন, ‘মৃ*ত্যুর আগে কেউ মিথ্যা কথা বলে না সুমিত। আমাকে আর বোকা বানানোর চেষ্টা করো না।’
.
নিশিতা ভার্সিটির হোস্টেলে এসেছে গতকাল। খুব কাছের এক বান্ধবীর জন্মদিন থাকায় বড় বোন মিহিতার বিয়ের পরেরদিনই হোস্টেলে আসতে হল।
অবশ্য আজ বিকেলে আবার চলে যেতো বাসায়। কিন্তু সাতসকালে মা ফোন দিয়ে বললেন এখনই বাড়িতে রওয়ানা দিতে।
আজ আবার রবিনের সাথে মিট করার কথা ছিলো। তাকে জানিয়ে যাওয়া দরকার।
কিন্তু বেচারা এখনও ঘুমোচ্ছে হয়তো।
তাই কল না দিয়ে মেসেজ দিলো, ‘সরি রবিন, আমার এখনই বাসায় যেতে হচ্ছে, তোমার সাথে মিট করা হলো না।’
খানিক পরেই রবিনের ফোন থেকে অপ্রত্যাশিত মেসেজ এলো, ‘চাইলেই মিট করা হবে সুইটহার্ট। এক্ষুনি আমি গাড়ী নিয়ে হোস্টেলে এসে তোমাকে স্টেশন অবধি দিয়ে আসবো।’
নিশিতা মুচকি হেঁসে মেসেজ পাঠালো, ‘বাব্বাহ, তুমি জেগে আছো? আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার তাড়া আছে।’
.
‘আমি এক্ষুনি আসছি। আর হ্যাঁ, তোমার যেহেতু বেশি তাড়া তাই যাবার পথে গাড়িতে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নেব।’
.
‘অকে, লাভ ইউ রবিন।’
.
গাড়িতে বসে দু’জন নাস্তা করে নিল। নাস্তা শেষ করার মিনিট পাঁচেক পড়েই নিশিতার চোখের পাতা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করে।
খানিক পরেই সে ঘুমে ঢলে পড়ে রবিনের কাঁধে।
মুচকি হাসে রবিন, তারপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
গাড়িটা শহর ছেড়ে একসময় চলে গেল একটা জঙ্গলের দিকে।
চারদিকে নাম না জানা গাছগাছালি আর উঁচু পাহাড়।
গাড়িটা থামিয়ে নেয় রবিন, আর সামনে যাবে না।
মিহিতাকে কাঁধে তুলে চারদিকে সতর্কভাবে থাকায়।
অবশ্য এদিকে কেউ আসার কথা নয় তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতা।
নিশিতাকে কাঁধে নিয়ে খালে নেমে পড়ে। খাল পেড়িয়ে একটা ছোট্ট পাহাড়।
তারপর একটা বিস্তৃত সবুজ মাঠ। মাটের এক পাশ দিয়ে মেটো পথ।
সেদিকে খানিক্ষণ হেঁটে পাহাড়ের একটা গুহায় ঢুকে পড়ে সে।
নিশিতাকে মাটির সাথে হেলান দিয়ে বসায়।
তারপর ঠাস ঠাস করে নরম ফর্সা গালে কয়েকটা চড় দেয়।
কেঁপে উঠে নিশিতা। চোখ বড় বড় করে চারদিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।
ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘রবিন এসব কি হচ্ছে৷ এখানে কোথায় নিয়ে এসেছো আমায়?’
রবিন হাসতে শুরু করে। তার হাসির তালে যেন পুরো পৃথিবী কাঁপছে।
ভয়ে নিশিতার হৃদ*পিণ্ড বের হতে চাচ্ছে।
সে ভয়ে ভয়ে বলল, ‘হাসি থামাও রবিন, এমন হাসি দেখলে ভীষণ ভয় লাগে আমার।’
রবিন বাধ্য ছেলের মতো হাসি থামায়। তারপর পেছন থেকে একটা কা*টা মা*থা বের করে বলল, ‘সুইটহার্ট, আমি রবিন হলে এই মাথাটা কার?’
নিশিতা চিৎকার দিয়ে উঠে। রবিনের হাতে যে আরেক রবিনের কাটা মাথা।
ঢোক গিলতে গিলতে বলল, ‘রবিন তুমি তো ঠিকই আছো। তাহলে তোমার মতো দেখতে এই মা*থাটা কার?’
রবিন আবার হাসতে শুরু করে। পুরো পৃথিবী কাঁপানো ভয়ংকর হাসি।
.
চলবে।
.
Md Jobrul ঈস্লাম
#১ম_পর্ব