রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব-১৬

0
2787

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_১৬
#নবনী_নীলা

স্পৃহা অবাক হয়ে বললো,” লজ্জার কি আছে? নতুন বিয়ে হয়েছে বর বউ এতো রাতে রোমান্স করবে, এইটাই তো স্বাভাবিক। আশ্চর্য এতে লজ্জার কি আছে?” স্পৃহার কথা শুনে জিম হতভম্ব হয়ে ফোনের দিকে তাকালো। পৃথিবীতে এমন মেয়ে আছে তার জানা ছিলো। এইটা মেয়ে নাকি এলিয়েন? জিম ফোন হাতে বিভ্রান্ত হয়ে বসে আছে।

ওপাশ থেকে স্পৃহা বললো,” কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেনো? আমার ফোন কি আমি কোটি টাকা রিচার্জ করে রেখেছি? আশ্চর্য! যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলুন।”

জিম ভ্রূ কুচকে বললো,” মানে?”

স্পৃহা রেগে গিয়ে বললো,” এতক্ষণ পর আপনি মানে জিজ্ঞেস করছেন? তাহলে এতোক্ষণ ধরে এতো কথা বললাম, কেনো বললাম? আপনার কি মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়েছে? অসহ্য! আর আমি মানে বলতে পারবো না। ধুর, আপনি মেজাজটাই খারাপ করে দিলেন।” বলেই ফোন কেটে দিয়ে স্পৃহা ঠোঁট চেপে হাসলো।

জিম বুঝতেই পারলো না এই মেয়ে এতো রাতে ফোন করে তাকে এতোগুলো কথা শুনলো কেনো? কোনো মানে হয় এইসবের? জিম বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে ফোনটা একপাশে রেখে ভ্রু কুঁচকে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রইলো।

স্পৃহা করিডোর থেকে নিজের রুমে যেতেই দেখলো আয়েশা খাতুন একটা ভ্রু তুলে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। স্পৃহার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। অ্যায়হায় কি সর্বনাশ! মা, সবটা শুনে ফেললো নাকি? স্পৃহা একদমই স্নিগ্ধার উল্টো, যেকোনো সিচুয়েশনে স্নিগ্ধা ঘাবড়ে গেলেও স্পৃহা ঠিকই কোনো না কোনো সলুয়েশন বের করে নেয়। আয়েশ খাতুনকে দেখে স্পৃহা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” মা! এতো রাত হয়েছে তুমি ঘুমাও নি?”

আয়েশা খাতুন ভ্রু কুচকে বললো,” তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? তাও আবার এতো রাতে?”

স্পৃহা ফোন থেকে নাম্বারটা বের করে মাকে দেখিয়ে বললো,” এইযে দেখো। এই বদমাশ ছেলে ফোন দিয়ে তখন থেকে ডিস্টার্ব করছিলো। তাই জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিয়েছি।”

জিম লেপটপে কাজ করতে করতে বেশ কয়েকবার বিষম খেলো। হটাৎ এতো বিষম খাওয়ার কারণ ধরতে পারলো না।

আয়েশা খাতুন হাই তুলতে তুলতে বললো,” আচ্ছা যাও। আমি একটা ব্যাবস্থা করবো। এখন রুমে গিয়ে ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে।”

স্পৃহা ভদ্র মেয়ের মতন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তারপর পা টিপে টিপে নিজের রূমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো।

_________

স্নিগ্ধা চুপ করে রিসোর্ট এর একটা রুমে বসে আছে। কোমরের কাছে কেমন একটা জ্বালা অনুভব করছে সে।

অভ্র এক পাশে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। লাফালাফি করে ক্লান্ত হয়ে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে অভ্র। স্নিগ্ধা অস্থির হয়ে বসে বসে ঠোঁট কামড়াচ্ছে। নিজের উপর মারাত্মক রাগ লাগছে স্নিগ্ধার, আদিলের সংস্পর্শে গেলে তার এমন কাতর অবস্থা হয় কেনো? প্রতিবার আদিল সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই কথা এড়িয়ে যায়।

কিন্তু আজ প্রথম সে আদিলকে এতটা রেগে যেতে দেখেছে। কে এই ফাহাদ রেজওয়ান? আদিল আর তার মধ্যেকার সম্পর্ক যে খুব তিক্ত সেটা আদিলের চোখ মুখ দেখেই স্নিগ্ধা বুঝেছে।

অভ্রর মায়ের পরিচয় কেনো লুকিয়ে রাখা হয়েছে সেটা কি এই ফাহাদ রেজওয়ান জানে? স্নিগ্ধার কেনো জানি মনে হচ্ছে তার এই ধারণা ভুল নয়। স্নিগ্ধা অভ্রর দিকে তাকালো, সামনের চুলগুলো অভ্রর কপালে এসে পড়েছে। স্নিগ্ধা হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। ঘুমিয়ে থাকলে কি মিষ্টি লাগে দেখতে। দুই হাত দুপাশে ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে অভ্র। স্নিগ্ধার মনটা হটাৎ অশান্ত হয়ে উঠলো। অভ্র আদিলের সন্তান। কথাটা ভেবে আজ কেমন অশান্ত লাগছে নিজেকে। অভ্রর মা কে? কি হয়েছিলো তার? আদিল কেনো লুকিয়ে রাখছে সবটা?

_________

আদিল চিন্তিত রুমে জিমের রুমে এলো। জিম এখনো ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। বেশ ব্যাস্ত হয়ে কাজ করছে জিম। আদিল চুপ করে এসে এক পাশে বসলো। জিম টাইপিং করতে করতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আদিলকে দেখে বললো,” কি হয়েছে? এতো রাতে এইখানে? চিন্তার কিছু নেই। আমি চেষ্টা আছি, সকালের মধ্যে কাজটা হয়ে যাবে।”

আদিল জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললো,” হুম্” বলেই তপ্ত নিশ্বাস ফেললো। জিম একটু অবাক হয়ে বললো,” ঠিক কি কারণে আপনি এত হতাশ হয়ে পড়ছেন? চার বছরের কম ক্ষতি করেনি ফাহাদ। কিন্তু কোনোদিন তো এতো ভেঙে পড়েননি।”

আদিল তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলো তারপর বললো,” কে বলেছে আমি ভেঙে পড়েছি? আমি শুধু একটু ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার প্রিয় মানুষগুলোকে আগলে রাখতে গিয়ে তাদের থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছি।হাপিয়ে উঠেছি জিম।”

জিম কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,” মিস স্নিগ্ধার সাথে সবাইকে মিলিয়ে ফেলা কি ঠিক হচ্ছে। মিস স্নিগ্ধার রাগ করা টা অস্বাভাবিক নয়। ওনার জায়গায় যে কেউ রাগ করতো।”

আদিল মলিন চোখে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো,” উহু, রাগ করেনি। ও আমায় ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।” তারপর নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,” ব্যাপারটা আমার সহ্য হচ্ছে না।”

জিম ভ্রূ কুচকে বললো,” তাহলে বলে দিলেই হয়। একদিন তো সবটা জানবেই।”

আদিল না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” ফাহাদ কি করতে চাইছে, সেটা না জানা পর্যন্ত কোনো কিছু করা বোকামি ছাড়া কিছু হবে না। ”

জিম মাথা নেড়ে বললো,” সে ভালো বলেছেন। তবে আমার মনে হয় না বেশিদিন ফাহাদ এই নোংরা রাজনীতি করে বেচেঁ যাবে। আর ওর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতেই আছে।”

আদিল চোয়াল শক্ত করে বললো,” সেটা তো সময় এলে ওকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আচ্ছা সরো। দেখি আমি একবার চেষ্টা করে দেখি। এইদিকে নেটওয়ার্কের সমস্যা বেশি।”, বলেই ল্যাপটপটা নিজের কাছে নিয়ে এলো। জিম ব্যাস্ত হয়ে বললো,” আই গেস, আপনার রেস্ট নেওয়া জরুরী।”

আদিল না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” সবটা না জানলে আমার ঘুম আসবে না। বেটার আমি নিজেই চেষ্টা করি। আমাকে জানতেই হবে, স্নিগ্ধা ফাহাদকে কি করে চিনে?”

__________

গভীর রাতে কোমড়ের কাছে কারোর হাতের শীতল স্পর্শ অনুভব করে ঘুমের ঘোরে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো আদিল তার পাশে বসে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ গেলো কোমরের দিকে,কোমরের উপর থেকে কাপড় সরে আছে। স্নিগ্ধা রীতিমত হুরমুড়িয়ে উঠে বসে পড়লো। নিজেকে শাড়ির আঁচলে ঢেকে নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে আদিলের দিকে তাকালো।

আদিল শান্ত আর নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধা কাপা কাপা গলায় রেগে বললো,” কি করছিলেন আপনি?”

আদিল নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে হাতের অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমটা দেখালো। স্নিগ্ধা বিস্ফোরিত চোখে ক্রিমটার দিকে তাকিয়ে রইলো। হুট করে ঘুম থেকে উঠে এমন কিছুর মুখোমুখি হওয়ায় তার ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। স্নিগ্ধা কড়া গলায় বললো,” কি এটা?”

আদিল নিরবে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, চিনেছো? এইবার চুপচাপ এইদিকে এসো।” শেষের কথাটা আদেশ স্বরূপ বললো আদিল। স্নিগ্ধা তার কোমরের একপাশে ঠান্ডা কিছু অনুভব করছে। তার মানে ঘুমে মধ্যে আদিল তার কোমরের কাপড় সরিয়ে ক্রিম লাগিয়ে দিয়েছে?

স্নিগ্ধা দাতে দাত চেপে কড়া গলায় বললো,” কেনো? আর আপনি এতক্ষণ কি করছিলেন? আপনার লজ্জা করলো না একবারো?”

আদিল ভাবলেশহীন ভাবে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” নাহ্ একদমই লজ্জা করে নি? তোমাকে আমি এইদিকে আসতে বলেছি, এসো।”

আদিলের এমন আচরণে স্নিগ্ধা আরো রেগে বললো,” আপনি ঘুমের মধ্যে আমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন?”

আদিল চোয়াল শক্ত করে তাকালো। তারপর আস্তে আস্তে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে আসতেই স্নিগ্ধা ভরকে তাকালো। বিছানার সাথে অস্টে পিস্টে নিজেকে জড়িয়ে বললো,” একদম কাছে আসবে না অভ্র ঘুমাচ্ছে আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”

আদিল স্নিগ্ধার একদম কাছে এসে বললো,” হুম, করো চিৎকার। কে বারণ করেছে তোমায়? আর সূযোগ নেওয়ার কথা বললে না? আমার বউ, আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি সূযোগ নিয়েছি। এমনিতেও আমি তোমার বর। আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি সুযোগ নিবো। ” বলেই শীতল দৃষ্টিতে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো।

আদিলের এমন ভাবলেশহীন অভিব্যাক্তি শুনে স্নিগ্ধা চমকে উঠলো। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছে না।

আদিল স্নিগ্ধার হাতে ক্রিমটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,” আমাকে আর সুযোগ দিতে না চাইলে চুপচাপ ক্রিমটা লাগিয়ে নাও। নয়তো তোমাকে তুলে, অন্য রুমে নিয়ে যাবো। তারপর তোমার সাথে যা যা হবে,সেটার দায় ভার সম্পূর্ন তোমার।” শেষের কথাটা বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো আদিল।

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here