অপেক্ষার প্রহর (পর্ব -১৩)
মানবজাতির ইতিহাস অনেক বৈচিত্র্যময়। মানুষ আজকে যেভাবে দিনযাপন করছে কয়েক দশক পর তার অনেকটাই পালটে যায়। সমাজের পরিবর্তন ঘটে, সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে।কিন্তু এই পরিবর্তন ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না সহজে। ইতিহাস সবসময় রাজা-রানির কথা বলে। সাধারন মানুষ ইতিহাসের পাতায় সবসময় অবহেলিত। তাই সাধারন মানুষের জীবনের পরিবর্তনগুলো জানা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই পরিবর্তনগুলো যে ভাবনার খোরাক হতে পারে তা অনেকের চিন্তাতেও আসে না। এমনটি হয়েছিল সুদীপ্তর ক্ষেত্রে। তাই ইয়াসমিন যখন প্রথম তাকে বলেছিল যে সে মানুষ সম্পর্কে জানতে চায় তখন সে অবাকই হয়েছিল।
বিয়ের রাতে দুজনের শোবার ঘর আলাদা করলেও আলাদা ঘরে তাদের থাকা হয়নি। শোয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে ইয়াসমিন সুদীপ্তর ঘরে চলে আসে।
“কি হয়েছে?” সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করে।
“আমি একা ঘুমাতে পারিনা। আমার মনে হয় জানালা দিয়ে কেউ তাকিয়ে আছে। বিছানা থেকে নামলে মনে হয় বিছানার নিচ থেকে কেউ পা ধরে টান দিবে।”
সুদীপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শেষ পর্যন্ত এক রুমে থাকা ঠিক হয়। ইয়াসমিন বিছানায় শোয়। সুদীপ্ত ফ্লোরে বেডিং করে। এতে অবশ্য একটা সুবিধে হয়েছে। দুজনে ঘুমানোর আগে গল্প-গুজব করত।
“আমাকে কি কি বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে? বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক?” ইয়াসমিন জিজ্ঞেস করল।
“তুমি কি পড়তে চাও?” সুদীপ্ত জবাব দিল।
“বাংলা কি পড়তে হবে? কারক- বিভক্তি? ইংরেজি কি পড়তে হবে? Parts of Speech? অঙ্ক করতে হবে? পাটিগণিত- বীজগণিত- জ্যামিতি?”
“তুমি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেছ?”
“ক্লাস ফোর পর্যন্ত। এনজিওদের একটা স্কুলে।”
“আর পড়াশুনা করনি কেন?”
ইয়াসমিন একটু চুপ থেকে বলল, “স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় মানুষজন বিরক্ত করত। এই গাছের আড়ালে, ঐ ঝোপের আড়ালে নিয়ে যেত। ৫ টাকা- ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিত। তারপর খালা আর স্কুলে যেতে দেয়নি।”
সুদীপ্ত কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। “তুমি কি বিষয়ে পড়াশুনা করতে চাও?” আবার জিজ্ঞেস করল।
“আমি মানুষ সম্পর্কে জানতে চাই। আজ থেকে ১০০ বা ১০০০ বছর আগে মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করত আমার জানার খুব ইচ্ছে। তারা কি ধরনের পোশাক পরত, কি খেত এগুলো জানতে ইচ্ছে করে।”
এসব জেনে কি হবে তা বুজতে পারছিল না সুদীপ্ত। নতুন বৌ। কিছু বললে কি মনে করে তাই সেদিন আর কিছু বলল না। কিন্তু কয়েকদিন পর জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা আগেও তো মানুষ সকালে নাস্তা করে কাজে যেত, লাঞ্চ করত, সন্ধে হলে ঘরে ফিরত- তাহলে এখানে নতুন করে আর জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার কি আছে? ”
ইয়াসমিন বলেছিল, “মানুষ কি সবসময় একভাবে চলাফেরা করে নাকি? আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগেও মানুষ কম খরচে চলাফেরা করার জন্য রিক্সা ব্যবহার করত। রিক্সা একটা অন্যতম প্রয়োজনীয় বাহন ছিল। আর এখনকার দিনে দেখ রিক্সাভাড়া কত বেশি। সাধারন মানুষের জন্য রিক্সায় চলাফেরাটা ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। বাস বা লেগুনাই তাদের ভরসা।”
সুদীপ্ত তা স্বীকার করে নিয়ে বলল, “সবই ঠিক আছে। কিন্তু ১০০০ বছর আগে মানুষ কি জামাকাপড় পড়ত, কি খেত, কোথায় ঘুমাত এসব জেনে তুমি কি করবে? এসব জানার দরকারটাই বা কি?”
ইয়াসমিন বিরক্ত হয়ে বলল, “মানুষ কি সবকিছু দরকারের জন্যই করে? নীল আর্মস্ট্রং কি দরকারে চাঁদে গিয়েছিলেন? পাওনাদারকে খুঁজতে?”
এরপর দুইদিন ইয়াসমিন সুদীপ্তর সাথে কোন কথা বলেনি। সুদীপ্ত বলতে চাইলেও ইয়াসমিন এভয়েড করেছে। সুদীপ্ত সরি বলার পরই ইয়াসমিন কথা বলে। তারপর একদিন পাঠক সমাবেশে নিয়ে আসে ইয়াসমিনকে। এত বই দেখে অবাক হয়ে যায় ইয়াসমিন। “এত বই আমি শেষ করব কি করে?”
“আগে মুখের হা টা বন্ধ কর। আর কালকেই তোমার পরীক্ষা না যে আজ রাতের মধ্যে সব বই পড়ে শেষ করতে হবে। আস্তে ধীরে বই পড়।” সুদীপ্ত বলল। ইয়াসমিন গিয়ে বই দেখতে লাগলো।
এরপর থেকে শুরু হয় ইয়াসমিনের বই পড়ার প্রহর। কিন্তু সে যা জানতে চাইছিল তা ঠিকভাবে খুঁজে পাচ্ছিল না।তবে যা কিছু পাচ্ছিল সব টুকে রাখছিল। বাঙালি সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। এর মধ্যে বড় দুইটি শ্রেণী হচ্ছে- হিন্দু আর মুসলিম। হিন্দু- মুসলিম বাঙ্গালীদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে ইতিহাস লেখা হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক জনগোষ্ঠী নিয়ে তেমন লেখা হয়নি। একই সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ থাকায় বাঙ্গালী সংস্কৃতি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত সংস্কৃতি। স্থান আর পাত্র ভেদে তার রূপ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সেজন্যই পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিম বঙ্গের রান্নার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। পার্থক্য দেখা যায় কুষ্টিয়ার বাউল গান আর বীরভূমের বাউল গানের মধ্যে, পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতালদের নাচের মধ্যে। শত বৈচিত্রের মধ্যেও সংস্কৃতির কোন কোন জায়গায় অভ্রান্ত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হিন্দু-মুসলিম সবার চালাঘরের চেহারাটা একই থাকে। ধনী- গরিব নির্বিশেষে এখনও পর্যন্ত বাঙ্গালীর প্রধান খাদ্য সেই ভাত-মাছই রয়ে গেছে।
প্রাচীন বাংলায় মানুষের পোশাক ছিল একটাই। ছেলেদের জন্য ধুতি আর মেয়েদের জন্য শাড়ি। নারী- পুরুষ উভয়ে গলায় এবং কানে অলংকার পড়ত। তবে কিছু কিছু লেখায় পাওয়া যায় যে পুরুষরা মাথায় পাগড়ি পড়ত। নারীরা উঁচু করে খোঁপা বেঁধে তা একটি বস্ত্র দিয়ে ঢেকে দিত। বঙ্গদেশের লোকেরা কালে কালে নতুন সংস্কৃতিকে বরণ করেছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মধ্যযুগে বঙ্গদেশে মুসলিম পোশাক চালু হয়। আবার উনিশ শতকে শাসক ইংরেজদের অনুকরণে চালু হয়েছিল পশ্চিমা পোশাক। ইন্দো-মুসলিম যুগের আগে সেলাই করা পোশাকের রীতি ছিল না। এই রীতি চালু করে মুসলমানেরা। দরজি শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। বাঙ্গালী পুরুষরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের পোশাক পরলেও মহিলারা সবসময় জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে শাড়িই পড়ে এসেছে। এমনকি ইংরেজদের সংস্পর্শে এসে পুরুষরা পশ্চিমা পোশাক পরলেও মহিলারা পশ্চিমা পোশাককে গ্রহন করেনি। পরবর্তীতে মহিলারা বাইরে কাজকর্ম করা শুরু করলে শাড়ি পড়ে যানবাহনে চলাফেরা করাতে অসুবিধা বোধ করতেন। তখন অসনাতনী পোশাক সালোয়ার-কামিজের কদর বাড়ে বাঙ্গালী সমাজে।
প্রাচীন যুগে মানুষের জুতো পড়ার রীতি ছিল না। ধনী- গরিব নির্বিশেষে সবাই খালি পায়ে চলাফেরা করত। এমনকি ১৮২০ সালের আঁকা মহররমের মিছিলের একটা ছবিতে মাত্র দুইজনের পায়ে জুতো ছিল। বাকিরা খালি পায়ে ছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মানুষ জুতো ধার করে বারোয়ারি পুজো দেখতে যেত।ধারনা করা হয় গ্রামের মানুষেরা জুতো পড়া শুরু করে বিংশ শতকে।
কেশবিন্যাসেও পরিবর্তন দেখা যায় বাঙ্গালী সমাজে। প্রাচীন কালের ছবিগুলোতে মহিলাদের খোলা চুল খুব কমই দেখা যায়। বেশির ভাগ ছবিতে মহিলাদের চুল খোঁপা করে বাঁধা। বিভিন্ন রকমের খোঁপা বাঁধার প্রচলন ছিল-মেট্রো খোঁপা, দোলন খোঁপা, ফিরিঙ্গী খোঁপা,খেয়াল খোঁপা, ভৈরবী খোঁপা ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ফিরিঙ্গী খোঁপা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল, এমনকি দুর্গা প্রতিমায়ও এ ধরনের খোঁপা দেখা যায়। পুরুষদের মধ্যে ছিল আলবার্ট ফ্যাশনে চুল বাঁধার রীতি। অনেকে চুল এবং গোঁফে কলপ দিত। তবে দাড়ি রাখার প্রচলন হয় মুসলিমদের প্রভাবে।
বাংলাদেশ হচ্ছে খাল-বিল- নদী- নালার দেশ। তাই বিভিন্ন রকমের মাছের প্রাচুর্যতা এদেশে আদিকাল থেকে। এছাড়া পলিমাটির কারনে বাংলার জমিগুলো ধান চাষের উপযোগী। একারনে এদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত-মাছ। বাংলার গৃহিণীরাও মাছ রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। জোড়াসাঁকোর বাড়ির প্রজ্ঞাসুন্দরী তার রান্নার বইতে মাছ রান্নার ৫৮ রকমের পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। তবে বঙ্গদেশে যেসব মোঘল কর্মকর্তারা থাকত তারা বাঙ্গালীদের এই ভাত- মাছ খাওয়া পছন্দ করতেন না।
মাছ আদিকালের খাবার হলেও প্রাচীন বাংলায় ডাল খাবার প্রচলন শুরু হয় অনেক পরে। চর্যাপদে ডালের উল্লেখ নেই। পরবর্তীতে উত্তর ভারত থেকে ডাল আমদানি করা হয়। সমাজের নিচের তলার মানুষেরা শামুক, কাঁকড়া, মোরগ, হাঁস, শুয়োর, বিভিন্ন রকমের পাখির মাংস খেত। ভদ্র সমাজের মানুষজন হরিণ, কচ্ছপ,ছাগল, মেষ ইত্যাদি খেত। তবে মাছ-মাংস খাওয়া নিয়ে বিধবা সহ কারও কারও বাছ-বিচার থাকে। ফলে বাঙ্গালী সমাজে বৈচিত্র্য আসে নিরামিষ রান্না এবং মিষ্টি তৈরিতে। রসগোল্লা এবং সন্দেশকে বাঙ্গালীর অন্যতম মিষ্টান্ন বলে উল্লেখ করা হলেও কয়েকশো বছর আগের সাহিত্যে এগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বাঙ্গালী বৈচিত্র্য আনে বিভিন্ন রকমের পিঠা , আচার, কাসুন্দি বানানোতে। পর্তুগীজ ব্যবসায়ীরা এদেশে এনেছিল আলু, লঙ্কা মরিচ, মশলা ইত্যাদি অনেক কিছু। তবে সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষদের অভাব সবসময় লেগেই ছিল। যদিও বাংলায় প্রথমদিকে রেস্টুরেন্ট খোলা হয় ইংরেজদের জন্য, তবুও ধীরে ধীরে সেখানে বাঙ্গালী তরুণদের প্রবেশ ঘটে। বাড়িতে যেসব খাবার খাওয়া বারন করেছিল তারা সেগুলো এসব রেস্টুরেন্টে খেতে যেত। এভাবেই বাঙ্গালী সমাজে চালু হয় রেস্টুরেন্ট কালচারের।
এ ধরনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সুদীপ্তকে দেখাত ইয়াসমিন। বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়ে বই সংগ্রহ করত। এছাড়া পড়ত বিভিন্ন সময়ের লেখা গল্পের বইগুলো। সুদীপ্তও বুজতে পেরেছিল বিষয়টা অবজ্ঞা করার মত না। তারও এক ধরনের ভাল লাগা তৈরি হয় বিষয়গুলো জানার প্রতি। এরই মাঝে একদিন প্রেম আসে দুজনের মাঝে। দেহের সাথে দেহের প্রেম। রবিঠাকুর ঠিকই বলেছেন। আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বালানোর পূর্বে সকালবেলার সলতে পাকানো। দেহের প্রেমের আগে সাড়ে ছয়শ স্কয়ার ফিটের বাসায় প্রেমের আবির্ভাব ঘটেছিল। তা ছিল চোখের প্রেম, স্পর্শের প্রেম। ইয়াসমিন যখন মনোযোগ দিয়ে কোন বই পড়ত তখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত সুদীপ্ত। ভাল লাগত গোছল শেষে কয়েক ফোঁটা পানি যখন ইয়াসমিনের মুখে জমে থাকা দেখতে। সিনেমা দেখার সময় ইচ্ছে করত হাতটা পেছনে নিয়ে ইয়ামিনের কাঁধটা ছুতে। কিন্তু ইয়াসমিন দেখে ফেলায় হাত সরিয়ে নিতো। সেই ইচ্ছেটুকু কিছুটা পূরণ হত যখন ইয়াসমিন ফেরার পথে রিক্সায় সুদীপ্তর হাতে হাত রেখে মাথাটা এলিয়ে দিত সুদীপ্তর কাঁধে। কিন্তু একদিন সব বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল।
লাইট জ্বালানো থাকলে সুদীপ্ত ঘুমাতে পারেনা, তাই চার্জার লাইট দিয়ে বই পড়ত ইয়াসমিন। একরাতে শোয়ার কিছুক্ষণ পর কান্নার আওয়াজ পায় সুদীপ্ত।
“কাঁদছ কেন?” সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করে।
“গল্পের নায়িকা নায়ককে দেখার জন্য বিদেশে চলে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মিল হয়নি। তাই কাঁদছি।”
“এটা তো গল্প। গল্প পড়ে এত কাঁদার কি আছে?”
“গল্প হয়েছে তো কি হয়েছে? কারও না কারও জীবনে হয়তো সত্যিকার অর্থে এই ঘটনা ঘটেছে।”
“কোথায় কে না কে ছেঁকা খেয়েছে তার জন্য তুমি কাঁদছ? এত যদি কাঁদতে ইচ্ছে করে তাহলে আমার জন্য একটু কাঁদ। আমারও তো কিছু না কিছু দুঃখ আছে।”
“আমি তোমার বৌ। কোথায় তুমি আমার কান্না থামাবা তা না করে তুমি আমাকে উস্কে দিচ্ছ আরও কান্নার জন্য” ইয়াসমিন বিরক্ত হল।
সুদীপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসল। বিছানায় বসল গিয়ে। সুদীপ্ত অবাক হয়ে ইয়াসমিনকে দেখতে লাগলো। আলোকের ঝর্ণাধারা কাকে বলে সুদীপ্ত জানে না। কিন্তু ইয়াসমিনের গালে যে অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে তাকে আলোকের ঝর্ণাধারা মনে হচ্ছে। সুদীপ্ত আলতো করে ইয়াসমিনের মুখটা ধরে অশ্রুধারা শুষে নিল। ইয়াসমিনের পুরো শরীর কেঁপে উঠছে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের দুজনের মাঝে কোন একটা ঘটনা ঘটবে।
“মিনু। একটা কথা তোমায় বলা হয়নি।”
“কি কথা?”
“আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।” ইয়াসমিন সুদীপ্তর জামা আঁকড়ে ধরল। সুদীপ্ত ইয়াসমিনকে গ্রহন করল।
সুদীপ্তর জন্য প্রথম নারীসঙ্গ হলেও ইয়াসমিনের জন্য তা প্রথম ছিল না। ইয়াসমিন এর আগে বহু পুরুষের সান্নিধ্যে এসেছে। কিন্তু সেখানে ছিল বিপরীত লিঙ্গের এক অবাধ্য বিচরন। ছিল ইয়াসমিনকে ভোগ করার এক উন্মত্ততা। এই সঙ্গটা অন্যরকম ছিল। ছিল পরস্পরকে ভালবাসার, আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার আকুলতা। এরপর আর সুদীপ্তকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করতে হয়নি।
(এই পর্বের তথ্যগুলো নেয়া হয়েছে গোলাম মুরশিদ রচিত “হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি” বইটি থেকে।)(চলবে)