গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১৫
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
ফায়াজ বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তার ঠোঁটের কোণ দিয়ে রক্ত ভের হচ্ছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে।অফিস থেকে ফেরার পথে হেঁটে হেঁটে ফুলের দোকান খুজছিল সে প্রিয়তমার জন্য বেলীফুল কিনতে চেয়েছিল ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলো তাজা তাজা বেলীফুল নিয়ে হাতে নিয়ে সে রিক্সায় চড়ে বসলো।রিক্সা চলছিল কিন্তু বৃষ্টির কারণে একটু কষ্ট হচ্ছিল হঠাৎ পিছন থেকে সিএনজি এসে জোড়ে রিক্সাটাকে ধাক্কা দেয় যার ফলে ফায়াজ রিক্সা থেকে পরে যায়।রিক্সাচালকও অনেকটা ব্যাথা পায় আশেপাশে খুব কম মানুষ ছিল বৃষ্টির জন্য যে কয়জন ছিল তারা দৌড়ে এসে তাদের কে নিচ থেকে ওঠায়। সিএনজি চালকও তাদের কাছে আসে ফায়াজ সবাইকে অনুরোধ করে রিক্সাটা ঠিক করে দিতে।ফায়াজ পায়ে অনেক জোড়েই ব্যাথাটা পেয়েছে সে রিক্সাচালককে কিছু টাকা দিয়ে বললো,
~আপনি এ টাকা গুলো রাখেন দরকার পরবে।
রিক্সাচালক নিতে চাইছিল না ফায়াজ জোর করে দিয়ে দিলো।সিএনজি চালক ফায়াজকে বললো,
~ভাই আপনি আমার গাড়িতে বহেন আমি আফনারে বাইত পৌছায়া দেই।
ফায়াজ বললো,
~কোনো দরকার নেই বাসার সামনে এসে পরেছি।
হাতের বেলীফুলের প্যাকেটটা সে শক্ত করে ধরে রেখেছিল তাই পরেনি ফায়াজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।
প্রায় অনেকক্ষন পর সে বাসার সামনে চলে আসলো।রাত হয়েগেছে ফিহা আর বাকি সবাই চিন্তা করছে ফোনটাও বন্ধ হয়ে গেছে।ফায়াজ বাসার ভিতরে ঢুকে দেখলো ফাহাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ফায়াজ আস্তে আস্তে তার কাছে যেতেই ফাহাদ মুখ তুলে তাকালো ফায়াজকে দেখে চোখ বড় বড় করে বললো,
~ফায়াজ তুই কোথায় ছিলি?জানিস আমরা সবাই কতো চিন্তিত ছিলাম ফিহা তো অজ্ঞান হয়ে গেছে তোর টেনশনে।
ফায়াজ ফিহার অবস্থার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ফাহাদকে কিছু না বলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফিহার রুমের
দিকে চলে গেলো ফিহার রুমের ভিতর ঢুকে দেখলো
সবাই দাড়িয়ে আছে বিছানার দিকে তাকাতেই আতকে উঠে ফিহা বিছানায় শুয়ে আছে তার চোখ দুটো বন্ধ।
ফায়াজের মা ফায়াজকে দেখে তার কাছে গিয়ে বললেন,
~ফায়াজ,তোর ঠোট কীভাবে কেটেছে? আর
কপালের চুল গুলো সরিয়ে কপালের কেটে যাওয়া অংশ দেখে ফায়াজের মা আতকে উঠলো।
ফায়াজ মায়ের কথার জবাব না দিয়ে ফিহার কাছে চলে গেলো।ফায়াজের মা ছেলের পিছন পিছন চলে আসলো
ফায়াজ ফিহার মুখের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে ফায়াজের মা বললেন,
~ফায়াজ তোর চিন্তায় মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
ফায়াজ কিছু বলছে না আবীর বললো,
~ফায়াজ তোমার এ অবস্থা কীভাবে হলো?
ফায়াজ ফিহার দিকে নজর রেখেই বললো,
~বাসায় আসার সময় ছোট এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।
রুপা বললো,
~ফায়াজ ভাই তোমার অবস্থা খারাপ আগে তোমার চিকিৎসা করাতে হবে।
রুপার কথায় কোনো ভাবান্তর নেই ফায়াজের সে তার হাতে থাকা প্যাকেট থেকে একটা লেটার বের করে আবীরের দিকে দিয়ে বললো,
~আমার জয়েনিং লেটার।
আবীর সেটা নিয়ে খুলে দেখলো আবীর বললো,
~ অভিনন্দন তোকে।
হঠাৎ ফিহা চোখ পিটপিট করে খুলতে লাগলো
আমি চোখ আস্তে করে খুলে দেখি ফায়াজ ভাই বসে আছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই দাড়িয়ে আছে।আমি উঠে বসে পরলাম ফায়াজ ভাইয়ের কপালে ক্ষত চিহ্ন দেখে আমি অস্থির হয়ে বললাম,
~কী হয়েছে তোমার?ব্যাথা কীভাবে পেলে?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~কিছু হয়নি আমার তুই কোনো প্রেসার নিবি না।
আমি ফ্রেশ হয়ে তোর কাছে আসছি
বলেই সে রুমের বাহিরে চলে গেলে।
আমরা সবাই সোফার রুমে বসে আছি ফায়াজ ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে ফায়াজ ভাই নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,
~আমি কালই ফিহাকে বিয়ে করতে চাই।
ফায়াজ ভাইয়ের কথায় সবাই অবাক মা ফায়াজ ভাইকে বললেন,
~ফায়াজ কী বলছো?কালকেই বিয়ে কীভাবে হবে।
বাবা বললেন,
~ফায়াজ,বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না
মা আর বাবার কথায় ফায়াজ ভাই বললেন,
~কাল যদি বিয়ে না হয় তাহলে আমি ফিহাকে নিয়ে চলে যাবো।
বলেই সে তার রুমে চলে গেলেন হঠাৎ তার কী হলো?
খালামণি বললেন,
~ফায়াজ যেটা চাইছে সেটাই হবে।এতে কারো আপত্তি থাকলে বলতে পারেন বিয়ে এখন হবে অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে।
সবাই কথায় ব্যস্ত হয়ে পরলো আমি ধীর পায়ে ফায়াজ ভাইয়ের নাহ আজ থেকে শুধু ফায়াজ বলবো।ফায়াজের রুমে চলে আসলাম দরজা ঠেলে রুমের ভিতর যেতেই দেখি ফায়াজ গুটিশুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে।
আমি তার পাশে বসে পরলাম সে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার কোলে মাথা রাখলেন আমি তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।ফায়াজ বললেন,
~তোকে এখানেই রেখে দিবো।কালই আমাদের বিয়ে হবে
আমি বললাম,
~আপনি যেটা চান সেটাই হবে।আমিও আপনাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না ফায়াজ
ফায়াজ আমার মুখে ভাই শব্দ না শুনে আমার মুখের দিকে তাকালেন আমি তার দিকে তাকিয়ে লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিলাম।সে পুনোরায় আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন
সবাই রাজি হয়েছে তাই কালই আমাদের কাবিন করে রাখা হবে আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আগামীকালের কথা ভাবছি কী হবে কালকে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হবে তো নাকি কোনো প্রবলেম হবে।
সব জেনো ঠিকঠাকভাবে হয়ে যায় এটিই দোয়া রইলো হঠাৎ আমার ঘরের দরজায় টোকা পরলো আমি বললাম ভিতরে আসতে দরজা ঠেলে রুমে ডুকে পরলো মা আমি মাকে দেখে বললাম,
~কী হয়েছে?
মা বললো,
~ফায়াজের ফুপি আর চাচারা কালকেই চলে আসবে রাতে তোর আর ফায়াজের বিয়ে।
আমি বললাম,
~যাক সবাই তাহলে আসছে।
মা বললো,
~ফিহা,তুই কালকে আমার বিয়ের বেনারসিটা পরিস তোকে দেখতে অনেক মিষ্টি লাগবে
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
খালামণি চলে আসার পর আমরা অনেকক্ষন আড্ডা মেরে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালটা যাতে সুন্দর হয় আমার আর ফায়াজের বিয়েটা যাতে বিনা কোনো সমস্যায় সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
সকালটা কী নিয়ে আসবে তা কেউ জানে না দুজন ভালোবাসার মানুষ কী এক হতে পারবে নাকি কোনো ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দিবে যাই হবে পরিবর্তন নিয়ে আসবে অনেকের জীবনে।
সকালে আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস পরতেই আমি চোখ খুলে দেখি ফায়াজ আমার উপর ঝুঁকে আছে।আমি তাকে দেখে অবাক হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মা আর খালামণি নেই। ফায়াজ আমার গালে গাল ঘেষে বললেন,
~Good morning.
আমি হতবাক হয়ে বললাম,
~আপনি এই রুমে?
ফায়াজ বললেন,
~আমার বউয়ের রুমে আসতে কারো পারমিশন লাগবে নাকি?
আমি বললাম,
~ভাবি দেখলে অনেক পঁচাবে প্লিজ বের হন।
ফায়াজ উঠে আমার পাশে শুয়ে পরলেন আর বললেন,
~কিছু হবে না।
আমি এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
~প্লিজ চলে যান।
ফায়াজ ভাই উঠে বসে আমার গালে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন তারপর কপালে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,
~এটার শাস্তি রাতের জন্য রেখে দিলাম।
এতটুকু বলে সে রুম থেকে চলে গেলো আমি ভয়ে একটা ঢোক গিললাম।
সকাল থেকেই সবাই আসা শুরু করেছেন ফায়াজের ফুফুরা আমাকে অনেক দোয়া করলেন রুপা আপুও স্বাভাবিক আছে। সব ঠিকঠাক আছে আমি নাস্তা করে সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি তখনই দরজার দিকে আমার চোখ গেলো আমার বেস্টু আরিফা দাড়িয়ে আছে পাশে তার হাসবেন্ড। আমি দৌড়ে গিয়ে আরিফাকে জড়িয়ে ধরলাম সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
~তুই এখানে?
আরিফা বললো,
~তুই না বললে কী হয়েছে?আমার দুলাভাই তো বলেছে।
তখনই ফায়াজ পিছন থেকে বললেন,
~তোমরা এতো কম সময়ে এসে পরবে এটা জানতাম না।
আমি পিছন ফায়জকে দেখলাম এ মানুষটা আমার কতো খেয়াল রাখে আমার খুশির জন্য কতো কিছু করে। আসলেই আমি অনেক ভাগ্যবতী তার মতো একটা জীবনসঙ্গী পেতে যাচ্ছি।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/389060459482399/