#অপূর্ণতায়_পূর্ণতা
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_১৮
‘সরি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আপনি আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে পাবেন মিস. অরুনি।’
অরিদ্রের কথা শুনে থমকে গেলো অরুনি। সেদিন অরিদ্রকে ভয়ংকর রাগের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার পর তার কাছে যাওয়ার সাহস করে নি অরুনি। কিন্তু গতকাল রাতে যখন অরিদ্র তাকে ফোন করে রেস্টুরেন্টে ডেকেছিলো তখন তার মনে বসন্তের ফুল ফুটেছিল। খুশি খুশি চলে এসেছে সে। কিন্তু কি বললো অরিদ্র? এটা বলার জন্য তাকে ডেকেছে? চোখ দুটো ছলছল করছে তার।
‘আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না কেন অরিদ্র?’
‘আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি অরুনি। আমার সাথে গভীর ভাবে মিশে আছে সে। আপনাকে কখনোই আমি আপন করতে পারবো না।’
অরিদ্রের কথায় চমকে গেলো অরুনি। অরিদ্র কাউকে ভালোবাসে? এটা শুনতেই বুকটা ফেটে আসছে তার। বিশ বছরের জীবনে কোন পুরুষের উপরই আকৃষ্ট হয় নি সে। এই প্রথম পুরুষ যাকে কিছু না ভেবেই মনে জায়গা দিয়েছিলো সে। কিন্তু সে তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে? তার মনে অন্য কেউ আছে?
‘ঠিক আছে। কিন্তু কে সেই সৌভাগ্যবতী তা বলবেন?’
অরিদ্র মুচকি হাসলো। বললো, ‘কৌতুহলে জানতে চাইছেন নাকি ক্ষতি করতে?’
‘কারো থেকে জোর করে ভালোবাসা হয় না। আমার ভালোবাসাটা তো একপাক্ষিক। আপনি তো আমায় ভালোবাসেন নি। তাই আমি জোর করে চাইলেও আপনাকে পাবো না। আপনার মনে অন্য কারো নাম লিখা হয়ে গেছে। যেটা আমি মুছতে পারবো না। শুধু কৌতুহলে জানতে ইচ্ছুক সে কে?’
অরুনির কথা শুনে অবাক হলো অরিদ্র। মেয়েটার বয়স কম হলেও ভালোই কথা জানে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে জানে। মেয়েটা কি বেশি কষ্ট পেলো? কষ্ট পেলেই বা আর কি করার? সে তো আর পারবে না তার কষ্ট দূর করতে। মেয়েটা যা চায় তা কখনোই সম্ভব না!
দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।
‘আপনার বোন ইশারা।’
অরুনি বিস্মিত হলো। ‘আপনি ইশা আপুকে ভালোবাসেন? ইশা আপুর তো বি…’
অরুনি আর বলতে পারলো না। তাকে থামিয়ে দিলো অরিদ্র।
‘আমি সব জানি অরুনি। আপনার মতো আমার ভালোবাসাটাও একপাক্ষিক। বছরের পর বছর ধরে একপাক্ষিক ভাবে ভালোবেসেছি তাকে। তাকে তার অন্য কাউকে কখনোই মনে জায়গা দিতে পারি নি। তাকে আমি ভালোবাসি।’
‘ইশা আপু জানে না আপনি তাকে ভালোবাসেন?’
অরিদ্র হেসে বললো, না। জানে না।
তো বলছেন না কেন?
‘সব কথা বলতে হয় না অরুনি। কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো। এতে করে আমি দুঃখ পেলেও অপর জন ঠিক থাকবে।’
বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো অরিদ্র। অরুনি ঠাঁয় বসে থাকলো। চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে শ্রাবণের অবাধ্য জলগুলো। ভালোবাসলে এতো কষ্ট পেতে হয়? তার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট পেয়ে বেঁচে আছে অরিদ্র!
বাড়িতে পৌঁছে সোজা মায়ের কাছে গেলো অরিদ্র। মাকে সবকিছু জানানো প্রয়োজন। অরিদ্র মায়ের নিকট গিয়ে দাঁড়ালো।
‘মা আমি ইশারাকে ভালোবাসি।!’
ভদ্রমহিলা বেশ আশ্চর্য হলেন। অরিদ্র সেই ডিবোর্সী মেয়েকে ভালোবাসে? এটা কি করে সম্ভব? এটা তো তিনি মেনে নিবেন না! ভদ্রমহিলা রেগে গেলেন। বললেন,
‘অরিদ্র এসব কি বলছো তুমি?’
‘ঠিকই বলছি মা। আমি ইশারাকে বিয়ে করতে চাই।’
ভদ্রমহিলা এবার বেশ উত্তেজিত হলেন। কড়া গলায় বললেন, ‘ওই মেয়ে এ বাড়ির বউ হয়ে আসতে পারবে না। কখনোই তাকে মেনে নিবো না আমি।’
অরিদ্র হতাশ হলো। হঠাৎই সে মায়ের কোলে শুয়ে পড়লো। আদুরে সুরে বললো, ‘আমি ওকে ভালবাসি মা। ওকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারি না। মা তুমি কি চাও না তোমার ছেলে ভালো থাকুক? প্লিজ মা প্লিজ। আমার জন্য রাজি হয়ে যাও!’
অরিদ্রের মা থমকে গেলেন। ছেলের কথাকে ফেলতে পারলেন না ভদ্রমহিলা।
__________________
আজ বাড়িতে বেশ রমরমা পরিবেশ। আনন্দ মুখরিত পরিবেশ। গতকাল আপুর শ্বশুড় বাড়ি থেকে সবাই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তাদের আদর যত্নেই ব্যস্ত আছে সবাই।
বাবাসহ সবাই ড্রইং রুমে বসে আছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন সবার মুখে হাসি। আমি বার বার খেয়াল একটা জিনিস খেয়াল করেছি। আপুর শাশুড়ি আমার দিকে আড়চোখে দেখছেন। তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর মিষ্টি হাসছেন। অবাক হলাম কিন্তু কিছু বললাম না। আপু আর আমি কথা বলছি। হঠাৎ করেই ভদ্রমহিলা বললেন,
‘বেয়াই সাহেব আপনার ছোট মেয়েকে আমার ছোট বউ করে নিতে চাই।’
ভদ্রমহিলার কথায় আকাশ সম বিস্ময় আমায় চেপে ধরলো। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কি বললেন তিনি? আমাকে অরিদ্রের জন্য? তিনি কি আমার সম্পর্কে জানেন না? কখনোই সম্ভব না এটা!
বাবা হাসি মুখে বললেন, আপনি আমার মেয়ে সম্বন্ধে সব জানেন?
‘ওসবে আমার কোন কাজ নেই। আমি বাড়িতে বউ পেলেই আমি খুশি। আপনি না করতে পারবেন না। না করলে কিন্তু উঠিয়ে নিয়ে যাবো।’
বাবা হাসলেন। শান্ত ভাবেই বললেন, দেখুন বেয়াইন সাহেবা আমার মেয়েটা একটা ধাক্কা খেয়েছে। এরপর ওর অবস্থা কেমন তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন? ও যদি রাজি হয় আমার কোন আপত্তি নেই। আমি ওর খুশিতেই খুশি।
বাবা আমার উপর সব ছেড়ে দিলেন। উৎসুক জনতা আমার দিকে তাকিয়ে। আপু আমার হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ বলে দে।’
বিস্মিত হলাম। কি বলছে আপু?
‘আপু তুই পাগল হলি নাকি?’
আপু শান্ত হয়েই বললো, ‘আমি ঠিক আছি ইশা।’
‘কি সব আবাল তাবল বলছিস? এটা কখনোই সম্ভব না আপু!’
‘কেন সম্ভব না ইশা? অরিদ্র কি খারাপ নাকি?’
‘আমার জন্য অন্য কারো জীবন আমি নষ্ট করতে পারবো না। অরিদ্র অনেক ভালো ছেলে। সে আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবে।’
‘তাই যদি হতো তাহলে অরুনি রিজেক্ট হতো না। তাই যদি হতো তাহলে অরিদ্র তোকে পাগলের মতো ভালোবাসতো না। তাই যদি হতো তাহলে অরিদ্র তোকে ভুলে যেতো।’
আপুর কথায় আরেক দফা হতবাক হলাম। কি বললো আপু? অরিদ্র আমাকে ভালোবাসে? কি বললো এটা! কিছুই বুঝতে পারলাম না।
‘আপু কি বলছিস তুই? ঠিক আছিস তো?’
‘অরিদ্র তোকে ভালোবাসে ইশা। অনেক ভালোবাসে তোকে।’
কি বলছে আপু! এটা কখনোই সম্ভব না। বললাম, ‘আপু আমি পারবো না। প্লিজ জোর করিস না।’
‘ইশা তোর লাইফ তোর ডিসিশন। আর কিছু বলবো না।’
আপু আর কিছু বললো না। ভদ্রমহিলা আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। নিরব পরিবেশ বিরাজমান। সবাই উৎকণ্ঠা হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নিরবতা কাটিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,
‘আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই অরিদ্র!’
তিনি সায় দিলেন।
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন অরিদ্র। মুখে তার গাম্ভীর্যের ছায়া। শান্ত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এমন একটা ভাব ধরেছেন যেন কিছুই হয় নি। তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,
‘আপনি আমাকে ভালোবাসেন অরিদ্র?’
তিনি শান্ত ভাবেই বললেন, ‘হ্যা আপনাকে ভালোবাসি।’
হতাশ কণ্ঠে বললাম, কেন? আমাকে ভালোবাসেন কেন?আমার সম্পর্কে আপনি কি জানেন না?
হ্যা জানি। তাও আপনাকে ভালোবাসি।
‘কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না অরিদ্র!’
অরিদ্র বললেন, ‘সত্যি বলছেন ইশারা?’
হতবাক হয়ে গেলাম। তার কথার কোন উত্তর নেই আমার কাছে। তাকে ভালোবাসি কিনা তাও আমার জানা নেই। কেন দূরে সরিয়ে দিচ্ছি তাও আমার জানা নেই। শুধু শুভ্রের করা প্রতারণাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভালোবাসা মানেই যন্ত্রনা যা পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। আমি যে আর কারো ধোঁকায় পড়তে চাই না!
চলবে…….
(রিচেক হয় নি। তাড়াহুড়োয় লিখেছি অগোছালো হয়েছে। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটার শেষ দিকে চলে এসেছি। খুব তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আগামী ২৪ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত আমার ক্লাসটেস্ট আছে। তাই গল্পটা দুদিন দিতে পারবো না। কেউ অপেক্ষা করবেন না। ২৬ তারিখে দিবো ইনশাআল্লাহ।)