নীলকণ্ঠা পর্ব-৩২

0
1834

#নীলকণ্ঠা

৩২|
পরীকে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মইনুর শেখের রাতের ঘুম কে*ড়ে নিয়েছে ফায়াজ। মইনুর শেখ অশান্তিতে ভুগছেন, তার শ্বাস নিতে ক*ষ্ট হচ্ছে। দড়দড় করে ঘেমে শুভ্র পাঞ্জাবি সিক্ত করে ফেলছেন। হায় হুতাশের মধ্যে দিন পাড় করছেন। চেনা জানা সকল ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গদের একে একে ফোন করেছেন। যে করেই হোক পরীকে তার লাগবেই। গত দুদিন যাবত গ্রামে ডিবি পুলিশের আনাগোনা। সেদিন রাতে উপস্থিত সবাইকে স*ন্দে*হের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মইনুর শেখ। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। গ্রামের কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন তা ফায়াজ পরীকে নিয়ে কোথায় গেছে। গ্রামের কোথাও ফায়াজ বা পরীকে খুঁ*জে পাওয়া যায় নি। এ যেন কোন সোনার কাঠি, রূপার কাঠি ঘুড়িয়ে মুহূর্তের মাঝে দুজনযে অ*দৃশ্য করে দেয়া হয়েছে।

গুনে গুনে পাড় হলো পাঁচদিন। চারদিকে ভোরের আলো ফুটেছে সবে। সোনালি রোদ্দুরের এক ফালি এসে জমিন ছুঁয়েছে। শীত শীত ভাব এসেছে। শীত আর রোদ্দুর গায়ে মাখতে বেশ লাগছে। আতর আলি বাজার করে বাড়ি ফিরছে। গত পাচঁদিনেও পরীর খোঁজ না পাওয়ায় খোঁজাখুঁজি কিছুটা শিথিল হয়েছে। গ্রামের উপর চা*প কমেছে। দেখে মনে হচ্ছে পরীর নি*খোঁ*জে মইনুর শেখ ছাড়া গ্রামের বাদ বাকি সকলেই খুশি। শুধু মাত্র মইনুর শেখই চি*ন্তায় চি*ন্তায় অ*সুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। আতর আলি ভ্যান থেকে নেমে জঙ্গলের সরু পথে হাটা ধরল। হেলে দুলে হাটতে হাটতে হঠাৎ খেয়াল করল ডান দিকে কিছুটা দূরে সুপারি গাছের নিচে বেশ সংখ্যক কাক জড়ো হয়েছে। আতর আলি দাঁড়িয়ে পড়লো। কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো। কি এমন ওখানে যে এত কাক এসেছে? আতর আলি দাঁড়ালো কিছুক্ষন। আরো কাক উড়ে এসে বসছে সেখানে।

আতর আলি বাজারের ব্যাগ বড় শিমুল গাছে গোড়ায় ঠেকিয়ে সেদিকে গেল। বাতাস করার ভঙ্গিমায় দুহাত দুদিকে নাড়াতে নাড়াতে কাক গুলোকে উড়িয়ে দিল। তবে কাক গুলো উড়ে চলে যায় নি। আশেপাশে বড় গাছগুলোর ডালে যেয়ে বসলো। মাথা নামিয়ে নিচে আতর আলির দিকে তাকিয়ে রইলো। আতর আলি কাকগুলো উড়িয়ে সামনে যেয়ে দেখল একটা পাটের বস্তা। বস্তার মুখ খোলা। তিনি দু হাটুতে ভর দিয়ে কুজো করে বস্তার খোলা মুখে তাকালো। কালো কালো কিছু দেখা যাচ্ছে। আতর আলি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বস্তার মাঝ বরাবর লা*থি মা*র*লো। বস্তা গড়িয়ে কিছুটা সামনে যেয়ে বস্তার ভেতর থেকে কিছু বেরিয়ে এলো। আতর আলি চমকে উঠল। কাছে যেয়ে উকি দিতেই শি*উরে উঠল। দ্রুত কদমে কয়েক পা পেছনে চলে গেলেন। তার শরীর কাঁ*পছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আতর আলি আর সময় ন*ষ্ট করলেন না জঙ্গলের মধ্যে দিকে দৌড় লাগালেন বাড়ির দিকে। জঙ্গলের রাস্তায় যে বাজারের ব্যাগ রেখেছিলেন সেটাও সে বেমালুম ভুলে গেলেন।

_______
গ্রামে পু*লিশের অভিযান শিথিল হতে না হতেই আবার আগমন। মইনুর শেখের বাড়ির জঙ্গলে লা*শ পাওয়া গেছে। তিন দিন আগের লা*শ। তাও যার তার না সয়ং নি*খোঁ*জ পরীর মৃ*ত লা*শ। মা*রা*র আগে কম হলেও সম্পূর্ণ একদিন শারীরিক অ*ত্মা*চার করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ ভীড় জমিয়েছে। ঠেলেঠুলে আসছে পরীর লা*শ দেখার জন্য। গত পাঁচ দিন আগের সুস্থ্য, সুন্দর মেয়েটার নি*থ*র দেহ জঙ্গলের শক্ত মাটির উপর প*ড়ে আছে। আব্দুল্লাহ বা তার সাথীরা কেউ ই এমন কিছুর আ*শঙ্কা করে নি। ফায়াজ তো তাদের বলেছিল সে ঢাকায় নিয়ে পরীকে ভালো ডাক্তার দেখাবে, মইনুর শেখের ক*বল থেকে পরীকে উদ্ধার করে সুস্থ্য করে তুলবে তাহলে? তাহলে পরী আজ লা*শ বে*শে শুয়ে আছে কেন? আর ফায়াজ, সে-ই বা কোথায়? মইনুর শেখ নেই তো এসবের পেছনে? পরীর মৃ*ত্যু*র খরব চারদিকে ছড়িয়ে পরলো। সবাই আ*শঙ্কা করছে মইনুর শেখই এর পেছনে দা*য়ী।

জঙ্গলের এলাকা পু*লিশ ঘেরাও করে রেখেছে। কাউকেই লা*শের কাছে আসতে দিচ্ছে না। লা*শকে ছোঁয়া বারন। কিন্তু মইনুর শেখ পা*গল প্রায়। পরীর র*ক্তা*ক্ত বি*দ্ধ*স্ত মাথা নিজের কোলের উপর রেখে আ*র্ত*নাদ করেই চলছেন। চিৎ*কার করে গলা বসিয়ে ফেলেছেন। তার চোখে যেন বাধ ভেঙ্গছে। যতই কাঁ*দছে*ন চোখের জল ফুরাচ্ছে না। চোখের সামনে সব ঝাপ্সা হচ্ছে বারবার। পরীর ডান হাত তুলে নিলেন। তর্জনী আর অনামিকা আঙ্গুল কে*টে ফেলা। আঙ্গুলের গোড়ায় র*ক্ত জমে আছে। তা দেখে মইনুর শেখ ঢু*করে কেঁ*দে উঠলেন। অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল মুঠোয় নিয়ে পরীর কাঁ*টা ছ্যা*ড়া হাতের পিঠ ঠোঁটের সাথে চেপে ধরলেন। পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে বললেন,

আমার মেয়ে, আমার মেয়ে। পরী। মা আমার।

কোলে রাখা পরীর মুখের দিকে তাকালো। দুচোখ উ*প*ড়ে ফেলা হয়েছে। নিচের ঠোঁট কে*টে থুঁতনির সাথে ঝু*লছে। কান কু*চি কু*চি করে কা*টা। গলায় গাঢ় নীল বেগুনী ফাঁ*সে*র দাগ। মইনুর শেখ পরীর মুখের উপর থেকে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে কপাল বরাবর চুমু খেলেন। পরীর ক্ষ*তবি*ক্ষ*ত গালে হাত রেখে বললেন,

মা, রাগ করেছিস বাবার সাথে? বাবা তোকে ব*ন্দি করে রেখেছি বলে। বাবা খুব পঁ*চা বাবা। আমি ওয়াদা করছি তোর সাথে কখনও খা*রাপ ব্যবহার করবো না। ব*ন্দি রাখবো না। তোর জন্য সুন্দর ঘর বানানো। সেই ঘরে তোর পছন্দের সব থাকবে। কথা বল বাবার সাথে। উঠে বস। চল বাড়ি ফিরে যাই। ক্ষুধা পেয়েছে না? আজ নিজের হাতে খাওয়াবো তোকে। উঠ মা। উঠে আয়।

রেনুকা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। শূন্য শূন্য লাগছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটার জন্য তার এত কান্না পাচ্ছে কেন বুঝতেই পারছে না রেনুকা। মাছ ভাজার সময় যেমন জায়গায় জায়গায় কা*টা হয় যেন মশলা ঢোকে তেমনি পরীর আপাদমস্তক তেমন কে*টে কে*টে লাল মরিচের গুড়া দেয়া। হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো খুবই বাজেভাবে কা*টা হয়েছে। দেখলেই বুকটা কে*পে উঠে। কিভাবে কেউ এভাবে একজনকে খু*ন করতে পাড়ে? এভাবে খু*ন করতে তার কি একবারও বুক কাঁ*পে নি? পরীর পোষাক ঠিক নেই। জায়গায় জায়গায় ছ্যাড়া। পরীর বি*দ্ধ*স্ত মুখশ্রীতে তাকাই পরীর সুন্দর মুখটা রেনুকার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মইনুর শেখের মতো করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে রেনুকার।

মইনুর শেখ দুপা দুই দিয়ে ছড়িয়ে বসে আছেন। দুবার পরীর গালে মৃদু থা*প্প*ড় মা*রলেন।
বাবার দিকে তাকা মা। বলেই থমকে গেলেন। পরীর মায়াবী চোখ যে আর নেই। কোন জা*নো*য়া*র তা উপ*রে ফেলেছে। মইনুর শেখ আবার বললেন,

আমি তোকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তুই আবার দেখতে পারবি। তোর পুকুর ঘাট পছন্দ না? আমি তোকে পুকুর ঘাটে নিয়ে যাবো। যতক্ষন ইচ্ছা পুকুর ঘাটে বসে থাকবি। বাবা বক*বো না। মা উঠ না। বাবার কথা শুনবি না মা আমার?

মইনুর শেখকে এভাবে হাতপা ছেড়ে কাঁ*দতে দেখে গ্রামের মানুষ হতভম্ব। এই গম্ভীর লোকটা কিভাবে হাউমাউ করে কাঁ*দছে! এলাকার মানুষ যাকে ব*দমেজা*জি, র*গচটা মানুষ দেখে এসেছে তার এহেম কান্ডে সকলে আশ্চর্য এমনকি রেনুকাও। মইনুর শেখ পা*গল হয়ে গেল নাকি? সবার মাঝেই এক প্রশ্ন সম্পত্তির জন্য কেউ এভাবে পা*গলামি করে?

পরী মা আমার, আমার লক্ষী সোনা। বলে চি*ৎকা*র দিয়ে কেঁ*দে উঠলেন মইনুর শেখ। বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে গলা ছেড়ে চিৎ*কার করে বললেন,
আল্লাহ গো। আমার মেয়েকে কে*ড়ে নিলা কেন আল্লাহ? আমার অবুঝ মেয়ে। কার কি ক্ষ*তি করছে আল্লাহ? আল্লাহ আমার নিষ্পাপ মেয়ে আল্লাহ গো। আমার মেয়ে, আমার মেয়ে। সোফিয়া, আমাকে ক্ষমা করো সোফিয়া। আমি আমার ওয়াদা রক্ষা করতে পাড়ি নাই। তোমার মতো পরীও ফাঁকি দিলো আমাকে। তোমাদের কাছে নিয়ে যাও আমাকে। আমি একা হয়ে গেছি সোফিয়া, একা হয়ে গেছি।

মইনুর শেখের চোখের জল গাল গড়িয়ে সাদা দাড়ির ভাজে লুকিয়ে পরছে। লা*শকে ময়না ত*দ*ন্তে পাঠাতে হবে। এমনিতেই তিন দিন আগের লা*শ। অবস্থা বেশি ভালো না। আরো দেড়ি হলে তদন্দ করতে অসুবিধা হবে। পুলিশ তাড়া দিচ্ছেন। মইনুর শেখ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন পরীর মৃ*ত শরীরটাকে। কিছুতেই ছাড়তে চাইছেন না। পুলিশ কর্মকর্তা এসে মইনুর শেখকে লা*শ থেকে দূরে যেতে বলতেই গ*র্জে উঠলেন তিনি। বললেন,

আমি আমার মেয়ে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ও এখানে একা ভ*য় পাবে। যাবো না আমি কোথাও।

অনেকভাবে বলার পরেও কাজ হলো না। মইনুর শেখ পরীকে ছা*ড়*লেন না। তাই পুলিশ এসে মইনুর শেখের থেকে পরীকে ছা*ড়া*তে লাগলো। মইনুর শেখের শরীরে আজ অদৃশ্য শক্তি ভর করেছে। পাচঁ ছয়জন মিলেও পরীর থেকে তাকে আলাদা করতে পারছেন না। মইনুর শেখ পুলিশদের ঠে*লে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। তিনি পরীকে নিতে দিবেন না। অনেক ধ্ব*স্তা*ধ*স্তির পর এক পর্যায়ে পুলিশ সফল হয়। পরীকে ছাড়িয়ে নেয় মইনুর শেখের বাহুবন্ধনী থেকে। দুই বাহু দুজন ধরে রেখেছে আর একজন মইনুর শেখের পেট জড়িয়ে রেখেছেন। পরীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মইনুর শেখ অ*ঙ্গ*চ্ছে*দের মতো য*ন্ত্র*ণায় কাতরে উঠলেন। মাটিতে থা*প্প*ড় দিতে দিতে বললেন,

ছে*ড়ে দাও আমাকে। আমার মেয়ের কাছে যেতে দাও আমাকে। পরী মা। মা আমার।

_______
পরীর লা*শ দেখার পর গ্রামের সবার মুখ থমথমে। কি সুন্দর মেয়েটা আর আজ তার কি হাল হয়ে গেল! বিকেলে আব্দুল্লার দোকানে ছয় সাত জনের ভীড়। হাসি নেই কারো মুখেই। তারা মলিনমুখে আলোচনা করছেন। আলোচনার মূখ্য বিষয় পরীর খু*ন। এক বয়োজ্যেষ্ঠ বললেন,

মাইয়াডার লগে এমন হইবো ভাবতেও পারি নাই।

শরীফ নামের এক যুবক বলল,

চাচা, সেইডা তো আমরাও ভাবি নাই।

এদের কথার মাঝে আব্দুল্লাহ ফোড়ন কাটলো। বলল,

আমি ভাবতেছি অন্য কথা।

আব্দুল্লাহর কথায় সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। আব্দুল্লাহ বলল,

লেখক সাহেবের কথা ভাবতাছি। গ্রাম থেইকা গেলে ভালোয় ভালোই আইলো পরী মাইয়াডার লা*শ। না জানি কবি সাহেবের কোন বিপদ হইছে।

সুমন আব্দুল্লার সমবয়সী। সে বলল,
আমার মনে হয় এগুলান ওই শ*য়*তান মইনুর শেখের কাম। এহন নাটক কইরা কা*ন্দে। কয় পরী হের মাইয়া। কেমনে মাইয়াডার উপর অ*ত্মা*চার করছে আমরা তো দেখছি।

শরীফ বলল,
সুমন ভাই। আমার কেন জানি মনে হইলো মইনুর শেখ নাটক করে না। দেখলেন না কেমনে চি*ল্লা*ইয়া চি*ল্লা*ইয়া কানলো।

সুমন বলল,
আরে সব নাটক, যাতে তারে কেউ স*ন্দেহ না করে।

বয়োজ্যেষ্ঠ তপ্ত নিশ্বাস ফেললেন। বললেন,
জানি না বাপু কার মনে কি আছে? আল্লাহ তা আলাই ভালো জানেন।

_______
ঘর অন্ধকারাবৃত। তোশক ছাড়া শক্ত খাটে বসে আছেন মইনুর শেখ। দৃষ্টি শূন্যে। কিছুক্ষন আগে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার সাথে দেখা করে গেছেন। যাওয়ার সময় বলে গেছেন দ্রুত ত*দন্ত করে খু*নিকে খুঁজে বের করবে। অবশ্য এতে মইনুর শেখের তেমন হেলদুল দেখলেন না। যে চলে গেছে তাকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। বাড়িতে কারো মনের অবস্থাই ভালো নেই। পরীর মৃ*ত্যুতে সকলেই শো*কা*হত। পরীর কথা মনে পরলেই আমেনা ঢুকরে কেঁ*দে উঠেন। পরীর জন্ম থেকে সে পরীর সাথে। বড্ড মায়া তার পরীর জন্য। যখন রক্তের সম্পর্ক ধোকা দেয়, ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো আগলে রাখে। সদ্য জন্মানো পরীর মোলায়েম আঙ্গুল দিয়ে আমেনার হাত ধরেছিল। আর আজ সে এই পৃথিবীতে নেই। ভেবেই আবার কেঁ*দে উঠলেন। রেনুকা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। মইনুর শেখকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। এত দিন পরী উদ্ভট কাজ করে রেনুকার বি*র*ক্তি*র কারন হতো আর আজ সেই পরীর জন্যই ক*ষ্ট হচ্ছে। মইনুর শেখকে কিছু বলার ভাষা নেই। আজকের মতো কোনদিন মইনুর শেখকে ভে*ঙ্গে পরতে দেখে নি।

রেনুকা?

আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে মইনুর শেখের ডাকে হঠাৎ চমকে উঠলো রেনুকা। নিজেকে ধাতস্থ করে ঢোক গিলে সাড়া দিল।

জ্ব-জ্বি।

ভেতরে এসো। মইনুর শেখের শিতল কন্ঠ।

ঘরের ভেতর অন্ধকার। বাহিরের স্বল্প বাতির আলো সেই ঘরে প্রবেশ করছে না। তবুও রেনুকার মুখস্থ কোন জায়গায় কোন কোন আসবাবপত্র রাখা। রেনুকা ঢোক গিলে ঘরের ভেতর পা রাখলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল কয়েক কদম। মইনুর শেখ বিছানার কোন পাশে বসে আছে রেনুকা দেখতে পাচ্ছে না। ঘরে রেনুকার উপস্থিতি বুঝে মইনুর শেখ গলা খাদে নামিয়ে বললেন,

এই অন্ধকার ঘরটায় পরী থাকতো তাই না? এই তোশক ছাড়া বিছানায় ঘুমাতো।

রেনুকা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। মইনুর শেখের চোখ থেকে জল গড়িয়ে সরাসরি বিছানার উপর পরলো তবে সেটা অন্ধকারেই মিলিয়ে রইলো। মইনুর শেখ ও রেনুকা দুজনেই চুপ করে আছে। স্তব্ধ ঘর। রেনুকা ঘেমে উঠছে গরমে। রেনুকার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু আজকের ঘটনাই। পরীর মৃ*ত্যু এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। মৃ*ত্যু কি এতই সহজ? কিভাবে একটা প্রাণ কে*ড়ে নিল। হঠাৎ রেনুকার ভয় করছে। কে মে*রে*ছে পরীকে? এরপর কি তাকেও মে*রে ফেলবে? চিন্তা ভাবনার মধ্যেই শি*উ*রে উঠলো রেনুকা। হঠাৎ মইনুর শেখের কথা মনে পড়লো। তিনি কাঁ*দতে কাঁ*দতে বলছিলেন পরী তার মেয়ে। সেটা কি এমনিতেই? মইনুর শেখকে কি জিজ্ঞাস করবে? জিজ্ঞাস করা উচিত? নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে উঠল,

আপনি যে তখন বলছিলেন পরী আপনার…

পরী আমার মেয়ে। আমার সন্তান, আমার রক্ত। সোফিয়া আর আমার মেয়ে পরী। রেনুকার বাক্য সম্পন্ন হওয়ার আগেই মইনুর শেখ শিতল কন্ঠে বলে উঠলেন।

কি! বিস্ময়ে রেনুকার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। ঘরে বাতি থাকলে মইনুর শেখ হয়ত দেখতে পেতেন রেনুকা ঠিক কতটা বিস্মৃত।

চলবে…
®উম্মে কুমকুম

(আসসালামু আলাইকুম। জানিনা পর্বটা আপনাদের কেমন গেলেছে। এর আগে আমার কোন গল্পে এই থিম ছিল না। এটাই প্রথম। পর্বটা লেখা শেষ হয়েছে গতকাল রাতে। রাত থেকে পর্বটা পড়েছি। বার বার যোজন বিয়োজন করছি তবুও মন মতো হচ্ছে না। কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে। আপনারা অনুগ্রহ করে নিজেদের মতামত দিবেন। ভালো, খা*রাপ যেমনই লাগবে মন্তব্য করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here