অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-৮

0
1020

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-আট
নাফিসা নীলয়া।

প্রায় সকালের শেষ ভাগ। রেহান একা একা ক্যান্টিনে বসে ছিলো। তার বন্ধুরা ক্লাস করছে। কিন্তু তার ভালো লাগছে না এজন্য সে ক্যান্টিনে খেতে এসে পরেছে। হঠাত তার সামনে সায়রা এসে বসে পরলো। মেয়েটা অতি ন্যাকা। রেহানকে অনেকবার প্রপোজ করেছে কিন্তু সে রাজি হয়নি। তবুও মেয়েটা যখনই সুযোগ পায় এসে ন্যাকা ন্যাকা স্বরে ভালোবাসার কথা বলে যায়।
আর এবারও তাই হলো।

-রেহান ডিয়ার আই লাভ ইউ। তোমাকে আমি কতো দিন ধরে আমার ভালোবাসার কথা বলছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে পাওাই দাও না। লুক আই আম সো মাচ বিউটিফুল। তবুও তুমি কেন রাজি হচ্ছো না রেহান? হোয়াই?

রেহান তখন বিরক্ত মুখে কোক খাচ্ছিলো। সায়রার কথা শুনে রেহানের মুখ থেকে কোক ছিটকে পরে গেল। সে ক্রমাগত কাশতে লাগলো। সায়রা উঠে এসে ন্যাকামি করে রেহানের পিঠে হাত বুলাতে লাগলো। কেউ যে নিজেই নিজের এতো প্রশংসা করতে পারে সেটা সায়রাকে না দেখলে জানতো না রেহান। বেহায়া মেয়েটা তার পিছুই ছাড়ছে না আশ্চর্য হয়ে যায় রেহান। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাত দূরে মিলাকে দেখে তার মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি এসে গেল।

-লুক সায়রা, ওইযে মিলাকে দেখছো ওইযে সামনের টেবিলে। ইন্ডিগো ড্রেস। শি ইজ মাই ফিওন্সে। সো আমি খুবই লয়াল। আমি আমার ফিওন্সের সাথে ইনজাস্টিস করতে পারবো না। তুমি বুঝতেই পারছো আমি কি বোঝাতে চাইছি।

সায়রার পিছন ছাড়ানোর জন্য এর থেকে ভালো আইডিয়া আপাতত এলো না রেহানের মাথায়। সায়রার মুখটা ইতিমধ্যে চুপসে গেছে। সে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার তার দৃষ্টি রেহানের থেকে সরে মিলার দিকে পরলো। মেয়েটা তো খুব সুন্দরী। তবে তার থেকে কম। কি আছে এর মধ্যে যে রেহান এর জন্য সায়রাকে পাওা দিলো না। দেখতেই হচ্ছে ব্যপারটা। ভাবলো সায়রা। তারপর উড়নচন্ডী সায়রা হুট করে দাড়িয়ে গেল। রেহানের তখন খুশিতে বাকবাকুম অবস্থা। কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষন রইলো না। সে দেখলো সায়রা হনহনিয়ে মিলার টেবিলের দিকে গেল। হায়হায় এক দজ্জ্বালের হাত থেকে বাঁচার জন্য সে আরেক দজ্জ্বালের খপ্পরে পরতে চলেছে। সে ভেবেছে সায়রা একটু মন খারাপ করে ব্যপারটা এখানেই শেষ করে দিবে। কিন্তু না এ তো মিলার কাছে চলে গেল। এসব ভাবতে ভাবতে তার হুশ ফিরলো। সে ও দৌড়ে চললো মিলার টেবিলের দিকে।

-এক্সকিউজ মি! মিস ইন্ডিগো?

মিলা সহ মিলার বন্ধুরা ভ্রু কুঁচকে সায়রার দিকে তাকালো। মিলাই ইন্ডিগো ড্রেস পরেছে। তাই সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো!

-ইয়েস। বলো। কিন্তু ইন্ডিগো কি? আমার নিজস্ব নাম রয়েছে। ম্যানার নেই নাকি?

বিরক্ত হয়ে বললো মিলা। রেহান ততক্ষনে পৌছে গেছে। সে সায়রাকে ডাকা শুরু করলো।

-সায়রা,সায়রা চলো এখান থেকে। তোমাকে আমি সব বোঝাচ্ছি। প্লিজ।

সায়রাকে রিকুয়েষ্ট করা শুরু করলো রেহান। সে মনে মনে প্রচুর ভয় পাচ্ছে। মিলা তার কি হাল করবে সেটা ভেবেই তার গলা শুকিয়ে আসছে।

-তুমি চুপ করো রেহান। আমাকে কথা বলতে দাও। এই মেয়ে তুমি রেহানের ফিওন্সে রাইট? সো তুমি ওর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দাও। কারন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। তো তুমি শুধু শুধু আমাদের মাঝে পরে থেকো না। লিভ আস।

মিলা আর ওর বন্ধুরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মিলা আর রেহান। অসম্ভব! মিলা তো রেহানকে দেখতেই পারে না। মিলা সায়রার কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেল। সম্বিৎ ফিরতেই অগ্নিকন্যার রূপ ধারন করলো। জ্বলন্ত চোখে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে আজ তার ওপর দিয়ে ঝড় যাবে। সে নিজেও বোঝেনি সায়রা এভাবে এসব বলবে। পুরো ব্যপারটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে সে কিছু করারই সুযোগ পেলো না।

-রেহান কি মনে করো নিজেকে? বেহায়া বেশরম
ফাজিল ছেলে। কি মনে করিস নিজেকে? এই বেহায়া মেয়েটাকে কি বলেছিস তুই? আমি তোর ফিওন্সে?তোকে তো আমি দেখতেই পারি না। এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো বেহায়া। আর এই বেহায়া মেয়ে তোমাদের মাঝে আমি আছি মানে? তোমার কি মনে হয় এই বেহায়া ছেলেটা আমার ফিওন্সে? ওকে তোমার সাথেই মানায়। আমি তো ভাবতেই পারছি না। এতো বেয়াদব কেন তোমরা?

মিলার এমন কথায় হতভম্ব হয়ে গেল রেহান। মিলার কথার রাগী টোন আর মিলার কথায় প্রচুর অপমানিত হয়েছে রেহান। সে জানতো মিলা একটু এমনই। তবে এখন তার কাছে খুব খারাপ লাগছে। এভাবে অপমান না করলেও পারতো মিলা। ক্যান্টিনের সবাই এদিকে তাকিয়ে আছে। তাই ব্যপারটা খারাপ লেগেছে রেহানের।

-এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় রেহানের সাথে এভাবে কথা বলার? কোথাকার কে তুমি?

সায়রা প্রতিবাদ করে উঠলো।

-সায়রা স্টপ। তুমি আমার পিছু ছাড়ছিলে না তাই আমি মিলাকে আমার ফিওন্সে হিসেবে পরিচয় দিয়েছি। মিথ্যে বলেছি। যাতে তুমি এট লিস্ট আমার পিছু ছাড়ো। এবার এখান থেকে চলো আর সিন ক্রিয়েট করো না। আর মিলা আই এম সো স্যরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি এমন একটা বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে।

রেহানের কথা শেষ হওয়ার পর সায়রা গটগট করে হেটে চলে গেল। মিলার কাছে শুধু শুধু এতো অপমানিত হলো সে। রেহান মিথ্যেটা না বললেই পারতো।

-এখন স্যরি বলে কি হবে? তোমার সো কল্ড সায়রাকে গিয়ে স্যরি বলো যওসব।

বিরক্তি প্রকাশ করে মিলা তাড়াতাড়ি চলে গেল। রেহানের কেন যেন খুব খারাপ লাগছে অথচ সে এরকম না। কারো কথা গায়ে মাখে না। তবে আজ খারাপ লাগছে তার। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে ও বেড়িয়ে গেল।

-তুই এমন খারাপ ব্যবহার না করলেই পারতি মিলা। মানছি রেহানের দোষ আছে কিন্তু তোরও এমনভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিত হয়নি। সবসময় এতো মাথা গরম করে থাকলে চলে না।

নিজের বন্ধুর এহেন কথায় অল্পকিছুক্ষনের জন্য অনুতপ্ত হলো মিলা। পরক্ষনেই তার আবার মনে হলো সে যা করেছে একদম ঠিক করেছে। রেহানের মতো বজ্জাত ছেলে এটাই পাওয়ার যোগ্য।

-তুই চুপ কর। ওর মতো বদমাইশ ছেলেকে এভাবেই শায়েস্তা করতে হয়। ওর জন্য ওই বেয়াদব মেয়েটাই ঠিক আছে। কতবড় সাহস আমাকে ফিওন্সে হিসেবে পরিচয় দেয়।

মিলার একগুঁয়ে কথায় ওর বন্ধু হাল ছেড়ে দিলো। মিলার মতো জেদি মেয়ে কখনো নিজের ভুল স্বীকার করবে না।

সবে লাস্ট ক্লাস শেষ করেছে নীরা। আজকে তার একবার এনজিও তে যেতে হবে। কিছু কাজ আর ফর্মালিটি রয়েছে। এনজিওর বাচ্চাদের সাথেও অনেক দিন দেখা হয় না। তাই সে ভাবলো রুমাকে সাথে নিয়েই যাবে। এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে। ইনভাইট ও করা হবে যদিও কাল যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সে ভাবলো আজই যখন যাচ্ছে রুমাকে নিয়েই যাবে। তাই আপাতত সে রুমার জন্য অপেক্ষা করছে। ভাবতে ভাবতেই সে দেখলো রুমা কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে।

-কথা বলা শেষ তোর? তাড়াতাড়ি কর এনজিও তে যেতে হবে আমাদের।

-আমাদের মানে? আমিও যাবো? আর আজকেই? ইনভাইট করার কথা তো কাল।

-অবশ্যই যাবি। তোকে নিয়েই যাবো আমি।

-আচ্ছা চল।

রুমা জানে সে নীরার সাথে না গেলে নীরা মুখে তো কিছু বলবে না। তবে মনে মনে রাগ করবে। রাগ করে মুখ গোমড়া করে থাকবে। আর নীরা মুখ গোমড়া করে রাখলে তার ভালো লাগে না। নীরা তো তার ওয়ান কাইন্ড অফ বোন ও। এজন্য সে ও নীরার সাথে যেতে রাজি হয়ে গেল। দুজন নানা কথা বলতে বলতে যেতে লাগলো।

-নীরা আমি শপিং করবো তোকে নিয়ে। কবে ফ্রি থাকবি বল। আমি তো আজ বিয়ে উপলক্ষে স্কুল থেকে ছুটিও নিয়েছি। তুই তো নিলি না। আবার আমার বিয়ের অধিকাংশ কাজও তুই করবি। এতোকিছু কিভাবে যে করবি তুই সেটাই চিন্তার বিষয়।

-আরে আই উইল ম্যানেজ মিলা ও তো আছে আমার সাথে। আবার তোর কাজিনরাও আছে সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে মজা ও হবে। আমি সময় বের করে শপিং এ যাবো তোর সাথে। তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।

নীরার কথায় আশ্বস্ত হয় রুমা। সে জানে নীরা খুব দায়িত্বশীল। ওর কাছে যেকোনো কাজ দিয়েই নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

-রুমা নাম এসে পরেছি তো।

নীরার কথায় ভাবনা থেকে বেড়োয় রুমা। দেখে এনজিওর সামনে উবার থেমেছে। নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢোকে ওরা।

-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম সব ঠিকঠাক?

এনজিওর ভেতরে ঢুকেই এখানকার হেডের সাথে দেখা হয়ে গেলো ওদের। মহিলাটি খুবই আন্তরিক হাসিখুশি যা নীরার খুব ভালো লাগে।

-ওয়ালাইকুমুস সালাম নীরা। অল গুড। তোমাকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। সেদিনের এক্সিবিশনে যে লাভ হয়েছে তাতে বাচ্চারা খুব উপকৃত হয়েছে। তোমরা বাচ্চাদের জন্য যা করছো তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তোমাদের এমন কাজে সত্যিই আমরা গর্বিত।

এনজিওর ম্যামের কথায় মিষ্টি করে হাসলো নীরা আর রুমা।

-ও ম্যামের সাথে যেহেতু দেখা হয়েই গেছে তো ম্যাম আপনাকে একটা সুখবর দিতে চাই। আমাদের রুমা আর সাইফের বিয়ে। আমরা এজন্যও এসেছি এখানে। রুমা কার্ডটা দে।

নীরার কথায় রুমা ব্যাগ থেকে ইনভাইটেশন কার্ড বের করলো। আজ স্কুলের সহকর্মীদের ও ইনভাইট করেছে সে। তাই তার ব্যাগে এক্সট্রা কার্ড ও ছিলো।

-ম্যাম অবশ্যই আসবেন। আমরা সবাই আপনাদের দোয়া নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।

লাজুক মুখে হেসে বললো রুমা। এনজিওর ম্যাম সুন্দর করে হাসলেন

-অবশ্যই। তোমাদের জন্য অনেক দোয়া রইলো।

কথা শেষ করে নীরা আর রুমা এনজিওর হেডের সাথে এনজিও ঘুরে দেখলো। সব যাবতীয় ফর্মালিটিও সারলো। নীরা এবার বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে চাইলো।

-রুমা চল বাচ্চাদের সাথে দেখা করে আসি। অনেকদিন দেখি না। না দেখতে পেয়ে আমার ভালো লাগছে না।

রুমা তার বোনসম বন্ধুর কথা শুনে হেসে দিলো। নীরা এখন বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাবে। আর উঠতেই চাইবে না।

-হু কিন্তু আমরা আজ বেশি সময় কাটাতে পারবো না। বাড়িতে অনেক কাজ আছে। তুই তো ওদের পেলে সব ভুলেই যা। কিন্তু মনে রাখিস আজকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে হবে।

-আচ্ছা বিয়ের কনে। এই কয়দিন তুই যা বলবি তাই হবে।

নীরা আর রুমা একসাথে হেসে ফেললো। কথা বলতে বলতে তারা বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে চলে এলো।

-কেমন আছো সবাই? দেখো আমরা এসে গেছি। এদিকে তাকাও সবাই।

নীরার কথায় সব বাচ্চারা ওদের দিকে দৌড়ে আসলো। নীরা আর রুমাকে জড়িয়ে ধরলো। উচ্ছাসে ফেটে পরলো সবাই।

-নীরা আপা,রুমা আপা,তোমাদের কতো মিস করেছি আমরা জানো? এতোদিনে বুঝি সময় হলো তোমাদের?

কপট রাগ দেখিয়ে বললো একটা বাচ্চা। তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে সবাই একসাথে অভিযোগ করতে লাগলো। নীরা আর রুমা ওদের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো।

-আমরা খুব স্যরি এতোদিন না আসার জন্য। দরকার পরলে কানে ধরবো। তবুও কি তোমরা আমাদের ক্ষমা করবে না?

নীরার কথায় সবাই হইহই করে উঠলো। এক নিমিশে সবার কপট রাগ উধাও হয়ে গেল। তারা তাদের নীরা আপা,রুমা আপা আর সাইফ ভাইকে খুব ভালোবাসে। নীরা খুশি হয়ে সবাইকে চকলেট, পেস্ট্রি দিতে লাগলো। সে আর রুমা আসার সময় কিনে নিয়ে এসেছে।

-আচ্ছা শোনো সবাই তোমাদের সাইফ ভাই আর রুমা আপার বিয়ে আর কয়দিন পর। আমরা ম্যামকে বলে দিয়েছি। তোমরা সবাই আসবেই। ঠিক আছে?

সবাই একসাথে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো। কতোদিন পরে বিয়ে খাবে তারা। এই আনন্দেই সবাই দিশেহারা।কেউ তো তাদের দাওয়াতই করে না। ওদের খুশি দেখে নীরার চোখে পানি এসে গেল। রুমা নীরাকে বাহুতে জড়িয়ে ধরলো। নীরা আর রুমা বাচ্চাদের সাথে একটা সুন্দর বিকেল কাটালো। যেহেতু রুমার তাড়া আছে তাই তারা আজ তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে গেল। যাওয়ার সময় দুই বান্ধবি নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলো।

তিতলি আজ ও কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে রেহানের অপেক্ষায়। তার গাঁধা ছোট ভাই আজও তাকে দাড় করিয়ে রেখেছে। কি আশ্চর্য যখন লেটই করবি তখন এতো ভাব করে বলার কি দরকার ছিলো যে আমি নিতে আসবো। আজব কারবার। তিতলি রাগে দাঁত কিড়মির করতে লাগলো। তখনই সে দেখলো একটা ছেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ সে প্রথমে পাওা দিলো না। কিন্তু সেই ছেলেটা তখনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে ভাবলো সে গিয়ে কিছু বলবে। কিন্তু তার আগেই রেহান গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে গেল। সে গাড়িতে থেকেই তিতলিকে ডাক দিলো। তিতলি আর ব্যপারটা নিয়ে না ভেবে গাড়িতে উঠে বসলো।

-কি সমস্যা তোর ছোট ভাই? রোজ রোজ আমাকে দাড় করিয়ে রাখতে তোর খুব ভাল্লাগে তাই না রে? তাড়াতাড়ি যখন আসতেই পারবি না তখন এতো করে বলিস কেন যেনো নিজেই চলে না যাই। তুই নিতে আসবি। আশ্চর্য! আজ আমি তোকে ভাইয়ের হাতের মার যদি না খাইয়েছি। তবে আমার নামও তিতলি না।

তিতলি একাই বকবক করে যাচ্ছে। এদিকে রেহান কোনো কথাই বলছে না। সে চুপ করে গম্ভীর মুখে গাড়ি চালাচ্ছে। রেহানের এমন নির্লিপ্ত গম্ভীর ভাব দেখে তিতলির খটকা লাগলো। তার ছোট ভাই তো এমন না। একটাও কথা মটিতে পরতে দেয়না সে। তিতলির সাথে সবসময় লেগে থাকে। তবে আজ কি হলো। তার ছোট ভাই তো এমন শান্তশিষ্ট না। আবার সবসময় তার ছোট ভাই গাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিজে তাকে গাড়িতে বসায়। আর আজ নিজে গাড়ি থেকেও বের হলো না। ভাইয়ের মতো ছোট ভাইটার ও কি কিছু হলো! এসব ভাবতে ভাবতেই তিতলির দুঃশ্চিন্তা হতে লাগলো। সে রেহানের হাত ধরলো।

-কি হয়েছে তোর ছোট ভাই? এমন করে আছিস কেন? শরীর খারাপ?

কথাগুলো বলেই সে রেহানের মাথায় কপালে বুকে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো। রেহান তখন ও চুপচাপ।

– শরীর তো খারাপ না। তবে কি হয়েছে বল না। ভাইয়ের মতো তোর ও কি কিছু হয়েছে?,

-আমি একদম ঠিক আছি তিতলি। আমার কিছুই হয়নি। জাস্ট একটা বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে সেজন্য একটু স্ট্রেসে আছি।

-তুই আর তোর বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটি করে স্ট্রেসে আছিস? আমাকে তোর গাঁধা মনে হয়? কি হয়েছে সত্যি করে বল।

তিতলির এমন ক্রমাগত জেরায় রেহান এবার বিরক্ত হলো। বিরক্ত চোখে তিতলির দিকে তাকালো।

-কখনো স্ট্রেস ফিল করিনি বলে যে আজও করবো না এর তো কোনো মানে হয় না তিতলি। তুই তোর বকবকানি কমা নইলে তোকে গাড়ি থেকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবো।

রেহানের কথা তিতলির পুরোপুরি বিশ্বাস হলো না। তবে তার ভাই যে আবার তার সাথে ঝগড়ার মুডে কথা বলছে এটাই বেশি। আর তার ছোট ভাই এখন বলবেও না কি হয়েছে। বাসায় গেলে মাথা ঠান্ডা হলে নিশ্চয়ই বলবে। এই ভেবে তিতলি চুপ করলো ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে মাথা রাখলো। রেহান গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে চকলেট নিয়ে তিতলির কোলে রাখলো। তারপর এক হাত দিয়ে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তিতলি চোখ বন্ধ করে হাসলো। তার মতো ভাগ্যবতী বোধ হয় দুটো নেই। দুই ভাই যতোই কাজে থাকুক টেনশনে থাকুক স্ট্রেসে থাকুক কখনো তার খেয়াল নিতে ভুলে না। এই যে এখন রেহান মন খারাপ করে থেকেও তাকে চকলেট দিতে ভুললো না। আদর করতে ভুললো না। এটাই তো তার মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

শিহাব কিছুক্ষন যাবত নীরার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। দুইদিন হলো সে নীরাকে দেখেনি। তাই নীরার বাড়ির ঠিকানাও সে যোগার করে ফেলেছে। অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতে আজ অনেক লেট হয়ে গেছে। তবুও কিসের টানে যে সে এখানে দাড়িয়ে আছে নিজেই বুঝতে পারছে না। সে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছে। এমন টিনেজার এর মতো বিহেভ কি তাকে মানায়! কখনোই না। সে এখানে কি করছে। এমন টিনেজারের মতো বিহেভই সে কেন করছে। উফ নীরার একটু বারান্দায় এলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। সব কেমন এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে। সব ভাবনাই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তখনই তার ফোনে তিতলির কল আসে। সে ফোন রিসিভ করে।

-ভাই কই তুই? ভালো লাগে না। এতো দেরি হচ্ছে কেন তোর? ফোন করে তো জানিয়ে দিবি নাকি। আশ্চর্য!

-আমি একটা কাজে আটকে গেছি তিতলি। এতো প্যানিক হোস না। আমি ঠিক আছি। কাজের জন্য একটু লেট হচ্ছে। তোরা খেয়েছিস?

-হ্যা খেয়েছি। খাইনি শুনলে তো তুই সব ভস্ম করে দিবি। ইদানিং মাইগ্রেনের ওষুধ খেতে হচ্ছে বলে নইলে আমি তোকে ছাড়া এতো তাড়াতাড়ি খেতামই না। আর তুই আছিস না? না খেলে তো বাড়ি এসে আমাকেই বনবাসে পাঠিয়ে দিবি।

তিতলির কথা শুনে হাসলো শিহাব।

-হু রেহান? ও খেয়েছে?

-খেতে চায়নি। আজ ওর মন খারাপ ছিলো তবুও আমি জোর করে খাইয়ে দিয়েছি।

-ভালো করেছিস এবার তোর ঘরে যা। আমি আসছি জলদিই। এসে সব শুনবো।

-আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়। রাখছি।

তিতলি ফোন কেটে দিলো। শিহাব এখানে কিছুক্ষন দাড়িয়ে আছে। অথচ মনে হচ্ছে সে বহুক্ষন দাড়িয়ে আছে। নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির ডোর খুললো শিহাব। তখনই পেছন থেকে মিলা তাকে ডেকে উঠলো।

-শিহাব ভাই না? আপনি এখানে এতো রাতে কি করছেন?

মিলার কথায় থমকে গেল শিহাব। সে যে জন্য এসেছে তা তো হলোই না উল্টো সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সে কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিলো।

-হাই মিলা আসলে এদিকেই একটা কাজ ছিলো। কাজ শেষ তাই বাড়ি যাচ্ছি।

উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলে ফেললো শিহাব।

-ও আচ্ছা। আমাদের বাড়ি তো ওইযে সামনে।

– ও তোমাদের বাড়ি এখানে?

শিহাব এমন একটা ভাব করলো যেন সে জানেই না এখানেই নীরাদের বাড়ি।

-হ্যা এখানেই।

-তো তুমি এখানে এতো রাতে কি করছো?

শিহাব কপাল কুঁচকে মিলাকে জিজ্ঞেস করলো।

-আইসক্রিম কিনতে এসেছিলাম।আসলে আমার মাঝে মাঝে খুব রাতে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করে। আমার ঠান্ডার সমস্যা এজন্য আপা ফ্রিজে রাখতে দেয় না। তাই চুপিচুপি বেড়িয়েছি আইসক্রিম কিনতে।

-এটা একদমই ঠিক না মিলা কতো রাত হয়েছে দেখেছো তুমি? এতো রাতে বের হওয়া তোমার মোটেই উচিত হয়নি। দিনকাল ভালো নয় আর এমন করবে না তুমি। দেখো দোকান ও বন্ধ করে দিয়েছে বারোটা বেজে গেছে। বাসায় যাও এখন।

-আপনি ও আসুন না। বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে যাবেন আর আসবেন না। এতে আমাদেরই খারাপ লাগবে।

-না আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি বাসায় যাই। তুমিও যাও।

শিহাব দাড়িয়ে থেকে বললো। তখনই নীরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রায় দৌড়ে আসলো। শিহাব তাকিয়ে রইলো। মাথার চুল এলোমেলো হয়রান হয়ে হাপাচ্ছে নীরা। শিহাবের সামনেই বোনকে ধমক দিলো সে।

-বেয়াদব মেয়ে। এতো রাতে কোন আক্কেলে একা বের হলি তুই? এমন শুনশান জায়গায় একা বের হতে বাঁধলো না।এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব। বলে বের হলে কি সমস্যা হতো তোর?,

নীরা প্রায় চেঁচিয়ে কথাগুলো বললো। মিলা মুখ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

-স্যরি আপা আর হবে না। আসলে তুই আইসক্রিম খেতে দিস না। আর আজকেই আমার খেতে ইচ্ছে করছিলো। এজন্য ভাবলাম এই দোকানটা তো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এখান থেকেই কিনে নিবো।তারপর তাড়াতাড়ি বাসায় যাবো।

-সিরিয়াসলি মিলা। দেখ ওই দোকানটাও বন্ধ করে দিয়েছে। আর কখনো এমন করবি না। আব্বাকে বলবি ঠিক আছে।

-আচ্ছা।

কাঁচুমাচু করে উওর দিলো মিলা। এতক্ষনে পাশে দাড়ানো শিহাবের দিকে নজর গেল নীরার। এতক্ষন সে এদিকে খেয়ালই করেনি। শিহাব এতক্ষন নীরার নতুন শাসনকরা রূপ দেখছিলো একমনে।

-আপনি এখানে?

নীরার কথায় ধ্যান ভাঙলো শিহাবের।

-আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। বাসায়ই যাচ্ছিলাম পথিমধ্যে মিলাকে দেখলাম। মিলাকে বাসায় যেতে বলছিলাম আর তখনই আপনি আসলেন।

মনে মনে মিলাকে ধন্যবাদ জানালো শিহাব। মিলার জন্যই নীরা বাইরে বেড়িয়েছে।

-ও আচ্ছা। আসি।

-আপা ভাইয়াকে বাসায় আসতে বল।

মিলার কথায় নীরা ওর দিকে তাকালো।

-না থাক অন্য একদিন৷ আসবো। আজ আসি। রাতে একা বের হইয়ো না মিলা। আর নীরা ওকে আর বকবেন না। ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ভালো থাকবেন।

-আপনিও।

নীরা মিলাকে নিয়ে চলে গেল। শিহাব ও গাড়িতে উঠে বসলো। মনে মনে ভাবলো আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বললে তোমার কি হতো নীরা। ভালো করে কথাই বললে না! এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো শিহাব।

—চলবে।

(দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। আসলে আমার কিছু সমস্যার জন্য দেরি হয়েছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here