অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-২১

0
866

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-একুশ
নাফিসা নীলয়া!

মিলা ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে লাইব্রেরিতে যাওয়ার জন্য। মিলার বন্ধুরা সবাই ক্যান্টিনে গেছে। কিন্তু মিলার এখন ক্যান্টিনে যেতে ইচ্ছে করছে না। আর তার কিছু বইও কালেক্ট করার আছে। সেজন্য সে লাইব্রেরির দিকে যাবে বলে ঠিক করেছে। হাটতে হাটতে হঠাত তার চোখ রেহানের দিকে পরলো। মিলা ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। রেহান ও ইংরেজি সাহিত্যে পড়ে। এবং সেখানেই রেহানের দেখা পাওয়া গেল। মিলা চোখ সরু করে দেখতে থাকলো রেহানের কান্ড। রেহান জুনিয়র একটা মেয়ের সাথে ফ্ল্যার্ট করছে। এমনি তে তো খুব সাধু সাজে। সায়রার সাথে রিলেশন করবে না এইসেই কতো কি। অথচ সারাক্ষণ মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করে বেড়ায়। ভাবছে মিলা। মিলার রেহানের এই স্বভাবটা সবচেয়ে বেশি বাজে লাগে। মিলা চোখমুখ শক্ত করেই রেহানের দিকে তাকিয়ে হাটছে। রেহান জুনিয়র মেয়েটাকে বিদায় করে সামনে তাকালে মিলাকে দেখতে পেলো। কিন্তু মিলার এমন কড়া চোখের চাহনির কারন বুঝতে পারলো না। মিলা ততোক্ষনে রেহানকে ক্রস করে গেছে। রেহানও মিলার পিছু ছুটলো। মনে মনে ভাবলো অনেকদিন মিলাকে জ্বালানো হয় না আজ মিলাকে জ্বালানে যাক। মিলা লাইব্রেরিতে ঢুকে বই খোঁজা শুরু করলো। লাইব্রেরিতে বেশি স্টুডেন্টস নেই। গুটিকয়েক রয়েছে। মিলা মন দিয়ে বই খুঁজে চলেছে। রেহান গিয়ে মিলার পেছনে দাড়ালো এবং কানের কাছে গিয়ে একটা চিৎকার দিলো। মিলা ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠলো। লাইব্রেরিতে যারা ছিলো সবাই খুব বিরক্ত হলো। মিলা পেছন ফিরে রেহানকে পেলো। রেহানকে দেখতে পেয়ে মিলার রাগ আকাশ ছুলো। সে রেহানের হাত ধরে অপরপাশে নিয়ে গেল যেখানে কেউ বই পড়ছে না। হাত ধরা দেখে রেহান ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো।

-আরে এ আমার কি সৌভাগ্য মহারানী টিলা আমার হাত ধরেছে। ও মাই গুডনেস!

এতে মিলার রাগ আরো কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেল। সে রেহানের হাত ছেড়ে দিয়ে হাতের বই দিয়ে রেহানকে মারতে লাগলো। রেহান মিলাকে আটকানোর চেষ্টা না করে হেসেই যাচ্ছে। মিলা মারতে মারতে হয়রান হয়ে গেলে থামলো। কিন্তু রেহান তার নিজের মতো হাসতেই থাকলো।

-রেহান হাসি বন্ধ করো। নইলে তোমার মুখ আমি সেলাই করে দিবো। আই সোয়্যার।

রেহানের হাসি তবুও থামলো না দেখে মিলা চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকলো রেহানের দিকে।

-এই বেয়াদব ছেলে হাসি বন্ধ করো।

মিলা এবার জোরে ধমক দিলো রেহানকে। তখন একজন বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো।

-এই তোমরা দুইজন কি শুরু করেছো? হাসাহাসি ঝগড়া মারামারি যা করার লাইব্রেরির বাইরে গিয়ে করো।

এই কথা শুনে মিলা আবার রেহানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। এবার রেহান হাসি বন্ধ করলো। মিলা গটগট পায়ে লাইব্রেরির বাইরে বের হলো। রেহান ও তার পেছনে আবার গেল। মিলা এবার খুব বিরক্ত হলো।

-তুমি কি আমার গার্ড? যে সবসময় আগেপিছে ঘুরছো।

-সবসময় কই আজই তো। তাও এটাকে ঘুরা বলে না। লাইব্রেরি কি তোমার যে সেখানে আমি যেতে পারবো না?

রেহানের কথা শুনে মিলা কি বলবে বুঝতে পারলো না। রাগে তার মুখ লাল হয়ে আছে।

-অবশ্যই লাইব্রেরি আমার না। কিন্তু তুমি আমার পেছনে গেলে কেন? আর আমার কানের কাছে ওরকম চিৎকার করে শব্দই বা করলে কেন? ওহহো কাকে কি বলছি। তোমার কাজই তো মানুষকে বিরক্ত করা।

বকবক করতে করতেই মিলা পুনরায় হাটতে থাকলো। রেহান এবার মিলার পাশে হাটছে। হাসতে হাসতে বললো।

-একদম ঠিক বলেছো টিলা! আচ্ছা বলো তো তখন আমার দিকে অমন কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে কেন?

-তোমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই? যাও নিজের কাজে যাও।

-আরে বলো তো।

-এই ছেলে তোমার কি সত্যিই কোনো কাজ নেই? খালি মানুষকে বিরক্ত করা আর মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করা ছাড়া?

মিলার কথা শুনে রেহান শয়তানি হাসি দিলো।

-কেন আমি মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করলে তোমার কি? তুমি কি জেলাস? ও হ্যা আমি তো এরকমই আমার মতো হ্যান্ডসামের জন্য জেলাস হওয়া অবশ্যই দরকার। কিন্তু মিলা তুমি কোনো চান্স পাবে না। এক্সট্রেমলি স্যরি। অনেকে লাইনে আছে তাদের সাথে তো অবিচার করা যায় না। তুমি দেরি করে ফেলেছো। স্যরি।

রেহানের এই ধরনের কথা শুনে মিলার ইচ্ছা করছে রেহানের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে।

-অসভ্য বেয়াদব ছেলে। তোর মতো বেজির জন্য কিনা আমি জেলাস হবো? নেভার, এভার!!

বলেই মিলা রেহানের পায়ে নিজের পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো। এবং হম্বিতম্বি করতে করতে হাটতে থাকলো। রেহান একটু আওয়াজ করে পা ধরলো। কিন্তু তার মুখ থেকে হাসি গেল না। রেহান মিলার পেছনে যেতে যেতে বিড়বিড়িয়ে বললো।

-উফ ডাইনি একটা।

মিলা বোধ হয় শুনে ফেললো।

-এই কি বললে?

রেহান ক্যাবলাকান্তের মতো হেসে বললো।

-কিছু না মহারানী টিলা।

মিলা গজগজ করতে করতে হাটছে। আর রেহান মিলাকে হাসতে হাসতে বিড়বিড় করে গালমন্দ করছে।

রুমা শশুড়বাড়িতে নতুন রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। সবাই রুমাকে বারন করার পরও রুমা রান্না করতে গিয়েছিলো। এখন পোড়া হাত নিয়ে ঘরে বসে আছে। সাইফ ক্যাফেতে যায়নি আজ। রুমাকেও স্কুলে যেতে দেয়নি।

-কে বলেছিলো তোকে রান্না করতে? আর রান্না করার সময় এতো অমনোযোগী ছিলি কেন? এখন তো তোকে আমার মারতে ইচ্ছে করছে।

-হ্যা হ্যা মারতে তো ইচ্ছে করবেই। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো আমি প্রেমিকা নই। পুরাতন হয়ে গেছি। বউ হয়ে গেছি। এখন তো তুই মারবিই।

সাইফের কথার পৃষ্ঠে রুমা ন্যাকা কান্না করে কথাগুলো বললো। সাইফের নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। এই মেয়ে সবসময় কথার অন্য মিনিং বের করে। এখন রুমার হাত পুড়েছে সেজন্য আর ওকে রাগাতে চাইলো না সাইফ।

-আচ্ছা আই এম স্যরি ভুল হয়ে গেছে আমার।

সাইফকে হার মানতে দেখে রুমা হেসে ফেললো। আহ্লাদী কন্ঠে বললো।

-এই তো আমার সুইট হাজবেন্ড।

সাইফ মনে মনে ভাবলো আর সুইট। তোর পাল্লায় পরে আমার জীবন একেবারে তেতো হয়ে গেছে। সাইফ রান্নাঘরে গিয়ে খাবার বেড়ে আনলো দুজনের জন্য। রুমার ডান হাত পুড়েছে। তাই সাইফ নিজেই ওকে খাইয়ে দিবে ভাবলো। ডায়নিং টেবিলে সবার সামনে খাওয়ানো যাবে না। এজন্য খাবার ঘরে নিয়ে আসলো। খাবার মেখে রুমার মুখের সামনে ধরলো। রুমার খুব ভালো লাগছে। ভালোবাসার মানুষের হাতে খেতে কার না ভালো লাগে। সে সানন্দে সাইফের হাতে খেতে লাগলো।

-তুইও খা। এখান থেকেই খা।

রুমার কথা শুনে সাইফ নিজেও খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ হলে সাইফ হাত ধুয়ে এসে বসলো। তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। সাইফ দেখলো নীরা ফোন করেছে। সে স্পিকারে দিয়ে রুমার পাশে বসলো। নীরা কথা বলে উঠলো।

-কি ব্যাপার তোদের দুজনের কোনো খবর নেই কেন?
রুমার সাথে তো সকালেই কথা হলো। ও আজ স্কুলে আসলো না কেন?

-তোর গুণধর বান্ধবি রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। এজন্য আজ ওকে যেতে দেইনি।

সাইফের কথা শুনে নীরা আঁতকে উঠলো।

-কিহ্! হাত পুড়েছে? কিভাবে কতোটুকু? আল্লাহ রুমাকে দে তো।

নীরার উতলা হওয়া দেখে রুমা হেসে ফেললো।

-আরে বেশি পুড়েনি অল্প একটু পুড়েছে। অযথা চিন্তা করিস না তো।

-কি?আমি অযথা চিন্তা করছি? রুমা তুই কবে বড় হবি বল তো? বিয়ে হয়ে গেছে এখনো নিজের প্রতি এমন উদাসীন থাকলে চলবে? আর সাইফ তুই দেখিসনি? ইস ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিস তো?

নীরার কথা শুনে সাইফ আর রুমা দুজনেই হেসে ফেললো একসাথে। সাইফ বললো।

-আরে আমার মা। দম ছাড় এবার একসাথে আর কতো কথা বলবি তুই? তোর কি মনে হয় তোর বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি অবহেলা করবো। তোর যেই বেস্টফ্রেন্ড এখনই আমার সেবা নিতে শুরু করেছে। তুই চিন্তা করিস না তো।

সাইফের এহেন কথায় রুমা বাম হাত দিয়ে সাইফকে একটা চাপড় দিলো।

-আচ্ছা যাই হোক। শোন স্কুল ছুটির পরই আমি আসছি। নিজের চোখে দেখবো কতোটা কি পুড়েছে। রাখছি এবার।

-আচ্ছা আয়।

নীরা কথা বলা শেষ করে ফোন রেখে দিলো। সাইফ আর রুমা নিজেদের মতো গল্প করতে থাকলো।

বিকালবেলা তিতলি আর রেহান একসাথে পাকোড়া খেতে খেতে টিভি দেখছিলো। তখনই বেল বেজে উঠলো। তিতলি রেহানকে বললো দেখতে রেহান উঠলো না বসেই রইলো। অগত্যা তিতলিকেই উঠতে হলো। সে দরজা খুলে প্রথমে অবাক হলো। সামনে তিশা আর ওর মা আসমা দাড়িয়ে আছে। তিশা তিতলিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো।

-কিরে দরজা আগলে দাড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে ঢুকতে দিবি না নাকি?

তিতলি তাড়াতাড়ি দরজা থেকে সরে দাড়ালো। তিতলি তাদের খালাকে সালাম দিলো। আসমা সালাম নিলেন। রেহান উঠে এসে দেখলো ওদের খালা আর তিশা এসেছে। সেও তাদের খালার সাথে কুশল বিনিময় করলো।

-হঠাত খালামনি? অনেকদিন যাবতই তো আসো না।

তিতলির কথা শুনে আসমা একটু হাসলেন।

-কেন এসেছি বলে কি সমস্যা হচ্ছে তোদের?

তিতলিও হেসে ফেললো।

-আরে না,অনেকদিন আসো না তো আর আসলেও তো থাকো না। এজন্য বলছিলাম।

তিতলির কথায় তিশা বলে উঠলো।

-এবার বেড়াতে এসেছি। থাকবো। আমার সেমিস্টার এক্সাম শেষ হয়েছে। ভাবলাম তোদের সাথে অনেকদিন সময় কাটানো হয় না তাই আসলাম।

রেহান জহুরাকে ডাক দিয়ে ওদের আপ্যায়ন করতে বললো। তিশা আর আসমাকে রেস্ট নিতে বললো। তিশা রেহানের থেকে এক বছরের ছোট। তবে তিশা রেহানকে নাম ধরেই ডাকে।

-আর রেহান কেমন চলছে সব?

-খুব ভালো তোর কি অবস্থা?

-আমারও খুব ভালো। আচ্ছা শিহাব ভাই কখন আসবে? কতোদিন হয়েছে দেখা হয় না। আই এম সো এক্সাইটেড।

তিতলি আর রেহান ভালো করেই জানে তিশা শিহাবের প্রতি উইক। সেটা ছোট থেকেই। তবে কেন যেনো দুই ভাইবোন তাদের ভাইয়ের জন্য তিশাকে মানতে পারে না। রেহান বললো।

-ভাইয়ের কতো কাজ থাকে। ওর আসতে আসতে লেট হয় প্রায়।

-আসুক আজকে আমরা এসেছি। এবার আর কোনো কাজ নয়।

তিশার মা আসমাও মেয়ের সাথে তাল মেলালেন।

-হ্যা কতোদিন হয়ে গেছে আমার ছেলেটাকে দেখি না। কোনো কাজ হবে না এই কয়দিন। আমাদের সাথে সময় কাটাবে ও।

তিতলি আর রেহান কিছু বললো না। তিশা আর ওর মা গেস্টরুমে চলে গেল। রেহান আর তিতলি একে অপরের দিকে তাকালো। তিশাদের এখানে আসার কারন এখনো বোধগম্য হচ্ছে না ওদের।

নীরা সাইফের বাড়িতে সত্যিই আসলো। সাইফের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সে সাইফ আর রুমার ঘরে ঢুকলো। রুমার হাত পর্যবেক্ষন করে জ্ঞান দিলো কতগুলো। রুমা হাসতে হাসতে তা শুনলো। তারপর তিনজন মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলো। নীরা বাড়িতে যাওয়ার আগে সাইফকে বলে দিলো কিভাবে কি করবে। সাইফও নীরার কান্ড দেখে হাসছে।

-সাইফ রুমার খেয়াল রাখবি ঠিক করে। তোরা বলেছিলি অল্প একটু পুড়েছে। অথচ এসে দেখি অনেকখানি পুড়েছে। আর তুই রুমা শোন হাতের দিকে খেয়াল রাখবি। সবকিছুতে উদাসীনতা মানায় না। ঠিক আছে?

সাইফ আর রুমা একসাথে বললো।

-ঠিক আছে।

-আচ্ছা এবার আমি যাই। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে।

-সাইফ তোকে দিয়ে আসবে। এখন একা যাওয়ার দরকার নেই।

রুমার কথায় সাইফও তাল মেলালো। নীরা একাই যেতে চাইছিলো। তবে তার দুই বন্ধুর জন্য পারলো না। সাইফই রুমাকে পৌছে দিতে গেল।

তিতলি,রেহান আর তিশা গল্প করছিলো। আর আসমা রেজা সাহেবের সাথে আলাদা করে কথা বলতে গেলেন।

-ভাইজান আসি?

রেজা সাহেব চোখ বুজে বসে ছিলেন। তিশার মা আসমার কন্ঠ শুনে চোখ মেললেন।

-এসো। কেমন আছো? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?

-আল্লাহ যেরকম রেখেছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আপনার কি খবর ভাইজান?

-এইতো সব ভালোই চলছে। তোমরা এসেছো ভালো হয়েছে। জায়মার সাথে আমার কথা হয়েছে।

রেজা সাহেবের কথা শুনে আসমা শান্তি পেলেন।

-তাহলে কি ভাবলেন ভাইজান?

-দেখো ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেলে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। এ ব্যাপারে শিহাব যা বলবে তাই হবে। আমার কোনো সমস্যা নেই।

রেজা সাহেবের কথা শুনে আসমা খুব খুশি হলেন। খুশিতে তার চোখ চকচক করে উঠলো। তিনি ভেবেছিলেন তার বোনের জন্য হয়তো রেজা সাহেব রাজি হবেন না। কিন্তু এখানে তো তার কোনো সমস্যাই নেই। বাকি শিহাবের রাজি হওয়া। ওটা তিশাই সামলে নিবে। ভেবে রেজা সাহেবের সাথে আরো টুকিটাকি কথা বলে তিনি গেস্টরুমে গেলেন।

শিহাব বাড়িতে আসার পর তিশাদের দেখলো। সে বাড়িতে ঢোকার পরই তিশা এসে তার সাথে অনর্গল কথা বললো। আসমা ও অনেক কথা বললেন। শিহাবের মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে সেজন্য সে তাদের সাথে বেশিক্ষন কথা বলতে চাইলো না।

-শিহাব ভাই। কতোদিন পর দেখলাম তোমাকে। আমরা এসেছি তুমি খুশি হওনি?

তিশার আহ্লাদী স্বর শুনে রেহান আর তিতলি বিরক্ত হলো। তারা তাদের ভাইকে চিনে। তাদের ভাই এসব একদম সহ্য করতে পারে না। শিহাব গম্ভীর কন্ঠে বললো।

-আমি বিরক্ত হবো কেন? আশ্চর্য। তোরা এসেছিস থাকবি এতে বিরক্ত হওয়ার কি আছে! রিলেটিভরা তো আসতেই পারে।

শিহাবের এমন কথা শুনে তিশা দমে গেল। আসমা চলে আসলেন সেখান থেকে। ওনার যা করার উনি করে ফেলেছেন। বাকিটা মেয়ের হাতে। তিশা আবার বলে উঠলো।

-আচ্ছা তুমি নিশ্চয়ই অনেক টায়ার্ড। যাও ফ্রেস হয়ে আসো। আমরা খুব আড্ডা দিবো।

শিহাব আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

-আপু শুনো ভাইয়ের সাথে এমন আহ্লাদ করে কথা বলো না। ভাইয়ের এসব ভালো লাগে না।

-তিতলি তুই শিখাবি আমাকে? আমার থেকে ভালো শিহাব ভাইকে আর কে চেনে!

তিশার কথা শুনে তিতলি আর রেহান প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করছে। রেহান বললো।

-আমাদের ভাইকে তো আমরাই সবচেয়ে ভালো করে চিনবো। তুই নিশ্চয়ই আমাদের থেকে বেশি চিনবি না।

তিশা আর কিছু বললো না। রেহানের কথা আমলে না নিয়ে সে ঘরে চলে গেল। তিতলি আর রেহানও ওদের ঘরে চলে গেল।

শিহাব ফ্রেস হয়ে এসে মাএই বসেছে অমনি জহুরা এসে বললেন রেজা সাহেব শিহাবকে ডাকছে। শিহাব অবাক হলো একটু। কারন রেজা সাহেব কাজ ছাড়া সচরাচর তাকে ডাকে না। সে উঠলো তারও তার বাবাকে কিছু বলার আছে সেজন্য সে রেজা সাহেবের ঘরে গেল।
দরজায় নক করার পর রেজা সাহেব শিহাবকে ভেতরে ঢুকতে বললেন। শিহাব ভেতরে ঢুকলো।

-বসো। কেমন চলছে সব? তুমি এতো পরিশ্রম করছো। আমার ব্যবসাটাকে এতো এগিয়ে নিয়ে গেছো সত্যিই তা প্রশংসার দাবিদার।

-তুমি তো জানো আমি কাজের প্রতি কতটা ডেডিকেটেড। তবে আমার স্বপ্নটা অন্য কোথাও ছিলো। স্বপ্নের কাজ হলে আরো ভালো কিছু করতে পারতাম।

রেজা সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। শিহাবের ইচ্ছে ছিলো আর্মিতে জয়েন করার। সিলেক্টও হয়েছিলো। কিন্তু রেজা সাহেব চননি। ওনার কাছে মনে হয়েছে তার এতো বড় ব্যবসা শিহাব ছাড়া আর কারো পক্ষে সামলানো সম্ভব না। বাবার অনুরোধে শিহাব নিজের স্বপ্ন ছেড়েছে।

-আচ্ছা বাদ দাও কিছু বলার ছিলো তোমাকে।

-আমারও কিছু বলার ছিলো। আগে তুমি বলো।

রেজা সাহেব কথা গুঁছিয়ে নিলেন।

-তোমার তিশাকে কেমন লাগে?

শিহাব এই কথায় কপাল কুঁচকালো।

-মানে?

-মানে লাইফ পার্টনার হিসেবে তিশাকে কেমন লাগে তোমার?

শিহাব বরাবরই সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করে। আজও তাই বললো।

-আমি তিশাকে কখনো সেভাবে দেখিনি। আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে আমি অন্য কাউকে চাই।

শিহাবের স্ট্রেইট কথায় রেজা সাহেব প্রথমে কিছু বলতে পারলেন না। শিহাব বিচক্ষন মানুষ সে বুঝে গেছে এসব তার মা জায়মার কাজ। শিহাব আবারও বললো।

-আমি একজনকে বিয়ে করতে চাই। ওর নাম নীরা। শি ইজ এ ওয়ান্ডারফুল লেডি। ঠিক আমি যেমন চাই। আমি নীরাকেই বিয়ে করবো। এটা আমার ডিসিশন। আমি এখানে আর কারো মতামত চাই না। আমার মনে হয়েছে তোমাকে বলা উচিত আফটার অল ইউ আর মাই ফাদার। আমি নিশ্চিত নীরাকে তোমার খুব ভালো লাগবে।

রেজা সাহেব হাসলেন। তিনি জানতেন ওনার ছেলে তিশাকে কখনো বিয়ে করবে না। এজন্য তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন।

-বেশ তা কবে দেখতে পাবো আমার পুএবধূকে?

শিহাবও ছোট করে হাসলো।

-খুব তাড়াতাড়ি। তুমিও যাবে আমার সাথে ওদের বাড়িতে। আরেকটা কথা ওর একটা সমস্যা আছে।। ওর একটা পায়ে সমস্যা। খুঁড়িয়ে হাটতে হয়। তবে এতে আমার কখনো কোনো সমস্যা মনে হয়নি। এতোকিছুর পরেও ও একজন এস্টাবলিশ উমেন। আই রেস্পেক্ট হার। আমি হলফ করে বলতে পারি ও লাখে একজন। বাকি তুমি নিজেই দেখে নিও।

রেজা সাহেব বললেন।

-তুমি শিওর? ভবিষ্যতে কখনো আফসোস করবে না তো? এটা ইনফ্যাচুয়েশন না তো?

শিহাব এবার একটু জোরে হাসলো।

-তুমি জানো যে আমি সবকিছু ভেবেচিন্তেই করি। নীরা আমার ইনফ্যাচুয়েশন না। কখনো হতোও না সম্ভব না। ওকে আমি আজীবনের জন্য চেয়েছি। আমি ওকে অনেকদিন যাবত চিনি। ওর সবকিছু জানি। ও আমার তারমানে ওর সবকিছুই আমার। ওর সমস্যাগুলোও আমার। কখনো আফসোসের প্রশ্নই উঠবে না।

রেজা সাহেব শিহাবের কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। ছেলে কাঁধে হাত রাখলেন অনেকদিন বাদে।

-জলদি দেখা করাও।

-অবশ্যই আমি তোমাকে আরেকবার বলছি এখানে আমি আর কারো মতামত চাই না। আমি শুধু আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলাম৷ তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমি আর কার মতামতের কথা বলেছি।

রেজা সাহেব হেসে বললেন।

-জানি। আমি কিন্তু বেশি অপেক্ষা করতে পারবো না। নীরাকে দেখতে চাই।

শিহাব তার বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বেড়িয়ে গেল। রেজা সাহেব উঠে বারান্দায় গেলেন। অনেকদিন পর খুব শান্তি লাগছে। ওনার ছেলে সত্যিই একটা হিরে। উনি জানতেন শিহাব এমন হবে। তবে নীরার প্রতি শিহাবের সম্মান দেখে রেজা সাহেব মুগ্ধ হয়েছেন।

তিনি ভাবলেন দেরি করা চলবে না। জায়মাকে এখনই ফোন করে বলতে হবে। নইলে তিশা বেচারিও আশায় থাকবে। উনি জায়মাকে ফোন দিলেন। দুইবার বাজার পর জায়মা ফোন রিসিভ করলেন।

-হ্যা বলো। শিহাব নিশ্চয়ই রাজি হয়েছে? আমি জানতাম ও রাজি হবে। আমার কথাও শুনেছে নিশ্চয়ই? তো আসমাদের সাথে বসে সব ঠিক করি একদিন।

-জায়মা তার আর দরকার হবে না। শিহাব অসম্মতি জানিয়েছে।

রেজা সাহেবের কথা শুনে জায়মা থম মেরে গেলেন। কন্ঠের উচ্ছাস হারিয়ে গেছে তার। তিনি নিজেকে ধাতস্ত করলেন এই ভেবে যে প্রথমে অসম্মতি জানাবেই পরে সব ঠিক হবে।

-আরে ও তো মুখে মনের কথা কিছু বলে না। পরে হয়তো বলবে।

-তুমি আমার ছেলেকে চেনোই না জায়মা। ও নিজের জন্য অনেক আগেই লাইফ পার্টনার খুঁজে নিয়েছে। মেয়েটার নাম নীরা। খুব প্রশংসা করলো। যতো দ্রুত সম্ভব আমরা নীরার বাসায় যাবো।।

জায়মা হতভম্ব হয়ে গেলেন। রাগে কষ্টে চেঁচিয়ে উঠলেন।

-আমি শিহাবের মা। আমার অধিকার আছে। আমাকে না জানিয়ে এসব করতে পারো না। কখনো না!

জায়মার চেঁচানো শুনেও রেজা সাহেব বিচলিত হলেন না। শীতল কন্ঠে বললেন।

-অধিকার নেই অনেক আগেই হারিয়েছো। আর শিহাব এই ব্যাপারে আর কারো মতামত চায় না। রাখছি।

রেজা সাহেব ফোন কাটার পর রাগে ফোন আছাড় মারলেন জায়মা। তার ছেলে কি কখনো তার কাছে ফিরবে না! কোন মেয়ের জন্য জায়মার এই অধিকারটুকুও রইলো না। কোন মেয়ে! সেটা জায়মা দেখবেনই। রাগে ক্ষোভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here