অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-সাতচল্লিশ
নাফিসা নীলয়া!
তিশার পাশের ফ্ল্যাটের একটা মেয়ের সাথে তিশার বন্ধুত্ব হয়েছিলো। একাকী জীবনে তিশাও নতুন বন্ধু পেয়ে খুশি ছিলো। মেয়েটা প্রতিদিন সকালবেলা তিশার সাথে দেখা করতে আসে। মূলত দুজন প্রতিদিন সকালে একসাথে জগিং করতে যায়। আজও তার উদ্দেশ্যেই মেয়েটা এসেছিলো। কয়েকবার সে বেল বাজালো। কিন্তু তিশার দরজা খোলার কোনো নামগন্ধ পাওয়া গেল না। মেয়েটার খটকা লাগলো। কারন তিশা এখানে আছে অনেকদিন। আর একদিনও তিশাকে এতো ডাকতে হয় না। একবার বেল বাজালেই তিশা দরজা খুলে দিতো। আজ এতোবার ডাকার পরও তিশা দরজা খুলছে না বলে মেয়েটা চিন্তিত হয়ে ফোন দিলো। ফোনও বাজতে বাজতে অফ হয়ে গেল। এভাবে অনেকক্ষন হয়ে গেলেও তিশা যখন দরজা খুললো না তখন আশেপাশের সবাই মিলে দরজা ভেঙে তিশার ফ্ল্যাটে ঢুকলো। তিশাকে ওই অবস্থায় দেখে অনেকেই ঘাবড়ে গেল। দ্রুত সবাই তিশাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। একজন তিশার বাড়ির লোকদের খবর দিলো।
নীরার কাছে যখন খবরটা পৌছালো তখন নীরা স্কুলে ছিলো। জায়মা নীরাকে জানিয়েছেন। তিনি ফোনে কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে নীরাকে তার অপারগতার কথা বলছিলেন। নীরা খবরটা শুনে প্রায় অনেকক্ষন কিছু বলতে পারেনি। তারপরও কোনোরকমে সে জায়মাকে অভয় দিয়েছে। জায়মার সাথে কথা বলা শেষে নীরা রেজা সাহেব সহ সবাইকেই খবরটা জানালো। শেষে শিহাবকে ফোন করে বললে শিহাব কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখালো না। ভাবলেশহীন গলায় বললো।
-তো আমরা কি করবো?
নীরা অবাক গলায় বললো।
-মানে? কি বলছো এসব তিশা তোমার কাজিন। এরকম বলতে পারো না। দ্রুদ হসপিটালে এসো।
শিহাব তখন নীরার কথা শুনে বললো।
-ও যা করেছে তাতে এটা তো কমই হয়ে যায়।
নীরা হতভম্ব হয়ে গেল শিহাবের কথা শুনে। আর কথা না বাড়িয়ে সোজা বললো।
-তুমি আমার কথা শুনবে। আর এখনই হসপিটালে আসবে।
শিহাব আর কিছু বললো না। নীরা ফোন রেখে দিলো। রুমা সব শুনে সে ও নীরার সাথে রওনা দিলো।
আসাদকে রুমা জানালো তিশার ব্যপারটা। আসাদকে যখন বলা হচ্ছিলো তখন সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। কম্পিত স্বরে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো কোনো ভুল হয়েছে কিনা!
নীরা হসপিটালে পৌছানোর পরে দেখলো বাড়ির সবাইও এসে গেছে ততোক্ষনে। আসমা হসপিটালের করিডোরে বিলাপ করছেন। জায়মা তাকে সামলাতে গেলে তিনি সবার সামনে জায়মাকে চড় মেরে বসলেন। চিৎকার করে বললেন।
-আজ তোর জন্য আমার মেয়ের এই অবস্থা। আমি কোনোদিনও তোকে মাফ করবো না। কোনোদিনও না।
জায়মা আসমার কথা শুনে ফ্লোরে বসে পরলেন। তার মনে হচ্ছে এসব কিছুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী। তিশার বাবা ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বসে আছেন। মেয়েকে তিনি অত্যাধিক ভালোবাসেন। সেই আদরের মেয়েরই আজ এই অবস্থা। রেজা সাহেব সৌজন্যতা বজায় রাখতে তিশার বাবার পাশে বসে অভয দিচ্ছেন। তিতলি কাঁদছে। তিশাকে সে কখনোই পছন্দ করতো না। তবে এইমূহুর্তে সে উপলব্ধি করছে সে তিশাকে বড় বোনের মতোই ভালোবাসে। রেহানও চুপচাপ দাড়িয়ে আছেম কোনো কথা বলছে না। নীরা সবার পরিস্থিতি দেখে আসমার কাছে এগিয়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে আসমার গলা বসে গেছে। নীরা সামনে গেলে তিনি আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলেন। নীরা তাকে জড়িয়ে ধরলো। আসমা আবারও কাঁদতে থাকলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন।
-আমার জন্যই এমন হয়েছে জানো। আমি গতকাল ওকে অনেক কথা শুনিয়ে এসেছি। আমার মেয়েটা হয়তো ওর মায়ের বলা কথা সহ্য করতে পারেনি। আচ্ছা তুমি কি কখনো আমার মেয়েটাকে ক্ষমা করতে পারবে না? ও যদি মরে যায়। তুমি কি ওকে ক্ষমা করবে না?
আসমার এমন কথা শুনে নীরার চোখে পানি এসে গেল। সে আসমাকে জড়িয়ে ধরেই বললো।
-আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি আন্টি। আপনি প্লিজ নিজেকে সামলান। মায়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। দোয়া করুন আন্টি তিশা নিশ্চয়ই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।
আসমা তবুও কাঁদতে থাকলেন। নীরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। পুলিশ আসলে রেহানই হ্যান্ডেল করলো। তাছাড়া তিশা একটা সুইসাইড নোটও লিখেছিলো। সেখানে নিজের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা লিখেছে সে। আত্মগ্লানিতে ভুগে নিজেই এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিশার বান্ধবি তিশার লেখা চিঠি আর চিরকুট নীরার হাতে দিলো। প্রথমটায় নীরার নাম লেখা ছিলো বলে সে নীরাকেই দিলো। একটু পরে আসাদ হসপিটালে পৌছালো পাগলের মতো। সে যেনো নিজের মাঝে নেই। দু চোখে সে ঝাপসা দেখছে। নীরা আসাদকে দেখে এগিয়ে গেল। আসাদ বারবার ঢোক গিলছে। নীরাকে দেখে বহু কষ্টে জিজ্ঞেস করলো।
-ওর কি অবস্থা?
নীরা আসাদের দিকে করুন চোখে তাকালো। বললো।
-তোমার জন্য একটা চিরকুট লিখেছে। পড়বে না?
আসাদ নীরাকে বললো।
-আমার সত্যিই উচিত হয়নি ওর পাগলামিতে সায় দেওয়া।
নীরা আর কিছু না বলে আসাদের হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিলো। আসাদ কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুট খুললো। খুব বেশি কিছু লেখা নেই তাতে। আসাদ ঝাপসা চোখে চোখ বুলালো।
“আমার কম্ফোর্টজোন আসাদ”
তোমাকে আমি এমন অদ্ভুত নামে কেন সম্বোধন করেছি জানি না। শুধু জানি তুমি আমার কম্ফোর্টজোন। যাকে সবকিছু বলা যায়। যার কাছে সব কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তুমি এমন একজন যে আমার কথায সবকিছু করতে পারো। এখন সেটা ভালো হোক কি মন্দ! আমি জীবনে অনেক গুনাহ্ করেছি আসাদ। আমার সাথে তোমাকেও আমার গুনাহর ভাগীদার করেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর হ্যা নীরার কাছে আমার হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিও। আমরা যা করেছি তা ঠিক ছিলো না। আরেকটা কথা তুমি যখন নীরার প্রশংসা করতে আমার তখন একদম ভালো লাগতো না। কেন লাগতো না জানা নেই। তবে তুমি এসব মন থেকে করতে না সেটা আমি বুঝতাম। তবুও ভালো লাগতো না। প্লিজ তুমি একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও। প্লিজ! আমাকে ভুলে যেও আমার মতো মেয়ে তোমার যোগ্য না। ভালো থেকো।
আর কিছুই লেখা নেই। পড়তে পড়তে আসাদের চোখে পানি এসে গেল। আসাদ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজের ফোনে তিশার মিসড কল দেখেছে। তখনই যদি সে কলব্যাক করতো। এতো বড় ভুল সে কি করে করলো! আসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
নীরা হসপিটালের করিডোরে বসে চিরকুটে চোখ বুলালো।
কোনো কিছু দিয়েই শুরু করছি না। কারন তোমাকে আমি কখনোই কোনো কিছু বলে সম্বোধন করিনি। নাম ধরে বলতাম। আজ সেটাও বলবো না। আমি তোমাকে দেখতে পারতাম না। তোমাকে সবসময় উল্টোপাল্টা বলতাম। তোমার দূর্বলতা নিয়ে কথা শোনাতাম। কিন্তু একটা কথা আমি তোমাকে এখন বলতে চাই। আমার এখন তোমার মতো হতে ইচ্ছে করে। তোমার মতো সুন্দর হতে ইচ্ছে করে। তোমার মতো কারো দায়িত্বশীল মেয়ে হতে ইচ্ছে করে কারো বোন হতে ইচ্ছে করে। কারো পার্ফেক্ট বউ হতে ইচ্ছে করে। গতকাল আমি উপলব্ধি করলাম আমার তোমার মতো হতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে যখন আমার মা আমাকে বললো আমার মতো মেয়ের জন্য তাদের জীবন ধ্বংস হচ্ছে। তোমার মতো মেয়ে নাকি লাখে একটা। আমার মায়ের তোমার মতো মেয়ে নেই কেন! এটা নিয়েও আক্ষেপও ছিলো। তখন মনে হলো। আমার মা আমাকে কাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমি কি! আমি কি করছি। নিজের সাথে সাথে সবার জীবনও শেষ করছি। একপাক্ষিক কোনোকিছু ভালো হয় না। জেদ,রাগ জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আমি সারাজীবন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি৷ ছোট থেকে শিহাবকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। খালামনিই আমাকে স্বপ্ন দেখাতো। তখনই মনে গেঁথে গেছিলো শিহাবের বউ আমিই হবো। অন্য আর কেউ হতে পারবে না। আমি যা চাই তাই ই পাই। কিন্তু যখন দেখলাম শিহাব তোমাকে ভালোবাসে৷ আমি শিহাবকে পাবো না তখন মাথায় রক্ত উঠে গেল। সারাজীবন সব পেয়ে আসা মেয়ে এখন নিজের পছন্দের মানুষকে পাবে না। সেটা কিছুতেই সহ্য হলো না। আর সেজন্যই এতো অন্যায় করে ফেললাম। আমি হয়তো এখনো বুঝতাম না জানো যে আমি অন্যায় করছি। কিন্তু যখন আমার মা আমাকে দেখিয়ে দিলো আমার করা অন্যায়ের জন্য সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আমার বাবা ভাই মাকে মানুষ বাজে কথা বলছে। তখন বুঝলাম। আমি আমার নিজের স্যাটিসফেকশন আর জেদের জন্য কতোবড় অন্যায়ই না করছি। আমার জীবনের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে আমি শিহাবকে ভালোবাসি না। ভালোবাসলে এরকম জঘণ্য কাজ করতে পারতাম না। শিহাবকে একটা চিঠি লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন মুখে লিখতাম বলো তো! তাই আর লিখিনি। শোনো আমার মা তোমার খুব প্রশংসা করে। সবসময়ই করে৷ আমার মায়ের কাছে মনে হয় তোমার মতো মেয়েই হয় না। আমার মাকে দেখে রেখো। তোমার কাছে আমি এই একটা জিনিসই চাইছি। আমি আর বেশিকিছু বলতে পারছি না। কারনটা তুমি জানো। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর সবাইকে নিয়ে খুব খুব ভালো থেকো।
ইতি
তোমাকে প্রতিদ্বন্দী ভাবা এক অভাগী মেয়ে।
নীরা তিশার চিরকুট পড়তে পড়তে মনে হলো মানুষ তো সেই অনুতপ্ত হয়ই। অনুতাপের আগুনে নিজেকে নিজেই কষ্ট দেয়। তবে কেন নিজের জেদ বজায় রাখতে এতো অন্যায়।
আসমা এখন একটু শান্ত হয়েছেন। তিনি শুনেছেন তিশা তার জন্য চিরকুট লিখে গেছে। তার পড়ার মতো অবস্থা নেই। তবুও তিনি নীরার কাছে পড়তে চাইলেন। নীরা করুন চোখে তাকিয়ে না করলো।
-আন্টি তেমন কিছু লেখা নেই। এখন পড়তে হবে না। দোয়া করুন। ডাক্তার তো বললো তিশা আস্তে আস্তে সার্ভাইব করবে।
নীরা শত বারনও কাজে দিলো না। শেষমেষ আসমাকে তিশার লেখা চিরকুট দিতে হলো। চিরকুট পড়ে তিনি আরো ভেঙে পড়লেন। তার মনে হলো তার নিজের দোষেই তার মেয়ে এরকম কাজ করেছে। আসমা প্রায় গড়াগড়ি দিয়ে কান্না শুরু করলেন। নীরা অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে আবার জড়িয়ে ধরলো। অতিরিক্ত স্ট্রেসে আসমা জ্ঞান হারালে তাকেও হসপিটালে এডমিট করতে হলো। নীরা আসমার হাত থেকে চিরকুট নিয়েছিলো সেসময়। তারপর সে নিজেই খুললো।
“আমার মা”
আমি ছোটবেলা থেকে তোমাদের কষ্ট দিয়ে এসেছি। যা চাইতাম তোমরা তাই ই এনে দিতে। এতো ভালোবাসা আদরের পরেও তোমাদের সম্মান আমি রাখতে পারিনি। তোমাদের কথা ভাবলাম না। শুধু নিজের কথাই ভেবে গেলাম। তুমি মনে করো না তোমার কথার জন্য আমি এরকম কাজ করলাম। এটা একদিন না একদিন করতামই। নিজেকে নিজেই শাস্তি দেওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিলো। আমার মতো মেয়ের না ভালো মেযে হতে পারতো না ভালো বোন আর না ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারতো। সবসময় সবাইকে বিপদে ফেলতাম আমি। কি জানি বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জন্য আরো অনেক মানুষ বিপদে পরতো। সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। একদম ভেঙে পরো না। তুমি তো নীরাকে পছন্দ করো৷ ওকে আমি বলেছি তোমাদের দেখে রাখতে। ও এই কথা রাখবে আমি জানি। বাবা আর ভাইয়ের খেয়াল রেখো। দুজনে ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো। বাবার ওষুধ খাওয়ার সময় হলে মনে করিয়ে দিও মা। তোমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আফসোস সেটা বুঝতেই খুব দেরি করে ফেললাম!
তোমার অভাগী মেয়ে বুঝতে খুব দেরি করে ফেললো মা।
এতোক্ষন নিজের মধ্যে কান্না চাপিয়ে রাখলেও এবার নীরা দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো। তিশার জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছে। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিলো না। তিতলি নীরাকে কাঁদতে দেখে নীরার পাশে গিয়ে বসলো।
শিহাব হসপিটালে পৌছে দেখলো পরিবেশ থমথমে। সে যখন তিশার সুইসাইডের কথা শুনলো তখন তার কোনো অনুভূতিই হয়নি। শুধু এটাই মনে হয়েছিলো সুইসাইড করে মেয়েটা একূল ওকূল দুকূলই হারালো। শিহাবকে দেখে তিতলি উঠে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো।
-আমি তো তিশা আপুকে পছন্দ করতাম না ভাই। তবে এখন আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে?
শিহাবের কাছে এর কোনো উত্তর নেই। সে তিতলিকে নিয়ে নীরার কাছে গেল। নীরা শিহাবকে দেখে রেগে বললো।
-তোমার এতোক্ষন লাগলো আসতে?
শিহাব সেকথার জবাব না দিয়ে বললো।
-খালামনি কোথায়?
তিতলি বললো।
-খালামনি অতিরিক্ত স্ট্রেস না নিতে পেরে সেন্সলেস হয়ে গেছে। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
এরপর কেউ আর কিছু বললো না। আসাদ একমনে মাথা নিচু করে বসে আছে। কিছুই বলছে না। জায়মাও কারো সাথে আর কোনো কথা বললো না। নিজেকে অপরাধী মনো হচ্ছে তার। তিশার বাবা আর রেজা সাহেবও চুপ করে রইলেন। হসপিটালে এতো জনকে এলাউ না করার জন্য নীরা জোর করে বাকিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। জায়মা যেতে চাইছিলেন না কিন্তু শেষে নীরার কথা ফেলতেও পারলেন না।
নীরা শিহাবের কাছে এসে বললো।
-তুমিও যাও। এখনো আছো কেন?
শিহাব নীরাকে দেখেই বুঝলো নীরা তার ওপর ভীষণ রেগে আছে। সে নীরাকে বললো।
-দেখো আমার ওরকম করা জায়েজ ছিলো।
নীরা দ্বিগুন রেগে বললো।
-তাই বলে কারো সুইসাইডের খবর শুনে তুমি ওভাবে বলবে?
শিহাব আর কিছুই বললো না। বুঝলো নীরাকে এখন শত বোঝালেও কাজ হবে না।
নীরাও আর কথা না বাড়িয়ে তিশার কেবিনে গিয়ে বসে রইলো। তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে নীরার খুব মায়া হলো। মেয়েটার বয়স মিলার থেকেও কম। আর এই বয়সে এতোকিছু নীরা আর ভাবতে পারলো না।
সারাদিন এভাবেই গেল। বিকেলে তিশার কন্ডিশন একটু ভালো হলো। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
মাঝরাতে তিশার জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলে আবছা আবছা ভাবে নীরাকে দেখতে পেল। নীরাকে দেখেই সে দ্রুত ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু শরীর অত্যন্ত দূর্বল থাকায় সে উঠতে পারলো না। নীরাও দ্রুত ধরে ফেললো তিশাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললো।
-কেমন লাগছে এখন?
তিশা অবাক হয়ে কিছুক্ষন নীরার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আচমকাই ডুকরে কেঁদে উঠলো। তিশাকে কাঁদতে দেখে নীরা চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। বললো।
-কেঁদো না বোকা মেয়ে। এমন কাজ কেউ করে? ভাবো তো তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার বাবা মায়ের কি হতো? তারা তো বেঁচে থেকেও মরে যেতেন। এরকম আর করবে না ঠিক আছে?
নীরার কথা শুনে তিশা কান্না থামালো। দূ্বল গলায় বললো।
-স্যরি।
নীরা একটু রাগী স্বরে বললো।।
-স্যরি বলবে না আমাকে। এরকম কাজ করার আগে ভাব উচিত ছিলো। আমি যা ও তোমাকে মাফ করতাম। এখন আর করবো না।
তিশা দূর্বল শরীরেই উঠে বসলো। নীরাও উঠতে সাহায্য করলো। তিশা দূর্বল গলায় বললো।
-যেহেতু বেঁচে গেছি এখন অনেক কথা বলার আছে তোমাকে।
নীরা বললো।
-এখন কোনো কথা বলতে হবে না। রেস্ট করো। আমি সবাইকে জানাই৷ সবাই খুব চিন্তিত তোমাকে নিয়ে।
নীরা কথা শেষ করেই সবাইকে ডাকার উদ্দেশ্যে উঠলো। তিশা নীরার হাত ধরে বললো।
-তোমাকে যদি মিলার মতো আপা বলে ডাকি তুমি কি মাইন্ড করবে?
নীরা অবাক চোখে তিশার দিকে তাকালো। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তিশা এরকম কথা বলছে। সে বিস্ময় নিয়েই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। তিশা ইশারায় নীরাকে বসতে বললো। নীরা বসলো৷ তিশা বললো।
-সবাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আপা সবাই কি আমাকে ক্ষমা করবে?
নীরা তিশাকে শুতে বলে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
-নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেো এটাই অনেক। এমন কয়জন বুঝতে পারে বলো তো। সবাই অবশ্যই ক্ষমা করবে।
তিশা আশ্বস্ত হয়ে চোখ বুঝলো। শিহাব নীরাকে ডাকতে এসেছিলো। আর ডাকতে এসেই সে নীরা আর তিশার সব কথা শুনলো। দরজার সামনে দাড়িয়ে তার একটা কথাই মনে হলো। আর সেটা হচ্ছে। তার বউ একজন ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক করে সবার মনে যে জায়গা করে নিতে পারে। ম্যাজিক করে সবার সব সমস্যা যে সমাধান করে দিতে পারে।
-চলবে!