অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-ঊনপঞ্চাশ (শেষ পর্বের প্রথম অংশ।)
নাফিসা নীলয়া!
তিশা আর আসমা আজ নীরার সাথে দেখা করতে এসেছে। তিশা আরো একটা কারনে এসেছে। আর সেটা হলো শিহাবের থেকে ক্ষমা চাওয়া। শুক্রবার হওয়ায় আজ সবাই বাড়িতেই আছে। জহুরা দরজা খুলে তিশা আর আসমাকে দেখে অবাক হয়ে গেছেন। তারপর নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে তিনি তিশা আর আসমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। নীরা আর তিতলি টেবিল সাজাচ্ছিলো। তিশা আর আসমাকে দেখে ওরাও অবাক হয়ে গেল। দুজন একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর নীরা ওদের দেখে হেসে কুশল বিনিময় করলো। রেজা সাহেব, রেহান আর শিহাবও নিচে নেমে তিশাদের দেখে অবাক হয়ে গেল। সকলকে আরো অবাক করে দিয়ে তিশা নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। হাসি হাসি মুখ করে বললো।
-কেমন আছো আপা? আমাকে তো আর দেখতেই গেলে না।
তিশার কথা শুনে সকলের ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। নীরা অবশ্য ব্যপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিলো। সেও তিশাকে আলতো জড়িয়ে ধরে বললো।
-আলহামদুলিল্লাহ্ তবে তোমাকে পুরোপুরি সুস্থ দেখে আরো ভালো আছি।
তিশা হাসলো। রেহান তিশাকে পিঞ্চ মেরে বললো।
-আরে বাহ্ এতো দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছিস। আমি তো ভেবেছিলাম আরো কয়দিন অসুস্থ থাকবি।
রেহানের কথা শুনে তিশা রেগে গিয়ে মারতে গেল,তিতলিও সাথে যোগ দিলো। সবাই ওদের কান্ড দেখে হেসে ফেললো। শুক্রবার হওয়ায় সবাই একসাথে নাস্তা করলো। আসমা নীরার হাত ধরে বললেন।
-এমন একটা বউই শিহাবের জন্য আমরা চাইছিলাম। শিহাবের জন্য আমার মেয়েকে আমি কখনোই ভাবিনি। তোমার মতো লক্ষী একটা মেয়েই তো ঘরে ঘরে দরকার। কি সুন্দর সবার কতো খেয়াল রাখছে।।
নীরা হেসে ফেললো আসমার কথা শুনে। আসমা রেজা সাহেবের সামনে গিয়ে বললেন।
-ভাইজান যাই ই হয়েছে আমি তার জন্য ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা করবেন ভাইজান।
রেজা আসমাকে বললেন।
-ভাইয়ের কাছে বোনের ক্ষমা চাইতে হবে না। তাছাড়া তোমার তো কোনো দোষ ছিলো না। সবাই ভালো থাকো এটাই চাই।
আসমা নিশ্চিন্ত হলেন রেজা সাহেবের কথা শুনে।
তিশা ভয়ে শিহাবের সামনাসামনি হতে পারছে না। আর নিজের অপরাধের কথা ভেবেও তার যেতে ইচ্ছে করছে না। নীরা তিশাকে অভয় দিলো যে সে শিহাবকে বলেছে শিহাব তিশাকে ক্ষমাও করেছে। কোনো কষ্ট রাখেনি। তবুও তিশা যেতে চাইছে না। অনেক দোনামোনা করতে করতে শেষমেষ তিশা শিহাবের সামনে গেল। শিহাব স্বাভাবিক মুখ করে প্রশ্ন করলো।
-কি হয়েছে? কিছু বলবি?
শিহাবের প্রশ্ন শুনে তিশা হঠাৎ কেঁদে ফেললো। তিশার কান্না দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। তিশা কাঁদতে কাঁদতে শিহাবকে বললো।
-আমাকে ক্ষমা করে দিও শিহাব ভাই। আমি জানি আমি যেই জঘণ্য কাজ করেছি তারপর আমার আর ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই। তবুও ক্ষমা চাইছি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি ক্ষমা না করলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো না। আমি এখন বুঝতে পারছি তোমার প্রতি ওসব পাগলামো আমার ভালোবাসা ছিলো না। কখনোই না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো। আপা বলেছে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে।
শিহাব কিছুক্ষন তিশার কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর নীরার দিকে তাকালো। নীরা ইশারায় বললো ক্ষমা করার জন্য। শিহাব এবার তিশার দিকে তাকিয়ে বললো।
–ক্ষমা করে দিয়েছি। শুধুমাত্র আমার বউয়ের কথা রাখতে। নইলে কখনোই ক্ষমা করতাম না।
শিহাবের কথা শুনে তিশা সাথে সাথে চোখ মুছে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো।
– অনেক অনেক থ্যাংক ইউ।
শিহাব তিশার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। এই না কাঁদছিলো এখন আবার হাসছে। শিহাব নীরার দিকে তাকালে দেখতে পেল নীরা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে। শিহাব হতভম্ব হয়ে গেল। নীরা শিহাবের কাছে এসে আস্তে করে বললো।
-সবার সামনে এমন করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললে কেন! সবাই কি ভাবলো।
শিহাব বুঝতে পেরেছে নীরার রাগের কারন। সে সবার আড়ালে নীরার হাত আলগোছে ধরে বললো।
-সবাই বউ পাগল বলবে। আর আমি তো আমার বউয়ের জন্য পাগলই। তোমাকে যখন দেখি তখন আমি দিন দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যাই।
শিহাবের কথা শুনে নীরা হঠাত লজ্জা পেলো। আশ্চর্য এমন লজ্জা তো আগে লাগেনি। শিহাব নীরার লজ্জারত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
-জীবন ধন্য। আমার বউয়ের লজ্জারত মুখ সচরাচর দেখা যায় না। আজ হঠাত দেখতে পেলাম।
নীরা এই কথায় আবার রেগে গেল। রেগে শিহাবের হাতে চাপড় দিলো। শিহাব শুধু হাসলো।
তিতলির সাথে কয়েক কদম দূর থেকে নীরাদের দেখে তিশা বললো।
-আমি শুধু শুধু এতো পাগলামি আর গুনাহ্ করলাম। দে আর মেড ফর ইচ আদার। কেউ ওদের আলাদা করতে পারবে না।
তিতলি তিশার কথা শুনে হাসলো। বললো।
-আপনিও চাইলে আসাদ ভাইয়ের সাথে মিলে মেড ফর ইচ আদার হতে পারেন ম্যাডাম!
তিশা তিতলির কথা শুনে তিতলিকে হতাশ কন্ঠে বললো।
-কিন্তু আমি আসাদকে বলার সাহস পাচ্ছি না।
তিতলি তখন সিরিয়াস হয়ে বললো।
-ডোন্ট ওয়ারি আজ আমরা সবাই মিলে সাইফ ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে যাবো। তুইও যাবি। ভাবিমনি আসাদ ভাইকে ফোন করে নিয়ে আসবে। তখন নিজের মনের কথা কনফেস করবি আসাদ ভাই ঠিকই রাজি হবে। সেদিন হসপিটালে তোর অবস্থা দেখে আসাদ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। বেচারা পারছিলো না যে কেঁদে দেয়।
তিতলির মুখে আসাদের কথা শুনে তিশা একটু স্বস্তিবোধ করলো। সবাই মিলে ঠিক করলো রাতে সবাই একসাথে খেতে যাবে বাইরে। তিতলি খুশি মনে মিলাকে ফোন করে সব বললো। মিলাও খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
নির্বান বাইরে চলে যাবে বলে নীরা ওকেও ইনভাইট করলো। নির্বানও খুশিমনে এক্সেপ্ট করলো।
সবাই সন্ধ্যার পরপরই সাইফের রেস্টুরেন্টে চলে এলো। রুমা সবাইকে দেখতে পেয়ে দূর থেকেই দৌড়ে চলে আসলো। সাইফও ভয়ে ভয়ে রুমার পেছনে ছুটলো। সবাই হেসে ফেললো ওদের কান্ড দেখে। কিন্তু নীরা রুমাকে সবার সামনে খুব বকলো। ধমকে ধমকে বললো।
-এমন সময়েও এমন উথাল পাতাল করতে হবে তোর? আশ্চর্য রুমা! কতোবার বলেছি সাবধানে চলাফেরা করতে? দৌড় দিলি কেন বেয়াদব মেয়ে?
নীরার ধমক শুনে রুমা চুপসে গেল। সাইফও নীরার ধমকে সায় দিলো। বললো।
-তুই ই ওকে বোঝা নীরা। ও আমার একটা কথাও শোনে না। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি করতেই থাকে।
ওদের কথোপকথন শুনে সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। কেউই কিছু বুঝতে পারছে না। নীরার সবার অবস্থা দেখে বললো।
-আমার বেন্টফ্রেন্ড আমার বোন রুমা মা হতে চলেছে।
নীরার কথা শুনে সবাই উচ্ছাসে ফেটে পরলো। মিলা রুমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
-কংগ্রাচুলেশনস নতুন মা।
তিতলি কাছে গিয়ে বললো।
-কই বোঝা যাচ্ছে না তো। বেবি বাম্প নেই কেন?
তিতলির কথা শুনে সবাই সমস্বরে হেসে ফেললো। রেহান তিতলিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-গাঁধি তো গাঁধির মতো প্রশ্ন করবেই। এটাই স্বাভাবিক। এ নাকি সমানেই মেডিকেলের এডমিশন টেস্ট দিবে।
তিতলি রেহানের কথায় রেগে ওকে মারতে গেল। নীরা তিতলিকে আগলে ধরে বললো।
-এতো দ্রুত বেবি বাম্প বোঝা যাবে না। ফাইভ মান্থস থেকে বোঝা যাবে। ওর মাত্র টু মান্থস। বুঝেছো?
তিতলি মাথা নেড়ে বললো।
-বুঝেছি।
সাইফ লাজুক স্বরে সবাইকে বললো।
-এজন্যই সবাইকে ইনভাইট করা।
শিহাব সাইফকে জাড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালো। তারপর আস্তে করে বললো।
-এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন? লজ্জা পাওয়ার কথা তো রুমার ও তো দিব্যি আছে।
সাইফ শিহাবের কথা শুনে লাজুক স্বরেই বললো।
-কি জানি বুঝতে পারছি না।
শিহাব সাইফের কথা শুনে জোরে হেসে ফেললো।
মিলা নীরা আর রুমার ওপর কপট রাগ দেখিয়ে বললো।
-আমাকে আগে বলা হয়নি কেন? কেউ ভালোবাসে না আমাকে!
রুমা মিলার কথায় হাসতে হাসতে বললো।
-আহারে রাগ করিস না। সবাইকে একসাথেই জানালাম।
নীরা মিলাকে বললো।
-রাগ করিস না। এই গাঁধি নিজেও জানতো না। ওর শরীর খারাপ দেখে আমিই জোর করে হসপিটালে নিয়ে গেলাম টেস্ট করানোর জন্য।
মিলা হেসে বললো।
-হয়েছে আর আমাকে মানাতে হবে না। রাগ পরে গেছে!
নির্বান এসেই তিতলির আজগুবি কথাটা শুনেছে। তারপর সে কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। তিতলি নির্বানকে দেখতে পেয়ে কাছে আসলো। বললো।
-এই যে! সবাই ওদিকে গেছে। আপনার ম্যামও আপনাকে ওদিকে যেতে বলেছে।
নির্বান নিজের ভাবনা কাটিয়ে বললো।
-ভালো আছেন?
তিতলি নির্বানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
-ভালো আছি। শুনুন আপনি আমাকে এতো এতো গিফ্টস পাঠাবেন না।
নির্বান মাথা নেড়ে বললো।
-আচ্ছা।
-আর চিরকুট লিখবেন না।
-আচ্ছা।
-আপনি বলেছিলেন আরেকবার দেখা করবেন। ভাবিমনির জন্য দেখা হয়েই গেল। এখন আবার বলবেন না আপনাকে সি অফ করতে যেতে।
-আচ্ছা।
তিতলি নির্বানের মুখে এতোবার আচ্ছা শুনে এবার বিরক্ত হয়ে গেল। বললো।
-আচ্ছা ছাড়া আর কোনো কথা জানেন না?
নির্বান থতমত খেয়ে বললো।
-জানি তো।
-তাহলে এতো আচ্ছা আচ্ছা করছেন কেন?
-তাহলে কি বলবো?
তিতলি এবার রেগে বললো।
-কিচ্ছু বলতে হবে না। শুনুন ভালোভাবে লেখাপড়া করবেন। আমার কথা এতো ভাববেন না। পরিবারের কথা ভেবে সামনে এগিয়ে যাবেন। আমি দোয়া করবো আপনার জন্য।
নির্বান তিতলির প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। প্রতিটি কথা তার কাছে মুধুর মতো শোনালো। সে সায় দিয়ে বললো।
-আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে আমি সব করতে পারবো। ওয়াদা করছি একদিন যোগ্য হয়ে আপনার ভাইদের কাছে আপনাকে চেয়ে নেবো। আপনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন?
তিতলি একটু হাসলো। তারপর বললো।
-পারবো। কিন্তু শেষ ফয়সালা আমার ভাইয়েরাই করবে।
বহু প্রতিক্ষিত জিনিস পেয়ে গেলে মানুষ যেমন খুশিতে দিশেহারা হয়ে যায় নির্বানেরও এখন সেরকমই অবস্থা। খুশিতে তার চোখে পানি এসে যাওয়ার উপক্রম। যেই মেয়েটাকে একপলক দেখার জন্য সে প্রতিদিন রোদে পুড়ে দাড়িয়ে থাকতো। যার জন্য এগিয়ে যাওয়া। এতো দূরে যাওয়া সেই ই নিশ্চয়তা দিলো অপেক্ষা করবে বললো। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। তিতলি নির্বানের অবস্থা দেখে বললো।
-এতো ইমোশনাল হবেন না। আমার জন্য দোয়া চাই। সামনেই আমার মেডিকেলের এক্সাম।
নির্বান তিতলির মাথায় হাত ছুঁয়ে বললো।
-পৃথিবীর সব ভালো কিছু আপনার হোক।
তিতলি মিষ্টি করে হাসলো শুধু। মিলা এসে ওদের একত্রে দেখে বললো।
-এখানে দাড়িয়ে আছো এখনো। ওদিকে চলো।
মিলা এসে ডাকাতে তিতলি আর নির্বানের কথা শেষ হলো। মিলার সামনে গিয়ে মিলার হাত ধরে তিতলি এগিয়ে গেল। নির্বান সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর নিজেও সেদিকে গেল।
নির্বানের বাইরে যাওয়া উপলক্ষে নীরা ওকে কিছু গিফ্টস দিলো। সবাই নির্বানকে অনেক দোয়া দিলো। নীরা একফাকে নির্বানকে ডেকে বললো।
-মাই ডিয়ার স্টুডেন্ট তুমি যে আমার ননদীনির প্রেমে পরেছো সেটা আমি জেনে গেছি।
নির্বান মাথা নিচু করে নিলো। মুখে বললো।
-স্যরি ম্যাম।
নীরা স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো।
-তুমি তিতলিকে চিরকুট লিখে গিফ্টসসহ পাঠাও সেটা দেখলাম। একদিন ওর ঘর গোছাতে গিয়ে নজরে পরলো। তোমার হ্যান্ড রাইটিং আমি ছাড়া আর কে ভালো বুঝবে বলো! যদিও আমি আগে থেকেই বুঝেছি দেখার পর শিওর হয়েছি।
নির্বান চুপ করে রইলো। নীরা নির্বানকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো।
-তোমরা দুজনেই আমার কাছে খুব আদরের। তিতলি কেমন সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ও ওর ভাইদের কথা ছাড়া এক পা ও দেবে না কখনো। তোমাকে নিশ্চয়ই ও এসব বলেছে?
নির্বান মাথা নাড়লো। নীরা আবার বললো।
-তোমরা দুজনেই যথেষ্ট ম্যাচিউর। আমি জানি নিজেদের মধ্যে হয়তো সব কথা বলেছোও। বাইরে যাচ্ছো ভালোভাবে পড়বে। নিজেকে আরো যোগ্য করবে। তারপর শিহাব আর রেহানের সাথে সরাসরি কথা বলা যাবে। ততোদিনে আবেগের বশে কোনো কাজ করবে না। আর না বেশি এক্সপেক্টেশন রাখবে!মনে রাখবে তোমার ক্যারিয়ারের জন্য তোমার পরিবার অনেককিছু করেছে। অনেক কষ্টে তারা তোমাকে বড় করেছেন। এটা মনে রেখেই সামনে আগাতে হবে। এখন এসবে মনোযোগ দেওয়া যাবে না। প্রমিস করো তুমি এসব কথা ভেবেই এগোবে। আবেগ দিয়ে অন্যপথে যাবে না?
নির্বান নীরাকে প্রমিস করলো। বললো।
-ইউ আর দ্যা বেস্ট পারসন এভার ম্যাম। আমি নিজেকে খুব লাকি মনে করি আপনার কাছে একসময় পড়েছিলাম বলে।
নীরা হেসে বললো।
-তুমিও খুব ভালো নির্বান। আমার কথাগুলো মনে রাখবে ওকে?
নির্বান হেসে বললো।
-ওকে!
আসাদ এসে থেকে চুপচাপ রয়েছে। যে যার মতো কথা বলছে। রুমা বারবার আসাদকে এসে এটা ওটা দিচ্ছে। আসাদের সাথে রুমার চমৎকার বন্ধুত্ব। আসাদ আসার পর রুমা নিজে থেকে আসাদকে বলেছে।
-তুমি তো মামা হচ্ছো।
আসাদ তখন বিস্মিত হয়ে বললো।
-মানে?
রুমা হাসি-হাসি মুখ করে বললো।
-মানে আমি মা হবো।
আসাদ তখন রুমার বলার ধরণ দেখে হেসে ফেলেছিলো। অনেক অনেক অভিবাদন জানিয়েছে। এরপর থেকেই চুপচাপ রয়েছে। তার চুপচাপ থেকে চিন্তা করার কারন নীরাকে সে এখনো ক্লিয়ার করে কিছুই বলতে পারেনি। মনে এখনো খচখচ করছে বিষয়টা নিয়ে। নীরা আসাদকে চুপচাপ লক্ষ করে এগিয়ে গেল। নীরা সামনে আসাতে আসাদ চমকে উঠলো। নীরা আসাদের সামনে বসে বললো।
-এরকম মনমরা হয়ে আছো কেন? তোমাকে এভাবে মানায় না। তোমাকে হাসিখুশিই মানায়। তাছাড়া আজ তোমার প্রানের বান্ধবির খুশির দিন।
শেষের কথাটা নীরা একটু পিঞ্চ মেরে বললো। আসাদের সাথে রুমার এতো ফ্রি হওয়া নিয়ে তার একটু হিংসে হতো। রুমা তার বেস্টফ্রেন্ড এজন্যই হয়তো। আসাদ নীরার কথা শুনে হেসে ফেললো। বললো।
-তোমার বেস্টফ্রেন্ড আমাকে এই একটুখানি ইম্পর্টেন্স দেয় বলে হিংসে হচ্ছে? চিন্তা নেই রুমার কাছে তুমিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
নীরাও হাসলো আসাদের কথায়। আসাদ নীরাকে বলে উঠলো।
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো বলেছিলাম। সব ক্লিয়ার করা দরকার।
-কিছু ক্লিয়ার করতে হবে না। তিশা সব বলেছে।
তিশা সব বলেছে শুনে আসাদ একটু অবাক হলো। নীরা তা দেখে বললো।
-ও আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। একটা চান্স চেয়েছে ভালো মানুষ হওয়ার। আমরা সবাই দিয়েছিও।
আসাদ নিজের অবাক ভাব কাটিয়ে বললো।
-হ্যা আমার সাথে কথা হলেও এখন শুধু তোমার কথা বলে। তোমাকে তো আপাও ডাকে। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখন বিশ্বাস হচ্ছে।
নীরা কিছুক্ষন ওপাশে সবার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর আসাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
-তিশা তোমাকে ভালোবাসে জানো? শিহাবের জন্য ওর যেটা ছিলো সেটা ভালোবাসা না জেদ ইনফ্যাচুয়েশন। আর তুমিও তিশাকেই ভালোবাসো না করবে না। আমি সেদিন হসপিটালে তোমাকে দেখেই বুঝেছি।
আসাদ দ্বিতীয় বার অবাক হলো। আজ বোধ হয় তার অবাক হওয়ার দিন। সে আমতাআমতা করে বললো।
-আমি স্যরি তোমাদের সাথে হয়তো অনেক খারাপ করেছি। কিন্তু সেদিন যখন আমার মাকে হসপিটালে নিয়ে গেলে সেদিনের পরেই আমি ঠিক করেছি তোমাদেরকে সব বলবো। এভাবে আর না। কিন্তু তার আগেই তো তিশার সুইসাইডের চেষ্টা! যাই হোক এসবকিছুর জন্য থ্যাংক ইউ। আর যা করেছি তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি।
–ক্ষমা করতে পারি তবে এক স্বর্তে এখন এই মুহূর্তে তিশাকে প্রপোজ করতে হবে।
নীরার কথা শুনে আসাদ অসহায় হয়ে তাকালো। সেই মুহূর্তে তিতলি এসে আসাদের পাশে ধপ করে বসে বললো।
-কোনো কথা হবে না আসাদ ভাই এখন এই মুহূর্তেই তিশা আপুকে বিয়ের প্রপোজাল দিতে হবে। একদিন না একদিন তো করতেই হবে। তবে শুভকাজে আর দেরি কেন! আপনি জানেন আপনি এমন হয়ে আছেন বলে আমার তিশা আপু কতো কষ্ট পাচ্ছে।
আসাদ তিতলির গাল টিপে বললো।
-হাউ কিউট ইউ আর! তিশা সবসময় তোমার কথা বলতো। আমার যে কেন তোমার মতো একটা বোন নেই!
তিতলি তখন হাসতে হাসতে বললো।
-আই এম অলওয়েজ হেয়ার আসাদ ভাই। আমার তো এখন চার চারটা ভাই হয়ে গেল। ভাই, ছোট ভাই আর সাইফ ভাই তো আগে থেকেই ছিলো। এখন আপনিও আমার ভাইয়ের লিস্টে যুক্ত হলেন। চলুন এখন জলদি জলদি আমার বোনকে প্রপোজ করুন। উঠুন।
তিতলি আসাদের হাত ধরে টানলো। আসাদ হাসতে হাসতে উঠে নীরার দিকে তাকালো। নীরা হেসে বললো।
-যাও বন্ধু জিতে এসো!
আসাদ হাসতে হাসতে তিতলির সাথে গেল। শিহাব নীরাকে এতোক্ষন যাবত আসাদের সাথে হেসে কথা বলতে দেখে রেগে আছে। নীরা সেটা লক্ষ করে মজা পেলো। মনে মনে ভাবলো একটু পরে এই রাগ আর থাকবে না। সে উঠে এসে শিহাবের পাশে দাড়ালো। শিহাব মুখ ফিরিয়ে নিলো। নীরা শিহাবের মুখ ফেরানো দেখে হাসলো। তারপর বললো।
-কে যেনো কথা দিয়েছিলো আমার ওপর কখনো বিরক্ত হবে না। আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। এখন সে ওয়াদা ভঙ্গ করছে। করুক ওয়াদা ভঙ্গকারীকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। আমিও করি না। আমি যাই।
শিহাব হুট করে নীরার হাত ধরে একদম কাছে টেনে হিসহিসিয়ে বললো।
-আমাকে পছন্দ করবে না মানে! করতেই হবে। তুমি বাধ্য। আর যাই মানে কি কোথাও যাবে না তুমি এখানেই দাড়িয়ে থাকবে।
নীরা খিলখিল করে হেসে বললো।
-ছাড়ো কি ভাববে সবাই। তুমিও তো আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। তাই তো আমি ওই কথা বললাম।
শিহাব তখন গম্ভীর হয়ে বললো।
-কেন বলেছি জানো না?
নীরা শিহাবের হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো।
-জানি। আমার ঘাড়ত্যাড়া হিংসুটে রাগী হাজবেন্ড উল্টাপাল্টা ভেবেছে।
শিহাব নীরার হাত দুহাতে ধরে বললো।
-তোমাকে অন্য কারো সাথে এক মুহূর্ত দেখলেই আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে।
নীরা হাসতে হাসতে বললো।
-থাক আর আগুন জ্বালাতে হবে না সামনে তাকাও।
মিলা তিশাকে সবার মাঝখানে টেনে নিয়ে আসলো। তিশা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। মিলা কেন তাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলো তাও আবার সবার মাঝখানে। সে মিলাকে জিজ্ঞেস করলো।
-এভাবে টেনে আনলে কেন মিলা?
মিলা তখন দুষ্টু হেসে বললো।
-আমার আপাকে আপা আপা বলে আমার আদর ভাগ করে নিচ্ছো তার শাস্তি দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।
তিশা অবাক হয়ে গেল মিলার কথায়। তিতলি আসাদকে নিয়ে এসে তিশার সামনে দাড় করিয়ে বেস্ট অপ লাক বলে মিলার হাত ধরে সরে আসলো।
তিশা আসাদকে তার সামনে দেখে আরো অবাক হয়ে গেল। আসাদ আর কোনোকিছু না ভেবে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা তিশার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো।
-তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে তিশা? উইল ইউ ম্যারি মি? প্লিজ আমাকে বিয়ে করো। আমাকে বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করো। আমি মরে যাচ্ছিলাম কোনো কিছু বলতে না পেরে। আরো মরে যাবো যদি তুমি আমাকে বিয়ো করতে রাজি না হও।
তিশা আসাদের কথা শুনে তৎক্ষনাত কেঁদে ফেললো। তারপর আসাদের বাড়ানো হাতে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
-আমি অবশ্যই তোমাকে বিয়ে করবো। অবশ্যই।
আসাদ উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে অপরাধী কন্ঠে তিশাকে বললো।
-স্যরি কোনোকিছু দিলাম না। আসলে জানতাম না তো যে আজই প্রপোজ করবো!
তিশা চোখে পানি নিয়েই হাসতে হাসতে বললো।
-কিচ্ছু লাগবে না। এই প্রপোজালটাই আমার কাছে বেস্ট উপহার।
ওদের ঘিরে সবাই জোরে কড়তালি দিলো। রেহান সিটি বাজালো,মিলা তার পাশে দাড়িয়ে বললো।
-নাহ্ বাজে স্বভাবগুলো আর যাবে না।
রেহান হেসে বললো।
-এসব দেখেই তো আমার প্রেমে পরেছো।
মিলা তখন আর কিছু না বলে হাসলো।
সাইফ রুমাকে বললো।
-এই এখন তো ওদের বিয়ে হবে ধুমধাম করে। চল আমরা আবার বিয়ে করি।
তিশা সাইফের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
-দুইদিন পর বাচ্চার বাপ হবি আর বলছিস আবার বিয়ে করবি?
সাইফ দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো।
-বাচ্চা হওয়ার পর বিয়ে করবো। আমার বাচ্চারও তো একটা শখ আছে বাপ মায়ের বিয়ে দেখার।
রুমা হেসে ফেললো বললো।
-একটা পাগলকে বিয়ে করেছি।
নির্বান তালি দিতে দিতে তিতলির পাশে গিয়ে বললো।
-সুন্দর লাগছে দুজনকে তাই না?
তিতলি হেসে বললো।
-সত্যিই।
নির্বান তিতলিকে বললো।
-আপনার হাতটা একটু ধরি?
তিতলি নির্বানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
-সাবধান এখন তো আমার চার চারটা ভাই।
ভাইদের কথা শুনেই নির্বানের হাসিমুখ মিলিয়ে গেল।
তিতলি সেটা লক্ষ করে বললো।
-অফিশিয়ালি যেদিন দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হবেন সেদিন ধরবেন।
নির্বান তখন বললো।
-ইনশাআল্লাহ!
শিহাব চুপসানো মুখ করে নীরার দিকে তাকালো। নীরা এবার মজা নেওয়ার জন্য শিহাবকে ইগনোর করে সবার কাছে চলে যেতে চাইছিলো। কিন্তু শিহাব আবার নীরার হাত ধরে বাঁধা দিলো।
-আই এম স্যরি।
নীরাও মজা করে বললো।
-স্যরি ফর হোয়াট?
শিহাব আলগোছে আশেপাশে তাকিয়ে হুট করে নীরার গালে চুমু দিয়ে দিলো। নীরা গালে হাত দিয়ে বললো।
-কি হলো এটা? কেউ যদি দেখে ফেলতো?
শিহাব সেই প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে বললো।
-একদম না বোঝার ভান করবে না নইলে সবার সামনেই আবার দিয়ে দিবো।
নীরা আর মজা করতে পারলো না। শিহাবের সুন্দর হাসির দিকে আচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে বললো।
-তুমি জানো তোমার হাসি কতো সুন্দর। আমি সাবধান করে দিচ্ছি এই হাসি যেনো শুধু আমার জন্যই হয়। অন্য কারো জন্য যেনো না হয়।
শিহাব হাসতে হাসতেই নীরার হাত ধরে বললো।
-তুমি বললে আমি সবকিছু করতে রাজি। এভরিথিং!
নীরা শিহাবের কাঁধে মাথা দিয়ে বললো।
-লাইফ ইজ বিউটিফুল!
-চলবে!