গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story) পর্ব- ৯

0
4431

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিকের মনে অজানা ভয় ঢুকে যায়। কাজল কোথায় গেলো? রুদ্রিক আশাপাশে তাঁকিয়ে কাজলকে খুঁজতে শুরু করলো। রুদ্রিক চিৎকারের সুরে বলে উঠে,
“কাজল কোথায় তুই? ”
তখনি একটা বাচ্ছা পিছন থেকে রুদ্রিকের হাত ধরে বলে,
“ভাইয়া। ”
রুদ্রিক পিছনে তাঁকিয়ে দেখে একটা ছোট বাচ্ছা ছেলে। পড়নে তার ঢিলা জামা-কাপড়। রুদ্রিক বলে উঠে-
“তুমি কে? তোমার হাতে কী?

—-” আমাকে ভালো আপা পাঠাইছে এবং কইয়াও দিছে আপনারে আইস্ক্রিম টা দেওয়ার লেইগা। আপা-ই’ আমার দোকানে বইয়া আছে। আপনিও আইসা পড়েন। ”

ছোট বাচ্ছাটা দুটো আইস্ক্রিম বের করে রুদ্রিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।

রুদ্রিক আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় পিচ্ছির সেই দোকানে।

হ্যা কাজল বসে আছে সেই দোকানে। কাজলকে দেখে এখন কিছুটা হাল্কা লাগছে রুদ্রিকের। কত্ত বড় দায়িত্বহীন মেয়েটা। কতটা ভয় পেয়েছিলো সে। মেয়েটা কী এইবার ও বুঝে নাহ।
কাজলকে এইবার চরম ধমক দিবে কথাটি ভেবেই রুদ্রিক এগিয়ে গেলো। কিন্তু মুহুর্তের জন্যে রুদ্রিকের চোখ-জোড়া যেনো নিষ্পলক ভাবে আটকে গেলো কাজলের দিকে। কাজল বাচ্ছাদের মতো আইস্ক্রিম খাচ্ছে। মুখ একেবারেই ভরে গেছে আইস্ক্রিম দিয়ে। কাজলের গোলাপের মতো লাল গালে আইস্ক্রিম লেগে গিয়েছে। রুদ্রিক শুকনো ঢুক গিলে মনে মনে বিড় বিড় করতে থাকে,

“তুই ভয়ংকর হরনকারী! সব তুই। হ্যা হ্যা কাজল তুই ভয়ংকরী। ”

গালে কিছুর স্পর্শ পেয়ে আমি পাশে তাঁকিয়ে দেখি, ছোট সাহেব টিস্যু পেপার দিয়ে আমার গাল পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। আমি নড়েচড়ে উঠতেই উনি ধমকে বলেন,

“ডোন্ট মুভ! মুখ কী করেছিস দেখেছিস? তুই কী বাচ্ছা হ্যা?

কথাটা বলেই উনি আমার আরো এগিয়ে যত্ন সহকারে টিস্যু দিয়ে মুখটা পরিষ্কার দিতে থাকেন।

আমি খোলা চুল হওয়ায় উনার মুখে সব গিয়ে পড়ছে। আমি শুধু উনার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছি। উনি আমার দিকে একপলক তাঁকিয়ে দূরে সরে যান।
কিছুটা ঝাঝালো কন্ঠে বলেন,

“তুই আমাকে না বলে চলে এসেছিস কেন? জানিস আমি কত্ত… “বাকি কথাটুকু বলতে গিয়ে থেমে যান উনি।

——-” ভয় পেয়েছিলেন বুঝি? ”

আমার প্রশ্নে উনি কিছুটা থতমত খেয়ে বলেন,

—-“আমি আবার কীসের ভয় পাবো? রুদ্রিক শেখ কোনো কিছুর ভয় পাইনা। ”

—-“হয়তো আমাকে হারানোর ভয় পেয়েছিলেন।”

উনি আমার কথায় উঁচু গলায় বললেন,

“তোকে হারানোর ভয় আমি পাবো? কেনো তুই আমার কে? তোর যা ইচ্ছে হোক আই ডোন্ট কেয়ার। তুই শুধু আমাদের বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়ে। ”

——“ছোট সাহেব! কোনো কোনো সময় সামান্য মানুষ আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

আমার জীবন বড়ই অদ্ভুদ। আমাদের জীবনে কিছু মানুষ অপ্রত্যাশিতভাবে ‘কেউ’ হয়ে উঠে। ”

—-“কেউ বলতে ঠিক কাকে বুঝাতে চাইছিস? ”

আমি মুচকি হেঁসে বললাম,

“আপতত না বলা-ই’ থাক। আপনার হাতের আইস্ক্রিম টা তো গলে যাচ্ছে। খেয়ে নিন। আইস্ক্রিম খেলে একটু হলেও মাথার রাগ কমবে মনে হয়। ”

—-“কি বললি তুই? ”
কথাটা বলে উনি আইস্ক্রিমের কামড় বসান।

—“না মানে কি জানি বাবা আপনার যা রাগ। আমার মনে হয়না এইটুকুনি আইস্ক্রিম খেলে আপনার মতো বদমেজাজির মাথার রাগ কমবে।”

উনি আমার দিকে শাসিয়ে কন্ঠে বলেন,

“কাজল তুই কিন্তু বড্ড বেশি করছিস। ”

উনার কথার মাঝেই আমি বলে উঠি,

“আজকের গোধূলী বড্ড সুন্দর না?

উনি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,

” তোর কী এই গোধূলী বড্ড ভালো লাগে?”

—“হুম নদীর পাশে বসে গোধূলী দেখায় এক আলাদা সৌন্দর্য আছে। আমার কাছে এই জায়গাটা বড্ড পছন্দের।”

সত্যি আজকের গোধূলীটা বড্ড সুন্দর।

নদীর স্বচ্ছ জল। সূর্যরশ্মির নিবিড় সখ্যতায় ঝলমল করে স্রোত। কখনও জোয়ার, কখনও ভাটা। মন মিশে একাকার হয় এই রুপালি জলে। আর সময়টা যদি পড়ন্ত বিকেল হয় তাহলে তো কথাই নেই। পড়ন্ত বেলায় পশ্চিম আকাশে তেজ কমে যাওয়া সূর্যটা নদীর জলে ছড়িয়ে দেয় রক্তবর্ণ আভা।

আমি দোকানের পাশে থাকা গিটারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠি,

“এই গিটার কাদের? ”

আমার কথায় সেই পিচ্ছি দোকানদার ছেলে হুট করে বলে উঠে,

“ভালো আপা জানেন আইজকা নাহ একখান গিটার পাইছি৷ কারা জানি রাইখা চইলা গেছে। এইডা দিয়া কী করমু বুঝতে পারতাছিনা। ”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে গিটারটা হাতে নিয়ে চট করে উনার কাছে গিয়ে বলে উঠি,

“একটা গান গাইবেন?

উনি আমার চমকে বলেন,

” কি বলছিস কী? আমি গাইতে পারবো নাহ। ”

—-“আমার একটি অনুরোধ রাখবেন নাহ? ”

কাজলের অনুরোধ কেনো যেনো ফেলতে পারলো নাহ রুদ্রিক।

উনি গিটারটা হাতে নিয়ে , আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে গাইতে শুরু করলেন—

দেখলে তোকে, বদলায় দিন
বদলায় রাত, বদলায় ঘুম
সঙ্গে সময়।
সন্ধ্যে হলে, বন্ধ ঘরে
মনে পড়ে তোরই কথা এমনই হয়।

কেন যে তোকে পাহারা,
পাহারা দিল মন।
কেন রে এতো সাহারা,
সাহারা সারাদিন।
কেন যে তোকে পাইনা,
পাইনা মনে হয়, সারাটা দিন।

কেনো যেনো আমার মনে হচ্ছে এই গানটি আমার জন্যে। উনার চোখে গভীর কিছু আছে যা দেখার সাধ্য নেই আমার। আমি আবারো ভাসমান নদীর দিকে তাঁকালাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

___________________

দিয়ার কথায় লাজুক হতাশার সুরে বলে,

-” হ্যান্ডসাম নাম টা ঠিক আছে তাই বলে নাকবোচা এ্যাসেসটেন্ট?”

দিয়া মুখটা বেঁকিয়ে বলে,

“আপনি দেখতে মোটামোটি হ্যান্ডসাম কিন্তু আপনার নাকটা বোচা। তাই নাকবোচা এ্যাসেস্টেন্ট বললাম। ভুল কিছু বলেছি কী? ”

লাজুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দিয়া বলে,

“কি হলো নাকবোচা হ্যান্ডসাম এ্যাসিস্টেন্ট দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছেন? চলুন একটা সেল্ফি তুলি।

—-

লাজুক মাথা নাড়ায়। দিয়া হেঁসে লাজুকের সাথে একটা সেল্ফি তুলে।

লাজুক জানে দিয়াকে বলে কিছু বুঝানো যাবে নাহ। তার কপালে জুটেছে এক সেল্ফি পাগল বস। কী আর করবে কপাল খারাপ হলে হলে যা হয় আর কী। লাজুকের ভাবনার মাঝেই দিয়া বলে উঠে,

” নাকবোচা হ্যান্ডসাম এ্যাসিস্টেন্ট আপনি কিন্তু কালকে আমার সাথে শপিং এ যাবেন। আমাকে কিন্তু ভুলেও মানা করবেন নাহ। ভুলে যাবেন নাহ আমি আপনার বস হুহ। ”

—-” না ম্যাম আমি আপনাকে মানা করার কে?আপনাকে মানা করার সাধ্য কী আমার আছে? ”

দিয়া হেঁসে বলে,

“গুড। ”

______________________

ছুটকি বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। আমি ছুটকির মাথায় টুকা মেরে বলে,

“তোর না সামনে পরীক্ষা? যা পড়তে বস। এখন নো টিভি। ”

তখনি বাবা বাড়িতে ঢুকেন।

ছুটকি নিজের মাথা বুলিয়ে বাবার কাছে গিয়ে কিছুটা নালিশের সুরে বলেন,

“বাবা দেখো আপাই শুধু সারাদিন পড়তে বস পড়তে বস করে। আমি কিন্তু সারাদিন পড়ি।

—” হুম কী পড়ো তা তো বুঝা-ই’ যাচ্ছে। ফাঁকিবাজ একটা। ”

আমার কথায় বাবা হেঁসে বলেন,

“তোমার আপাই তো ঠিক-ই’ বলেছে মা। সামনে পরীক্ষা পড়তে হবে তো। ”

কথাটা বলেই বাবা সোজা রান্নাঘরে ঢুকে মায়ের কাছে গিয়ে বললেন,

“রাহেলা তুমি আজকে তোমার হাতের স্পেশাল পায়েশটা বানিয়েছো তো? ”

বাবার কথায় মা মাথা নেড়ে বলে,

“হুম বানিয়েছি। ”

—–“মা আজকে হঠাৎ পায়েস? ”

আমার কথা শুনে বাবা বলে উঠলেন,

“তুই তো জানিস মা। বড় সাহেবের তোর মায়ের হাতের পায়েস কত পছন্দ। আজকে বড় সাহেব আবদার জুড়ে দিলেন তিনি তোর মায়ের হাতের পায়েস খাবেন। তাই আর কি তোর মাকে বলেছি পায়েস করতে। ”

মা পায়েস টিফিন বক্সে প্যাক করে বলেন,

” কাজল তুই বরং গিয়ে পায়েসের বাটিটা নিয়ে শেখ বাড়িতে দিয়ে আয়। ”

আমি সম্মতির সুরে বলে উঠি,

“ঠিক আছে মা! ”

_________________
রুদ্রিক বাড়িতে এসে সোজা আফজাল শেখের মুখোমুখি এসে পড়বে তা হয়তো ভাবতে পারেনি। আফজাল শেখ সোফায় বসে,খবরের কাগজ পড়ছিলেন। ছেলেকে দেখে তিনি যেনো শান্তি পান। কতদিন পরে ছেলেকে দেখছেন উনি। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে উনার। কিন্তু আফসোস ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। রুদ্রিক আফজাল শেখকে উপেক্ষা করে উপরে চলে যেতে নিলে, আফজাল শেখ হতাশার সুরে বলেন,

“এতোদিন পরে আমাদের দেখা হলো কিন্তু তুমি আমাকে উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছো রুদ্রিক? বাবা হিসেবে এইটুকু কী আমার পাপ্য নয় কী? তুমি আমার সাথে একটু হলেও কথা বলবে। কেনো এইভাবে এড়িয়ে যাচ্ছো?

রুদ্রিক পিছনে না ঘুড়ে-ই’ ক্ষিপ্ততার সুরে বলে,

” নিজেকে আর যা-ই’ বলুন। আপনি আমার বাবা হওয়ার যোগ্যতা অতীতে হারিয়ে ফেলেছেন। আপনার সাথে কথা বলা তো দূর, আপনার মতো ঘৃনিত এক লোকের সাথে একই ছাদে থাকতে হচ্ছে এইটাই আমার জন্যে সব থেকে বড় কষ্টদায়ক বিষয়। ”

কথাটা বলেই রুদ্রিক গটগট করে উপরে চলে যায়।

আফজাল শেখ বসে পড়ে। বড্ড কস্ট হচ্ছে উনার। জেসমিন শেখ এসে আফজাল শেখের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,

“আপনি ঠিক আছেন তো? আপনি রুদ্রিকের কথায় কিছু মনে করবেন নাহ। ”

আফজাল শেখ নিজেকে কোনোরকম ঠিক করে বলে উঠেন,

“নাহ নাহ আমি রুদ্রিকের কথায় কিচ্ছু মনে করিনি। তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো নাহ। ”

এদিকে,
শেখ বাড়িতে ঢুকতেই ছোট সাহেবের সব কথা আমি শুনে ফেলি। ছোট সাহেবের সাথে একমাত্র ইশানি মেমসাহেব ছাড়া কারো তেমন ভালো সম্পর্ক নেই এইটা জানতাম,কিন্তু ছোট সাহেব কেনো বড় সাহেব কী ঘৃণা করে? কী হয়েছিলো অতীতে?

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে.. কী?

(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু কমেন্ত করে 🥺)

লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here