নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ পর্ব_৩+৪

0
8057

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_৩+৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

শ্রেয়া একে একে সব জামাগুলো দেখলো।প্রায় ৯-১০ সেট থ্রিপিছ-গোল জামা আছে।শাড়ি আছে ৫-৬ টা!জুতো ও আছে দুইজোড়া।সবগুলো আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো তারপর হেসে আলমিরাতে তুলে রাখলো।এমন সময় বাহির থেকে কেউ বললো আসতে পারি??
শ্রেয়া মাথা গুরিয়ে দেখল আদিবা।
আসুন বলেই মাথা নিচু করলো শ্রেয়া।আদিবা মুচকি হেসে ঘরে ডুকল।তারপর বলল আমি তোমার সমবয়সী।আমায় আপনি বলার দরকার নেই।তুমিই বলো কেমন।এখন যা বলছি তাই করো তো..
জ্বি
এই নাও এই প্যাকেটে একটা জামা আছে পড়ে এসো।
কিন্তু…
আর কথা শুনতে চাচ্ছি না।যাও জলদি।
আদিবা প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।প্রায় ১০ মিনিট পর বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।
আদিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো আদিবাকে।কলাপাতা রংয়ের থ্রিপিছটায় অসম্ভব মানিয়েছে শ্রেয়াকে।শ্যামলা রংয়ের হলেও কালো নয় শ্রেয়া।মিডিয়াম লম্বা হওয়ায় সব জামাকাপড়ই তাকে বেশ মানায়।
এই জামাটা সেইম দুটো কিনেছিলো।একটা দিয়েছিলো ইরিনা কে।নাক সিটকে বলেছিলো এরকম সস্তার ড্রেস আমি পড়তে পারবো না অথচ কত ভালোবেসে এনেছে এটা দেখলো না।কথাটা মনে হতেই আদিবা শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসল।
আদিবাকে নিয়ে বিছনাতে গল্প করতে বসল দুজন।
শ্রেয়া…
হু
কি গল্প জানতো চাও বলো
আসলে…
আচ্ছা আমিই শুরু করি।এই বাড়িটা দাদুর তৈরি করা।আমার বাবারা একভাই তিনবোন।বোনরা সবাই ভালো ভালো জায়গায় বিয়ে হয়ে সুখে আছেন।আমার দাদী মারা গেছে ৭ বছর।আমরা তিনভাইবোন।আমি আদিবা আকাশ মাহমুদ এর সাথে মিলিয়ে রেখেছে আর জয়-জিসান ঝর্ণা নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছে। বুঝলে..
শ্রেয়া হেসে বলল হুম
প্রথমে আমাকে নিয়ে বলি…আমি সোজা সরল একটা মেয়ে।মজা খাওয়ালে বা গিফট দিলে কথা শুনি বা কাজ করে দিই নয়ত দিই না।আর একটা প্রেম করি…ছেলেটা কে জানো?
শ্রেয়া দুদিকে মাথা নাড়ল।
আমার জয় ভাইয়ার পেয়ারের একমাত্র বন্ধু রোদ ভাইয়ার সাথে।বলেই মেকি হাসি হাসল আদিবা।
শ্রেয়া অবাক হয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে। কিভাবে অনায়েসে সব বলে দিচ্ছে..!
তারপর ইরিনা আপুর কথা বলি…সে আমার মায়ের একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে। ইউএস বড় হয়েছে। বাংলাদেশি এক ছেলের সাথে রিলেশন করেছে।দুমাস পর তার সাথেই বিয়ে।আর বিয়েটা আমাদের বাসা থেকেই হবে।ওনারা বাবা মা ও একসপ্তাহ আগে আসবে।মা যেমনি মর্ডান মেয়ে তেমনি।অলওয়েজ ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে থাকতো।দাদুর কারনে একটু কমেছে।আর প্রচুর অহংকারী..!
ওওওহ…
এবার বলি জিসান ভাইয়াকে নিয়ে…জিসান মাহমুদ!নামকরা গায়ক।ফিল্ম ইন্ডাসট্রিতে নামকরা খ্যাতিমান একজন।বেশিরভাগ সময় দেশের বাহিরে থাকে!পড়ালেখা ও করছে!তাই তিন চার মাস পরপর আসার সুযোগ হয়!
ওওওহ…..!
এবার বলি জয় ভাইয়াকে নিয়ে!বড় বলে দাদা ভাই বলে ডাকি!খুব গম্ভীর স্বভাবের!ভীষন রাগী!অলওয়েজ মুড নিয়ে চলে!আমাদের দাদীর নামে যে ইন্ডাস্ট্রি আছে দাদা ভাই বাবার সাথে সেটাই চালান!বাবা বেশির ভাগ সময়ই দেশের বাহিরে থাকেন ব্যবসার কাজে।দেশে যতদিন থাকে বাসায়ই থাকে।খুব বিশেষ দরকার ছাড়া অফিস যান না!দাদা ভাই দেশেরটা সামলায়!
ওওহ আচ্ছা!
জানো ভাইয়া তার অফিসের স্টাফ পরিচিত-ফ্রেন্ড সব মেয়েদের ক্রাশ তবে ভাইয়া একজনকে ভালোবাসে।মেয়েটা ডাহা মিথ্যাবাদী বদ মেয়ে হারামি একটা.. বলেই নড়েচড়ে বসল আদিবা।
.
.
.
একজনকে ভালোবাসে কথাটা শুনেই কৌতূহল বেড়ে গেলো শ্রেয়ার।উৎসুক হয়ে বলল আমায় বলা যাবে?
আরে মাইয়া বলতেই তো বসলাম আদিবা মুখ চেপে ধরে বললো।
আসলে দাদাভাই একটা মেয়েকে ভালোবাসে খুব খুব নাম এ্যানি।ইউএস থেকে পড়াশোনা করছে ভাইয়ার সাথে।অসম্ভব সুন্দর আর অনেক মর্ডাণ ওভার স্মার্ট যাকে বলে।ভাইয়া অন্ধের মত ভালোবাসে কিন্তু আমি জানি ওর একশ ছেলের সাথে ওঠা বসা।বাবার অঢেল টাকাপয়সা তবু ছ্যাচড়ামি করে ভাইয়ার টাকা সব ধ্বংস করে।কথায় কথায় ব্রেকআপ করে আর ভাইয়া আছে হাবলার মত রাগ ভাঙাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।এই একটা জায়গাতে খুব দুর্বল দাদাভাই! জানো দাদাভাইয়ের অনেক রাগ জেদ।তবে যার ওপরই রাগ হোক না কেন নিজের উপর দেখায় তা।নিজেকে কষ্ট দেয়।ছোট বেলা থেকেই এরকম হয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদিবা।শ্রেয়া উত্তরে বলল ওহহ!আর কিই বা বলবে সে।শ্রেয়ার জয়ের কথা শুনে খারাপ লাগছে।ভালোবাসা কথাটার ব্যপারে বড্ড দুর্বল শ্রেয়া।বড্ড বেশিই দুর্বল।তাই হয়ত এ খারাপ লাগা।
.
.
ক্লাস নাইনে হুট করেই একটু ভালোবাসা হাতছানি দিয়েছিলো।আবার ঝড়ের হাওয়ায় চলেও গিয়েছিলো।তাই তো শ্রেয়ার কাছে এ শব্দটার অর্থ ব্যপক-বিস্তৃত-সীমাহীন!
.
.
আচ্ছা আমি এখন যাই!টাটা..পড়ে আসবো।বলেই বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে গেলো আদিবা।শ্রেয়াও বড়সড় দম নিয়ে শুয়ে পড়লো!
.
.
.
.
!
সকালে..
ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই বসে আছে!সকালের নাস্তাটা সব সময় সবাই একসাথে খায়!জয় আর আমজাদ সাহেব এখনো নিচে আসে নি।তাই টেবিলে ওনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই!
আদিবার দেয়া কাল রাতের জামাটা পরে বসে আছে শ্রেয়া!জিসান আড় চোখে বারবার দেখছে শ্রেয়াকে।
মেয়েটার ফেইসে আলাদা কিছু আছে!ভীষন ভালো লাগে দেখতে!
কিছু সময়ের মধ্যেই আমজাদ সাহেব আর জয় এসে খেতে বসল!দাদান গুড মর্নিং..শ্রেয়া বলল!আমজাদ সাহেব হেসে বলল গুড মর্নিং!
সবাই হা হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে!জয় ও একবার মুখ তুলে দেখলো শ্রেয়াকে!
খাওয়ার মাঝে আমজাদ সাহেব বলে উঠলেন_
জয়!অফিস যেতে হবে না আজ!শ্রেয়াকে নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসো!ট্রান্সফার হয়ে এসেছে ও! আমি প্রিন্সিপালকে এটা জানিয়েছি!তুমি গেলেই ভর্তি নিবে!তোমার অফিসের পাশের ইউনিভার্সিটিতেই!
জয় ভীষন বিরক্ত হলো!মুখ কুঁচকে বলল আমি কেন?বাড়িতে এত লোক থাকতে।তাছাড়া আমি ব্যস্ত দাদান!জিসানকে বলো বা বাবাকে!
নো মাই সান!আমি আজই চীনে যাচ্ছি! খুব ইমপর্টেন্ট কাজে!জানোই তো নতুন ফ্যক্টরির জন্য!
আমার সময় হলে নিশ্চয়ই নিয়ে যেতাম!
তাহলে জিসান যা!
হ্যা দাদান আমিই যাই!দাদাভাই যেহেতু বিজি!
থামো!জয়কে বলেছি ও_ই যাবে!তোমায় চেনে কয়জন?সব সময় থাকো দেশের বাহিরে। জয় কে সবাই চেনে।সো ও-ই যাবে!দিস ইজ মাই ফাইনাল ডিসিশন! বলেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো আমজাদ সাহেব!
জয়ও আর খেলো না!মায়ের উদ্দেশ্যে বলল ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসতে বলো।আমি গাড়িতে ওয়েট করছি!এক মিনিট লেইট হলে রেখে চলে যাবো!বলেই সে উত্তরের আশা না করে বেরিয়ে গেলো।
ঝর্ণা বেগম করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল যা মা জলদি কর!পারলে ৭ মিনিটে রেডি হ!
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেলো!
.
.
.
.
.
গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জয়!শ্রেয়া দ্রুত বেরিয়ে এলো!
জয়ের কাছে দাঁড়িয়ে তাড়া দিয়ে বলল চলুন!দু মিনিট আগে এসেছি!
জয় বাঁকা চোখে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।গাড়ির দরজা খুলে দিল!মুখে কিছু বলল না!শ্রেয়া উঠে বসতেই দরজা আটকে দিলো!খেয়াল করলো শ্রেয়ার মুখে প্রসাধনীর কোনো চিহ্ন নেই!কিছুই না!খুব সাধাসিধে! চুল বেঁধেছে শুধু!আর ভালো একটা থ্রী-পিছ পরেছে!
জয় অতদিকে মাথা না ঘামিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ল!
সীট বেল্ট আটকাও!একটু শক্ত কন্ঠে বলল জয়!
শ্রেয়া সীট বেল্ট হাতে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল কিভাবে?
ও তুমি তো আবার অজপাড়া গ্রামের মেয়ে কিভাবে জানবে!
মুখটা শুকিয়ে গেলো শ্রেয়ার!
জয় এগিয়ে সীটবেল্ট আটকে দিলো!শ্রেয়ার গরম একটা নিঃশ্বাস জয়ের মুখ পড়তেই দ্রুত সরে এলো জয়!
কিছু সময়ের মধ্যেেই ভার্সিটি চলে এলো জয়-শ্রেয়া!

চলবে_

#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

মাঠ পেরিয়ে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে আসার সময় শ্রেয়া খেয়াল করলো আসে পাশের মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে জয়কে!এমন করে দেখায় নিজেকে জয়ের পাশে খুব নগন্য লাগছে!আর লাগাটাই স্বাভাবিক কই বড়লোক ঘরের ছেলে আর কই গ্রামের নিম্নবিত্ত ঘরের সাধারণ মেয়ে!
.
.
.
.
প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলল জয়!দুজন পাশাপাশি বসে আছে।সব ফর্মালিটিস পূরণ করে প্রিন্সিপাল জিজ্ঞেস করলেন জয় ও তোমার কি হয়?মানে অভিভাবকের সাথে সম্পর্কটা কি লিখবো?অভিভাবক যেহেতু তুমি!
জয় বলল_আসলে স্যার আপনি তো জানেনই দাদান কেমন?আসলে ওকে দাদান এনেছে আমাদের বাসায়।মানে আমাদের বাসায় থাকে ও!দাদান আশ্রয় দিয়েছে!
মানে ও তোমাদের বাসার আশ্রিতা!ওহ মাই গড!তোমার দাদু পারেও বটে জয়!ওনার মতন দয়ালু লোক এ ঢাকা শহরে খুব কমই আছেন!নয়ত একটা আশ্রিতা মেয়েকে কেউ এত ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি করায়?
পারেন ও তিনি!
জয় ম্লান হাসলো।
আশ্রিতা কথাটা শ্রেয়ার কানে ঝনঝন করে বাজছে। বারবার কথাটা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে!
ভর্তি করিয়ে শ্রেয়াকে নিয়ে চলে এলো জয়!শ্রেয়ার মুখটা এখনো শুকিয়ে আছে।কানে শুধু বাজছে ওই একটি কথাই আশ্রিতা!
.
.
.
.
.
গাড়িতে বসে নিজেই সীট বেল্ট আটকে নিলো শ্রেয়া।জয় একবার সেদিক তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিলো।
এমন সময় কল এলো তার ফোনে!
হ্যালো দাদান..
শ্রেয়াকে নিয়ে মলে যাও!একটা ভালো ফোন কিনে দিবে!আর কিছু জামা কাপড়!ভালো দুটো শাড়িও কিনে দিও!কাল থেকে ভার্সিটি যেতে হবে। ভালো জামাকাপড় তো লাগবেই নাকি!
ওফ দাদান!আমি অফিস যাবো না?এসব তো আদিবার সাথে যেয়েও কিনতে পারে!
আজ অফিস যেতে হবে না!বলেছি না একবার?
যাও!রাখছি..
ফোন কান থেকে সরিয়ে জয় কিছুটা রূঢ় কন্ঠে বলল যতসব উটকো ঝামেলা!
.
.
.
.
.
শপিংমলের সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল নামো।
শ্রেয়া ও নেমে গেলো!
মলে ডুকে গার্লস ড্রেস জোনে চলে গেলো জয়।শ্রেয়াও পিছুপিছু গেলো!
যা যা পছন্দ হয় নিয়ে নিন!আমি আসছি বলেই সেখান চলে গেলো জয়!
শ্রেয়া পুরো জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল!এত এত জিনিস!

প্রায় দেড় ঘন্টা পর এলো জয়!এসে শ্রেয়াকে হা হয়ে দাঁড়িয়ে তার মেজাজ চরমে পৌঁছে গেলো!খুব চিৎকার করে ধমক দিলো শ্রেয়াকে!ভয় পেয়ে যায় শ্রেয়া!ভ্যা করে কেঁদে দেয়! আশে পাশের লোকজন হা হয়ে দেখছে ওদের!কেউ কেউ হাসি ঠাট্টা করছে কেউ কেউ কানা ঘুষা করছে!এদিকে শ্রেয়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেছে! প্রায় বেশ লোক ও জড়ো হয়ে গেছে!
তোমাকে এখানে রেখে গেছি কি মানুষের চেহারা দেখতে?কি করছো এত সময়?কিচ্ছু একটা জিনিস ও নাও নি।তোমার সময়ের মুল্য না থাকতে পারে আমার আছে!যাও গাড়িতে বসো ফাজিল মেয়ে কোথাকার!
শ্রেয়া ওভাবে কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে এসে বসল!
জয় চোখ মুখ শক্ত করে চলে গেলো মলের এক কর্ণারের দোকানে!
একে একে ফ্লাজো টি-শার্ট থ্রী পিছ শাড়ি কিছু অর্নামেন্টস জুতা পারফিউম লোশন ক্রীম সব কিনে বিল পে করে দ্রুত গাড়ির কাছে এলো।
শ্রেয়া এখনো কাঁদছে।পেছনের সীটে ব্যাগগুলো রেখে সামনে এলো জয়! এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাকলো হে জয়!
জয় পেছনে ফিরে..আরে রোদ!তুই এখানে..
আসছিলাম গার্লফ্রেন্ডের জন্য একটা গিফ্ট কিনতে..
ওহ আচ্ছা… গার্লফ্রেন্ড টা কে?দেখালি না এখন অব্দি..
দেখাবো দেখাবো দেখে চমকে যাবি!তা তুই এখানে?অফিস ছেড়ে ব্যস্ত মানুষ এখানে? এ্যানির জন্য নাকি?
আরে নাহ!ওই যে ওই মেয়েটার জন্য..
কে? নতুন নাকি একটু দুষ্টুমি করে বললো রোদ!
আমাদের বাড়ির আশ্রিতা…একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো জয়!
এতক্ষণ সব কথোপকথন শুনছিলো শ্রেয়া।আশ্রিতা কথাটা আবারও তার কানে ঝনঝন করে বেজে ওঠে!
ওহ আচ্ছা..! তাহলে আমি আসি দেরী হয়ে যাচ্ছে বলেই সরে পরলো রোদ!
জয়ও চোখমুখ শক্ত করে ড্রাইভিং সীটে বসল!স্টেয়ারিংয়ে হাত রাখতেই শ্রেয়া বলল_
আচ্ছা সবখানে আমায় আশ্রিতা আশ্রিতা পরিচয় কেন দিচ্ছেন শুনি?
তো তুমি যা তাই তো বলবো নাকি..
কথাটায় একটু মন খারাপ হলো শ্রেয়ার..তবুও নিজেকে শক্ত করে বলল আমি মোটেই আপনাদের বাড়ির আশ্রিতা নই..
তাচ্ছিল্যের সুরে জয় বলল তাহলে কি গেস্ট!যেভাবে এসে ঘর দখল করলে।পড়াশোনা করবে খাবেদাবে এটা গেস্ট বলে না! আর তোমার শেষ ঠিকানা কোথায় তাও তো জানো না!কতদিন থাকবে তাও জানো না!তাহলে তুমি কি আশ্রিতা নও!তোমাকে তো আমাদের বাড়িতে আশ্রায়ই দেয়া হয়েছে।তাহলে তুমি কি তুমিই বলো?আর আশ্রিতাকে কেউ নিশ্চয়ই কাজিন বা অন্য কিছু বলে পরিচয় দিবে না!
আর কিছুই বলতে পারলো না শ্রেয়া!দমে গেলো।বাহিরের শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল কথাটা ভুল নয়!সত্যিই তো আমি আশ্রিতা…!
.
.
.
.
.
বাড়ি পৌঁছেই জয় গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলল ব্যাগ সব নিয়ে এসো!বলেই দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেলো!
শ্রেয়া গাড়ি থেকে নেমে সব ব্যাগ গুলো বের করলো!১৫-২০ শপিংব্যাগ!খুব কষ্ট হলো নিতে!সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই জিসান এগিয়ে বলল ওয়েট ওয়েট আমি হেল্প করছি!বলেই প্রায় সবগুলো ব্যাগ ও নিয়ে নিলো।শ্রেয়া কৃতজ্ঞতা সরুপ একটু হাসল।জিসান ভুবনজয়ী হাসি দিলো।কয়েক পা এগুতেই মা ডাকল পেছন থেকে। আবার সব নিয়ে সোফার কাছে এলো জিসান।
দেখি জয় কি এনে দিয়েছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল ঝর্ণা বেগম!
জিসান সব টেবিলের উপর রাখল।
একে একে সব দেখলো আদিবা জিসান ঝর্ণা বেগম!খুব প্রশংসা করলো জয়ের পছন্দের।অনেক সুন্দর হয়েছে!শ্রেয়াকে খুব মানাবে বলল ঝর্ণা বেগম।
এতে কোনো ভালো লাগা কাজ করলো না শ্রেয়ার।জয়ের বলা কথাগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!
.
.
.
.
.
বাগানে সবাই জড়ো হয়ে বসেছে!আদিবা,ঝর্ণা বেগম আর পাশের ফ্ল্যাটের দুই মেয়ে আর তাদের মা..!
এমন সময় হাঁটতে হাঁটতে এলো শ্রেয়া!
পাশের ফ্ল্যাটের মহিলার সাথে শ্রেয়ার পরিচয় করিয়ে দিলো ঝর্ণা!
আমার শ্বশুরের এক ভাইয়ের ছেলের মেয়ে!
মহিলা কি বুঝলো কি বুঝলো না তবে বলল ওহ আচ্ছা!
শ্রেয়া সালাম দিলো।
রোগা পাতলা মিডিয়াম লম্বা মেয়েটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে তিনি সালামের উত্তর নিলো!
সবাই আবারও একইভাবে বসে রইলো বাগানের পাশের খোলা সবুজে ঘেরা জায়গাটায়!
কি হলো সবাই এভাবে বসে আছে কেন চুপ করে?শ্রেয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো!
আসলে বিকেল বেলাটা খুব বোরিং ফিল করি!বাচ্চারাও সেইম!সিরিয়াল আমার ভালো লাগে না তাই প্রায়ই মেয়ে দুটোকে নিয়ে পার্কে যাই আর ঝর্ণা ভাবির এখানে আসি!বিকেলে বসে টুকটাক গল্প করি!
আজ আড্ডা জমছে না!বলে উঠলেন পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি!
শ্রেয়া কি যেন ভেবে দাঁত বের করে হাসলো।তারপর বলল খেলবেন?
সবাই হতবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে!শ্রেয়া সবাইকে কাছে ডেকে এনে ফিসফিস করে কিছু বলতেই সবাই চেচিয়ে উঠলো!
শুরু হয়ে গেলো বউছি!ছয়জন দু দলে বিভক্ত হয়ে ক/খ দল করে নিলো!
খুব চেচামেচি করে খেলতে লাগলো ওরা!
ল্যাপটপে এ্যানির সাথে কথা বলছিলো জয়!নিচ থেকে হই হুল্লোড় চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে ভিডিও কল কেটে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো!
জিসান টিভি দেখছিলো নিজের রুমে!এত শব্দ পেয়ে উঠে নিজের বারান্দায় এলো।
দু ভাই নিচে তাকিয়ে অবাকের উচ্চসীমায় পৌঁছে গেলো।দুজনের বারান্দা প্রায় পাশাপাশি!দুঘর ব্যবধান শুধু!দুই ভাই চোখাচোখি করে নিচের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রইলো!ঝর্ণা বেগম কোমড়ে শাড়ির আচঁল গুজে এক হাতে শাড়ি ধরে আদিবাকে দৌড়াচ্ছে!বাকি দুজন বলছে তাড়াতাড়ি দৌড়াও আদিবাপু!শ্রেয়া বলছে আদিবাকে ধরো মামনি তোমায় ওকে ধরতেই হবে!মুখের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল দুই ভাইয়ের!জিসান ডিএসএলআরটা আন তো!বললো জয়!জিসান ডিএসএলআর নিয়ে জয়ের বারান্দায় গেলো।কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত ক্যাপচার করলো জয়!অজান্তে শ্রেয়ারও একটা মিষ্টি ছবি ফ্রেমবন্দী হলো!

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here