#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_০৫+৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমজাদ সাহেব বললেন জয় অফিস যাওয়ার পথে শ্রেয়াকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যেও!
কথাটা যেন সারা শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে জয়ের!মুহুর্তেই শক্ত হয়ে গেলো চোখমুখ!নিরবে খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো আমি অপেক্ষা করছি!
বলেই বেরিয়ে গেলো।
শ্রেয়াও চলে গেলো ব্যাগ আনতে!
জিসান মনে মনে বললো দাদাভাই ব্যস্ত!তবুও দাদান কেন যে ভাইকেই বলে নিয়ে যেতে বুঝি না আমায় বললেই তো হয়!আমি তো আপাতত ফ্রী আছি নাকি!
খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়লো জিসান!
সবাই সবার কাজে চলে গেলো।
.
.
.
.
শ্রেয়া ব্যাগ হাতে জয়ের কাছে এসে বলল চলুন চলুন দেরী হয়ে যাচ্ছে!
জয় চোখমুখ রাঙিয়ে বলল আমায় কি ড্রাইভার মনে হয় তোমার?
যাব্বাবা তা কেন মনে হবেন?আপনার দেরী হচ্ছে বলেই তো বললাম!আজকাল কারো ভালোর জন্য কিছু বললেও দোষ হয় দেখছি!
এই মেয়ে এই এত চটপট কথা বলো কেনো বলতো?গ্রামের মেয়েরা কি সবই এত চঞ্চল হয় নাকি?
তা তো জানি না!তবে আমি চঞ্চল নই আমি স্পষ্টভাষী!স্পষ্ট কথা বলতেই ভালোবাসি!
জয় আর কিছু না বলে রেগে ড্রাইভিং সীটে বসে পড়লো!
শ্রেয়াও বসল সাথে!
সব কিছুর একটা সীমা আছে!বিরক্তিকর! আজ থেকে প্রত্যেক দিন আমাকে দিয়ে আসতে হবে নাকি হ্যা!আমি এনেছি বাড়িতে?ড্যাম ইট!কথাগুলো রেগে বলেই জয় স্ট্যায়ারিংয়ে বাড়ি দিলো!
শ্রেয়ার মুখটা শুকিয়ে গেলো!দীর্ঘ দম নিয়ে বলল আপনি বরং আজ আমায় চিনিয়ে দিন কিভাবে যাওয়া যাবে!আমি একাই যেতে পারবো!
জয় চোখছোট করে একবার তাকালো শ্রেয়ার দিকে!আর বলল এত পাকনামি না করলেও চলবে_গাড়ি স্টার্ট দিলো জয়!
কিছুদূর যেতেই শ্রেয়া জয়ের উদ্দেশ্য বলল_দেখুন আপনি যদি আমায় না চিনিয়ে দেন তাহলে প্রতিদিন ই আমাকে দিয়ে আসতে হবে আর আনতেও যেতে হতে পারে!এটা আপনার কাছে বিরক্তিকর! আর আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখলেও মন খারাপ করতে পারে!
তুমি আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা জানলে কোত্থেকে?
শ্রেয়া আমতা আমতা করে বলল আদিবার থেকে শুনেছি!
ভালো করেছো!আর আমার গার্লফ্রেন্ড এর ম্যান্টালিটি এত সস্তা না যে পাশে তোমার মত একটা গাঁইয়া কালো মেয়ে দেখে মন খারাপ করবে!
শ্রেয়া অনুভাবন করছে জয়ের কথা গুলো!এদুদিনে জয়ের কথা বার্তা আচরণে জয়ের প্রতি একটা ধারনা করে ফেলেছে শ্রেয়া!সে কি রকম তার চিন্তা ধারা কী রকম! অন্তত এটুকু বুঝেছি তার কাছে কোনো গরীব মানুষের মুল্য আর ইমোশনের দাম নেই!
ম্লান হেসে বলল বাড়ির আশ্রিতাকে দুবেলা আনা নেওয়া করলে যে কেউ খারাপ ভাবতেই পারে!আর তাছাড়া এটা তো আপনার কাজ না!কেন আপনি দায় ভার নিবেন বলুন!
জয় কিছু সময় চুপ থেকে বলল ওকে কাল চিনিয়ে দিবো!
বাকি রাস্তা দুজন একদম চুপচাপ ই ছিলো!একবার শুধু জয় শ্রেয়ার দিকে তাকিয়েছিলো!শ্রেয়া বাহিরে তাকিয়ে দেখছে!
.
.
.
.
.
প্রথম দিন ভার্সিটিতে বেশ ভালোই কেটেছে শ্রেয়ার!একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ও জুটিয়ে নিয়েছে! সবার সাথে ভালোই পরিচয় হলো!ক্লাসের একদল ছেলেমেয়েদের বাদে!তাড়া একটা দল!সব সময় একসাথে থাকে!দুটো মেয়ে তিনটা ছেলে!ওরাই কেবল শ্রেয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো!
ক্লাস শেষে তিনার(বেস্ট ফ্রেন্ড) সাথে ক্যাম্পাস থেকে বের হলো শ্রেয়া!বেরিয়েই সে অবাক।সামনে আদিবা জিসান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিনাকে বায় বলে ওদের কাছে আসতেই জিসান একটু আস্তে করে বললো সারপ্রাইজ!
হঠাৎ তোমরা এখানে!আদিবার ভার্সিটিতো উল্টোদিকে।
আমিও এখানে ট্রান্সফার হয়ে চলে আসবো!তাই কথা বলতে এলাম!আর তোমার জন্য বই কিনলাম!
শ্রেয়া হা হয়ে তাকিয়ে আছে!তারপর আচমকা আদিবাকে জড়িয়ে ধরে বলল খুব ভালো হবে তুমি এলে!
কিন্তু তিনমাস সময় লাগবে!তিনমাস পর ফাস্ট সেমিস্টার দিয়েই এখানে আমি তোমার সাথে ক্লাস করবো!
শ্রেয়া বেশ খুশি হলো!যাক আরেকজন ভালো ফ্রেন্ড পাবে।
তিনজন গাড়িতে বসল।জিসান ড্রাইভ করছে দুজন পেছনে বসেছে।
সারা রাস্তা গল্প করতে করতে গেলো তিনজন!একটা ক্যাফেতে বসে কফি খেলো।তারপর আবার বাড়ির পথে রওনা দিলো!
বেশ ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেলো তিনজনের! জিসানের সাথে ও শ্রেয়ার ও একটা ভালো বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়েছে!
.
.
.
.
বাড়ি ফিরে যে যার ঘরে চলে গেলো!ফ্রেস হয়ে এসে একসাথে খেতে বসল সবাই!জয় এখনো আসে নি অফিস থেকে!
সন্ধ্যায় আসে বেশির ভাগসময়েই!
সবাই খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রামের জন্য চলে গেলো।
শ্রেয়া সারাটা বিকাল বইগুলো ঘেঁটে দেখলো।আজ থেকেই পড়া শুরু করবে ভাবছে!এমনিতেই একটু না অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে।
.
.
.
সন্ধ্যায় জয় বাসায় ডুকেই চিৎকার করে বললো মা এক মগ কফি দাও!বলেই ঘরে চলে গেলো!বিছানায় গা এলিয়ে দিলো জুতা না খুলেই!
ঝর্ণা বেগমের দুহাতে কাজ।অনেকদিন যাবৎ তার বাসায় কাজের মহিলা নেই।শেষ যখন তার আদিবা দু-তিন বছরের ছিলো তখন কাজের মহিলা ছিলো।এরপর তিনি আর শ্বাশুড়ি মা মিলেই সবটা করতেন।শুধু ময়না এসে ঘর মুছে দিয়ে যেতো।এখনো তাই করে।আর কোনো কাজের মহিলা রাখা হয় নি।
দুহাত ভর্তি তার আটায়!কোনমতে কফির পানি বসিয়ে হাঁক ছেড়ে উঠে আদিবা…আদিবা…
আদিবা রোদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত!মায়ের ডাক তার কান অব্দি পৌঁছায় নি!
শ্রেয়া ডাইনিং এর পাশে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছিলো।ডাক শুনে রান্নাঘরের কাছে এসে বললো আসবো মামনি?
ঝর্ণা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে শ্রেয়া দাঁড়িয়ে!আয় না অনুমতির কি আছে রান্নাঘরে?
না মানে সবাই তো বাহিরের মানুষ রান্নাঘরে ডুকতে দেয় না তাই জিজ্ঞেস করলাম!
বাহিরের মানে কি যা তা বলছিস!
ম্লান হাসলো শ্রেয়া!কিছু বললা না।
আর এসব কথা যেন না শুনি!এখন একটা কাজ করে দে তো।
বলো মামনি
কফি বানা!
আমি তো…
বুঝেছি!সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি!
ঝর্না বেগমের কথা মত চিনি কফি দুধ পরিমান মত দিলো শ্রেয়া!
আরেকটা কাজ করবি মা?
বলো না!
এটা জয়ের ঘরে দিয়ে আয়!
চোখ তুলে বলল আমি!
হ্যা যা না!দেখ আমার হাতে কি আটা!কি করে যাই বলতো!
শ্রেয়া আমতা আমতা করে বলল আমি কেন?
তুই গেলে কি হবে?যা না প্লিজ
মামনির এভাবে বলায় আর না করতে পারলো না শ্রেয়া।মগে কফি ঢেলে জয়ের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো!
.
.
.
জয়ের ঘরের সামনে যেয়ে দরজায় নক করলো শ্রেয়া!
জয় উপুড় হয়ে শুয়ে ল্যাপটপে এ্যানির সাথে কথা বলছে।
দরজায় নক পড়ায় এ্যানি জিজ্ঞেস করল কে এসেছে বেবি!
দরজার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল কাজের লোক!কফি এনেছে..
তোমাদের বাড়ির কাজের লোক তো ভালো ম্যানারস্ জানে দেখছি!রুমে ডোকার আগে নক করে!
বাঁকা চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল হুমম তা যা বলেছো!
আচ্ছা বাবু যাও কফিটা নিয়ে নাও!এ্যানি বলল!
এসো..বলেই ডাকল জয়!
ওদের কথোপকথন শুনছিলো শ্রেয়া!না চাইতেও কোথাও একটা খারাপ লাগা কাজ করছিলো তার…
কেমন যেন নিজেকে খুব ছোট ছোট লাগছিলো!
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো জয়ের সামনে।কফি হাতে নিয়ে বলল_ গো!
শ্রেয়া ঘুরল চলে যাওয়ার জন্য! তবে একটা কথা তার খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার_কেন আপনি প্রথম দিন থেকেই আমার সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করছেন বলুন তো?কি কারনে?কিন্তু এখন বলতে পারবে না!ল্যাপটপে যে তার গার্লফ্রেন্ড!
চোখ বাকিয়ে একবার তাকালো শ্রেয়া ল্যাপটপের দিকে!সাথে সাথে চোখ সরিয়ে সোজা হাঁটা ধরল।ছিহ্ কিসব পোশাক পড়েছে!হাতা কাটা তার উপর ছোট!কি মেয়ে ছিহ্।
এসব বলেই নাকমুখ ছিটকালো শ্রেয়া।ঘর থেকে বের হতেই এক বিকট চিল্লানোর আওয়াজ এলো শ্রেয়ার কানে_!
★
বানান ভুল হলে কষ্ট করে নিজ দায়িত্বে ঠিকভাবে পড়ে নিবেন 🙂
★★
~যারা আমার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন মানে বলছেন নায়ক এ হবে সে হবে তারে দিলে ভালো হয়!আবার বলছেন দুইজন ভালোবাসবে পরে একজনের সাথে বিয়ে হবে আরেকজন হবে দেবদাস
আরো ইত্যাদি ইত্যাদি তাদের বলছি গল্প নিয়ে গঠনমূলক বক্তব্য করা মানে এসব বলা নয়!আমি তো উল্লেখ করি নি একজন দেবদাস হবে বা ভালো লাগলেই বিরহে ভুগবে!এত আগায়া চিন্তাভাবনা করা উচিত নয়!রাইটার একটা প্লট ভেবেই লিখতে বসে!দু এক পর্ব দেয়ার পর রিডার্সদের কমেন্ট পড়ে নয়!আশা করি পাশে থাকুন ধৈর্য ধরুন!উৎসাহ দিন!ভালো লিখা উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো!
চলবে_
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_০৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
!
জয়ের চিল্লানোর আওয়াজে শ্রেয়া ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো।
মা… মা…মা…
কিছু লাগবে?শ্রেয়া দরজায় দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।
ততক্ষণে জয় ল্যাপটপ বন্ধ করে নিয়েছে।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল_
না কিছু লাগবে না।তবে কফি কে বানিয়েছে?মা নিশ্চয়ই? আজ কফির টেস্ট টাই আলাদা!বেশি ঘন!বেশ ভালো হয়েছে…মাকে বলে দিও
শ্রেয়া মুখে হাসি এনে বলল আমি বানিয়েছে..
ভ্রুদ্বয় কুঁচকালো বলল তুমি?হোয়াট এ্যা জোক!
সিরিয়াসলি বলছি!
হেই থামো!পারো তুমি কফি বানাতে?একটু ভিন্ন রকম টেস্ট হয়েছে শুনে ওমনি নিজের নামে চালাচ্ছো?বাহ পারোও বটে!
আরে_ আ_
থামো বুঝেছি যাও এখন নিজের কাজ করো!পড়তেবসো নয় যা ইচ্ছে করো।আমার ঘর থেকে যাও!
শ্রেয়া ফিরল ঘর থেকে চলে যাওয়ার জন্য! কিন্তু গেলো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
জয় নিজের টিশার্ট খুলে সোফায় ছুঁড়ে পেছনে ফিরতে দেখে শ্রেয়া এখনো দাঁড়িয়ে..
কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ধমকের সাথে বলল কি হয়েছে এখনো দাঁড়িয়ে কেন?কিছু বলবে?
শ্রেয়া জয়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো!
একটা কথার উত্তর দিবেন?
তোমার কোনো কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই
প্লিজ…
বলো..
প্রথম দিন থেকেই দেখছি আপনি আমাকে দেখতে পারেন না সহ্যও করতে পারেন না।কেনো?আমি কি আপনার কোনো সমস্যার কারন?আমি কি কিছু করেছি?আমি এখানে থাকলে আপনার কি কোনো সমস্যা? হলে বলতে পারেন আমি দাদানের সাথে কথা বলে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো!
ফ্লোরের দিকে তাকিয়েই বলল শ্রেয়া!
তড়িৎ গতিতে গিয়ে শ্রেয়াকে দেয়ালে চেপে ধরল জয়।ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছে শ্রেয়া!
আমার সবচেয়ে বড় সমস্যার কারন তুমি..কেনো জানো?যেদিন এ বাড়িতে তুমি পা রেখেছো সেদিন থেকেই একেকটা দিন খুব টেনশনে কাটছে আমার!দাঁতে দাঁত চেপে বলল জয়..!
অবাক চোখে জয়ের দিকে তাকালো শ্রেয়া।সাথে ভয়!
কেনো তাই ভাবছো না?তুমি দাদার বন্ধুর নাতনি!আর দাদান আর মা চায় তোমাকে আমার বউ করতে!আর আমি-আমি ভালোবাসি আমার এ্যানিকে।এটাই সমস্যা! এর জন্যই তোমাকে সহ্য হয় না আমার!বুঝেছ?যাও এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও!বলেই শ্রেয়াকে ছুঁড়ে ফেলে সরে এলো জয়!
শ্রেয়া পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।দ্রুত পায় নিজের ঘরে চলে এলো শ্রেয়া!
শ্বাসকষ্টের সমস্যাটা ছোট থেকেই!তাই যেকোনো সময় শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। এখন মনে হচ্ছে খুব পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে! দমটা বন্ধ হয়ে আসছে।বেড সাইডের ডেস্ক থেকে পানি ভর্তি জগ থেকে ডগডগ করে পানি খাচ্ছে শ্রেয়া!কি শুনলো সে ভাবতেই পারছে না যেনো!।
মাথার দুপাশে চেপে ধরে বিছানায় বসল শ্রেয়া!সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাবে মনে হচ্ছে! ঘুমের খুব দরকার এ মুহুর্তে!
.
.
.
.
ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়েছে জয়।মাথায় একরাশ চিন্তাভাবনা এসে জড়ো হয়েছে।নাহ মেয়েটার সাথে এরকম ব্যবহার করা উচিত হচ্ছে না।ওর তো এখানে দোষ নেই!দোষ তো আমার ফ্যামিলির লোকজনের!এতিম একটা মেয়ে!এরকম ব্যবহার করলে পাপ হবে!কিন্তু মা যেহেতু একবার মুখ থেকে বের করেছে ওকে বাড়ির বউ করবে তো করেই ছাড়বে…কি করে আটকাবো আমি?উফফ আর ভাবতে পারছি না।
এসব ভেবেই বারান্দায় চলে গেলো জয়।সিগারেট ধরিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে…
.
.
.
.
রাতের খাবার টেবিলে দিয়ে একে একে সবাইকে ডাকলো ঝর্ণা বেগম!আমজাদ সাহেব আকাশ সাহেব বাড়ি নেই।একজন বিজনেসের কারনে দেশের বাহিরে আরেকজন বৃদ্ধাশ্রমের কাজে বাড়ির বাহিরে!
বেশ কয়েকদিন পর ফিরবে…!
আদিবা জিসান জয় টেবিলে বসে আছে।ঝর্ণা বেগম খাবার বাড়তে বাড়তে বলল আদিবা শ্রেয়াকে কয়েকবার করে ডাকলাম।ঘরের দরজা বন্ধ!হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।দেখে আসবি উঠেছে কিনা?দুপুরে ঠিকভাবে খেতে পারে নি!একটু দেখে আয় না…
আচ্ছা যাচ্ছি… বলেই খাওয়া ছেড়ে উঠে শ্রেয়ার ঘরের দিকে গেলো।
জয় একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়ার দিকে মন দিলো।
আদিবা ফিরে আসতেই ঝর্ণা বেগম জিজ্ঞেস করলেন কই আসছে ও?
না মা..শ্রেয়া ঘুম থেকে উঠেছে তবে খাবে না।ওর নাকি খুব শরীর খারাপ করছে।
কিহ?শ্বাসকষ্ট হচ্ছে নাকি?
সবাই অবাক হয়ে তাকালো ঝর্ণা বেগমের দিকে।
তিনি বুঝিয়ে বললেন শ্রেয়ার ছোট বেলায় নিউমোনিয়া ছিলো যার থেকে শ্বাসকষ্ট।প্রায় সময় উঠে।অতিরিক্ত টেনশন, ভয় বা ঠান্ডা থেকে।
জয় জিজ্ঞেস করলো তুমি কোত্থেকে জানলে মা?
ও আসার পর একবার ওর দাদার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিই ওর ব্যাপারে সব বলেছেন আমায়।
ওহ!ছোট করে উত্তর দিলো জয়।
জিসান কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল আমি কি একবার দেখে আসবো মা?
না থাক যেতে হবে না।খেয়ে নে তোরা।আমি একটু পর দেখে আসবো।
আদিবা বলল_তেমন কিছু তো দেখলাম না।শুধু দেখলাম বিছানায় বসে আসছে।চোখমুখ লাল!
আর কেউ কোনো কথা বললো না।যে যার মত খেয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো।
জয় নিজের ঘরে যাওয়ার সময় একবার তাকলো শ্রেয়ার ঘরের দিকে!সবে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে শ্রেয়া।মুখে পানি।ওড়ানাটা সোফার হাতায় রাখা।মুখটা না মুছেই চুলগুলো ছেড়ে দিলো।
জয়ের মুখটা অদ্ভুত রকমভাবে হা হয়ে গেলো।
হাঁটুর থেকেও নিচ পর্যন্ত চুল!অত ঘন না হলেও বেশ লম্বা।এত বড় চুল আগে শুধু টিভিতেই দেখেছে জয়।বাস্তবে দেখে নি!
না চাইতেও দরজায় হেলান দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো জয়।
শ্রেয়া দুপাশে দুইটা লম্বা বিনুনি করলো।সামনে এনে দেয়। তারপর বুকসেলফ থেকে দুটো বই বরে করে বিছনায় এসে বসে।
গলার হাড় গুলো ভাসা।এত শুকনা কেন মেয়েটা?
কি রে জয়?কি করিস?মায়ের ডাকে ঘাবড়ে যায় জয়।কিছু লজ্জা পেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
ঝর্ণা বেগম মুচকি হাসে।তার মনে হচ্ছে ছেলের জন্য সে ভুল মেয়ে নির্বাচন করেন নি!এ মেয়েই তার সংসার আলো করবে।আর ওই শাতচুন্নিকে ঘাড় থেকে নামাবে!
জয় নিজের ঘরে এসে থম মেরে সোফায় বসে আছে!কি করলো আজ এটা?ছিহ্!লজ্জার সাথে রাগও হচ্ছে! ওই মেয়েকে দেখার কি আছে?শুকনা কাঠি একটা!মা ই বা কি ভাবলো!ছিহ।কিন্তু চুলগুলো…!
!!
আদিবার মনটা সকাল থেকেই খারাপ।আজ এ্যানি আসবে ওদের বাড়িতে।ডাইনীটাকে দেখলেই যেন গা টা জ্বলে যায় ওর।
জিসান সকাল থেকে বাড়ি নেই।কিসের গানের শো-এ যাবে! তাই!
জয় সকালে নিজে গিয়ে বাজার করে এনেছে।যে ছেলে বাজারের নাম শুনলেই বিরক্ত হয় সে নিজে গিয়ে সব এনেছে।
ঝর্ণা বেগমের মুখটা কিছুটা ভার। তবুও ছেলের কথায় রান্না করতে হচ্ছে। এই তো আর কয়েকটা দিন।পরে শুধু বাড়ি থেকে নয় তার ছেলের জীবন থেকেও চলে যাবে।
জয় রেডি হয়ে নিচে নেমেছে। মাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো সব রান্না হয়েছে কিনা!তিনি গম্ভীর হয়ে বলল হুম।
তার গম্ভীরতার কারন জানে না জয়।কারনটা কি এ্যানি?কিন্তু ও তো আগেও আমাদের বাড়িতে এসেছে তবে?
সকাল থেকে একবার ও শ্রেয়াকে দেখে নি জয়!তাহলে কি মেয়েটার শরীর খারাপ তার জন্য মায়ের মুখ ভার?এসবে জয়ের কিছু আসে যায় না।আর না ভেবে মাকে বলল এক মগ কফি দিতে।এ্যানির আসতে এখনো ঘন্টা দুই বাকি!
খানিক সময় পর ঝর্ণা বেগম কফি এনে জয়ের সামনে রেখে নিঃশব্দে রান্না ঘরে চলে গেলো।জয় সোফায় বসে ডিসকাভারি চ্যানেল দেখছে আর কফি খাচ্ছে। আজ অফডে অফিস নেই।আর থাকলেও যেতো না।তার চিফ গেস্ট আসছে যে!
.
.
.
.
এ্যানি এসে জড়িয়ে ধরল জয়কে।হ্যালো বেবি হাউ আর ইউ?
এ্যানিকে নিজের থেকে আলাদা করে জয় মুখে হাসির রেখা টেনে বলল হাই!
এমন নির্লজ্জ মেয়ে দুটো দেখে নি ঝর্ণা বেগম।মায়ের সম বয়সী মানুষের সামনে কেমন নির্লজ্জের মত আচরণ করছে।আর পড়েছে কি?শার্ট প্যান্ট!এসব মেয়েদের ড্রেস?ছেলে হলেই তো পারতি।বলেই ড্রয়িং রুম থেকে চলে যাওয়া ধরল।জয় ডেকে এনে বলল এ্যানি মা..সালাম দাও
সে আর সালাম দেবে কি!হ্যালো আন্টি বলে জড়িয়ে ধরতে গেলো ঝর্ণা বেগমকে।
ঝর্ণা বেগম দুরত্ব বজায় রেখে হাই বলল।আমার একটু কাজ আছে আসছি।বলেই দ্রুত চলে গেলো রান্না ঘরে।
এ্যানি কিছুটা অপমান বোধ করলো।
জয় কথা ঘুরিয়ে বলল চলো আমার ঘরে..গল্প করবো।
.
.
.
.
খাবার টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে আদিবাকে ডাকলো ঝর্ণা বেগম।আদিবাকে পাঠালো জয়কে ডাকতে।আদিবা স্টেইটলি বলে দিলো সে পারবে না।অনুরোধ করায় গেলো।
নিজের ভাইয়ের মনমানসিকতার থেকে এই মেয়েটার মনমানসিকতা এত নিচু জানা ছিলো না আদিবার।একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে ফোর্স করছে কিস করতে!এর চেয়ে লজ্জার আছে নাকি কিছু?
আদিবা কাশি দিলো।তোমাদের হয়ে গেলো খেতো এসো।মা ডাকছে।
জয় দ্রুত সরে এলো এ্যানির থেকে।
আদিবা তুই যা ভাবছিস তা নয়।আসলে…জয় উত্তেজিত কন্ঠে বলল আদিবা।
মাঝপথে আদিবা জয়ের কথা থামিয়ে দিলো।আমি কিছু ভাবি নি দাদাভাই!
খেতো ইচ্ছে হলে এসো।
আদিবা..কাম অন ডিয়ার।কারো ঘরে এলে নক করতে হয় শিখো নি?
কথাটায় বেশ রেগে যায় আদিবা।কিছু বলতে নিলেই জয় থামিয়ে দেয়।
আহ এ্যানি বাদ দাও তো…চলো খেতে চলো।খুদা লেগেছে।
আদিবা দৌড়ে নিচে চলে এলো।
আদিবার সাথের চেয়ারে বসেছে জয়।সামনে এ্যানি।
ঝর্ণা বেগম খাবার বেড়ে দিচ্ছেন।আদিবা জিজ্ঞেস করলো মা শ্রেয়া কোথায়?
আসছে..গোসল সেরে আসছে।
এই শ্রেয়াটা কে? তোমাদের কাজিন তো ইরিনা..ও কোথায়?
ও ইউএস ব্যাক করেছে।বিয়ের কিছুদিন আগে আসবে।আদিবা বলল।
ওহ আচ্ছা।তাহলে এই শ্রেয়াটা কে?
এমন সময় কল এলো জয়ের!এক্সকিউজ মি!আমি আসছি বলেই বেরিয়ে গেলো জয়।ইমপর্টেন্ট কল!
এ্যানির প্লেটে খাবার দিতেই সে নাক সিটকে বললো ওহ আন্টি আমি এসব খাই না।ডায়েটে আছি।
শ্রেয়া এসে দাঁড়ালো টেবিলের পাশে।
এ্যানিকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো এটা জয়ের গার্লফ্রেন্ড।
এ্যানি ডালের বাটিটা দূরে সরাতে নিলেই তা পড়ে গেলো টেবিলের উপর!
ওহ শীট। কি হয়ে গেলো।এই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?একটু পরিষ্কার করে দাও তো।শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলল এ্যানি।
শ্রেয়া আদিবার আর ঝর্ণা বেগমের দিকে তাকাচ্ছে একবার আরেকবার টেবিলের দিকে।
ঝর্ণা বেগম মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।রাগে শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আদিবার।
ও নিশ্চয়ই মেইড!বাহ তোমাদের বাড়ির মেইডকেও তোমরা কত দামী জামা কাপড় দাও আদিবা।সত্যিই তোমাদের মন কত ভালো।
আন্টি আমাকে একটু থাই স্যুপ করে দিন এসব খাবো না।এই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন সংয়ের মত পরিষ্কার করো না কেন?কানে কি কম শোনো?
এবার খুব রেগে গেলো আদিবা।
এক টানে টেবিল ক্লথটা উল্টে ফেলে দিলো।
এ্যানি দাঁড়িয়ে পড়লো।সবাই অবাক হয়ে গেলো।মেয়েকে এরকম রাগতে কক্ষনো দেখে নি ঝর্ণা বেগম।
খাবার বাটি গুলো সজোরে এ্যানির সামনে ফেলে চেঁচিয়ে উঠলো আদিবা।কাকে কি বলছো তুমি?আমার মাকে অর্ডার করছো এসব খাও না স্যুপ খাও?
আর ওকে কি বলছো ও মেইড?জানো ওর পরিচয় কি?ও আমার দাদাভাইয়ের হবু বউ
হোয়াট!
ইয়েস।নিজেকে কি মনে করো?খুব স্মার্ট?যাকে দেখো তাকেই মেইড মনে হয়?তুমি এ বাড়ির মানুষগুলোর নখের যোগ্য ও না।আরে এখন পর্যন্ত তো ঠিকভাবে কথা বলাই শেখো নি।তোমার বাবা মা ব্যর্থ হয়েছেন তোমাকে শিক্ষা দিতে।
আদিবা…
ডোন্ট সাউট!চিৎকার করলেই আমি থামবো না।আমাকে দাদাভাই পাও নি যে আঙুলের ইশারায় ঘোরাবে।ও তো অন্ধ।তাই তোমার মতো অশিক্ষিত আটকালচারাল একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।
আদিবা তুমি কিন্তু তোমার সীমা অতিক্রম করছো..
আদিবা ওর সীমা অতিক্রম করে নি মিস এ্যানি।আপনি করছেন!আমার কথা নয় বাদ ই দিলাম।মায়ের সমতুল্য একজনকে অর্ডার করছেন খাবার আনতে।যে কিনা সারাদিন সময় ব্যয় করে আপনার জন্য এত কিছু রান্না করেছে।আর আপনি কিনা…(শ্রেয়া)
হেই ইউ..
জাস্ট সাটআপ!ওকে কিছু বলার চেষ্টা ও করো না।ফল বেশ খারাপ হবে!(আদিবা)
তুমি আমায় ওর জন্য অপমান করছো?তুমি জানো তোমার দাদাভাইকে বললে ও কি করবে তোমায়?(এ্যানি)
আমি দাদাভাইয়ের খাই না যে তাকে ভয় পাবো।(আদিবা)
দেখুন এখনো সময় আছে আপনি চুপচাপ খেয়ে আসুন।নয়ত আরো কথা বাড়বে আপনি আরো অপমানিত হবেন।(শ্রেয়া)
তুমি আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছো।(এ্যানি)
ভুল ভাবছো।শ্রেয়া তো তোমাকে খেয়ে তারপর যেতে বলেছে আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে।(আদিবা)
আমি দেখে নিবো তোমাদের…বলেই ব্যাগ নিয়ে হনহন করে চলে গেলো এ্যানি।আদিবা রান্না ঘরে গিয়ে দুগ্লাস পানি খেয়ে এসে বলল মা এসব আমি পরিষ্কার করছি তুমি আবার নতুন করে খাবার বাড়ো।খুদা পেয়েছে খুব।
আদিবা জয়…
জয় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে!এ্যানি এভাবে চলে যাওয়ার কারন ঘরে এসে বুঝতে পারলো জয়!
চলবে_
বানান ভুল হলে কষ্ট করে নিজ দায়িত্বে ঠিকভাবে পড়ে নিবেন 🙂