#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১৭+১৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
⚡⚡⚡
পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল শ্রেয়া।আগুন বলে চেঁচিয়ে উঠে থমকে গেলো..
জয়ও হুড়মুড় করে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।ভোর আনুমানিক পোনে চারটা!রাতই বলা চলে।
এসময়ে ঘর ভর্তি ধোঁয়া আর দেয়ালে আগুন দেখে যেকেউই ভয় পাবে।
শ্রেয়ার রীতিমতো শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছিলো।ভয়ে ঘেমে একাকার অবস্থা।জয় দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়।
বালতি ভরতে দিয়ে মগ নিয়ে এসে পানি দিচ্ছে.. দরজা আটকানো কেউ আসছেও না।জয় মা বাবা বলে চেচিয়ে পানি দিচ্ছে।
শ্রেয়া পিছনে যেতে যেতে সোফার সাথে লেগে পড়ে গেলো।
জয় পানি দেওয়া রেখে দরজা খুলে লাইট জ্বালালো।
জয় শ্রেয়াকে বাহু ধরে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো।চিৎকার করে মাকে ডাকছে।
আগুন বেড়েই চলেছে।এমন চলতে তাকলে তো পুরো বারি জ্বলে যাবে ভেবেই আরো ভয়ে গুটিয়ে গেলো শ্রেয়া।
মা মাকে ডাকুন অস্পষ্ট সুরে বলল শ্রেয়া।
মা মা বলে বার কয়েক ডাক দিয়ে শ্রেয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো জয়। শ্রেয়া শান্ত হও!একটু আস্তে শ্বাস নিতে চেষ্টা করো বলেই আস্তে আস্তে ফ্লোরে বসে পড়লো শ্রেয়াকে নিয়ে।
🍁
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই।মোম থেকে টেবিল ক্লথে তার থেকে কাঠ বেয়ে আগুন ধরে গেছ বলে ধারনা করছে বাড়ির সবাই।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ঝর্ণা বেগম।সোফা থেকে একটু দূরে রোদ তার পাশে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ সাহেবের মুখ চিন্তায় ভার হয়ে গেছে!
কত বড় একটা বিপদ গেলো।তা বলছে রহমত মিয়া আর আমজাদ সাহেব।
জয়ের কোলে মাথা রেখে সোফায় ঘুমিয়ে আছে শ্রেয়া।।শরীরে কাথা টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলালো জয়।
ফজরের আযান শুনে ঝর্ণা বেগম উঠে পড়লো। বললো
বাবা কাল তো রিসেপশন!এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।এখন কি করে?
চুপ করে রইলেন আমজাদ সাহেব!
মৌনতা ভেঙে আকাশ সাহেব বললেন নাহ ঝর্ণা এটা পেছানো যায় না।
যদি আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে হতো তাহলে এক কথা!অফিস সহ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ক্লাইন্টরাও আসবে।পেছালে মানসম্মান কোথায় দাঁড়াবে ভাবতে পারছো?
আর তাছাড়া যা হবার হয়ে গেছে এখন তো ওরা বিপদ মুক্ত!
ঝর্ণা বেগম মাথা দুলিয়ে চলে গেলেন।
বাবা কি বলো?
আমজাদ সাহেব ধুম ধরে থেকে বললেন হুম যা ভালো বুঝো!
নামাযে এসো।আয় রহমত।বলেই উঠে গেলেন তিনি।
রহমত নাতনির মুখ পানে তাকিয়ে দেখে আমজাদ সাহেবের সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
আকাশ সাহেব উঠে দাড়িয়ে বলল জয় বাবা শ্রেয়াকে নিয়ে জিসানের ঘরের পাশের ঘরটায় যা!তোর ঘরটা রিপেয়ার করা অব্ধি ওখানেই থাক!ক্লিন করা আছে।
আচ্ছা বাবা।
আকাশ সাহেব চলে যেতেই জয় শ্রেয়াকে কোলে তুলে নিলো!
আস্তে ধীরে উঠে এলো সিঁড়ি বেয়ে!
.
.
.
.
.
বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গেলো জয়।কম্বলটা নিয়ে ও ঘরে রওনা হলো।
শ্রেয়ার গায়ে কম্বল দিয়ে মাথার পাশে বসল।চোখমুখ লাল হয়ে গেছে!বিয়ের সব ঝামেলা মিটে গেলেই একটা ভালো ডক্টর দেখাতে হবে!কি অবস্থা হয় হ্যা
শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে জয়!
পাশে শুয়ে আলতো করে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে একসময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো জয়!
.
.
.
.
.
.
দুপুর আড়াইটার দিকে আদিবার ডাকে ঘুম ভাঙল জয়ের।শ্রেয়া এখনো ঘুমাচ্ছে!
আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
এসে শ্রেয়াকে ডেকে তুলল।
শ্রেয়া ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় যে বসলো তো বসলোই। সাড়ে তিনটা বেজে গেছে তবুও উঠছে না।
রেডি ডেকোরেশন দেখতে নিচে গিয়েছিলো জয়। এসে শ্রেয়াকে এভাবে দেখে বলল কি হয়েছে তোমার?
জয়ের দিকে তাকিয়ে কয়েকদফা চমকালো শ্রেয়া।মাশাআল্লাহ তার বরকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
শ্রেয়াকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাশলো জয়।ভ্রু কুঁচকে তাকালো আবারও
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল কি পড়বো আজ?
ওই যে প্যাকেটে লেহেঙ্গা আছে।পড়ে নাও।সারাদিন খাও নি।খেতে হবে তো..
শ্রেয়া চুপ করে রইলো।
জয় বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।আদিবাকে ডেকে এ ঘরে পাঠিয়ে নিজে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আদিবা এসে নিজের মত করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিলো শ্রেয়া।যদিও পার্লার থেকে লোক আসার কথা ছিলো।শ্রেয়া না করে দিয়েছে।অত ভারী মেকাপ তার কোনো কালেই পছন্দ নয়!
🍁
পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে আছে শ্রেয়া-জয়!একে একে সবাই এসে গিফট দিচ্ছে। জয়কে কনগ্রেস জানাচ্ছে!
প্রায় সব কলিগ সব বিজনেস ম্যানরাই চলে এসেছে। আত্মীয় স্বজন পরিচিত প্রায় সবাই।যে যার মত আনন্দ করছে।
শ্রেয়া উঠে তার দাদার কাছে যেতে নিলেই কিছু কথা তার কানে আসে।দাঁড়িয়ে পড়ে সে!
জয়ের অফিসের কোনো স্টাফ বলছে জয়কে
জয় শেষে কিনা এরকম ভিখারি মেয়েকে বিয়ে করলে? আমি কিসে কম ছিলাম?অফিসের কত মেয়েই তো তোমার জন্য পাগল।এ মেয়ের না আছে জাত না আছে টাকা তাহলে?
পাশের কয়েকজন অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।শ্রেয়া তখন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জয়ের দিকে। জয় এক রহস্যময় হাসি হেসে চুপ করে রইলো। কিছুটা কান্না আর অনেক পরিমাণ অভিমান নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো শ্রেয়া।ভেবেছিলো জয় হয়ত কিছু বলবে!
.
.
.
.
.
.
শ্রেয়া চলে যেতেই জয় মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল শ্রেয়ার মাঝে যা আছে তার শতভাগের একভাগ ও তোমার মাঝে নেই!আর যাইহোক আমার বউ তোমার মত সস্তা না।অন্তত পর পুরুষদের সামনে নিজেকে বিকিয়ে দেয়না!
কাল ভদ্রভাবে রিজাইন দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবে নয়ত আমি ভুলে যাবো তুমি আমার ক্লাসমেট বা ভালো ফ্রেন্ড ছিলে।
বলেই সামনে এক পা এগুলো জয়।আবার পিছনে এসে বলল খেয়ে যেও।কষ্ট করে টাকা খরচ করে গিফট নিয়ে এসেছো যখন!
জয় চলে যেতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মোহনার দিকে।মোহনা রাগে খেই হারিয়ে ফেলেছে।দুটাকার মেয়ের জন্য ও এভাবে অপমানিত হলো?
জয়কে দেখে নিবে ও!বোঝা পোড়ার শুরুতো সবে!হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো মোহনার।
চলবে_
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
🍁
একের পর এক গয়না খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখছে শ্রেয়া।আর নানান কথা ভেবে চলেছে!জয় যে তাকে পছন্দ করে না সে নিশ্চিত আজ!হয়ত করুনা করে বিয়ে করছে!ভালোবেসে তো নয়!সে তো অন্য কাউকে ভালোবাসত..
শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে শ্রেয়াকে এভাবে আয়নার সামনে কিছু একটা ভাবতে দেখে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো জয়!কি নিয়ে ভাবছে তা পর্যবেক্ষন করে করে চলছে!
বেশ অনেক সময় পর শ্রেয়া জয়ের দিকে তাকালো। জয়কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়া পাশকাটিয়ে কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো!
জয় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো কিছু কাজ করতে!
আপনি আমায় কেনো বিয়ে করলেন হ্যা?
চুলে তাওয়াল পেঁচিয়ে জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল শ্রেয়া!
ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো জয়।
জয়কে চুপ থাকতে দেখে শ্রেয়ার রাগ যেন বেড়ে গেলো!
কি হলো কথা বলছেন না কেনো?করুনা করলেন?আমার বাবা মা নেই বলে?নাকি আমরা গরীব বলে?
নাকি আপনার দাদার কথা রাখতে?বলুন
শ্রেয়ার কথায় ভীষন রকম রেগে গেলো জয়!কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো!
তুমি যা বললে সবটাই!মানে তুমি এতিম বলে,গরীব বলে তোমায় করুনা করতে বিয়ে করছি।আর দাদুর কথা রাখতে তো বটেই!ফাজিল মেয়ে কোথাকার..
হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো জয়! শ্রেয়া বিছানায় বসে কান্না করতে লাগলো।জয় তার সাথে অভিনয় করেছে সেদিন?ভেবেই আরো কান্না পাচ্ছে তার!
.
.
.
.
.
প্রায় বিশ মিনিট পর ঘরে এলো জয়।শ্রেয়া হিচকি তুলে গুনগুন করে কাঁদছে!
জয় জোড়ে ধমক দিতেই চমকে উঠলো শ্রেয়া।ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
জয় দরজা আটকে এসে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে বিছানায় বসে টেবিল ল্যাম্পটাও জ্বালিয়ে দিলো।
শ্রেয়ার বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো!শ্রেয়া জয়ের দিকে পিঠ দিয়ে বসে কাঁদছে! জয়ের থেকে সরে যেতে চাইলে আরো কাছে টেনে নিলো জয়।
কেনো এরকম বলছো বলো তো?আমার অফিসের স্টাফ বাজে বলেছিলো বলে?সমাজে কিছু মানুষ এই টাইপের থাকেই।যারা অন্যের দোষ,দুর্বলতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে।সবাই যদি তাদের কথা নিয়ে পরে থাকে তাহলে জীবনে সামনে আগাবে কি করে বলো তো?
আর আমার বউয়ের নামে কেউ কটু কথা আমার সামনে বলবে আর আমি তাতে তাল দিবো?
আমি কিন্তু দু-এক টা কথা শুনিয়ে দিয়েছি!আর তার চাকরীটাও খেয়ে দিলাম।ইট মেরে পাটকেল খেয়েছে।সিম্পল!
শ্রেয়ার কান্না থেমে গেছে।অবাকও হয়েছে বেশ।মৃদু আলোয় শ্রেয়ার এরুপ চাহনি দেখে মুচকি হাসলো জয়!
ভেজা চুলগুলো স্বযত্নে মুছে দিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবাল।এক মাদকতা আছে শ্রেয়ার চুলে!যা বারবার আকৃষ্ট করে জয়কে।কিন্তু শ্রেয়াকে পুর্নাঙ্গ ভাবে ভালোবাসে আর সে ভালোবাসাটা শ্রেয়াকে উপলব্ধি না করিয়ে স্বামীর অধিকার চায় না জয়!এতে হয়ত দুজনের মধ্যে ভালোবাসার কমতি থাকবে।চাহিদাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে..!
শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই কিছুসময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পরলো।ঘুমের মধ্যে জয়কে আকড়ে ধরলো দুবাহুর মাঝে।জয়ের কাছে এক অন্য রকম অনুভূতিরা ভীড় করলো! হয়ত ভালোবাসার প্রাথমিক পর্যায়…!
🍁
কাল সন্ধ্যার মধ্যেই বাসায় পৌঁছাতে পারবে জিসান।এখন প্লেনে বসে আছে!দাদাভাই-শ্রেয়ার বিয়ের কথা কত দূর আগালো কে জানে?বাড়ির কেউ তো কথাই বলছে না ঠিকঠাক! জিসান যা করছে ঠিক করছে তো?জুঁইয়ের সাথে এরকম একটা কাজ করার পর শ্রেয়াকে বিয়ে করা?আর শ্রেয়াই বা মানবে তো?বাড়ির লোক দাদাভাই -ই বা ব্যাপারটা কিভাবে নিবে?কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাবে মনে হচ্ছে…!
এদিকে জুঁইয়ের বাবার অবস্থা ভালো না।সব ভুলে এখন বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত জুঁই!ওপেন হার্ট সার্জারি আজ তার বাবার!ওটিতে নিয়ে গেছে বেশ সময় হয়েছে।এখনো অাপারেশন থিয়েটারের লাইট অন হয় নি!কি হচ্ছে ভেতরে?
ওয়েটিং সিটে বসে আছে জুঁই। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে গেছে।এখন আর চোখে অবিরাম পানি আসছে না।কিছুক্ষন পরপর চোখ ঝাপসা হয়ে টুপ করে দুই একফোঁটা পানি নিচে পড়ছে।পাশে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মোনালিসা বসে আছে!এই একটা মেয়েই আছে দুনিয়াই যে তার বাবা মার থেকেও হয়ত বেশি ভালোবাসে জুঁইকে।এত কথা-কাটাকাটি হয় ঝগড়া হয় দুজনার মাঝে তবুও জুঁইয়ের সব বিপদের দিনে সে সবার আগে হাজির!
জুঁই ভাবছে জিসান ও তার জীবন থেকে চলে গেলো।এখন আল্লাহ না করুক বাবার কিছু হলে কি নিয়ে বাঁচবে ও?কি নিয়ে?
কি হবে শেষ পরিনতি?কারোই জানা নেই!
চলবে_