#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_২৩+২৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
🍁
ভাই ভাবীর কি আগে কারো সাথে রিলেশনে ছিলো?আই মিন ভাবীর কারো সাথে ফিজিক্যাল হয়েছে!এটা তুমি জানতে বিয়ের আগে?
হোয়াট রাবিশ!কিসব যা তা বলছিস!
ভাবী প্র্যাগনেন্ট ভাই!
এতক্ষনে বুঝতে পারলো জিসান ব্যাপারটা কি!
কি হয়েছে আদিবা!
ভাই সকালে ভাবীকে ঘরে কাঁদতে দেখে মা যায় তারপর সবটা যেনে যায়!ভাবীকে মা জিজ্ঞেস করলো কয় মাস!ভাবী বলেছে নাকি দেড় মাস হবে হয়ত!
তারপর মা খুব ঝামেলা করেছে! ভাবীকে যা তা বলে অপমান করেছে!আর বলেছে এ বাড়িতে রাখবে না!তারপর ভাবী খুব কেঁদেছে আর সেন্সলেস হয়ে গেছে।আমু ডক্টর কল করেছিলাম! এসে দেখে গেছে ভাবীকে!ম্যান্টালি সাপোর্ট আর ফুল বেড রেস্টে রাখতে বলেছে!নয়ত বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে!
জিসান ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে!
ভাইয়া চুপ করে থেকো না।কিছু বলো..
আমিই বাচ্চার বাবা আদিবা..
ননসেন্সের মত কথা বলো না ভাইয়া!এখন যে করেই হোক মাকে ম্যানেজ করো!কাল দাদাভাই বাবা বড় ভাবী আসবে!তখন মা এসব তুললে ব্যাপারটা আরো বিচ্ছিরি হবে!ভাবীও কতটা ছোট হবে ভেবে দেখেছো?
আমি সব ঠিকই বলছি আদিবা!সেদিন জুঁইয়ের বার্থডে পার্টি ছিলো..আমি…
.
.
.
.
.
জিসান ফ্লোরে দিকে তাকিয়ে আছে!আদিবা সবটা শুনে রেগে বললো আসলো তোমরা পুরুষজাতিই একটা কলংক!তোমাদের মত কিছু ছেলে দুনিয়াতে থাকায় পৃথিবীর এত অধঃপতন!
এক ভাই গার্লফ্রেন্ডের জন্য মা বোনকে অপমান করলো!বাড়ির সবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে মেয়েটাকে যা নয় তা বলে অপামন করলো অসম্মান করলো!শেষ কিনা তাকেই বিয়ে করলো আর এখন তো পরানের পরান চোখের মনি!চোখের হারায়!
আর আরেকভাই বড় ভাইয়ের বউকে ভালোবেসে একদম দেবদাস হয়ে গেলো! আবার তলে তলে আরেক মেয়ের সর্বনাশ করে শেষে কিনা তাকেই বিয়ে করলো!আর এখন বাচ্চার বাপ হবে!
ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ
হন হন করে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আদিবা!
জিসান নিচের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো!
ধীর পায়ে মায়ের ঘরের সামনে যেয়ে দাড়ালো জিসান!
ঝসণা বেগম বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছিলেন!জিসান আস্তে আস্তে বিছানার কোনা ঘেষে বসল!
মা..
মা..
হু..হ্যা হ্যা জিসান বল!জিসান তুই কখন এলি?
কিছু ক্ষন হলো!
তোর সাথে আমার খুব জরুরি কথাছিলো!তুই এ কাকে…
মা! আমি এ ব্যাপারেই বলতে এসেছি!
তুই সব জানিস…কেনো অন্যের..
মা জুঁইয়ের সন্তানের বাবা আমিই মা!আসলে ও তো আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড!ইউএসে আপন বলতে ও-ই আমার খুব কাছের আর আপন ছিলো! আর একসময় প্রেম ভালোবাসা! সম্পর্ক!আর মেলামেশার এক পর্যায়ে…তারপর বিয়ে!
মা প্লিজ তুমি জুঁইকে অপামন করো না!দোষটা আমারই ছিলো!আমিই নিজেকে..
প্লিজ মা..
ঝর্ণা বেগম মুখ ঘুরিয়ে নিলেন!তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন আল্লাহ কোন দোষের তোদের মত ছেলে আমার পেটে দিয়েছিলেন কে জানে?কি পাপ করেছিলাম আমি..
মা…
অযথা মেয়েটার সাথে কি যা তা ব্যবহার করেছি ছিঃ!
মা…
দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে..দোহাই তোর..
জিসানের চোখে পানি এসে ভীড় করেছে!নিজেকে শক্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো!
.
.
.
.
.
.
🍁
আদিবা ছাদে গিয়েছিলো! ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে একপ্রকার দৌড়ে ঘরে এলো!এসেই দেখে বালিশের নিচে ফোন ব্রাইভেট করছে!
হাতে ফোন তুলেই দেখেলো স্ক্রীনে রোদের হাসোজ্জল ছবিটা ভেসে উঠেছে!কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে কলের প্রায় শেষ সময়ে রিসিভ করে কানে রাখলো!
হ্যালো..
কি করছে আমার জান পাখি
কিছু না!
কি হয়েছে?আমার জান পাখির
ড্রামা বন্ধ করবে প্লিজ..
কি হয়েছে?এনিথিং রং
নাহ!
আচ্ছা একটা সারপ্রাইজ দিতে কল করেছি!শুনেই তোমার সব মন খারাপ চলে যাবে
বলো
বাবা আজ নিজে আমায় ডেকে নিয়ে বললো তাদের নাকি তোমাকে পছন্দ! সামনের শুক্রবার তোমাকে দেখতে যেতে চায়!আংকেল দাদান নাকি সেদিন বাড়ি থাকবে!বাবা নাকি আংকেলের সাথে কথা বলেছে!
ওহ আচ্ছা
তুমি সারপ্রাইজড্ হও নি?সিরিয়াসলি?কি হয়েছে তোমার?
বিয়ে করে কি হবে শুনি?জীবন নিয়ে শুরু করে দিবে খেলা!তোমরা ছেলে জাতটাই অসুস্থ!বিকৃত মস্তিষ্কের!
কি হয়েছে বলবে প্লিজ..
জিসান ভাই…………………….রোদকে সবটা খুলে বললো আদিবা!
রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল! যর শব্দ স্পষ্ট কানে গেলো আদিবার!
আদিবা..সব ছেলেরা এক হয় না!আর না পুরুষ জাতি!কারো জন্য সবাইকে তুমি এক কাতারে ফেলতে পারো না!
একেকজন মানুষ একেক রকম!আর জিসান হয়ত পরিস্থিতির চাপে পড়ে এরকমটা করেছে!
দাদাভাই? সে কি করেছিলো বড় ভাবির সাথে..
ওদের দুজনই একটা বাজে পরিস্থিতির স্বীকার!যার অংশীদার তোমার ভাবীরাও..
একবার ভেবেছো জয় কি করে একটা মেয়ের মোহ কাটিয়ে আরেকজনকে মেয়ে নিয়েছে।কতটা অপরিচিত ছিলো!হুট করে জীবনে আশা আর..
সাফাই গাইবে না প্লিজ..
জিসান কি ভেবেছিলো তার জীবনটা এরকম এলোমেলো হয়ে যাবে?ওর বয়সটাই বা কতটুকু?আমাদের কতটা ছোট!এত ঝড় গেছে ওর জীবনে সেসব সামলে নিয়েছে এটাই তো তোমদের ওরম পাওয়া!শ্রেয়ার ব্যাপারটা নিয়ে যদি ও বাড়ির সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতো?বা জুঁইকে স্ত্রীর স্বকৃীতি না দিতো..
জিসান ভাইয়ের জন্য আমার খুব খারাপ লাগে জানো তো…ছোট বেলা থেকেই বাবা মায়ের থেকে দূরে দূরে ছিলো!দাদাভাই দাদান বাবা মায়ের সাথে যতটা ক্লোজ জিসান ভাই তার চারভাগের এক ভাগ ও নয়!তারপরেও এত কিছু ঘটে গেলো!মনে কি চলে কি জানে..
সব ঠিক কর হয়ে যাবে আদিবা..
সত্যিই কি সব ঠিক হয়ে যায়?কিছুই ঠিক হয় না!ঠিক হওয়ার হলে কখনো এরকম দুর্বিষতা মানুষের জীবনে আসতো না!আসলে সবটাই মানুষ মানিয়ে চলতে শিখে যায়..
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন!এ কথাটা বিশ্বাস করো তো?
খুব বিশ্বাস করি!নয়ত দেখো না জুঁই ভাবীকে ভাই বিয়ে না করলে বাচ্চাটার কি পরিনাম হতো.?
তোমার তো আনন্দ করার কথা!তুমি ফুপি হতে যাচ্ছো..
ম্লান হাসলো আদিবা!
আমার রানীর মুখে হাসি ফুটলো তবে..
ভালো লাগছে না!রাখছি
খেয়েছো?
হ্যা
আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ!
কল কেটে দিতেই আদিবা ফোনের স্ক্রীনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে!বিছানায় শুয়ে পড়লো!
.
.
.
.
.
.
🍁
জুঁইয়ের পাশে বসে আছে জিসান!অপলক তাকিয়ে আছে! মলিন মুখটায় কিছু উসকোখুসকো চুল এসে পড়ে আছে!
ঠোঁট জোড়া কিছুসময় পরপর একটু কেঁপে উঠছে!
আলতো করে চুমু খেতেই একটু নড়ে উঠলো জুঁই।
পেটের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে বেশ কয়েটা চুমু খেলো!
কম্বল টেনে দিয়ে গলা অব্ধি ঢেকে দিলো!
আমি জানি না আমার এখন কেমন রিয়্যাক্ট করা উচিত! আমি বাবা হচ্ছি!আর বাবা হলে কেমন আনন্দ হয় জানা নেই আমার!তবে এতদিন পর কেমন যেন একটা প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে আমার জুঁই!
কেউ আমায় বাবা বলে ডাকবে!গুটি গুটি পায় কোলে উঠবে!ছোট তুলতুলে হাতগুলো দিয়ে আমায় ছুঁবে ভাবতেই কেমন স্বর্গীয় সুখ হচ্ছে!
আমি খুব ভালো থাকবো জুঁই খুব ভালো!আর তুমিও..!তুমিও খুব ভালো থাকবে….খুব ভালো…
উঠে ঘরের দরজটা আটকে দিলো জিসান! তারপর তারপর জুঁইয়ের পাশে এসে শুয়ে পড়লো!খুব ইচ্ছে করলো জুঁইকে বুকে টেনে নিতে কিন্তু যদি বাবু ব্যাথা পায়?সেই ভেবে কাছে টানলো না!নিজেই জুঁইয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো!
চলবে_
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_২৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
🍁
দু’ঘন্টা হলো জয় জানতে পেরেছে সে বাবা হবে!প্রথমে খুব খুশি হলেও কিছু সময় পর থেকেই সে গম্ভীর হয়ে বসে আছে!কেনো তা বুঝতে পারছে না শ্রেয়া!গ্রাম থেকে এসেই কয়েকদফা বমি করেছে!তারপর সেন্সলেস হয়ে যায়!ডক্টর কল করলে সে এসে শ্রেয়াকে চেকাপ করে জানায় সে মা হবে!
ঝর্ণা বেগম তো খুব খুশি তার দুই ছেলের বউই পোয়্যাতি!তার খুশি ধরে রাখে কে?সবাইকে মিষ্টি বিলাচ্ছেন একে একে!পাড়াপ্রতিবেশিদের বাড়িতেও পাঠিয়েছেন!
এ বাড়িতে বউ হয়ে আসা অব্ধি জুঁই শ্রেয়ার সাথে তেমন কথা বলে নি!একটু আধটু হু হা তেই কথা সেরেছে!আজ নিজে থেকে এক বয়াম আচর এনে হাসোজ্জল মুখে শ্রেয়ার পাশে পা তুলে বিছানায় বসে! দুজনেই শুতি শাড়ি পরা..
আচারের বয়ামটা এগিয়ে দিয়ে বলল নাও ভাবী!আজ থেকে তোমার আমার সব কিছু হাপ হাপ!
মুচকি হেসে হাত পেতে আচার নিলো শ্রেয়া!জুঁই বেশ খানিক আচার মুখে পুরে বলল জানো তো তোমার আগে মা হওয়ার দরকার ছিলো..
কেনো বলো তো!জিভে আচার নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল শ্রেয়া!
আমাদের আগে তো তোমাদের বিয়ে হয়েছে!আর মাস খানে আগে!তাহলে সে হিসেবে তুমি আগে আদর পেয়েছো..
খুকখুক করে কেশে উঠলো শ্রেয়া!চোখমুখ খানিকেই লাল হয়ে গেলো!জুঁই আচারের বয়ামটা কোল থেকে সরিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে স্থীর হতে বলল শ্রেয়াকে!মাথায় হাত বুলিয়ে ফুল দিলো!
নাক চেপে কিছু সময় চুপ থেকে স্বাভাবিক হলো শ্রেয়া!প্রসঙ্গে পাল্টাতে শ্রেয়া বললো তুমি তো ইউএস থাকতে জুঁই তাহলে তোমার মধ্যে বাঙালি আনা কি করে?
মৃদু হেসে জুঁই বলল জন্ম তো বাংলাদেশেই!এখানেই বেড়ে ওটা!১৭ বছর বয়সে মারা গেলে আমি বাবা ইউএস চলে যাই তাছাড়া প্রত্যেক বছরই এখানে আসা হতো!
ওহ আচ্ছা..
হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকে জয়!জয়কে আসতে দেখে জুঁই উঠে পড়ে!দাদাভাই এসে গেছে..আমি তাহলে এখন যাই পরে আসবো..
বসো..
না পরে আসবো নি!বলেই দ্রুত রুম ত্যাগ করল জুঁই!
সাদা শার্ট টা খুলতে খুলতে জয় বললো শ্রেয়া এ বাবুটা না রাখলে হয় না?
চমকে উঠলো শ্রেয়া!বিমূঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কি বলছেন?
শ্রেয়ার পাশে বসলো জয়!শ্রেয়া দেখো আমার খুব ভয় হচ্ছে! এক দুই একদিনেই তোমার শরীরে পানি এসে গেছ!তা উপর প্রথম বাবু!যদি সিজার করতে হয়?আর বিয়ে তো হলে কয়েকদিন এখন না নিলেও তো ক্ষতি নেই!একটু বুঝো
আপনি কি পাগল?কি অদ্ভুত ভিত্তিহীন যুক্তি!হাজার হাজার নারীরা মা হচ্ছে তাদের হাজবেন্ডরা খুশি হয় বাবা হবে বলে আর আপনি বাবা হয়ে মেরে ফেলতে বলছেন?
শ্রেয়াকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে নিলো জয়! ভয় হচ্ছে শ্রেয়া মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল জয়!
শ্রেয়া চুপ করে জয়ের শরীরের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত!চোখের কোনা ভিজে উঠেছে!
🍁
সকাল হতেই সব রান্না হাতে হাতে করলো শ্রেয়া জুঁই হেল্প করলো তাকে!
সব খাবার টেবিলে ঘুছিয়ে দিতেই জুঁই সবাইকে খেতে ডাকল!একে সবাই খেতে বসল!হঠাৎ জয়ের ফোনে কল আসতেই সে দাঁড়িয়ে পড়লো!দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো! যা কারোই চোখ এরালো না!হাত না ধুয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো!
চলবে_