বেলীফুল পর্ব-৩৬

0
2003

#বেলীফুল
পর্ব- ৩৬

প্রথমেই স্যরি, এতদিন পর ছোট্ট পর্ব দেয়ার জন্য। এরপর থেকে নিয়মিত দিব ইনশাআল্লাহ। আর দুই পর্বে শেষ হচ্ছে না। তাড়াহুড়ো করে শেষ না করে একটু রয়েসয়ে সুন্দর করে ইতি টানব ভাবছি।
_____________________

ঘুম থেকে উঠে পাশ ফিরে শুতেই ভীষণ চমকে লাফিয়ে উঠে বসল ইলা। তার পাশে এক লোক শুয়ে আছে। এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেও আছে! বুক ধুকপুক করতে শুরু করল ইলার। ভোরের মৃদু আলোয় মানুষটাকে দেখাও যাচ্ছে না।

মানুষটা তখন তাকে আলতো করে কাছে টেনে নিয়ে বলল, “কী হয়েছে? উঠে পড়লে কেন?”

কাননের কন্ঠ। ইলার স্বস্তিতে এলিয়ে পড়ল। কী ভয়টাই না পেয়েছিল! গতকালই মাত্র বিয়ে হয়েছে। ধুর! ভুলে গেল কী করে?

***

পাখিডাকা সকালটা রইসুদ্দিনের বেশ চমৎকার লাগছে। সকালে হাঁটাহাঁটি করে এসেই দেখেছে তার নতুন বউমা চা বানিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। খুশিতে একান ওকান হয়ে গেছে তার।

তবু খানিক ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করলেন, “এত সকালে উঠেছ কেন?”

মৌরি একটু হেসে বলল, “আমি ভোরেই উঠি বাবা। উঠে চা খাই। আজকে একসাথে খাব৷ আপনার ছেলে বোধহয় দেরিতে ওঠে।”

“ছুটির দিনে তার দশটার আগে দেখা পাওয়া যায় না।”

রইসুদ্দিন আয়েশ করে বসলেন৷ মৌরি সুন্দর করে চা বানিয়ে দিল তাকে। নিজের কাপে চুমুক দিয়ে উদাস হয়ে গেল। একটু খারাপ লাগছে, সে মিথ্যে বলেছে শ্বশুরের কাছে। ভোরে ওঠা তার অভ্যাস না, বরং ইদানীং রাতে ঘুমই আসত না, সকালের দিকে চোখ লেগে এলে বেশ বেলা করে গড়িয়ে নিত বিছানায়। আজ তার খুব লজ্জা লাগছিল সাজিদের পাশে শুয়ে৷ ছেলেটা বড্ড ভদ্রতা দেখিয়েছে গতরাতে।

“চাদরটা পাল্টে দেব?”, ” ফুলগুলো অসুবিধা করছে না তো?”, “তোমার কি এখানে জায়গা হবে?”, “কোলবালিশ ছাড়া শুতে পারবে?”, ” ফ্যানটা কি একটু কমিয়ে দেব? শীত লাগছে?” ইত্যাদি প্রশ্নে একেবারে জর্জরিত করে ফেলেছে তাকে! কোথায় একটু পাশে বসে দুটো মিষ্টি কথা বলবে, তার বালাই নেই। ক্ষেত্রবিশেষে এই লোকই দু-একটা রোমান্টিক কাজকর্ম করে ফেলে। কেমন করে করে কে জানে!

মৌরি ঠিকমতো ঘুমুতেই পারেনি। সাজিদও না। সারারাত এপাশ ওপাশ করেছে। মৌরির একবার ইচ্ছে হয়েছে বলে, “এরকম করছেন কেন? ইচ্ছে হলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারেন।” লজ্জায় বলেনি।

শেষে ভোরে নিজেই উঠে পড়েছে। ওই লোক ঘুমাক একটু শান্তি করে।

বাড়িটার দিকে নজর দিল মৌরি। ঝোপঝাড় হয়ে আছে। খুবই বেহাল দশা বাড়ির৷ এটাকে সাইজ করে ফুলগাছ লাগাতে পারলে একেবারে চোখ জুড়ানো সুন্দর হতো! লাল ইটের সীমানা প্রাচীর, মাঝে একটা জলপাই গাছের নিচটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করা।চমৎকার বসার জায়গা, ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। তার সংসারই তো এখন৷ তাকেই ঠিকঠাক করতে হবে সব।

সাজিদের গলা শুনে অকারণে একটু চমকে উঠল মৌরি।

“আমার চা কোথায়?” বলতে বলতে তাদের পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

মৌরি কেটলি থেকে চা ঢেলে দিল সাজিদকে। সকালের ঠান্ডা বাতাস নাড়িয়ে দিয়ে গেল তাদের। টেবিলের নিচে পায়ে পায়ে ঠোকাঠুকি হয়ে গেল একবার। মৌরির মনে হলো, বাহ! কী সুন্দর সকাল!

***

রবিবারে তুলন গেল ভূমির সাথে তার ভাইয়ের স্কুল দেখতে। তারা যখন গেল, তখনই স্কুল ছুটি হয়েছে। দলে দলে ছোটো ছোটো বাচ্চারা ছুটির আনন্দে দৌড়ে বের হচ্ছে স্কুল থেকে। শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে গেল তুলনের। ভীষণ ভালো লাগল দৃশ্যটা। স্কুলের জামা আকাশি, প্যান্ট নেভি ব্লু। মেয়েদের আকাশি জামা, সাদা ক্রস বেল্ট, ওড়না। তুলনের স্কুলের ড্রেসও ঠিক এমন ছিল।

চোখ ভরে দেখতে দেখতে কখন যেন আনমনা হয়ে পড়েছিল সে। ভূমির ধাক্কায় সম্বিত ফিরল। অফিসঘরে গিয়ে স্টাফদের ব্যস্ততা পেরিয়ে ঢুকল প্রিন্সিপালের ঘরে। ভূমির ভাই স্কুলের প্রিন্সিপাল।

লোকটার বয়স চল্লিশের ওপর। দেখতে শুনতে চৌকস। তুলনের ছোটোখাটো একটা ইন্টারভিউ নিয়ে নিল। শেষে বলল, “আপনার চাকরি কনফার্ম তুলন ম্যাম। আজ থেকে আপনি আমাদের স্কুলের ম্যাথ টিচার। আপনার শিডিউল বুঝিয়ে দেবেন ভাইস প্রিন্সিপাল জহির স্যার। আমি আপনাকে এমনিতেই নিতাম, ভূমি এত প্রশংসা করে আপনার! তবু একটু দেখে নিলাম। আশা করি প্রতিষ্ঠানটা নিজের ভেবে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন।”

এত কথার জবাবে সুন্দর করে কী বলা যায় ভেবে পেল না তুলন। শুধু বলল, “চেষ্টা করব।”

স্কুল থেকে যখন বের হচ্ছে, তখন ডে শিফটের ক্লাস শুরু হবে। ছাত্রছাত্রীরা ছোটাছুটি করছে। কিশোরী স্বপ্নবাজ মেয়েগুলো কাড়াকাড়ি করে আচার খাচ্ছে! তুলন মনে মনে হাজার ধন্যবাদ দিল ভূমিকে। অনেকদিন পর তার সত্যি মনের ভার কমেছে। এখানে থাকলে হয়তো পুরোপুরি ভুলতে পারবে দুঃসহ স্মৃতিগুলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here