#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-০৩|
সবার বিষ্ময় কাটিয়ে উঠেছে রুহির বাবা-মার কথায়। উপস্থিত সবার সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয় ইধার সঙ্গে রুহির বাবা মা। ইধা কে দেখার পর থেকে বাড়ির ছোট ছেলে মেয়েদের মধ্যে উত্তেজনার শেষ নেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগেই ইধা কে নিঝুমের মা নিয়ে যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। ইধা ফ্লাইটে ডিনার করেছে তাই এখন আর সে কিছু খাবে না। একে একে বাড়ির বড়রা বাড়ির ভিতরে চলে যায়। রুহি হাঁটা শুরু করলে এশা রুহির হাত ধরে বলল,
‘ আপু তুমি আমাদের আগে বলনি কেন ইধা চৌধুরী তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড?’
রুহি মৃদু হেসে বলল,
‘ আমার খুব কাছের মানুষ ছাড়া এই কথাটা অনেকেই জানেনা। হঠাৎ করে ওকে দেখিয়ে চমকে দিতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি বা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করলে মাক্স কিভাবে স্কার্ফ ব্যবহার করি। ইধার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে আমাদের দুজনের অনেক ছবি আছে কিন্তু বেশিরভাগ ছবিতে আমি স্কার্ফ পড়ে ছিলাম। আমার অ্যাকাউন্টেও এই একই অবস্থা। ইধার যত ছবি আছে হয় মাক্স কিংবা স্কার্ফ পড়া।’
নিঝুমের চাচাতো বোন মীম বলল,
‘ তোমার এই চমকে দেওয়ার ঠেলায় আরেকটু হলে আমি সেন্সলেস হয়ে যেতাম। রাত্রে সাড়ে এগারোটার সময় আমাদের বাড়িতে আমাদের চোখের সামনে ইধা চৌধুরী কে দেখতে পাবো ভাবা যায়? ভাইয়ারা তো ওদের বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে গেছে তারা যদি জানতে পারে এই ঘটনা, তাদের ক্রাশ এই মুহূর্তে তাদের বাড়িতে আছে তাহলে নির্ঘাত সবগুলো হার্ট অ্যাটাক করবে।’
মীমের কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। নিঝুমের মা সবাইকে ডাক দিলে সবাই বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
সকাল বেলা খাবার টেবিলে সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। গভীর রাতে এক পলকের জন্য দেখা পেয়েছিল নায়িকার এত কিন্তু এখন পর্যন্ত নায়িকার কোন দেখা নেই। নিলাংশ খুব সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। রনক এবং রবিন কিছুক্ষণ আগে হেলে দুলে খাবার টেবিলে এসে বসে। রুহি সে তার ফোনে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য অপেক্ষা করছে। নিঝুমের চাচাতো ভাই সোহেল ওদের এমন হাঁসফাঁস দেখে বলল,
‘ কি হয়েছে খাওয়া শুরু করো নি কেন? আর ফিসফিস কী বা বলছো?’
নিঝুম সাবধানী হয়ে বলল,
‘ কিছু না ভাই তোরা ব্রেকফাস্ট কর।’
নিঝুমের বড় ভাইয়া আহসান গম্ভীর গলায় বলল,
‘ খাওয়ার সময় এত কথা বলতে হয়? তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর সবাই।’
নিঝুমের বড় ভাইয়ের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। বাড়ির ছেলেরা মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। তাজ সে এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। এরমধ্যে রুহি এসে ডাইনিং টেবিলে বসলে এশা বলল,
‘ আপু সে কোথায়?’
রুহি মৃদু হেসে বলল,
‘ আসছে!’
রুহির কথা শেষ হতে না হতে ইধা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। ডাইনিং টেবিলের দিকে হেঁটে আসতে আসতে মিষ্টি হেসে বলল,
‘ গুড মর্নিং এভরিওয়ান।’
এশা উত্তেজিত গলায় বলল,
‘ গুড মর্নিং।’
ইধার দিকে সকলের চোখ বড় বড় করে বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। ইধা কে দেখার পরে রণকের মুখ থেকে পাও রুটির টুকরো প্লেটে পড়ে যায়। রবিন আর আহসান হা করে তাকিয়ে থাকে। ইধা ওদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে রুহি কে বলল,
‘ মামনি কোথায়?’
রুহি মৃদু স্বরে বলল,
‘ কিচেনে আছে তোর জন্য কী সব ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে। তুই বস এখানে এসে যাবে এক্ষুনি।’
ইধা চেয়ার টেনে আহসান এবং রুহির মাঝখানে বসে। ইধা আহসানের দিকে ফিরে হালকা হেসে বলল,
‘ কী ভাইয়া বিশ্বাস করতে পারছেন না আমি আপনাদের সামনে বসে আছি কিনা? আমি সত্যি আপনাদের সামনে সশরীরে বসে আছি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রুহি ওর জন্যই আমার এখানে আসা।’
আহসান নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ আসলে হঠাৎ করে মানুষের সামনে অকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমাদের বেলায় ও ঠিক তাই হয়েছে। তবে যাই হোক, ওয়েলকাম টু আউর হাউস। আমার বোনদের সঙ্গে মিলে বিয়ের প্রতিটা মুহূর্ত ইনজয় করুন।’
ইধা ছোট করে বলল,
‘ হুম।’
এরমধ্যে এশা বলল,
‘ কাল রাতে আম্মুর জন্য তোমার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতে পারিনি আজও কিন্তু তোমাকে আর ছাড়ছি না আমরা।’
নিঝুম এশা কে মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
‘ এই তুই থাম আগে আমাকে কথা বলতে দে। আপু তোমার পাশে যে বসে আছে সে আমাদের বড় ভাইয়া আহসান ভাইয়া। বর্তমানে আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস সামলাচ্ছে। আর তোমার সামনে যে দুজন বসে আছে একজনের রনক ভাইয়া আর একজন রবিন ভাইয়া। আমার ফুপির দেওর এর ছেলে। এরা দুজনেই কিন্তু জমজ। কিন্তু এদের চেহারায় আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমার আরো কিছু কাজিন আছে তারা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। পরে তোমার সঙ্গে সময় করে পরিচয় করিয়ে দেবো।’
ইধা ওদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
‘ হাই এভরিওয়ান, কেমন আছো তোমরা?’
রবিন বলল,
‘ হ্যালো, ভালো।’
আর কেউ কিছু বলার আগে নিঝুম আবার বলল,
‘ আরেকটা কথা বলতে পারো তোমাকে আমি আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি। আমার কাজিন দের মধ্যে সবথেকে বেশি ছোট এবং বিচ্ছু হলো তাজ। ওর কাছ থেকে একটু সাবধানে থেকো তুমি। গতকাল রাতে তুমি আমাদের বাড়িতে এসেই যে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছো তা ওই বিচ্ছুর দৌলতেই হয়েছো।’
ওদের কথার মাঝে রুহির মা এসে বলল,
‘ কে নিয়ে কথা বলছ তোমরা? ইধা এই নে তোর আলুর পরোটা।’
রুহির মায়ের কথা শুনে নিলাংশের ফুপি ইশা চৌধুরী ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে বলল,
‘ আলুর পরোটা! আমি তো শুনেছি সিনেমার নায়ক নায়িকারা খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেক সচেতন। গ্রিন ভেজিটেবল বেশি খায় তারা।’
রুহি মা হেসে বলল,
‘ আমার এই মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা গো। ও কখনও ডায়েট এর ‘ড’ মেনে চলে না। তবে হ্যাঁ ওর পছন্দের খাবার বাদে ও সব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খায়। আর নিজেকে যতোটুকু মেনটেন করে সব জিম এক্সারসাইজ করে।’
ইশা চৌধুরী ইধার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তা বেশ।’
ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাড়ির সামনের বাগানে ফোনে কথা বলতে বলতে পায়চারি করছিল ইধা। এরমধ্যে রুহি আরো কিছু মেয়েরা সেখানে আসলে ইধা ফোন রেখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ রুহি কালকে রাতে আমাকে যে ছেলেটা প্রপোজ করেছে তার ছোট ভাই কোথায়? এখানে এসেছি পর থেকে তার অনেক প্রশংসা শুনলাম কোথায় সে মহামান্য ব্যক্তি?’
এশার কাজিন সাফা বলল,
‘ তাকে এখন কোথায় যাবে আপু? কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠেছে তিনি ব্রেকফাস্ট করে রবিন ভাইয়া কে নিয়ে কোথায় যেন গেছে এখন আবার।’
ইধা হেসে দেয় ওর কথা শুনে। এশা বলল,
‘ তাজ সব সময় সবাইকে লেজেগোবরে অবস্থা ফেলে। তবে যাই বলো কাল কিন্তু নিলাংশ ভাইয়ার মুখটা দেখার মত ছিল।’
সাফা হেসে দিয়ে বলল,
‘ তার ভুল কিছু বলিস নি। কিন্তু ভাইয়া কোথায়? সকাল থেকে তো একবারও তাকে দেখলাম না।’
নিঝুম মৃদু স্বরে বলল,
‘ দেখ গিয়ে কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার তো ঐ এক কাজ, নিজের মনের কথা কে প্রাধান্য দিয়ে নিজের মত চলা। আম্মু বলেছে ভাইয়া খুব ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।’
চলবে….