আলো_আঁধার
part_10
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
সে কখনো আমার ছিলো না তাই মিথ্যে মিথ্যে সে আমার ছিলো বলে তার বদনাম করতে চাই না। একটা মানুষের অর্ধেক জীবন চলে যায় বুঝতে আর ভুল করতে করতে আর বাকি অর্ধেক জীবন চলে যায় সেই ভুল গুলো শুধরাতে। কারো হয়তো শুধরানোর সুযোগ হয়না। আমারো ঠিক তেমন শুধরানোর আর সুযোগ নেই শুধু প্রস্থান করা ছাড়া। প্রস্থানই হয়তো এক মাত্র উপায় নিজেকে ব্যথা মুক্ত করার।
আলো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রান্নাঘর থেকে আনা খাবারের আয়োজন টেবিলে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
আনিশা আলোকে চলে যেতে দেখে ডাক দিতে নিলেই মমতা জাহিদ ওকে বাধা দেয়৷ সদ্য বিবাহিত স্ত্রী স্বামীর মুখে তার প্রেমিকাকে খুঁজে বের করতে চায় শুনলে খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আঁধার আর কি বলে তার কোন ঠিক নেই তাই আলো চলে গিয়ে ভালোই করেছে বলে মনে করছে মমতা জাহিদ।
মমতা জাহিদ ভাবনা বাদ রেখে নিজেকে গম্ভীর করে
‘ তিন্নিকে খুঁজতে বের হবি মানে? তোর যে বিয়ে হয়ে গেছে ভুলে গেছিস??
আঁধার নিজের চোখ স্থির রেখে
‘ ভুলে যাবো কেন মা? তিন্নি আমার সাথে কেন এমন করেছে আমি শুধু তা জানতে চাই। ওর এটলিস্ট কথা বলা দরকার ছিলো আমার সাথে। একা কিভাবে ডিসিশন নিতে পারে ও যেখানে দু’জনেই ভালোবেসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মমতা জাহিদ রেগেমেগে
‘ আমি এতো কথা শুনতে চাই না আঁধার। তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে সেটা যেভাবেই হোক। আর তা যত তারাতাড়ি মেনে নেবে তাতেই মঙ্গল। আলোর কথা ভেবেছো একবার?
মেয়েটার কি দোষ? তোমার জন্যই তো সব হলো। এখন বিয়ে করেও যদি এমন করো তাহলে বুঝে নেবো আমি তোমায় মানুষ করতে পারিনি। মমতা জাহিদ আর কিছু না বলে চলে যায় টেবিল থেকে।
পুরো ডাইনিং টেবিলে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। রাইসা আনিশা তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে। কেমন যেন হয়ে গেছে সব কিছু একদিনের ব্যবধানে
আনিশা আঁধারের কাধে হাত রেখে
‘ ভাইয়া যা হবার তো হয়েই গেছে আমরা চাইলেই তো আর বদলাতে পারবো না, ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হয়েছে ভাগ্যের উপর তো আর কারো হাত থাকেনা। তাই হতে থাকবে যা ভাগ্যে আছে তবে চেষ্টা তো করতেই পারিস। আলোকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা কর। বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই আমাদের। জীবন যত জটিল ঠিক ততটাই সহজ। শুধু হার মেনে নেওয়া উচিত নয়।
রাইসা আনিশার কথায় তাল মিলিয়ে
‘ ভাইয়া আনিশা আপু ঠিক কথাই বলছে। আপনি আরেকটু ভাবুন।
আনিশা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই
আঁধার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে। বিচ্ছিরি লাগছে কেন জানি সব। ছোট বোনও এখন জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছে। আঁধার রুমে যেতে নিলেই মনে পড়ে রুমে আলো আছে। তাই রুমে না গিয়ে ছাদে চলে যায়।
রাইসা দরজায় টোকা দিতেই আলো দরজার দিকে তাকায়। দরজায় তাকিয়ে দেখে রাইসা হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলো একটু এগিয়ে,
‘ ভিতরে আসো রাইসা।
রাইসা এক-পা দু-পা করে আলোর দিকে এগিয়ে এসে
‘ এখন তো আর তোমায় আলো বলে ডাকা যাবে না, সম্পর্কে এখন বড় ভাইয়ের বউ মানে বড় জা। ভাবি ডাকতে হবে, আমি কিন্তু তোমায় বোন মনে করি যা-ই ডাকি না কেন। আর আজকে আমাদের সাথে তোমাদেরও যেতে হবে ছোট বোনের আবদার এটা।
আলো মুচকি হেসে
‘ তোমার যা ইচ্ছে ডেকো। কিন্তু সরি যেতে পারবো না। যেখানে সম্পর্ক নেই সেখানে সম্পর্কের নাম দিয়ে কি হবে বলো? মিছেমিছি কত অভিনয় করা যায়?
রাইসা হাত থেকে খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে
আলোকে ধরে বেডে বসিয়ে সেও সামনে বসে পড়ে।
‘ আমি এই বাড়িতে অনেক আগে থেকেই আসি আলো। তুমি যেমন জানতে আমি ফায়েজকে ভালোবাসি তেমনি আমিও আন্দাজ করতে পারতাম তুমি আঁধার ভাইয়াকে ভালোবাসো৷ আঁধার ভাইয়া সেটা না বুঝলেও আমি বুঝতাম। আমার বিশ্বাস সব ঠিক হয়ে যাবে। আঁধার ভাইয়াও তোমায় ভালোবাসে। সেদিন তিন্নি ঠিক কথা-ই বলে গিয়েছে। আঁধার ভাইয়াও তোমায় ভালোবাসে কিন্তু উনি সেটা নিজেই জানে না। যে কেউ তোমাদের দেখলেই বলতো একে অপরকে নিশ্চয়ই ভালোবাসে। আমিই কতো দিন ফায়েজকে জিজ্ঞেস করেছি তোমাদের মাঝে কিছু আছে কিনা যখন সে না করতো আমি তাকে বলতাম সে আমায় মিথ্যা বলে। এতো কেয়ার এতো আগলে রাখা, এতো লড়াই করা তোমার জন্য সবার সাথে এটা শুধু বন্ধুত্ব হতে পারে না।
আলো উঠে দাঁড়ায় নিজেকে সংযোজন করে
‘ তুমি ভুল ভাবছো রাইসা। আমি ওর মনের কোথাও নেই। এটা জেনেও মিথ্যা আশা নিয়ে থেকে কি লাভ? মিথ্যে সান্তনা দিয়ে নিজেকে নিজে আর ধোকা দিতে চাই না।
রাইসা উঠে আলোর কাছে এসে দেখে আলো ততক্ষণে কান্না করছে। রাইসারও খারাপ লাগছে ভীষণ সে দেখেছে আঁধারের জন্য আলোর হাহাকার৷ আলোর চোখে আঁধারের জন্য তৃষ্ণা। অনুর্বর ঠোঁঠে শুধু আঁধারের নাম। রাইসা জড়িয়ে ধরেছে আলোকে।
আলোও রাইসাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। রাইসা চুপ করে আছে কি বলবে এখন আলোকে স্বান্তনার বাণী সব সময় মানায় না।
আলো রাইসাকে ছেড়ে দিয়ে
‘ কতশত প্রাণ বেঁচে যায়। দেখো কত-শত মানুষ বেঁচে যায় নিজের আপন মানুষকে তার আপন মানুষের সাথে দেখেও। মেনে নেয়, সে ভালো আছে ভেবে, ভালো থাকবে ভেবে। আমিও হয়তো বেঁচে যেতাম আঁধারকে ছাড়া। মেনে নিতাম সে আর আমার নেই। ভালো আছে অন্যের কাছে। কাছে না থাকলে কি ভালোবাসা যায়না? যায়। আমিও দূর থেকেই ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন? এখন কি ভাবে সব কিছু ঠিক হবে বলতে পারো? ( কান্নার আওয়াজ তুলে) আর কি সব ঠিক হবে? হবে না।
রাইসা আবার আলোকে জড়িয়ে ধরে
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। আঁধার ভাইয়া একদিন ঠিক বুঝতে পারবে উনিও তোমায় ভালোবাসে আমার কথা মিলিয়ে দেখো। সব কিছুরই শেষ আছে এই খারাপ সময়ের ও সময় শেষ হবে।
আলো মুখ তুলে মলিন হাসে।
রাইসা খাবারের প্লেট আলোর হাতে দিয়ে
‘ এখন তারাতাড়ি খেয়ে নাও। অনেক কাজ আছে। নিজেকে ভেঙে দিলে কিভাবে হবে বলো? বিকেলে আমাদের সাথে কিন্তু তোমরা যাচ্ছো ফাইনাল।
আলো মুখ উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি রাইসা বাধা দিয়ে
‘ উঁহু কোন কথা নয় যেতে হবে মানে যেতে হবে। তোমরা না গেলে আমরাও যাবো না, আর ফায়েজ তো যাবেই না বলে দিয়েছে। এবার ভাবো কি করবে।
রাইসার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আলো। মেয়েটা এখনো ঠিক আগের মতোই আছে।
আলো পরোটার একটুকরো ছিড়ে মুখে দিতেই আঁধার রুমে আসে। হঠাৎ করে আঁধার সামনে আসায় আলো ভীষণ ভাবে বিষম খায়। আলোর চোখে পানি চলে আসে। আলোকে কাশতে দেখে আঁধার জলদি করে ওর মুখে পানির গ্লাস ধরে আর এক হাতে আলোর পিঠে হাত দিয়ে মাজতে থাকে। আলো একহাতে আধারের হাতের উপর ধরে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে। আলো ভেজা চোখে
ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে, ইচ্ছে হচ্ছে আঁধারকে একবার জড়িয়ে ধরে চোখের নদী শুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রেখে চুপ করে উঠে যেতে নিলেই আঁধার আলোর হাত ধরে বলে উঠে
‘ আলো..
আলো আঁধরের মুখে আলো ডাক শুনে ঝড়েরবেগে তাকায় আঁধারের দিকে…..
চলবে………
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দু’দিন শরীর একটু বেশি খারাপ ছিলো তাই দু’দিন গল্প দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত। নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো এখন থেকে আর খুব শীঘ্রই হয়তো এই গল্প শেষ হয়ে করে দিয়ে নতুন গল্প শুরু করবো। কেমন লাগছে গল্পটা আশা করি সবাই জানাবেন।