#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-০৬|
রাতের মধ্যভাগের সময় একজোড়া তরুণ-তরুণী খোলা আকাশের নিচে অদম্য কৌতূহল নিয়ে বসে আছে। তাদের দুজনের মনেই আকাশ সমান প্রশ্ন। আদৌ কী তারা সেই প্রশ্নের উত্তর পাবে? মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী কে ইধার দিকে তাকিয়ে থাকে দেখে ইধা তাকে খুব ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছিল, এইভাবে সে তার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী উত্তরে কিছু না বলে গুটি গুটি পায়ে এসে ইধার পাশে থাকা চেয়ারে বসে। ইধা মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী আচরণ দেখে বিরক্ত চোখে তার দিকে কয়েকবার তাকায় কিন্তু মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী তখনো তার দিকে তাকিয়ে ছিল। ইধা অধৈর্য হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী ইধার থেকে চোখ সরিয়ে নড়েচড়ে বসে বলল,
‘ চলে যাচ্ছেন যে?’
ইধা অপ্রসন্ন চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ চলে যাব না তো কী করব? আপনাকে আমি সেই কখন থেকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যাচ্ছি? আপনি তখন থেকে আমার দিকে ঐভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন? আপনি কী প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আমাকে?’
নিলাংশ নীর চৌধুরী চেয়ারে বসে পা সোজা করে দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার সঙ্গে আমার যেদিন প্রথম দেখা সেদিন আমি আপনার চেহারা পর্যন্ত ভালো করে দেখিনি কিন্তু আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বেশ খানিকটা দূর থেকে আমার চোখ পড়ে আপনার চোখের উপরে, আপনি হয়তো খেয়াল করেননি বিষয়টা আপনার ব্যস্ততার কারণে। আপনি বিষয়টা অমার্জিত ভাবে দেখবেন না আপনার চোখদুটোর সঙ্গে আমার খুব পরিচিত একজনের চোখের খুব মিল। আমি এত সময় ব্যয় করে সেটা যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করেছি। কাকতালীয়ভাবে আমি আপনাদের দুজনের চোখের মিল খুঁজে পেয়েছি।’
ইধা শীতল চোখে তাকিয়ে আছে মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরীর দিকে। ইধা এই মুহূর্তে তাকে কী বলবে বুঝতে পারছে না। ইধা মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরীর কোন অন্যায় তো দেখছে না। সে কেবল এতক্ষণ তার মনের সন্দেহ দূর করেছে মাত্র। ইধা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী কে কিছু বলবে। কিন্তু কোথায় মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী? ইধার আকাশ-কুসুম ভাবনার মাঝে মিস্টার নিলাংশ নীর চৌধুরী নিচে চলে গেছে। ইধা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বিস্তর খোলা আকাশের দিকে তাকায়।
————–
জমিদার রাহাত খান চৌধুরী হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে শুয়ে জীবনের কিছু হিসাব মিলাচ্ছে। আর দিন তিন-চার পরে তাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হবে। তার সুখের সংসার আজ ভাঙ্গাতে বসেছে। তার সুখের সংসারে ভাঙ্গন আজ ধরেনি। বড় ছেলে তার অবর্তমানে তার অতি আদরের বড় বৌমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তার কয়েক বছর পরে বাড়ির বড় নাতনি এক প্রকারের স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে যায়। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে প্রথম কয়েক বছর যোগাযোগ করা গেলেও তারপরে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অনেক খোঁজা খুঁজি করেও তার নিরুদ্দেশের রহস্য খুঁজে বের করা যায়নি। এখন আবার ছোট ছেলে কী পাগলামি শুরু করেছে? এই বয়সে নাকি ডিভোর্স দিবে? বিয়ে কী ছেলে খেলা নাকি? যদি ওদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে ওদের বাচ্চাগুলোর কী হবে? এসব ভেবে নিজেকে আর সামলাতে পারেন না জমিদার রাহাত খান চৌধুরী।
————-
হইহুল্লার কোন কমতি নেই বাড়িয়ে আনাচে-কানাচে। বিয়ে বলে কথা তাও আবার বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে হই হুল্লা তো সেই তুলনায় একটু বেশি হবে। নিঝুম কে পার্লারের অভিজ্ঞ লোকরা সাজিয়ে দিয়েছে। নিঝুম কে ওর কাজিনরা নিয়ে বিয়ের আসরে বসিয়েছে। ইধা রুহির পছন্দ করে দেওয়া লেহেঙ্গা পরে বিয়ের আসরে আসে। বিয়ের আসরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইধার সঙ্গে নীলা চৌধুরী দেখা হয়। তার সাথে আছে রিমি চৌধুরী। ইধা কে দেখে নীলা চৌধুরী হেসে দিয়ে বলল,
‘ দেখ রিমি আমাদের ইধা কে দেখতে কী সুন্দর লাগছে। লাইক এঞ্জেল।’
রিমি চৌধুরী ইধার চিবুকে হাত দিয়ে বলল,
‘ এটা তুমি ঠিক বলেছো আপু আমাদের ইধা এঞ্জেল থেকে কোন অংশে কম নয়। আমার মনে হচ্ছে কী জানো আপু? আজ আমাদের নিঝুমের না আমাদের ইধার বিয়ে।’
রিমি চৌধুরীর কথা নীলা চৌধুরী হেসে দেয়। ইধা রিমি চৌধুরীর কথা শুনে চোখ নামিয়ে লাজুক হাসে। এশা এসে ইধার হাত ধরে ওখান থেকে টেনে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ইধার সঙ্গে কিছু ভালো ফটোশুট করবে। বেশ নির্বিঘ্নে বিয়ে সম্পন্ন হয় নিঝুম আর জয়ের। নিঝুমের বরের নাম জয়। তারাও অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। বিদায়ের সময় নিঝুম কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল। বিয়ের এসব অনুষ্ঠানে শেষ করে ইধা বাগানে দাঁড়িয়ে তাজের সঙ্গে কথা বলছিল। তখন তুষার এসে ইধার পাশে দাঁড়ায়। ইধা তুষারের দিকে এক নজর তাকিয়ে তাজ কে বলল,
‘ এই যে বিচ্ছু তাজ আমি তোমার সঙ্গে আবার পরে কথা বলব। তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখো কে কী করছে?’
তাজ একগাল হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। তাজের ইধা কে ভালো লেগেছে। তাই তার সমস্ত কথা শুনতে তার কোনো আপত্তি নেই। তাজ চলে গেলে ইধা তাজের দিকে তাকিয়ে উৎসুক কণ্ঠে বলল,
‘ কী হয়েছে তুষার? তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? এনিথিং রং? ঠিক আছে তো সবকিছু?’
তুষার উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
‘ জমিদার রাহাত খান চৌধুরী হসপিটালে এডমিট আছে বর্তমানে। এই নিয়ে দুই বার তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। ডক্টর রা তাকে রেফার করেছে তিনি একটু সুস্থ হলে তাকে চেন্নাইতে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে। তার অসুস্থতার কারণ হিসেবে সবাই ধারণা করছে তার ছোট ছেলে তার সহধর্মিনী কে ডিভোর্স দিতে চাইছে এই নিয়ে রাগারাগি করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে খান চৌধুরী বাড়ির অবস্থা করুন। আমার লোকরা ভিতর থেকে খবর বের করেছে রাহাত খান চৌধুরী তার উকিল বন্ধুকে সম্পত্তির কাগজপত্র ঠিক করতে বলেছে, তার বিষয় সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা করে দিয়ে তিনি খান চৌধুরী বাড়ি থেকে চলে যাবেন। এই বিষয় নিয়ে তার বন্ধুর সঙ্গে ফোন আলাপ হয়েছে।’
ইধা তার দৃষ্টি মাটিতে রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
‘ এখন কেমন আছে তিনি?’
তুষার ছোট নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলল,
‘ এখন তিনি আগের থেকে ভালো আছেন।’
ইধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ তুমি আজকে কিংবা কালকের মধ্যে ফ্লাইট এর টিকিট বুক করে নাও আমরা ব্যাক করছি।’
এইটুকু বলে ইধা বাগান ছেড়ে চলে যায়। তুষার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ইধার কথা ফ্লাইট এর টিকিট বুক করতে চলে যায়।
————–
তাজ কে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে লাফালাফি করতে দেখে নিলাংশ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তুই এখানে একা একা বসে বাঁদরের মতো লাফালাফি করছিস কেন? বাড়ির সবাই কোথায়?’
তাজ লাফালাফি থামিয়ে নিলাংশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ নিঝুম আপু চলে গেছে বলে মামা মামির কান্না করছে তাই তাদের ঘরে বাড়ির অন্য সবাই আছে।’
নিলাংশ ড্রয়িংরুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ ইধা কী সেখানে?’
তাজ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ ঘটনা কী ভাইয়া তুমি হঠাৎ তার খোঁজ করছো?’
নিলাংশ কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
‘ এমনি, অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম না তাই জিজ্ঞেস করেছি।’
তাজ হেসে বলল,
‘ হুম বুঝি, বুঝি। সামথিং সামথিং।
তাজের কথা শুনে নিলাংশ ওর দিকে রাগি চোখে তাকালে, তাজ তা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।
চলবে….