তোমার নামে আমাকে ডাকো পর্ব-০৯

0
2705

#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-০৯|

ঘড়ির কাঁটায় কটা বাজে তা জানা নেই নিলাংশ নীর চৌধুরীর। আনুমানিক সময় বলছে অনেক রাত হয়েছে। এক প্রকার ঝড়ের গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করে চৌধুরী বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ায় নিলাংশ নীর চৌধুরীর গাড়ি। অস্থিরতার বসে একের পর এক কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে নিলাংশ। কে দরজা খুলে দিয়েছে তা না দেখে নিলাংশ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। বাড়ির সবাই হল রুমে বসে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। হয়তো তাজের জন্য। নিলাংশ সেদিকে নজর না দিয়ে বাড়ির সকলের দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল,

‘ যাক তোমরা সবাই এখানে আছো, ভালো হয়েছে। তোমাদের সঙ্গে আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।’

নিলাংশের মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কী কথা, আর তুই এমন করে হাফাচ্ছিস কেনো?’

নিলাংশ শ্বাস টেনে নিয়ে বলল,

‘ বলছি বলছি আগে আমাকে একটু শ্বাস করতে দাও।’

নিলাংশ জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

‘ ফুপি, নীরা আজ নিজে থেকে চৌধুরী বাড়িতে গেছে। আমার লোকরা একটু আগে খবর পেয়ে আমাকে জানিয়েছে।’

নিলাংশের কথা শুনে সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। উপস্থিত কম বেশি সবার চোখ ছল ছল করছে। নিলাংশের মা উত্তেজিত গলায় বলল,

‘ এখনো কী নীরা সেই বাড়িতে?’

নিলাংশ মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়। কয়েক মুহুর্ত থেমে নিলাংশ আবার বলল,

‘ ফুপি, তুমি জানো নীরা কে?’

ইশা অবাক চোখে নিলাংশের দিকে তাকালে তা দেখে নিলাংশ ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

‘ নিঝুমের বিয়েতে একজন সেলিব্রেটি এসেছিল না? তাজ আমার নামের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে মনগড়া কাহিনী তৈরি করেছে। সেই ইধা চৌধুরী হলো নীরা খান চৌধুরী।’

কথাটা শোনামাত্র পিনে পিনে নীরবতা বিরাজ করে রুমের মধ্যে। ইশা চৌধুরী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বসে পড়ে সোফার উপর। সবাই অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে নিলাংশের দিকে।

————-

বেশ অনেকক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে ইশা চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে সফল হয় ডাক্তারগণ। নিলাংশের কথাগুলো শোনা মাত্র জ্ঞান হারায় ইশা চৌধুরী। অতঃপর তাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইশা জ্ঞান ফেরার পর থেকে বিনা বাক্যে শূন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাড়ির লোকজন বর্তমানে ইশার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে ইশা তার উদ্দেশে কিছু বলে না। সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে হালিমা চৌধুরি গম্ভীর গলায় বলল,

‘ অনেক কথাবার্তা আলোচনা হয়েছে এবার আমি যা বলি তাই শোনো তোমরা সকলে, তৌফিক যে করে পারিস আমাদের এখানে নীরা কে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর, না হলে আমাদের নীরার ওখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর।’

তৌফিক চৌধুরী মিনমিনে গলায় বলল,

‘ মা এত বড় সেলিব্রেটি কী আমাদের ডাকে সাড়া দেবে? অন্যথায় আমরা সকলে যদি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট বুক করে রওনা দেই তখনো যে ইধা ওখানে থাকবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এখন আমি কি করি তুমি বলো মা!’

হালিমা চৌধুরি কঠোর গলায় বলল,

‘ সে যা হবে দেখা যাবে তুই আগে দেশে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট বুক কর। দিনের পর দিন চোখের সামনে নিজের মেয়েকে এইভাবে শেষ হয়ে যেত দেখতে পারবোনা আমি।’

এইটুকু বলে হালিমা চৌধুরি কিছুক্ষণ তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

—————–

ড্রইং রুমে আলিশান ডিভানের বসে ইধা আর রাহাত খান চৌধুরী এবং স্ত্রী কথাবার্তা বলছে। ইধা কথা বলার মাঝে দুই একবার তার বাবা রায়হান ঘরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল। ইমন খান চৌধুরী তখন থেকে হাঁসফাঁস করছে কখন তার ছোট্ট বোনটারে সঙ্গে যে কথা বলবে। বাড়ির সকলের দৃষ্টি এখন ইধা চৌধুরীর উপরে। ইধা কথা বলার মাঝে ওর দাদু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার তো দেখা পেয়েছো, এখন আর চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করবে না। তুমি এই ভেবে বসে থেকো না যে আমি দূরে থাকি বলে আমি কিছুই জানতে পারবো না, আমি দেশের বাইরে থেকে আমার গার্ড এর মাধ্যমে যা যা জানতে পারি তুমি তা বাড়িতে বসেও জানতে পারবে না।’

ইধার কথা শুনে মামুন খান চৌধুরী মৃদু স্বরে বলল,

‘ আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বলতো আমাদের বাড়ির লোকজনের পিছনে তুই কয়েকজন করে বডিগার্ড নিযুক্ত করেছিস?’

ইধা হালকা হেসে উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

‘ আমি শুধু আজকে রাতটা এই বাড়িতে থাকছি, কাল আবার ব্যাক করছি আমি।’

রাহাত খান চৌধুরীর স্ত্রী আশা খান চৌধুরী কথাটা শোনামাত্র কম্পিত গলায় বলল,

‘ মানে কী তুই আবার চলে যাবি? তাহলে ফিরে এসেছিলে কেন আমাদের কাছে?’

ইধা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ পরশুদিন আবার শুটিং আছে দাদিমা, তার জন্য আমাকে রাজস্থান যেতে হবে। আমি চাইলেও এখন তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারবো না। শুটিং এর মাঝে আমি একটা দিন কি করে বের করেছি তা শুধু আমি জানি। চেন্নাই শুট কমপ্লিট করে সোজা দেশের ফ্লাইটে উঠেছি শুধুমাত্র দাদুভাই আমাকে নিয়ে অহেতুক চিন্তার তার জন্য।’

ইধার কথা শুনে সবার মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। ইধা ওর দাদিমা কে হাসানোর জন্য বলল,

‘ কী হল তুমি এমন মন খারাপ করে আছো কেনো? আমি এতো বছর পরে বাড়িতে এলাম তুমি কোথায় তোমার আরো দাদুভাইয়ের ভালোবাসার গল্প গুলো বলবে তা না মন খারাপ করে বসে আছো।’

বাড়ি শুদ্ধ লোকের সামনে এমন কথায় আশা খান চৌধুরীর দুই গাল লজ্জায় রক্তিম আকাড় ধারন করে। তা দেখে ইধা মুচকি হাসে।

—————–

ইধা এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় নিজের ঘরের দরজার দিকে। আজ কত বছর পর ইধা তার নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইধা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে ইরা বলল,

‘ কী হয়েছে আপু দাঁড়িয়ে গেলে কেনো?’

ইধা ছোট নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ কিছু না, চলো।’

ইরা মৃদু স্বরে বলল,

‘ ছোটবেলায় তো তুই করে বলতে, তাহলে আজ এতগুলো বছর পরে তুমি কেনো?’

ইধা হেসে বলল,

‘ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে, সেই অর্থে আমি তোমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছি।’

ইরা ইধার কথায় হেসে দিয়ে বলল,

‘ তা তুমি ভুল কিছু বলনি।’

কথা বলতে বলতে ইধা দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করে। একমুঠো শীতল বাতাস ছুঁয়ে দেয় ইধার মন কে। ইধা চোখ বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত উপভোগ করে চোখ খুলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রুমের আনাচে-কানাচে পর্যবেক্ষণ করছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here