#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:38
#Suraiya_Aayat
বড় মামীর দাফনের কাজ শেষ হয়েছে, ওনাকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ বাড়ির মহিলারা বলতে গেলে সব একই জায়গায় ৷ নূরের শরীরটা ক্লান্ত লাগছে তবুও নূর গেল ওই বউটাকে খুজতে লাগলো ,এত ভিড়ের মানুষের মধ্যে বউটাকে কোথায় খুঁজে পাবে ও বুঝতে পারছে না ৷যেখানে এতখন সেই বউটা বসে ছিলো ওখানেও এ নেই ৷ এতো বড়ো বাড়িতে ঠিক কোথায় খুজবে ওনাকে বুঝতে পারছে না নূর ,তারপর হঠাৎ মাথায় এলো যে এখনো তো ওই ঘরটাতেই খোঁজা হলো না যেখানে বড়ো মামীকে রাখা হতো ,নূর একটু তাড়াতাড়ি সেদিকে গেলো যদি ওখানে থাকে ৷ রাত পেরোলেই সম্পত্তির ভাগ বাটোরা হওয়ার কথা,কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও এই কার্য পদ্ধতি চলবে কি নূর জানে না তবুও এই বাড়ির লোকেরা বড়ো মমীকে নিয়ে যতোটা উদাসীন ছিলো তাতে মনে হয় না যে এতে তাদের কোন যায় আসে,,বরং তারা হয়তো ভাববে যে তাদের ঘাড় থেকে একটা আপদ বিদায় হলো ৷ একমাত্র ছোট মামীকে ছাড়া আর ছোট মামীর বড়ো বউকে ছাড়া নূর কাউকে কাঁদতে দেখেনি ৷ নূর খানিকটা দৌড়েই সেখানে গেলো ৷ শরীরের আপাতত অবস্থা কি তার কোন খেয়াল করছে না এখন ৷ রাত এখন 9টা মতো বাজে ৷ নূর দৌড়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো সেই ঘরে ৷ আচমকায় দরজাটা খুলে ঘরে ঢোকায় ঘরের মধ্যে থাকা মেয়েটা চমকে উঠলো ৷ নূর সেখানে মেয়েটা কে দেখে আকাশের চাঁদ খুজে পেলো যেন ৷ মেয়েটা একপ্রকার চমকে উঠলো, মেয়েটা কিছু এটা করছিলো আর তখনই নূর এলো কিন্তু সে কি করছিলো তা নূর বুঝতে পারেনি ৷ নূরকে দেখে মেয়েটি বলল
” তুমি এখানে ! কি করছো তুমি এখানে ? যাও এখান থেকে ৷”
মেয়েটার গলর আওয়াজ আর চোখ মুখের অবস্থা দেখে নূর ভয় পেলো কিন্তু ভয় পেলে যে চলবেনা তাই সাহস নিয়ে বলল
” আমি জানি বড়ো মামী কি রে মারা গেছেন আর কিভাবে খুন হয়েছেন তাও জানি ৷”
মেয়েটা এবার পাগলের মতো করে বলল
” তুমি কি করে জানলে? আর হঠাৎ এই কথা বলছো, তোমার উদ্দেশ্য কি?”
নূর অন্য দিনের মতো ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেল না, বেশ সাহসের সাথেই বলল
” হ্যাঁ অবশ্যই আমার উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু আমি বলবো একটা শর্তে ৷”
উনি অবাক হয়ে বললেন
” আমার জানতাম তোমার কোন স্বার্থ আছে ৷”
নূর ঢোক গিলে বললো
” হমম ৷”
কতটা শোনা মাত্রই মেয়েটা হো হো করে হেসে উঠলো তারপর বলল
” কি প্রিয়ন্তি মুস্তফাকে খুঁজতে এসেছো বুঝি ?”
নূর কথাটা শুনে চমকে গেল ,ভয়ে আর তার কথা বলার ধরনে খানিকটা পিছিয়ে গেল, মেয়েটার চাহনিটা অদ্ভুত লাগছে নূরের কাছে তবুও সাহস নিয়ে বলল
” হমম, ঠিক ধরেছো তুমি, আমি ওনাকেই খুজতে এসেছি ৷ কোথায় উনি ?”
উনি তখন ঘর কাঁপানো একটা হাসি দিয়ে বললেন
” তুমি জানো আমি কে?”
ওনার বলার ধরন দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল তারপর বলল
” কে আপনি?”
” আমি এই বাড়ির বড়ো বউ, যে মারা গেছেন তার বড়ো ছেলের বড়ো বউ, কিন্তু এই বাড়িতে আমার কোন পরিচিতিই নেই, কেন জানো ?”
নূর চমকে গেল ওনার কথা শুনে তারপর বলল
” কেন?”
উনি এবার বলতে শুরু করলেন
” শুধু মাত্র আমার শাশুড়ি মায়ের জন্য ৷”
নূর বুঝতে পারছে না কিছুই তাই অবুঝের মতো বলল
” মানে কি বলছেন বুঝতে পারছি না ৷”
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন
” কথা বলার ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে না যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারোনা ৷ প্রিয়ন্তি মুস্তাফাকে খুঁজতে এসেছো আর এটা প্রমান করছো যে কিছু জানো না,হস্যকর না বিষয়টা ?”
নূর অবাক হয়ে বলল
” আমি সত্যিই কিছু জানি না, কাইনডলি যদি বুঝিয়ে বলেন ৷”
উনি এবার নূরের মুখের দিকে বেশ কিছুখন চাওয়া চাইয়ি করে বলল
” তুমি সত্যিই কিছু জানো না?”
নূর মাথা নাড়ালো ৷
উনি এবার বলতে শুরু করলেন
” আমার শশুড়ি তিনি বেশ কয়েক বছর আগে তোমার শ্বশুর তেহেরাতের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয় ,তা একদিন জানা জানি হয় যে দিন এই বাড়ির ছোট মেয়ে পালিয়ে যায় সেদিন,তারপর থেকে অনেক মানসিক অত্যাচার করা হতো আমার শাশুড়িকে, আমার শ্বসুর তার প্রতি বিমুখ হলেন,দূরে সরিয়ে দিলেন তাকে, এরপর অনেকগুলো বিয়ে করেন যেটা উনি সহ্য করতে না পেরে দিনদিন মনসিক চাপে পড়েন তারপর হঠাৎ একদিন ভীষন রকম অসুস্থ হয়ে যান তিনি, বেশ পাগলের মতো আচরন করেন ,যখন
এই বাড়ির নতুন বউরা কথাটা জানতে পারলে তার দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি এই বাড়ির বউ হয়ে আসি তারপর, আমার সাথে ওরা কাজের লোকের মতো ব্যাবহার করতো , এদিকে আসল কারনটা আমি জানতাম না তারপর একদিন আমার স্বামী সবটা আমাকে বলেন আর তারপর আমি ওনার দেখাশোনা করি ৷”
কথাটা বলে থেমে যেতেই নূর থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,এগুলো কি শুনছে ও ৷ এখন সবটা ওর কাছে জলের মতো পরিষ্কার , তারমানে আয়াশের বলা কথাগুলো ঠিক,,রাজকুমারী আর কেউ না ওর শাশুড়ি মানে আয়াশের মা , নূর শিউরে উঠলো ৷ নিজের শ্বশুরের প্রতি রাগ টা ও হলো তীব্র ৷তবুও নিজেকে সামলে বলল
” তাহলে আপনি প্রিয়ন্তি মুস্তফার খোঁজ পেলেন কিভাবে ?”
কথাটা শুনে উনি বললেন
” বাহ রে আমি জানবো না ? আমার স্বামীই তো এতকাল ওনার দেখাশোনা করে আসছে, তাকে অন্ধ অবধি করে দেওয়া হয়েছে ৷ প্রায় কয়েক বছর হয়ে গেল তার হিসাব নেই যে ওনার সাথে আমার কথা পাশাপাশি বসে কথা হয়না, চোখে চোখ রেখে বলতে পারিনা ভালোবাসি ৷ প্রথমে তো বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন আর পারবো না, শুধু মাত্র এই বাড়িতে অধিকার পাওয়ার লোভ দেখিয়ে ওরা আমাদেরকে দিয়ে এতো কিছু করিয়েছে, এতদিন সহ্য করেছি কিন্তু এখন আর না, ওরা আমাকেও বাঁচতে দেবে না, একে একে আমাদের সবাইকে শেষ করে দেবে আর আমি তা হতে দেবো না , তাই আমি তোমাকে প্রিয়ন্তি মুস্তফার কাছে পৌছে দেবো , কারন এরপর ওরা ওনাকে আর আমার স্বামীকে শেষ করে দেবে ,,আমি সব হারিয়েছি আর নিজের স্বামীকে হারাতে পারবো না ৷ তাই তাড়াতাড়ি চলো আর বেশিখন সময় নেই আমাদের হাতে ৷”
নূর এতকিছু শুনে অবাক হলো, হচ্ছে কি এগুলো,,কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসছে, এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ মুখোশধারী ৷ নূর কাঁপা কন্ঠে বলল
” কোথায় পাবো ওনাকে ?”
বউটা বললো আমার সাথে এসো ৷ নূর চুপ করে রইলো ৷ হঠাৎ করে বউটা মাটিতে বসে পড়ে বিছানা পেতে রাখা মাদুড় আর তোষকটা সরিয়ে দিলো, সরিয়ে দিতেই সেই জায়গাটা জুড়ে কাঠের একটা ঢাকনা মতো দেখতে পেলো,তারপর মেয়েটা তার কোমর থেকে একটা চাবি খুলে সেই ঢাকনাটা খুলতেই দেখতে পেলো সেখান থেকে আলোর ছটা বেরিয়ে আসছে ৷ নূর দু কদম পিছিয়ে গেল, এতো কিছু ?
তারপর ওই মেয়েটা নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” আসো আমার সাথে…”
কথাটা বলে উনি নামতে লাগলো ,নূর সেই সূড়ঙ্গের দিকে তাকালো,কতো সিঁড়ি সেখানে, আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বালানো আছে ৷ মেয়েটা কি তাড়াতাড়ি নামছে আর নূর ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে নামছে ৷ হঠাৎ সিঁড়িটা একটা জায়গায় এসে শেষ হতেই দেখলো একটা বিরাট জায়গা আর তার মাঝে জেলের মতো লোহা দিয়ে ঘেরা অঞ্চল,সেখানে বসে আছেন সেই রাজকুমারী যার গল্প নূর এতদিন শুনেছে আর আজ তাকে প্রথম দেখছে ৷চেহারার সেই জৌলুস আর নেই, মুখে বলিরেখা,,চোখের নীচে কালি বিধ্বস্ত অবস্থা ৷তার পাশে একটা লোক বসে আছে তার হাত ধরে সেই বউ টা কাঁদছে ৷ নূরের গলা ধরে এলো , সবকিছু মিলে মিশে একটা আবেগঘন মুহূর্ত ৷নুর প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে, উনিও নূরের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে আছে ক্ষীন হাসি ৷ নূর ধীর পায়ে এগোলো তার দিকে ,নূরকে এগোতে দেখে উনিও উঠে দাঁড়ালেন, লোহার বেডি গুলো ধরে আছেন,গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না ৷ হঠাৎ বউটা তার স্বামীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলল
” ফুপি এটা আপনার বৌমা,,আয়াশের বউ ৷”
ওনার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, হাত দিয়ে মুছে নিলেন,,কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না ৷ নূরের চোখ দিয়েও আবেগে জল গড়ালো ৷ হঠাৎই কারোর পায়ের খটখট আওয়াজ শুনে ওরা সবাই ভয় পেয়ে গেল ৷ বউটা ভয় পেয়ে বলল
” খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে, আসার আগে দরজাটা দিয়ে আসা হয়নি ,তাহলে আমরা কি ধরা খেয়ে গেলাম ?”
ওরা সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেল, হঠাৎ সিঁড়ি বেয়ে গটগট করে নেমে এলো আয়াশ ৷ আয়াশকে দেখে ওরা চমকে গেল ৷ বহু বছর পর নিজের ছেলেকে দেখে উনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন অপর দিকে আয়াশের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে ৷ এই প্রথম নূর আয়াশকে কাঁদতে দেখলো ৷
#চলবে,,,