অনুভবে তুমি পর্ব-৩৮

0
2460

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সকালবেলা নেহা আসলো ইভানদের বাসায়।নেহাকে বেশ অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিলো।নেহাকে দেখামাত্র অতশী দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো কেমন আছিস? অনেকদিন পর তাদের দেখা হওয়ায় অতশী বেশ খুশি!কিন্তু নেহা একটুও খুশি হলো না।সে একটা কার্ড বের করে অতশীর হাতে দিলো।অতশী কার্ড টা হাতে নিতেই চমকে উঠলো!এটা তো নেহার বিয়ের কার্ড। অতশী তখন বললো, বিয়ে?তুই বিয়ে করছিস?নেহা সেই কথা শুনে অতশীর দিকে তাকিয়ে বললো ইভান ভাইয়া কে নিয়ে বিয়ে তে আসিস।এই বলেই সে চলে গেলো।অতশী তখন নেহার হাত টেনে ধরে বললো,কই যাচ্ছিস?আর কিছুক্ষন থাক।চল রুমে গিয়ে কথা বলি।
–না সময় নেই আমার।বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না।অনেক রিকুয়েষ্ট করে আদনান(যার সাথে নেহার বিয়ে ঠিক হইছে) কে সাথে নিয়ে বের হয়েছি।সেজন্য তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
–কই সে আদনান?
–বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।এই বলেই নেহা আবার চলে গেলো।অতশী আবার আটকালো নেহাকে।সে নেহার হাত ধরে বললো, তুই কি জন্য আদনান কে বিয়ে করছিস?তুই কি ওকে নিজে চয়েজ করেছিস?
নেহা কোনো উত্তর দিলো না।অতশী তখন বললো,দেখ এরকম হুট করে বিয়ে টা করিস না।আর কিছুদিন অপেক্ষা কর?
নেহা সেই কথা শুনে বললো, কার জন্য অপেক্ষা করবো?তাছাড়া বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় করছি না।বাবা মা ঠিক করেছে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো, তুই এতো তাড়াতাড়ি শুভ্র কে ভুলে গেলি?
নেহা আর একটা কথাও বললো না।ইভানদের বাসা থেকে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো।
অতশী বিয়ের কার্ড টা নিয়ে তার রুমে চলে গেলো। সে ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।অতশী বুঝতে পারলো না তার কি করা উচিত এখন?অতশী সেজন্য ইভান কে ফোন দিলো।কিন্তু ইভান ফোন রিসিভ করলো না।সেজন্য অতশী ইভান কে মেসেজ দিলো যেনো ইভান আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে।তার সাথে জরুরি কথা আছে।
এদিকে মৌরি নেহাকে চলে যেতে দেখে অতশীর কাছে এলো।আর জিজ্ঞেস করলো নেহা কেনো এসেছিলো ভাবি?আর এসেই চলে গেলো কেনো?অতশী তখন বললো নেহার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সেটা বলার জন্যই এসেছিলো।
— নেহা এতো অধৈর্য্য!এতো সহজে শুভ্রকে ভুলে গেলো।আর কিছুদিন অপেক্ষা করলে কি হতো?হায়রে ভালোবাসা!
মৌরির কথা শুনে অতশী বেশ অবাক হলো।সে ভাবতে লাগলো মৌরি হঠাৎ এভাবে বললো কেনো?সেজন্য অতশী বললো,নেহা শুভ্রর জন্য কেনো অপেক্ষা করবে?তাছাড়া মৃত মানুষের জন্য অপেক্ষা করে কি লাভ?শুভ্র তো আর ফিরে আসবে না।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, ভাবি তুমিও নেহার এই সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করছো?ওকে বারণ করো প্লিজ।এই বিয়ে টা করে নেহা মোটেও শান্তি পাবে না।তিনটা জীবন নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাবে।
–তিনটা জীবন?ভাবি কি বলছো এসব?এক, নেহা,দুই যদি আদনান হয়, তাহলে তিন নম্বর জন কে?
মৌরি কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছিলো না।মৌরি কে চুপচাপ থাকা দেখে অতশী বললো,ভাবি চুপ হয়ে গেলে কেনো?উত্তর দাও।
মৌরি তখন বললো,শুভ্র কিছুদিন হলো মারা গিয়েছে।আর তার মধ্যেই নেহা অন্য আরেকজন কে বিয়ে করছে।এটা কিন্তু ভালোবাসার অপমান।সেজন্য বললাম।
অতশী মৌরির কথা শুনে বললো, ভাবি তুমি আমার থেকে এতো বড় একটা সত্য লুকিয়ে রাখবে আমি ভাবতেও পারি নি।
মৌরি অতশীর কথা শুনে চমকে উঠলো।কোন সত্য কথা?
—অয়ন ভাইয়া আর শুভ্র দুইজনই বেঁচে আছে।আর তুমি সেটা আগে থেকেই জানো।
–কি বলছো এসব?ওরা যে বেঁচে আছে তুমি সেটা জানলে কিভাবে?
–জানি।কারণ সেদিন পার্কে ইভানের সাথে আমি ওদের দুইজনকেও দেখেছি।তুমি যতই আমাকে তাড়াতাড়ি করে পার্ক থেকে নিয়ে আসো না কেনো আমি তবুও দেখেছি ওদের।আর ওদের এভাবে হঠাৎ দেখেই আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।
মৌরি তখন দৌঁড়ে এসে অতশীর মুখ টিপে ধরলো আর বললো চুপ করো।কাউকে বলো না এ কথা।ভাইয়া শুনলে ভীষণ রেগে যাবে।ভাববে আমি বলেছি সবাইকে।আমাকে টেনশনে থাকতে দেখে আর সারাদিন কান্নাকাটি করা দেখে ভাইয়া আমাকে সত্যি টা বলেছে।
অতশী তখন মৌরির হাত ধরে বললো ভাবী নেহার বিয়ের কথাটা তাহলে তুমিই বলিও।প্লিজ ভাবি?ভাইয়াকে একটু রিকুয়েষ্ট করিও,যদি সে বিয়েটা আটকাতে পারে তাহলে খুব ভালো হতো।কারণ নেহা অনেক বেশি ভালোবাসে শুভ্রকে।হয়তো পরিবারের চাপে এ বিয়েতে রাজি হয়েছে।
মৌরি আর অতশী কথা বলতেই ইভান প্রবেশ করলো রুমে।শরীর টা ভীষণ ক্লান্ত তার সেজন্য বাসায় এসেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আর অতশীকে বললো তার জন্য যেনো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে।অতশী সেই কথা শুনে পানি আনতে গেলো।
মৌরি ইভানের কাছে এগিয়ে এসে বললো ভাইয়া তুমি কি এখন রেস্ট নেবে?দরকারি কিছু কথা ছিলো।
–হুম।তুই যা এখন।পরে শুনছি।
ইভানের কথা শুনে মৌরি বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
এদিকে অতশী ঠান্ডা পানি নিয়ে রুমে আসলো।এসে দেখে ইভান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। অতশী তখন ইভানের পাশে গিয়ে বসলো, আর বললো আপনার ঠান্ডা পানি?ইভান অতশীর কথা যেনো শুনতেই পেলো না।কারণ সে বিছানায় শুইতেই তার দু চোখে ঘুম নেমে এসেছে।সারারাত জেগে ছিলো এখন সেজন্য সারাদিন রেস্ট নিতে চায়।
হঠাৎ ইভানের ফোনে কল আসলো।ইভান সাথে সাথে জেগে উঠলো।আর ফোন রিসিভ করেই বললো,পেয়েছো?
–হ্যাঁ স্যার?
–আচ্ছা আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি।
–স্যার আপনি না হয় রেস্ট নিন।
–না,না।সমস্যা নাই।একটু অপেক্ষা করো যাচ্ছি আমি।
ইভান ফোন রাখতেই অতশী জিজ্ঞেস করলো কে ফোন দিয়েছে?
–শুভ্র।
অতশী শুভ্রর নাম শুনে বললো, শুভ্র না দিশান?কি বলছেন এসব?
–ও,সরি সরি।দিশান ফোন দিয়েছে।এতোদিন শুভ্রকে দিয়েই সব কাজ করাতাম তো এজন্য শুধু ওর নাম টাই মুখে আসে।
অতশী তখন পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললো,এই ধরেন আপনার ঠান্ডা পানি।
ইভান গ্লাস টা হাতে নিলে অতশী জিজ্ঞেস করলো আপনার জন্য কি খাবার আনবো?
–না খাবো না এখন।এই বলে ইভান পানি পান করলো।
অতশী তখন বললো আপনি রাতে কখন চলে গেছেন?আমাকে একটিবার বলে গেলে কি হতো?
–তুমি ঘুমাচ্ছিলে এজন্য ডাকি নি।
অতশী হঠাৎ নেহার বিয়ের কার্ড টা বের করে ইভানের হাতে দিলো।আর বললো,নেহার বিয়ের কার্ড এটা।আমাদের যেতে বলেছে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, আমার তো সময় হবে না।মৌরি কে সাথে করে নিয়ে যেও।
অতশী তখন ইভানের কাছে গিয়ে বললো,আপনি কি নেহাকে চিনতে পেরেছেন?
–হ্যাঁ।তোমার বান্ধুবী না?
–বান্ধুবী ছাড়াও আরো একটা পরিচয় আছে ওর।
–হ্যাঁ শুনেছি।শুভ্রর সাথে রিলেশন ছিলো।
ইভান খুব সহজেই কথা গুলো বললো।সে একটুও আশ্চর্য হলো না।বা একবারের জন্য বললো না যে নেহাকে এ বিয়ে করতে বারণ করো।অতশী নিজেও আর বাড়তি কথা জিজ্ঞেস করলো না।কারণ ইভান এতে সন্দেহ করবে।
অতশীকে চুপচাপ থাকা দেখে ইভান অতশীকে এক ঝটকায় বিছানায় বসালো।এবং তার কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।অতশীকে চুপচাপ থাকা দেখে ইভান বললো কি ভাবছো এতো?
–কই কি?কিছু না।
–মিথ্যে বলছো। আমি জানি কি ভাবছো তুমি?
–কি ভাবছি?
ইভান সেই কথা শুনে অতশীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো, আর কিছুদিন অপেক্ষা করো ডিয়ার।তোমাকে নিয়ে পুরো দুইমাসের ছুটি কাটাবো।এই দুই মাসে কোনো ডিউটি নাই।শুধু তুমি আর আমি।বলো কই যাবা?তোমার পছন্দমতো জায়গায় যাবো।একদম অনেক দূরে হারিয়ে যাবো আমার এই পাগলী বউটাকে নিয়ে।
এই বলে ইভান হাত দিয়ে অতশীর পুরো শরীর স্পর্শ করতে লাগলো। অতশী ইভানের স্পর্শ পেয়ে একদম দূর্বল হয়ে গেলো।
অতশী সেজন্য হঠাৎ ইভানের হাত ধরে বললো আপনার না কোথায় যাওয়ার কথা।কখন যাবেন?
–এই তো যাবো এখন।কয়েক মিনিট একটু রেস্ট নেই।
অতশী সেই কথা শুনে ইভানের কোল থেকে উঠলো।আর বললো, তাহলে শুয়ে পড়ুন।আমি যাই এখন।
–এই কই যাও?এই বলে ইভান আবার টেনে নিলো অতশীকে।আর কোনো কথা না বলেই অতশীর ঠোঁটে কিস করতে লাগলো।অতশী এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে বোকার মতো চুপ হয়ে থাকলো।এদিকে ইভান কিছুতেই ছাড়ছে না অতশীকে।ইভান নিজেও যেনো অজানা এক রাজ্যে হারিয়ে গেছে।

হঠাৎ রুমে মৌরি প্রবেশ করলো। সে তার ভাই ভাবীর এমন দৃশ্য দেখে ভীষণ লজ্জা পেলো।আর তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।এদিকে দিশান কে গেস্ট রুমে বসিয়ে রেখেছে মৌরি।
দিশান যখন দেখলো ইভান এখনো আসছে না সে নিজেই উঠে এলো ইভানের রুমের দিকে।
দিশান কে আসা দেখে মৌরি বললো, ভাইয়া কই যাচ্ছেন ওদিকে?
–খুব এমারজেন্সি কথা আছে স্যারের সাথে।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো,আপনার স্যার এখন অন্য কাজে ব্যস্ত।আপনি গেস্ট রুমেই বসুন।
–মানে? কি কাজে ব্যস্ত?আমাকে তো নিজেই আসতে বললেন।
–ও আপনি বুঝবেন না।আচ্ছা ভাইয়া একটা সত্যি কথা বলবেন?
–কি কথা?
আপনারা যে দিন রাত এতো খাটেন আপনাদের কি বিরক্ত লাগে না।ইচ্ছা হয় না এরকম কষ্টের চাকরি ছেড়ে দিতে?
–না,অভ্যাস হয়ে গেছে।প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো,এখন মানিয়ে নিয়েছি।এই বলে দিশান আবার ইভানের রুমে ঢুকতে ধরলো।মৌরি তা দেখে দিশানের হাত টেনে ধরে একটু দূরে নিয়ে গেলো।আর বললো,আপনি আবার ভাইয়াকে বিরক্ত করছেন?বললাম না ভাইয়া এখন ব্যস্ত আছে।দিশান সেই কথা শুনে বললো,তুমি বুঝতে কেনো পারছো না খুব এমারজেন্সি কথা আছে স্যারের সাথে।আমার আসার কথা শুনলে স্যার কিন্তু খুশিই হবেন।

দিশান আর মৌরি কথা বলতেই হঠাৎ ইভান নিজেই আসলো বাহিরে।কারন ইভান মৌরি আর দিশানের কথাবার্তা শুনতে পেরেছে তার রুম থেকে।দিশান কে দেখামাত্র ইভান বললো,কখন এসেছো?আমাকে ডাকো নি কেনো?
–অনেকক্ষন এসেছি স্যার।আপনি নাকি ব্যস্ত।এজন্য মৌরি আমাকে গেস্ট রুমে বসিয়ে রেখেছে।
ইভান দিশানের কথা শুনে মৌরির দিকে তাকাতেই মৌরি সেখান থেকে চলে গেলো।ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।সে আবার কখন ব্যস্ত ছিলো!
দিশান ইভান কে এরকম দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো স্যার তাড়াতাড়ি চলুন।দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।ইভান আর দেরী না করে দিশানের সাথে চলে গেলো।

সারাদিন আর বাসায় ফিরলো না ইভান।কিন্তু রাতের বেলা অতশীকে মেসেজ দিলো সে যেনো আজ মৌরির রুমেই থাকে।কারণ সে আজ আর বাসায় ফিরবে না।ইভানের মেসেজ দেখে অতশী সাথে সাথে কল দিলো ইভান কে।ইভান ও সাথে কল রিসিভ করলো।সে কল রিসিভ করেই বললো,ব্যস্ত আছি আমি।পরে কথা বলছি।অতশী সেই কথা শুনে বললো প্লিজ ফোন রাখবেন না।শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।
–তাড়াতাড়ি বলো।
–আমি মৌরির রুমে কেনো থাকবো?আমি আমার রুমেই থাকবো।
–একা একা ভয় লাগবে তোমার।যা বলছি সেটাই করো।এই বলে ইভান কল কেটে দিলো।
কিন্তু অতশী ইভানের কথা শুনেও মৌরির রুমে গেলো না।সে ইভানের রুমেই থাকলো।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিলো না তার।এজন্য অতশী ইভানের ডায়রি টা বের করে পড়তে লাগলো।তাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো পড়লো আর একা একাই হাসতে লাগলো। এভাবে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেলো অতশী কিছুতেই টের পেলো না।পুরো বাসা একদম নীরব।কারণ বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।অতশীর এতোক্ষনে একটু চোখ লাগিয়ে এলো।সেজন্য সে শোয়ার জন্য তার বেডে চলে গেলো।হঠাৎ সে তার দরজার কাছে একটা আওয়াজ শুনতে পেলো।অতশী তা শুনে ভীষণ ভয় পেলো।সেজন্য সে গায়ে মাথায় কাঁথা দিয়ে থাকলো।তখন অতশী বুদ্ধি করে মৌরি কে ফোন দিলো।মৌরি যদিও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তবুও রিং শুনে ঘুম ঘুম কন্ঠে ফোন রিসিভ করলো।
অতশী তখন বললো, মৌরি তুমি প্লিজ একটু তোমার ভাইয়ার রুমে আসবে একটু?আমার না ভয় করছে ভীষণ।
–কেনো ভাইয়া আসে নি?
–না আসে নি।আমাকে একা একা থাকতে বারণ করেছিলো তবুও এই রুমেই শুয়েছি।এখন তো ভয় লাগছে ভীষণ। প্লিজ আসো একটু।
মৌরি সেই কথা শুনে বিছানা থেকে উঠে এলো।এবং দরজার ছিটকিনি খুললো।কিন্তু যেই দরজা খুলতে যাবে দরজা আর খুলতে পারলো না।মৌরি তখন জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো।সে ভাবলো ভুল করে কেউ হয় তো লাগিয়ে দিয়েছে।সেজন্য অতশীকে ফোন করে বললো অতশী তুমি একটু নিজেই এসো।আমি যেতে পারছি না বাহিরে।কেউ একজন বাহির দিক থেকে ভুল করে দরজা লক করে রেখেছে।অতশী মৌরির কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে এলো।এবং তার দরজার ছিটকিনি খুললো।মৌরির মতো সেও দরজা খুলতে পারলো না।কারণ তারও দরজা বাহির দিক থেকে লক করা।অতশী মুহুর্তের মধ্যে শকড খেয়ে গেলো।সে বুঝতে পারছে না এরকম কে করছে?সেদিন না হয় ইভানের বাবার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিলো।সেজন্য সবার দরজা লক করেছে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে।কিন্তু আজও কেনো সবার দরজা এভাবে লক করলেন?ব্যাপার টা সুবিধার মনে হলো না অতশীর।কারণ ইভান যেদিন যেদিন রাতে বাসায় থাকে না সেদিন সেদিন এভাবে সবার দরজা বাহির দিক থেকে লক করে ইভানের বাবা মিটিং করে।কেমন যেনো আশ্চর্যের বিষয় মনে হলো অতশীর।অতশী সেজন্য ইভান কে ফোন দিলো।ইভান ফোন রিসিভ করতেই অতশী বললো আপনি কি এখন একটু বাসায় আসতে পারবেন?
–কেনো?
–দরকার আছে।
–আমি বিজি আছি এখন।
অতশী সেই কথা শুনে বললো আপনি সারাক্ষণ বাহিরে কি নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকেন?বাসার খবর রাখেন কিছু?
–মানে?কি বলছো এসব?
–আজকেও বাহির দিক থেকে লক করা সবার দরজা।বাবা প্রতিদিন এই টাইমে কিসের মিটিং করে?
ইভান অতশীর কথা শুনে দিলো এক ধমক আর বললো তুমি কি বলতে চাচ্ছো অতশী?আর তুমি হঠাৎ বাবার পিছনে লেগেছো কেনো?
অতশী সেই কথা শুনে রাগ করে ফোন রেখে দিলো।কারণ ইভান অতশীর কথার কোনো গুরুত্বই দিলো না।এদিকে ইভান অতশীকে আবার কল দিলো।কিন্তু অতশী ফোন রিসিভ করলো না।সেজন্য ইভান আবার কল দিলো।অতশী এবারও রিসিভ করলো না।ইভান তখন তাদের বাসার কেয়ারটেকার কে ফোন দিলো আর জিজ্ঞেস করলো তাদের বাসায় কেউ এসেছে কিনা?
কেয়ারটেকার সেই কথা শুনে বললো না তো।কেউ তো আসে নি স্যার।কেনো জিজ্ঞেস করছেন স্যার?
–না এমনি।আমি আজ রাতে বাসায় আসবো না তো সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম কেউ আমার খোঁজে এসেছে কিনা?
–ও,,না স্যার আসে নি।
ইভান সেই কথা শুনে সাথে সাথে কল কেটে দিলো।আর তাড়াতাড়ি করে বাসার দিকে রওনা দিলো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here