#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৪১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
কি ব্যাপার অতশী ম্যাডাম?এতো চিন্তিত কেনো?আমাকে দেখে কি খুশি হও নি? এই বলে ইভান অতশীকে তার কাছে টেনে নিলো।অতশী সাথে সাথে ইভানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।আর বললো,আপনার প্লান টা কি সত্যি করে বলবেন একটু?আপনাকে একটুও চিন্তিত দেখা যাচ্ছে না,বেশ খুশি খুশি লাগছে।মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি।কিন্তু হাতে যে সময় নেই আপনার সে খেয়াল আছে?একমাস সময় কিন্তু চোখের পলকে শেষ হয়ে যাবে। ইভান সেই কথা শুনে আবার অতশীকে টেনে নিলো তার কাছে আর বললো,এসব বিষয় নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।আমার ব্যাপার আমাকেই ভাবতে দাও।এখন বউ এর সাথে কিছুক্ষন সময় কাটাবো,সুতরাং এখন কোনো কথা হবে না।এই বলে ইভান অতশীকে আদর করতে লাগলো।আর একের পর এক কিস করতে লাগলো।
অতশী ইভানের এমন পাগলামি দেখে বললো, আপনি কিন্তু এখনো জানেন না যে আসল অপরাধী কে? আপনি তো সেই থেকে আহসানের পিছনে পড়ে আছেন।আসল অপরাধী কিন্তু অন্য কেউ।প্লিজ ইভান একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
ইভান এবার একটু বিরক্ত হলো।সে অতশীকে ছেড়ে দিয়ে বললো, কি বোঝার চেষ্টা করবো?
আর কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
অতশী সেই কথা শুনে ইভানকে বিছানায় বসিয়ে রাখলো।তারপর হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে ইভানের হাত ধরে বললো, আমাকে বিশ্বাস করেন ইভান?
–হ্যাঁ।
–আমি যে আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি সেটা বুঝতে পারেন?
–হ্যাঁ,তা হঠাৎ একথাগুলো কেনো বলছো?
অতশী সেই কথা শুনে নিজেও ইভানের পাশে গিয়ে বসলো আর ইভানকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি আপনাকে হারাতে চাই না ইভান।আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার জীবনটা একদম নষ্ট হয়ে যাবে।আমি একদম শেষ হয়ে যাবো।ইভান অতশীর কথা শুনে ওর মুখ টা উপরে তুলে বললো,কি হয়েছে তোমার?এতো কেনো চিন্তা করছো?কিছুই হবে না আমার।শুধু সময়ের অপেক্ষা।ইনশাআল্লাহ কিছুদিনের মধ্যেই সবাইকে ধরে ফেলবো।
অতশী সেই কথা শুনে ইভানের হাত ধরে বললো,প্রবলেম টা তো এই জায়গাতেই।আপনি আসল অপরাধী কে এখনো চিহ্নিত করতে পারেন নি?এখন যাদের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা ব্যতীত আরো অনেকেই আছে যারা আপনার ক্ষতি চায়।আপনাকে চিরতরে শেষ করতে চায়।
–কার কথা বলছো তুমি?
অতশী তখন বললো,আমি এখন যে যে প্রশ্ন করবো আপনি শুধু সেগুলোর যথাযথ উত্তর দেবেন তাহলেই বুঝতে পারবেন ব্যাপারটা।
–কি প্রশ্ন?
অতশী তখন বললো,আপনি আহসান কে সন্ত্রাসীদের লিডার ভাবেন,কিন্তু একবার ভেবে দেখেন আহসানের বয়স কত?আপনাদের সমবয়সী সে।এই অল্প বয়সে কোনো মানুষ কি করে এতো বড় একটা গ্যাং কে পরিচালনা করতে পারে?সে তো আর জন্মের পর থেকেই সন্ত্রাসী হয় নি?
ইভান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,বাহঃ দারুন তো।পাগলীটার তো যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।সি আই ডি অফিসারের সাথে থাকতে থাকতে দেখি তুমিও সি আই ডি দের মতো ভাবতে শুরু করেছো?
অতশী ইভানের কথা শুনে রাগ দেখিয়ে বললো,আপনি হাসবেন না প্লিজ।আমি কিন্তু হাসির কথা বলছি না।যা বললাম দয়া করে তার উত্তর দিন।
ইভান তখন বললো,আমি কখন বললাম আহসানই সন্ত্রাসীদের লিডার?হ্যাঁ এটা ঠিক যে আগে সবাই ওকেই গ্যাং দলের লিডার ভাবতাম।কিন্তু এখন আমরা বুঝে গেছি আহসান কে অন্য আরেকজন পরিচালনা করে।সেজন্যই তো ওদের ধরতে এতো লেট হচ্ছে।আমরা তো ইচ্ছা করলে আহসান কে যেকোন মুহুর্তে ধরতে পারতাম।কিন্তু পরে যখন জানতে পারলাম আহসান নিজেও জানে না তার লিডার কে?কে তাকে পরিচালনা করে? তখন আমরা একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
অতশী সেই কথা শুনে বললো আপনি যখন বুঝতেই পেরেছেন আহসান ব্যতীত অন্য আরেকজন আছে তাহলে তাকে খুঁজছেন না কেনো?
–খুঁজছি তো।আমরা রাতদিন তো তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি।কিন্তু সেই লোক এমন ভাবে সব কাজ করছে যার কোনো প্রমাণ নাই।সেজন্য তাকে ধরার জন্য নতুন কিছু আইডিয়া বের করেছি।দেখি এবার কি হয়?
অতশী ইভানের কথা শুনে মুখ ভেংচিয়ে বললো,পারবেন না ধরতে তাকে।সেজন্য এসব আইডিয়া কোনো কাজেই লাগবে না আপনার।আপনাকে সারাজীবন এর জন্য আবার জেলে থাকতে হবে।
–মানে?কি বলছো এসব?কেনো পারবো না।ইভান পারে না এমন কোনো কাজ নেই।এরকম বহু অপরাধী কে ধরেছি।মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকলেও ধরবো তাকে।
–কিন্তু এবার পারবেন না।কারন অপরাধী আপনার আশেপাশেই ঘুরছে,সেজন্য তাকে ধরা তো দূরের কথা তাকে সন্দেহ করতেও কষ্ট হচ্ছে আপনার।
ইভান অতশীর কথা শুনে অনেক বেশি অবাক হলো।সে এখনো বুঝতে পারছে না অতশী আসলে কার কথা বলছে?
ইভান তখন বললো,তুমি কার কথা বলছো অতশী?প্লিজ ক্লিয়ার করে বলবে একটু?
–আমি যদি এখন তার কথা বলি আপনি কিছুতেই বিশ্বাস করবেন না।সেজন্য এখন আরেকটা প্রশ্ন করবো?
ইভান এবার অতশীর কথাগুলোয় বেশ মনোযোগ দিলো।
অতশী তখন বললো, আপনার রুমের দরজায় তালা লাগানো ছিলো।কিন্তু সেই তালা খুলে কেউ একজন আপনার ফাইল চুরি করে নিয়ে গেলো।কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি চোর এই চাবি কোথায় পেলো?নিশ্চয় তার কাছে অন্য আরেকটা চাবি আছে।
–এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।নকল চাবি তৈরি করা যায়।চোর হয় তো নকল চাবি তৈরি করেছে।
–হ্যাঁ করেছে।কিন্তু তাকে তো আগে আপনার তালা টা ভালো করে দেখতে হবে তারপর সেটা দেখে চাবি বানাতে হবে?
–হ্যাঁ।তা তো ঠিকই।চোর যেভাবে ফাইল চুরি করেছে ঠিক সেভাবেই তালার ছাপ নিয়ে গেছে।
অতশী তখন বললো, হ্যাঁ এটাই বলতে চাচ্ছি আমি।কিন্তু আমার কথা হলো চোর টা বাসায় ঢুকলো কেমন করে?বাসার গেট না ভেঙ্গে চোর কি করে ভিতরে প্রবেশ করলো?নিশ্চয় বাসার কেউ একজন খুলে দিয়েছিলো।সেজন্য সে সহজেই ঢুকতে পেরেছে বাসায়।
ইভান তখন বললো আমি এটাও জানি।আমাদের বাসার ভিতরে কেউ একজন জড়িত আছে এর সাথে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো তাহলে এখন আসল কথায় আসি।প্লিজ মনোযোগ দিয়ে শুনবেন তারপর আপনার বক্তব্য পেশ করবেন।আমার কথার মাঝে দয়া করে কথা বলবেন না।আমার কথা যদি বিশ্বাস করেন তাহলে বিষয় টা নিয়ে দয়া করে ভাববেন।কারণ আমি চাই না আপনার কোনো ক্ষতি হোক।আমি সবসময় আপনার ভালো চাই।কারন আপনার জীবনের সাথে আমার জীবন জড়িত।
ইভান অতশীর কথা শুনে তার কাছে চলে গেলো।আর অনেক বেশি কৌতুহল নিয়ে অতশীর কথা শুনতে লাগলো।
অতশী তখন বললো, যেদিন চোরটা ফাইল নিয়ে পালাচ্ছিলো আমি স্পষ্ট দেখেছে সে কোনো বাধা ছাড়াই বাসা থেকে বের হয়েছে।আপনাদের বাসার কেয়ারটেকার লতিফ আংকেল কোনো চিল্লাচিল্লি করেন নি।তারমানে চোরটিকে লতিফ আংকেল নিজেই গেট দিয়ে বের করে দিয়েছেন।কারণ আপনি তো নিজেও জানেন আপনাদের বাসার প্রাচির টপকানো সম্ভব না।চারপাশে বিল্ডিং।চোর কখনোই প্রাচীর টপকিয়ে বাহিরে যেতে পারবে না।
–তুমি কি লতিফ আংকেল কে সন্দেহ করছো অতশী?তুমি কি জানো উনি কতটা বিশ্বস্ত?আমার বাবার সাথে ওনার কত টা আন্ডারস্ট্যান্ডিং? সেই শুরুর থেকে উনি আমাদের বাসা পাহারা দিচ্ছে।।এ বাসা তো কিছুদিন আগে তৈরি হয়েছে।এর আগে আমরা যে বাসায় ছিলাম সেখানেও উনিই পাহারা দিতেন।
অতশী ইভানের কথা শুনে বললো,ইভান বললাম তো আগে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।তারপর এসব বক্তব্য দিয়েন।প্লিজ ইভান।এই বলে অতশী আবার হাতজোড় করলো।
–ওকে বলো।
অতশী আবার বলা শুরু করলো।
চোরটির গায়ে যে হুডি ছিলো সেটা আমি স্পষ্ট দেখেছি সেদিন।আর আপনার বাবা যে দুইজন লোকের সাথে সেদিন রাতে বৈঠক করেছেন তার মধ্যে একজন সেম হুডি পরা ছিলো।
ইভান অতশীর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো ওর দিকে।
অতশী তা দেখে বললো প্লিজ ইভান বিশ্বাস করুন।আমি নিজের চোখে দেখেছি।আমি ওদের পিছু পিছু ধাওয়া করি তখন দেখতে পাই সবার রুমের দরজা লক করা।শুধু মাত্র আপনার রুম ব্যতীত।কারণ অপরাধী ভেবেছে আপনার রুমে কেউ নেই।কারন আপনি বাসায় ছিলেন না।রুমে যে আমি ছিলাম সেটা তিনি জানেন না।এদিকে আপনার বাবা গেস্ট রুমের দরজা লক করে ওদের সাথে আলাপ আলোচনা করছেন।আমি সেখানে চুপি চুপি গেলে হঠাৎ আমার ফোনে রিং বেজে ওঠে। সেই রিং এর শব্দ শুনে আপনার বাবা সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে আসেন।কিন্তু আমি তার আগেই আপনার রুমে ঢুকি।উনি ভেবেছেন আপনি এসেছেন সেজন্য আপনার নাম ধরে ডাকতে থাকেন।আমি আর কোনো উপাই না দেখে বলি যে বাবা ইভান নাই,আমি আছি রুমে।
ইভান অতশীর কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারলো অতশী তার বাবাকে সন্দেহ করছে।কিন্তু এটা অসম্ভব ব্যাপার।তার বাবা কি করে এতো বড় একজন সন্ত্রাসী হতে পারে?আর সবচেয়ে বড় কথা তার নিজেরই বাবা কি করে সন্তানের এতোবড় ক্ষতি করতে চাইবে?ইভান কোনো কথা না বলে চুপচাপ থাকলো।
অতশী তখন আবার ইভানের হাত দুটি শক্ত করে ধরলো আর বললো আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এটা আমি ভালো করেই জানি।কিন্তু একবার ভাবুন আপনি বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর পরই বাবা রোজ রোজ কিসের বৈঠক করেন?বিশ্বাস করেন,সেদিন চোরটি বাসা থেকে বের হতেই আপনার বাবা রুম থেকে বের হন।তাহলে এটা তো ক্লিয়ার যে বাসায় শুধুমাত্র উনিই জেগে আছেন,আর কেউ জেগে নাই।আমি ওনাকে চোরটির কথা বললাম কিন্তু উনি সেদিকে গুরুত্বই দিলেন না।
ইভান অতশীর কথা শুনে বললো, অতশী তুমি শুধু শুধু বাবাকে সন্দেহ করছো?এটা কিন্ত ঠিক করছো না তুমি? একবার ভেবে দেখেছো বাবা শুনলে কি ভাববেন?কত টা মন খারাপ করবেন?
অতশীর এবার ভীষণ রাগ হলো।সে একটা ধমক দিয়ে বললো প্লিজ ইভান কথার মাঝখানে কথা বলবেন না।আগে বিষয় টা ভালো করে বুঝুন।বাবা সেদিন গুরুত্ব দিলো না চোরটিকে এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো।আমি সেদিন আর কিছু মনে করলাম না।কিন্ত তার পরের দিন যখন আবার উনি সবাইকে নিয়ে বৈঠক করলেন,আবার সবার ঘরের দরজা লক করলেন। আপনাকে আমি সেজন্য ফোন করে ডাকলাম আপনি বাসায় এসে কাউকেই দেখতে পেলেন না।এমনকি কারো ঘরের দরজাও লক ছিলো না।তাহলে কে আবার খুলে দিলো সবার দরজা?আর সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের কথা লতিফ আংকেল নিজে বলেছে কেউ আসে নি বাসায়।অথচ বাবা সেদিন বৈঠক করেছেন।উনি কেনো মিথ্যা কথা বললেন?
ইভান অতশীর কথা এবার পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলো।কিন্তু তার বাবাকে সে কি করে সন্দেহ করবে?যে বাবাকে সারাজীবন সৎ পথে চলতে দেখেছে এবং তাদেরকেও সবসময় সৎ পথে চলার পরামর্শ দিতেন।আজ সেই বাবার আদর্শ অনুসরন করেই সে একজন ন্যায়বান অফিসার হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।তার বাবা কি করে অপরাধী হতে পারে?
অতশী আবার হাতজোড় করলো ইভানকে।ইভান প্লিজ বিষয় টা নিয়ে ভাবুন।ভালো করে একটু খোঁজ নিন।আমি মৌরিকেও বলেছি কথাটা।সেও বিশ্বাস করে নি?
ইভান মৌরির কথা শুনে ভীষণ রাগ হলো।সে অতশীর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো তুমি ওকে বলতে গেলে কেনো?ও যদি বলে দেয় বাবাকে।তখন তো বাবা তোমার উপর ভীষন মন খারাপ করবে।
–ওকে বলার একটা কারণ আছে।কারণ আপনি মৌরিকে একটা সিক্রেট কথা বলেছিলেন সে তার বাবাকে সেটাও বলে দিয়েছে।সেজন্য মৌরিকে সাবধান করেছি আর কোনো গোপন কথা যেনো বাবাকে না বলে।
–কোন সিক্রেট কথা?
–শুভ্র আর অয়ন ভাইয়া যে বেঁচে আছে তা শুধুমাত্র আপনারা জানতেন।আর মৌরি জানতো।তা সত্ত্বেও আকরাম কিভাবে শুভ্র আর অয়ন কে খুঁজে পেলো?তার একটাই কারণ মৌরি কথা টা বলে দিয়েছে আপনার বাবাকে।তারপর আপনার বাবা হয়তো ওদের খবর দিয়েছে।এরপরেও কি বিশ্বাস করবেন না আপনি?
ইভান আর অতশী কথা বলতেই হঠাৎ মুহিব সাহেব রুমে ঢুকলেন।ইভান আর অতশী মুহিব সাহেব কে দেখামাত্র দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।
ইভান আর অতশীকে এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে উনি বললেন,এভাবে কি দেখছো তোমরা?
–কই কি?এই বলে ইভান তার বাবার কাছে এগিয়ে গেলো।আর অতশী ওড়না টা মাথায় দিয়ে একটু সরে দাঁড়ালো।
মুহিব সাহেব তখন বললেন, অসময়ে রুমে ঢোকার জন্য সরি।আমি আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম।একটু গেস্ট রুমে আসবে তুমি?
–হ্যাঁ।চলো বাবা।এই বলে ইভান আগে আগে চলে গেলো।কিন্তু ইভানের বাবা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেন রুমে।আর অতশীর দিকে কেমন যেনো তাকিয়ে রইলেন।অতশী ইভানের বাবার দিকে তাকাতেই ভয়ে নিচ মুখ হলো।কারণ ইভানের বাবার চোখে মুখে সে অন্যরকম এক রাগী লুক দেখতে পেলো।কেমন যেনো হিংস্র পশুদের ন্যায় তাকিয়ে আছে।অতশীর ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো।তবুও সে জিজ্ঞেস করলো, বাবা কিছু বলবেন?
ইভানের বাবা কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।অতশী বুঝতে পারলো ইভানের বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে ফেলেছে।তা না হলে আজ এভাবে তাকালেন কেনো?ইভান কে বলা দরকার কথা টা।কিন্তু তার আগেই তো তার বাবা তাকে নিয়ে গেলো।রুমে কখন আসবে কে জানে?
এদিকে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে মুহিব সাহেব ইভানকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতে লাগলেন।এই এক মাসের মধ্যে কিভাবে সে সকল অপরাধী কে ধরতে পারবে?আর ইভান নিজে কি কি পরিকল্পনা করেছে?
ইভানের কোনো মনোযোগ ই নেই তার বাবার কথায়।সে শুধু অতশীর কথাগুলো ভাবছে।অতশীর কথাগুলোই যদি সত্যি হয় তাহলে সে কি করে এর বিচার করবে?আর কি করেই বা তার বাবাকে ধরবে?আর কি করেই বা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে?
–কি হলো ইভান?আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি?
মুহিব সাহেবের ধমক শুনে ইভানের হুঁশ ফিরে এলো।সে তখন বললো,ও হ্যাঁ।বলেন বাবা।
–তোমার মনোযোগ কোন দিকে আছে?তুমি কি অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ভাবছো?
–না বাবা।এমনিতেই টেনশন হচ্ছে।ভাবছি কি করে একমাসের মধ্যে আসল সত্য টা বের করবো?
–কোনো চিন্তা করো না বাবা।আমি আছি না?বাবাকে বিশ্বাস করো তো?
ইভান সেই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। সে কি উত্তর দেবে এখন?
মুহিব সাহেব নিজেই তখন বললেন,বাবা ইভান আমি কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি অতশী আমাকে ফলো করছে।আমি বুঝতে পারছি না কিছু।সে হঠাৎ আমার পিছু পড়লো কেনো। ব্যাপার টা কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে।
ইভান তার বাবার কথা শুনে একদম চমকে উঠলো।বাবা তাহলে সব শুনে ফেলেছে?
ইভানকে চুপচাপ থাকা দেখে মুহিব সাহেব বললেন, তুমি তো জানো আমি একজন নামকরা উকিল।আমার কাছে দিনরাতে অনেক লোক আসে।তো কিছুদিন ধরে আমি দিনে একদম ব্যস্ত থাকায় রাতের দিকে এসব ব্যাপারে আলোচনা করি।কিন্তু অতশী কেনো জানি আঁড়ি পেতে থাকে।আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করে।সেজন্য আমি অতশীর সাথে কথা বলার জন্য রুম থেকে বের হলে তাকে আর খুঁজে পাই না।সে তাড়াতাড়ি করে আবার লুকিয়ে পড়ে।এসব কি ইভান?আমি বুঝতে পারছি না আমার বাসায় এসব কি চলছে?আবার মাঝে মাঝে সে চিৎকার দিয়ে উঠছে কে ওখানে কে ওখানে?কেউ একজন নাকি বাসা থেকে বের হলো।নিশ্চয় অতশীর মাথায় কোনো প্রবলেম আছে।তা না হলে সে কেনো এসব আবোলতাবোল বকছে?
তুমিই বলো চারপাশে উঁচু প্রাচীর। আর তোমার লতিফ আংকেলের মতো এতো সাহসী আর ন্যায়বান কেয়ার টেকার থাকতে কে ঢুকবে বাসায়?
ইভান এই সুযোগে বলেই ফেললো,তাহলে বাবা আমার ফাইল চুরি হলো কিভাবে?এতো কড়া ব্যবস্থার মধ্যে কে করলো এই কাজটা?আহসানের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ কত কষ্ট করে যোগাড় করলাম সেগুলো কিভাবে উধাও হলো আমার রুম থেকে?
–তোমার রুমে কি আমরা কেউ যাই?তাছাড়া তুমি তো রুমে সবসময় তালা দিয়ে রাখো।তাহলে কিভাবে ফাইল চুরি হতে পারে?হয় তো তুমিই ভুলে অন্য জায়গায় রেখেছো।সেজন্য মনে করতে পারছো না।
–এটা কি করে সম্ভব বাবা?আমি তো নিজের হাতে ফাইলটা রেখেছিলাম আলমারির ভিতরে।অন্য খানে কেনো রাখতে যাবো?
–সেটা বলতে পারলাম না।তুমি ভালো করে খুঁজে দেখো তাহলেই পাবে।।
ইভান আর কোনো প্রশ্ন করলো না।কিন্তু মুহিব সাহেব বললেন,আমার এখন একটা মিটিং আছে।কিছু লোক আসবে এখন।তুমি এখন যেতে পারো তোমার রুমে।
–এতো রাতে মিটিং?
–বললাম না সময় পাই না দিনে।এজন্য রাতেই ডাকি সবাইকে।
ইভান আর তার বাবা কথা বলতেই দুইজন লোক প্রবেশ করলো গেস্ট রুমে।তারা রুমে ঢুকেই সালাম দিলো মুহিব সাহেব কে।আর কিছু ফাইল বের করে মুহিব সাহেবের সামনে রাখলো।
এদিকে অতশী ইভান কে কল দিতেই আছে দিতেই আছে।ইভান ফোন রিসিভ করতেই অতশী বললো,আপনি কোথায় আছেন এখন?তাড়াতাড়ি আপনাদের গেস্ট রুমে যান।কারণ আজও সে সেই হুডি পড়া লোকটিকে গেস্টরুমে ঢুকতে দেখলাম।ইভান সেই কথা শুনে বললো আমি এখনো গেস্টরুমেই বসে আছি।আর হুডি পড়া যাকে দেখেছো তিনি বাবার একজন চেনাপরিচিত লোক।এবার একটু এসব ভুলভাল বকা বন্ধ করো অতশী।আর আমি এ ব্যাপারে কিছু শুনতে চাই না।এই বলে ইভান ফোন রেখে দিলো।
ইভান গেস্টরুমেই বসে থাকলো।আর তার বাবা ইভানের সামনেই তার ক্লাইন্টের সাথে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো।ইভান যখন নিজের কানে সবার কথা শুনলো সে আর কিছুতেই অতশীকে বিশ্বাস করতে পারলো না।ইভান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইভান তার রুমে গিয়েই রেডি হতে লাগলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো অতশীর কথা শুনে আজ কত বড় ভুল করতে ধরেছিলো সে।বাবা নিশ্চয় ভীষণ রাগ করেছে আমার উপর।ইভান এসব ভাবতেই অতশী তার কাছে এসে বললো, আপনি এতো রাতে আবার কই যাচ্ছেন?ইভান কোনো উত্তর দিলো না।অতশী তখন বললো কি হলো আপনার?উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?
ইভান তখন বললো,বাহিরে কাজ আছে আমার।এই বলে ইভান অতশীর কপালে একটা কিস করলো আর বললো গুড বাই।আমাকে এক্ষুনি যেতে হচ্ছে।
অতশী তখন ইভান কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।আপনার বাবা নিশ্চয় আপনাকে বোকা বানানোর জন্য আবার ওদের ডেকেছে।নিশ্চয় সব আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, এবার থামো অতশী।আমি আর শুনতে চাই না এসব।এই বলে ইভান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
অতশী ইভানের কথা শুনে নিজেও কনফিউজড হয়ে গেলো। সে কি তাহলে ভুল পথেই এগোচ্ছে?
অতশী ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।সে হঠাৎ খেয়াল করলো ইভানের বাবা লোকগুলো কে নিয়ে বাহিরে বের হচ্ছে।অতশী তা দেখে নিজেও পিছু নিলো।কারণ তার প্রমাণ দরকার।ইভান প্রমাণ ছাড়া কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।একটা প্রমাণ পেয়ে গেলেই মুহিব সাহেবের মুখোশ খুলে দিতে পারবে সে।
#চলবে,