#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-৪”
‘আপনি ভেতরে আসুন’
মৃধাকে কথাটা বলল ম্যানেজার সাহেব আবার নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন। মৃধা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। এখনো তিনজন তার আগে সিরিয়ালে আছে। তাদের ছেড়ে তাকে আগে ডাকার কারণটা সে ঠিক বুঝতে পারছে না। হয়তো তার পোশাক দেখে আগে থেকেই তাকে নট করে দিবে। এখানে যারা এসেছে তারা সবাই পরিপাটি গেট আপে আছে। সবার গায়ে বেশ দামি পোশাক শুধুমাত্র মৃধার পরনে পুরাতন নরমাল থ্রি-পিস। মৃধা মাথা নিচু করে কেবিনের সামনে গিয়ে দাড়াল। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,
-মে আই কাম ইন, স্যার?
ভেতর থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
-ইয়েস,কাম ইন
ভেতরে প্রবেশ করতেই মৃধা চমকে উঠল। কারণ আয়ান হাতে কফির মগ ধরে ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা টেনে তারদিকে চেয়ে আছে। মৃধা এতক্ষণে বুঝে গেছে তাকে আগে ডাকার কারণ টা। সে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় আদ্র পাশ থেকে বলে উঠল,
-টেক ইউর সিট
মৃধা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আদ্রের কথায় সম্মতি জানিয়ে চেয়ার টেনে ওদের সামনে বসে পরল।
তারপর আয়ান মৃধার থেকে তার সকল ইনফরমেশন চাইল। মৃধা ফাইল থেকে সমস্ত কাগজপত্র বের করে আয়ানের কাছে দিল। মৃধা বুঝে গেছে আয়ান তাকে কোনোদিনও চাকরি দিবে না। এখন নিশ্চয়ই তাকে অপমান করে বের করে দিবে। কিন্তু মৃধাকে অবাক করে দিয়ে ইন্টারভিউ শেষে খবর এলো মৃধার জবটা কনফার্ম। মৃধা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না এতো এতো স্মার্ট, সুন্দরীদের মাঝে থেকে সে চান্স পেয়ে গেল। মৃধা খুব খুশি আজ। কিছুক্ষণ বাদেই মৃধার হাতে ম্যানেজার এসে অগ্রীম এক মাসের স্যালারি দিয়ে গেল। মৃধা অনেকটা অবাক হয়ে বলল,
-অগ্রীম স্যালারি কেন? এখানে এটাই নিয়ম নাকি?
-নাহ, এখানে এই প্রথম এমন হচ্ছে। ছোট স্যার বললেন এটা আপনাকে দিতে তাই দিলাম।
-ছোট স্যার….?
-হুম, আয়ান চৌধুরী
-ওহ আচ্ছা
ম্যানেজার চলে যেতেই মৃধা খুশি মনে আয়ানের কাছে গেল। সে খুব বিনয়ের সঙ্গে আয়ানকে ধন্যবাদ জানাল কিন্তু আয়ান তার উত্তরে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-এতে এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। সবটাই করেছি দয়া করে। সেদিন ঔষধ নষ্ট করার ক্ষতিপূরণ এটা।
মৃধার মুখটা সাথে সাথে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আয়ানের দিকে তাকিয়ে সে বলল,
-হুম ভুলটা আমারই। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল আপনি কেমন ধরনের মানুষ। আপনার থেকে দয়া ছাড়া আর কিছু আশা করাও যায় না।
-আপনার হয়তো জব টার কোনো দরকার নেই। এ্যাম আই রাইট মিস মৃধা মেহরিন।
আয়ানের কথায় মৃধা ভয় পেয়ে গেল। জব টা তার ভীষণ প্রয়োজন। এই জব টা হারালে আর জব পেতে খবর আছে। তার থেকে বরং চুপ থাকাই ভালো। আয়ান মৃধার ভয়ার্ত মুখ দেখে বাঁকা হেসে বলল,
-ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন। কাল থেকে সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছে যাবেন
-জ্বী স্যার অবশ্যই
মৃধা চুপচাপ অফিস থেকে বেড়িয়ে গেল। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মৃধা মনে মনে ভাবল,
– যত অপমানই হোক করুক না কেন আমাকে সবকিছু সহ্য করে যেতে হবে। মা, ভাইকে ভালো রাখতে একটু কষ্ট তো করতেই হবে।
——————————
বাড়িতে এসে মৃধা ওর মাকে সালাম করল। মৃধার মা অবাক হয়ে বললেন,
-কী হয়েছে মা হঠাৎ সালাম করছিস কেন?
মৃধা খুশি মনে বলল,
-আমি একটা চাকরি পেয়েছি মা। বিশ হাজার টাকা বেতন। তারা আমাকে অগ্রীম দিয়েছে এক মাসের বেতন।
-আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাহলে মুখ তুলে চেয়েছেন আমাদের দিকে। তা কীসের চাকরি?
-একটা কোম্পানিতে স্টাফ এর চাকরি।
-ইনশাল্লাহ সবকিছু ভালো হবে
ওদের কথা বলার মাঝে মুগ্ধ এসে বলল,
-কী নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে?
-দেখ না মুগ্ধ তোর আপু একটা চাকরি পেয়েছে। খুব ভালো চাকরি। বিশ হাজার টাকা বেতন।
-সত্যি বলছ মা। তাহলে তো আপুর কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে এবার। কনগ্রাজুলেশন আপুনি
-থ্যাংকিউ ভাই
সবাই কথাবার্তার শেষ করে নিজেদের কাজে চলে গেল।
এদিকে অফিস শেষ করে আয়ান ছুটল ক্লাবের পথে। সে একা নয় সঙ্গে ন্যায়রাও আছে। ন্যায়রা হলো আয়ানের পি.এ.+বেস্টফ্রেন্ড । আয়ান আর ন্যায়রা কলেজ লাইফ থেকেই সবসময় একসঙ্গে থাকে। তারপর যখন ওদের পড়াশোনা শেষ হয়ে যায় তখন ন্যায়রা আয়ানের সঙ্গে থাকার জন্য ওদের অফিসে পি.এ এর পোস্টে জয়েন করে। এতে অবশ্য আয়ানের অনেক সুবিধা হয়েছে। কারণ ন্যায়রা নিজের মতো করে পুরো অফিসটা সামলায়। আয়ানকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু ন্যায়রার চালচলন দেখে আফরোজ চৌধুরী তাকে ভীষণ অপছন্দ করেন। বিশেষ করে ন্যায়রার পোশাকে তার বেশি আপত্তি। কারণ ন্যায়রা সবসময় হাটুর ওপর অব্দি পোশাক পরিধান করে। ন্যায়রা আয়ানের বেস্টফ্রেন্ড হলেও অফিসে বসে সবসময় আয়ানকে স্যার বলেই সম্বোধন করতে হয় নয়তো আয়ান খুব রেগে যায়।
আয়ান আর ন্যায়রা ক্লাবে পৌঁছে গেল সন্ধ্যা নাগাদ।আজকে তাদের এক ফ্রেন্ডের বার্থডে তাই পার্টি এটেন্ড করেছে। অন্যকোনো দিন হলে সারাদিনের কর্মক্ষেত্রের ক্লান্তি দুর করতে আসে তারা। ক্লাবে ঢুকতেই আরও চার পাঁচটা বন্ধুরা এসে ওদেরকে ঘিরে ধরল। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলল,
-কী রে তোরা এত লেট করলি কেন?
আয়ান বলল,
-আর বলিস না রে দোস্ত আজকে অফিসে একটু কাজের চাপ বেশি ছিল তাই লেট হলো
-ওহ আচ্ছা তাহলে চল চল সবাই পার্টি অলরেডি শুরু হয়ে গেছে
-হ্যাঁ হ্যাঁ, লেট’স গো গাইস
পার্টিতে ডিজে ডান্স চলছে। যেমনটা পার্টিতে হয় আরকি। সবাই কাপল ডান্স করছে শুধু আয়ান বসে বসে ড্রিংক করছে। আয়ানের ড্রিংকিং-এর মাঝেই ন্যায়রা এসে তাকে টানতে লাগল তার সঙ্গে ডান্স করার জন্য। আয়ান ইচ্ছে না থাকা সত্বেও ন্যায়রার জোড়াজুড়িতে তার সঙ্গে নাচতে যেতে বাধ্য হয়। এখন আর কেউ বাদ নেই। সবাই কাপল ডান্স করছে। ডান্স করতে করতে হঠাৎ আয়ান কেমন অন্য জগতে হারিয়ে যেতে লাগল। আজ সে একটু বেশিই ড্রিংক করে ফেলেছে যার নেশা আসতে আসতে চড়াও হচ্ছে। আয়ান ধীরে ধীরে ন্যায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর মুখ গুজে দিল ন্যায়রার গলায়। আয়ানের এমন বিহেভে ন্যায়রা একটু ঘাবড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আয়ান ন্যায়রার ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা দুরে ছিটকে সরে গেল। ন্যায়রা বেশ বুঝতে পারছে আয়ান নিজের মধ্যে নেই তাই এমন করেছে। নয়তো হুঁশে থাকলে আয়ান ন্যায়রার হাত ধরাকেও অপছন্দ করে জড়িয়ে ধরা তো দুর। পার্টিতে সবাই কম বেশি নেশাগ্রস্ত তাই কেউই ওদের দিকে তেমন মনোযোগ দেই নি। ন্যায়রাও ড্রিংক করেছে কিন্তু সেটা পরিমিত। পরিস্থিতি বুঝে ন্যায়রা আয়ানকে নিয়ে পার্টি থেকে বেড়িয়ে এলো। আয়ান এখন আর কিছুই বলছে না শুধু নেশায় টলছে। ন্যায়রা আয়ানকে কোনমতে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল। আয়ান বেহুশের মতো গাড়িতে পড়ে আছে। ন্যায়রার আজ বেশ অস্বস্তি হচ্ছে আয়ানের সঙ্গে থাকতে। এই প্রথম আয়ান তাকে এইভাবে টাচ করল। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে তার মধ্যে। এমনিতে শুরু থেকেই আয়ানের ওপর সে একটু দুর্বল তবুও বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে কোনোদিন নিজের এমন চিন্তাধারাকে প্রশয় দেয়নি।
চলবে,