#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-৬”
সকাল সকাল খুব ব্যস্ত হয়ে পরেছে মৃধা। আজকে অফিসে প্রথম দিন তাই কোনো ভাবেই লেট করা চলবে না। মৃধা তাড়াতাড়ি করে সবকিছু করছে। মুগ্ধও তৈরি হচ্ছে কলেজের জন্য। আজ থেকে তার ফাইনাল এক্সাম শুরু হচ্ছে। দু -ভাই বোন চটজলদি গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পরল গন্তব্যে। মুগ্ধ একাই চলে গেল কলেজে। আর মৃধাও একটা রিকশা নিয়ে চলে গেল অফিসে।
প্রথমদিন অফিসে কাজের জন্য এসেছে মৃধা।অনুভূতি টাই অন্যরকম। আমাদের জীবনে প্রথম ঘটা সবকিছুই অন্যরকম হয়ে থাকে। মৃধার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই হয়েছে। কিছুটা ভয়,কিছুটা উত্তেজনা, কিছুটা টেনশন নিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসল মৃধা। ম্যানেজার সাহেব এসে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। ম্যানেজার লোকটাকে মৃধার কাছে বেশ ভালোই মনে হলো। মধ্য বয়স্ক লোকটির মাঝে নিজের বাবার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করেছে সে।
কেবিনে বসে আপন মনে কাজ করে চলেছে মৃধা।প্রথমে একটু বুঝতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে সবটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে সে। মৃধা বেশ মনোযোগের সহিত কাজটা করছে। অনেকটা তাড়াতাড়িই মৃধার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। সে ফাইলগুলোতে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর সেগুলো নিয়ে চলে গেল আদ্রের কেবিনে। উদ্দেশ্য ফাইলগুলোতে আদ্রের সাইন করানো। দরজায় নক করে ভেতরে প্রবেশ করল মৃধা। আদ্র মৃধাকে দেখে বলল,
–তুমি তো নিউ তাই না? আচ্ছা দেখি ফাইলগুলো দাও তো। কেমন কাজ করেছ দেখি।
–জ্বী স্যার এই নিন
আদ্র ফাইলগুলো চেক করে পুরোই অবাক হয়ে গেল। সে মৃধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— ওহ মাই গড, তুমি তো দারুণ কাজ করেছ। প্রথম দিনেই এতো ভালো কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
–ধন্যবাদ স্যার
–ইউ আর ওয়েলকাম
—————————-
এদিকে রোদের আলো চোখে পড়তেই চোখ মেলে তাকালো আয়ান। মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসল সে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে আশেপাশের পরিবেশ দেখে সে এক লাফ দিয়ে উঠল। এটা তো ন্যায়রার বাড়ি তাহলে সে এখানে কী করছে? নানারকম প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সে চিৎকার করে ন্যায়রাকে ডাকতে লাগল। ন্যায়রা তখন কফি নিয়ে ওপরেই আসছিল আয়ানের জন্য। আয়ানের ডাক শুনে ন্যায়রা জোর পায়ে হেঁটে আয়ানের কাছে এসে বলল,
–কী হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছিস কেন?
–আরে আমি এখানে কী করে এলাম? এটা তো তোর বেডরুম, তাহলে?
–ওহ এই ব্যাপার। তাহলে শোন…..
তারপর ন্যায়রা আয়ানকে গত রাতের সমস্ত ঘটনা বলল। সব শুনে আয়ান ভীষণ আফসোস করতে লাগল। কারণ তার দাদুভাইকে সে এবার কী বলে বোঝাবে? তার দাদুভাই তো এবার তাকে কোনো মতেই ক্ষমা করবে না। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে। আয়ান তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে গেল। আর ন্যায়রা কফির মগটা রেখে সেও চলে গেল তৈরি হতে। দু’জনে একসঙ্গে অফিসে যাবে।
ন্যায়রা আয়ানকে গতরাতের সব ঘটনা বললেও আয়ান যে তার অনেকটা কাছে এসেছিল এই ঘটনা বেমালুম চেপে গেছে। কিন্তু নিজের মন থেকে কিছুতেই দুর করতে পারছে না। কল্পরাজ্যে বারংবার এসে হানা দিচ্ছে সেই দৃশ্য।
————————-
অফিসে পৌঁছে ন্যায়রা আর আয়ান আদ্রের কেবিনে চলে গেল। সেখানে গিয়ে তারা আদ্রকে ম্যানেজ করতে চেষ্টা করল। ন্যায়রাকে আদ্রের বিশেষ পছন্দ না হলেও অপছন্দ নয়। ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে টুকটাক কথা বলে আরকি। আদ্রের মৌনতা দেখে আয়ান চিন্তিত মুখ নিয়ে অনুরোধের স্বরে বলল,
— ভাইয়া, ও ভাইয়া, এই শেষ বারের মতো দাদুভাইকে একটু ম্যানেজ করে দাও না প্লিজ। প্লিজ ভাইয়া।
আদ্র বিরক্তির সুর টেনে বলল,
— এবার দাদুভাইকে ম্যানেজ করা একদমই ইম্পসিবল। আর আমি চাইও না তাকে ম্যানেজ করতে। তোকে আশকারা দিতে দিতে মাথায় চড়ে গেছিস। এখন শাসনের বড্ড প্রয়োজন আছে তোর। আর সেটা একমাত্র দাদুভাই ই পারবে।
আদ্রের কথার মধ্যে ন্যায়রা বলে উঠল,
— প্লিজ ভাইয়া বোঝার চেষ্টা করুন। কাল রাতে যা হয়েছে সেটা ইচ্ছাকৃত ন……
ন্যায়রাকে থামিয়ে দিয়ে আদ্র বলল,
— তুমি চুপ কর। আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি এখানে থার্ড পারসনের উপস্থিতি কাম্য নয়।
ন্যায়রা মাথা নিচু করে আদ্রকে সরি বলল কিন্তু আয়ান আদ্রের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
— ভাইয়া প্লিজ ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর আমার ব্যাপারে বলার সম্পূর্ণ রাইট আছে। তুমি ওকে এভাবে বলতে পারো না।
–আচ্ছা, তাহলে এবার তোর কাছ থেকে আমার কথার রাইট সাইড /রং সাইড শিখতে হবে?
— আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি।
–থাক আর বলতে হবে না। তুমি এবার তোমার কেবিনে যাও আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
–ভাইয়া প্লিজ রাগ কোরো না। আমি আসলে….
–যেতে বলেছি
আয়ান হতাশ হয়ে আদ্রের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল। আদ্রের রাগ সম্পর্কে সে অবগত তাই আদ্রকে বেশি না চটানোই ভালো বলে মনে করছে সে।রাগ কমলে এমনিতেই আয়ানকে আবার বুকে জড়িয়ে নিবে।
আদ্রের কেবিন থেকে বেড়িয়ে আয়ান ন্যায়রাকে বলল,
— প্লিজ দোস্ত তুই কিছু মনে করিস না। তুই তো জানিসই ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে। গতকাল থেকে আমার জন্য তোকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে ।
— ইট’স ওকে। আমি কিছু মনে করি নি। তুই যা এখন মন দিয়ে কাজ কর। দেখবি আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
–হুম
এরপর দু’জনে নিজেদের কাজে মন দিল।
————————–
অফিস টাইম শেষ হতে মৃধা বের হচ্ছিল অফিসের গেট দিয়ে। ঠিক সে সময়ই কোথা থেকে কে যেন এসে তাকে ধাক্কা মেরে দিল। টাল সামলে নিয়ে সোজাসাপটা হয়ে দাড়াল মৃধা। সামনে তাকিয়ে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে সে তো অবাক। গতরাতে আয়ানের সঙ্গে থাকা সেই মেয়েটি। এদিকে ন্যায়রাও মৃধাকে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়েছে। কৌতূহলী রেশ টেনে সে বলল,
–আপনি এখানে?
–আমি এই কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছি।
— ওহ আচ্ছা আচ্ছা।
–আপনি এখানে কেন?
–আমি এখানে কারণ আমি এই কোম্পানির হাফ ওনার আয়ান চৌধুরীর বেস্ট ফ্রেন্ড কাম পি.এ
— ওহ আচ্ছা, সরি ম্যাম আমি আসলে দেখতে পাইনি
— ইট’স ওকে
–আচ্ছা তাহলে আজ আসি
— ওকে, গুড বাই
–গুড বাই
এদিকে ওদের এসব কথা পেছনে দাড়িয়ে দেখছিল আয়ান। সে তখন মৃধা চলে যেতেই ন্যায়রাকে এসে বলল,
— এই তুই ওই মেয়েটিকে কী করে চিনলি?
–আরে তোকে বললাম না গতরাতে আমাদের গাড়ির সামনে একটা মেয়ে এসে পরেছিল। সেই মেয়েটাই এই মেয়েটা। তুই তো নেশার ঘোরে ওকে অনেক বাজে কথাও বলেছিস
— ওহ তাই
–হুম
–আচ্ছা চল তাহলে
— হুম চল,বাড়ি গিয়ে দাদুভাই আর ভাইয়ার রাগ ভাঙাতে হবে।
—————————
–“তুমি যে অন্যায় করেছ এর কোনো ক্ষমা হয় না । আজ পর্যন্ত এই আফরোজ চৌধুরীর সামনে কেউ কোনদিন একটা সিগারেটে টান দেয়নি আর তুমি আমার নাতি হয়ে কিনা মদ খেয়ে পরনারীদের গা ঘেঁষে বাড়িতে প্রবেশ করো।এতো বড় সাহস তোমায় কে দিয়েছে?” আয়ানকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বললেন আফরোজ চৌধুরী।
আয়ান অপরাধীর ন্যায় দাদুর সামনে মাথা নিচু করে বলল,
— সত্যি দাদুভাই আমার অনেক বড় অপরাধ হয়ে গেছে আর কখনো এমন ভুল হবে না। প্লিজ দাদুভাই প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও…..
এমন চলতে থাকল অনেক সময় ধরে। কিন্তু আয়ান কিছুতেই আফরোজ চৌধুরীর রাগ ভাঙাতে পারল না। তারপর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আফরোজ চৌধুরী আয়ানকে একটা শর্ত ঠুকে দিলেন। শর্ত টা হচ্ছে, আয়ানকে খুব শীঘ্রই আফরোজ চৌধুরীর পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। অগত্যা কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আয়ান শর্তে রাজি হতে বাধ্য হয়। দাদুভাইকে সে অনেক ভালবাসে তাই দাদুভাই-এর মান ভাঙাতে সে সবকিছু করতে প্রস্তুত।
চলবে,