#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-৮”
নিরিবিলি শুনশান পার্কের এক কোণ দিয়ে হেঁটে চলেছে মৃধা। তার মনের আকাশে আজ কালো মেঘের আনাগোনা। বাবার কথা আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো তাকে এতো অবগ্যা সহ্য করতে হত না।সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষদের কাছে তারও একটা সম্মান থাকত। কেউ তাকে এমন হেয় চোখে দেখত না। যেমন টা আগে ছিল। মনের মধ্যে চাপা অভিমানের উদয় হতেই তার চোখের কোণে ভীড় পরল অবাধ্য নোনাজলের। লোক চক্ষুর অগোচরে ওরনার আঁচলে চোখ মুছে নিল সে। তারপর দ্রুত হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা দিল। বেশি দেড়ি হলে মা,ভাই চিন্তা করবে তাকে নিয়ে।
,,,
অফিস থেকে আয়ান আজকে সোজা বাড়িতে চলে এসেছে। দাদুভাইকে কিছু দিন খুশি রাখতে হবে। তার ওপরে করা দাদুভাইয়ের সকল অভিযোগ সে দুর করতে চায়। এজন্যই এতো প্রচেষ্টা। তার দাদুভাই এখন নিজের রুমে বসে ইসলামিক বই পড়ছেন। এই সময় আয়ানকে বাসায় দেখলে তিনি একদম চমকে যাবেন। তাই সারপ্রাইজ হিসেবে আয়ান নিজেই গিয়ে আজ দাদুর সামনে উপস্থিত হলো। আফরোজ চৌধুরী আয়ানকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠে বললেন,
–” আরে দাদুভাই, তুমি এ সময়ে বাসায় কীভাবে কী ? নিশ্চয়ই কোনো মতলব নিয়ে এসেছ?”
আয়ান দাদুর কথায় একগাল হেসে জবাব দিল,
-” নাহ দাদুভাই, আমার কোনই মতলব নেই। এমনিতেই চলে এলাম। আসলে তোমার বাধ্য নাতি হওয়ার ট্রাই করছি, এই আরকি। ”
— “আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। আইডিয়া টা মন্দ নয়। রোজ এমন হলে তোমাকে আমি একটা রাজকুমারী দেখে বিয়ে দিব।”
— আহহ দাদুভাই, আবার বিয়ে নিয়ে পড়লে? এসব কথা থাক না। বেশ তো আছি তাহলে এসবের কী দরকার আছে?
— ” দরকার আছে দাদুভাই, দরকার আছে। এই বুড়ো মানুষটার যে কিছু শখ-আল্হাদ আছে সেটা কেন তোমরা ভুলে যাও বলো তো? আমি বুড়ো মানুষ আজ আছি কাল নেই। আমি চাই তোমাদের দু ভাইকে মরার আগে সংসারী করে দিয়ে যেতে। সবারই সংসারের প্রয়োজন আছে। এখন তোমাদের যুবক বয়স তাই সংসার ধর্মের মর্ম তোমরা বুঝতে চাও না কিন্তু একটা সময় আসবে যখন জীবনের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য কাউকে প্রয়োজন পড়বে। মানুষ সেই দিনটির জন্যই আগে থেকে প্রস্তুত হয়। এই যে আমাকে দেখো, তোমাদের দু ভাইকে আঁকড়ে ধরে দিব্যি বেঁচে আছি। এই আমি তোমরা না থাকলে কী কখনো একা একা বাঁচতে পারতাম? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই প্রয়োজন পড়ত। আদ্র দাদুভাইকে তো অনেক বুঝিয়েও রাজি করাতে পারি নি। তবে এবার আর শুনছি না। তোমাদের দু ভাইকে আমি জোড়া বিয়ে দিয়ে ঘরে জোড়া নাত-বৌ তুলব। আর মেয়ে আনব একদম আমার মনের মতো।”
–ওক্কে দাদুভাই, ভাইয়া রাজি হলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তুমি যেমন টা বলবে আমি তেমন টা করতে প্রস্তুত।
— এই তো আমার সোনা দাদুভাই। আদ্র দাদুভাইকে আমার দুই দাদা-নাতি মিলে ঠিক রাজি করিয়ে ফেলব।
আয়ানের মুখটা নিমেষেই মলিন হয়ে গেল। সে ফ্যাঁকাশে মুখে বলল,
— এ্যাহহ, ভাইয়াকে রাজি করাতে যাবো আমি? এটা অসম্ভব।
— কেন অসম্ভব ? অবশ্য সম্ভব। আমি তো প্ল্যান তৈরি করে রেখেছি শুধু তোমার একটু হেল্পের দরকার।
— আমি কী হেল্প করব শুনি?
তুমি……….. আফরোজ চৌধুরী আয়ানকে তার করা প্ল্যানের কথা বলল।সব শুনে আয়ান বলল,
–” দাদু গো তোমার এই ছিল তোমার মনে? ওকে ডান, তোমার সাথে আমি সহমত। তবে একটু সাবধানে। একটু নড়চড় হলে তুমিও ভাসবে সাথে আমিও।
— হুম যা করতে হবে খুব সাবধানে। আচ্ছা তবে কালই সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলি?
— হুম, তুমি যেটা ভালো মনে করো। আমি তাহলে এখন ফ্রেশ হয়ে আসি দাদুভাই। বাকি কথা রাতে হবে।
— আচ্ছা যাও
তারপর আয়ান চলে গেল ফ্রেশ হতে আর আফরোজ চৌধুরী আবার বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজলেন।
,,,
বাড়ি ফিরে মৃধা দেখল আজ মা আর মুগ্ধ বেশ খুশি। এ খুশির কারণ টা অবশ্য মৃধার জানা। আজ কয়েক বছর পর বাড়িতে মাংস রান্না হচ্ছে এজন্যই সবাই এতো খুশি। ওদের বাবা মারা যাওয়ার পর এই প্রথম ওদের ঘরে মাংস ঢুকেছে
মা ভাইয়ের মুখের এই তৃপ্তির হাসিটুকু দেখার জন্যই মৃধা এত অপমান সহ্য করে আয়ানের অফিসে চাকরি করছে নয়তো কবেই ছেড়ে দিত।মৃধা বাড়িতে প্রবেশ করতেই মুগ্ধ বলল,
— আপুনি এসেছ। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো। খুব ক্ষিদে পেয়েছে একসঙ্গে খাবার খাবো।
মৃধা মনের কষ্টগুলোকে হাসির আড়ালে লুকায়িত করে জবাব দিল,
— হুম আসছি ভাই। তা তোর এক্সাম কেমন হয়েছে?
— খুব ভালো আপুনি। মাংসের গন্ধ একদম হল রুম অব্দি চলে গেছে। তাই ঘ্রাণে ঘ্রাণে পরীক্ষাও
জম্পেস হয়েছে।
মুগ্ধর কথা শুনে মৃধা জোরে জোরে হেসে দিল।আর মৃধার মা মুখ চেপে হেসে দিয়ে বললেন,
— পাগল ছেলে একটা
,,,
মৃধা ফ্রেশ হয়ে আসতেই সকলে মিলে তৃপ্তি করে খাবার খেয়ে নিল। আজ অনেক দিন পরে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে মৃধা আয়ানের দেওয়া সমস্ত কষ্ট ভুলে গেল। এই হাসির কাছে ওই কষ্ট নিছকই তুচ্ছ বস্তু মাত্র। খাওয়া শেষ করে মৃ্ধা একটু রেস্ট নিতে লাগল। আর মুগ্ধ পড়তে বসে গেল। এই ইন্টারের এক্সাম টা শেষ হলে সেও কিছু একটা করার চিন্তা করছে। মৃধার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সংসার চালাতে চায় সে।
,,,
আয়ানের আজ কিছুই ভালো লাগছে না। ল্যাপটপে বসেছিল অফিসের কাজগুলো কম্পিলিট করার জন্য কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। বারবার শুধু মনে পরছে মৃধার কথা। মৃধাকে অপমান করে আয়ানের ভীষণ খারাপ লাগছে। শত হোক, কাউকে এভাবে ছোট চোখে আয়ান কখনোই দেখে না। মৃধার সঙ্গে সে যেটা করে চলেছে এটা শুধুই প্রথম দিনের রিভেঞ্জ নিচ্ছে। নানারকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে আয়ান চলে গেল বেলকনিতে। সেখানে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল বিশাল বড় একটা চাঁদ উঠেছে। আজ হয়তো পূর্ণিমা রাত। চাঁদের জোছনা বেলকনিতে ছড়িয়ে আছে। আয়ান আকাশপানে চেয়ে রইল গভীর ভাবে। তারপর কিছু একটা ভেবে দুচোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ছাড়ল। বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার পর চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পরল। তার মনটাও এখন অনেকটা শান্ত হয়েছে।
,,,
সকাল সকাল দাদুর ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসতেই আয়ান বুঝে গেছে দাদুভাই
তার প্ল্যানিং চালু করে দিয়েছে। আয়ান অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে দাদুভাইয়ের রুমে চলে গেল। সেখানে গিয়ে দেখে আদ্র উদীগ্ন হয়ে ডক্টরকে কল করছে। আর তার দাদু এ্যাক্টিং করে অচেতন হওয়ার মতো পড়ে আছে। আয়ানও তার দাদুভাইয়ের প্ল্যান মতো গিয়ে কান্নামিশ্রিত সুরে আদ্রকে বলল,
— কী হয়েছে ভাইয়া? দাদুভাই এভাবে পড়ে আছে কেন?
আদ্র ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে বলল,
— জানি না রে। দাদুর ঘর থেকে চিৎকার শুনে এসে দেখি দাদু বেডের ওপর এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। আমি অনেক ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না। আমি ডক্টর আঙ্কেল কে ফোন করেছি তিনি এখনই চলে আসবেন।
,,,
একটু পড়েই ডক্টর চলে এলো। ডক্টর অনেকক্ষণ ধরে আফরোজ চৌধুরীকে চেক-আপ করলেন। অবশেষে তিনি যা বললেন এটা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না।
চলবে,