কন্ট্রাক্ট অফ ম্যারেজ পর্ব-৯

0
6070

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-৯”

অভিনয় যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে এটা কখনো ভাবতেই পারেনি আয়ান। আফরোজ চৌধুরী অভিনয় নয় সত্যি সত্যিই হার্ট এট্যাক করেছেন।ডক্টর শফিক যখন আফরোজ চৌধুরীকে দেখে ঔষধ লিখে দিলেন এবং বললেন উনি হার্ট এট্যাক করেছেন সেই মুহূর্ত পর্যন্ত আয়ান ভেবেছে তার দাদু তাদের প্ল্যান মাফিক অভিনয় করছে। কিন্তু ডক্টর চলে যাওয়ার পরও যখন আফরোজ চৌধুরী চোখ খুললেন না ঠিক তখনই আয়ান বুঝে গেল এটা অভিনয় নয় সত্যি। আদ্র তখন গিয়েছিল ডক্টরকে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে। আয়ান সেই মুহূর্তে প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। আফরোজ চৌধুরীকে ড.শফিক ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গিয়েছে তাই আয়ানের শত আকুতি ভরা ডাকেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। আদ্র ডক্টরকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখে আয়ান পাগলের মতো আচরণ করছে। দাদুকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে আর কী সব আবোলতাবোল বকছে। আদ্র তাড়াতাড়ি করে আয়ানকে সরিয়ে এনে বলল,

–” এমন করিস না ভাই। দাদুভাই সুস্থ আছে একদম। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তাই ঘুমিয়ে আছে। দেখবি কিছু সময় পরেই উঠে যাবে।”

আদ্রের কথার মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এবারেও আয়ান কিছুটা আস্থা খুঁজে পেল। তাই তো চুপচাপ গিয়ে ভাইয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বসে থাকল।

আদ্র যখন বারো বছর আর আয়ানের যখন নয় বছর বয়স ঠিক তখন থেকেই তারা তাদের বাবা- মা থেকে আলাদা। এই দাদুভাই-এর কাছেই সেই থেকে তারা মানুষ হয়েছে। এই দাদুভাই তাদের আদর,সোহাগ, ভালবাসা দিয়ে এতো বড় করে তুলেছে। তাই তো দাদুভাই-এর জন্য তাদের অন্যরকম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

,,, ,,, ,,,

আফরোজ চৌধুরীর জ্ঞান ফিরল বিকেল পাঁচটা নাগাদ। অফিসের সমস্ত কর্মচারীরা তাকে দেখতে এসেছে। তাদের মধ্যে মৃধাও আছে। আয়ান মৃধাকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো তবুও কিছু বলল না। ন্যায়রা এসে আয়ানের সঙ্গে আটার মতো লেগে রয়েছে যা মৃধার দৃষ্টি এড়াল না। মৃধা মাঝে মাঝে ওদের দিকে দেখছে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আয়ানের ব্যবহারগুলো তার মনে এখনো তাজা ক্ষতের ন্যায় জলন্ত। আয়ানের প্রতি আপাতত তার ঘৃণা ছাড়া কোনো ফিলিংসই নেই। তাই তো ওর থেকে দুরে থাকাই উত্তম বলে মনে করছে সে।

একে একে সবাই এসে আফরোজ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেল। এবার পালা মৃধার। মৃধা অফিসে জয়েন করেছে মাত্র তিনদিন হলো এর মধ্যে তার সঙ্গে আফরোজ চৌধুরীর দেখা হয়নি। তবুও অফিসের স্টাফ হিসেবে দায়িত্বের খাতিরে দেখতে এসেছে সে। সজ্জাসায়ী আফরোজ চৌধুরীকে দেখে কেমন একটা মায়া হলো মৃধার। আফরোজ চৌধুরীর মধ্যে নিজের দাদুর প্রতিচ্ছবি খুজে নিতে চাইল সে। পরক্ষণেই আবার মনে পরে গেল তাদের সামাজিক দুরত্বের কথা। মৃধা আর কিছু না ভেবে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল আফরোজ চৌধুরীর নিকটে। তারপর নার্ভাস কন্ঠে বলল,

–” আসসালামু আলাইকুম স্যার, এখন কেমন আছেন?”

কারো স্নিগ্ধ সুমধুর কন্ঠ কানে আসতেই চোখ মেলে তাকালো আফরোজ চৌধুরী। সামনে একটা সাদা রঙের নর্মাল থ্রি-পিস পরিহিতা মেয়েকে দেখে তার দৃষ্টি নমনীয় হয়ে এলো। মেয়েটির ভীত মুখশ্রী দেখে নিমেষেই তার নিজের অতি নিকট কারো কথা মনে পরতে লাগল । সেই একই চোখ, একই ঠোঁট, একই মুখমন্ডল, একই রকম চোখের পিসি,সেই একই রকম মায়াময়ী। আফরোজ চৌধুরী এক ধ্যানে চেয়ে আছে সেই চেহারায়। দীর্ঘ বাইশ বছর পর সেই মুখের সন্ধান পেয়ে তিনি যেন কথা বলতেই ভুলে গেলেন। এদিকে আফরোজ চৌধুরীর এহেন দৃষ্টি মৃধার মনে ভয়ের সঞ্চার করছে বারংবার। সে দু’হাত একত্রে করে ঘষাঘষি করছে। আফরোজ চৌধুরী কিয়ৎক্ষণ পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিল,

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি অনেকটা সুস্থ আছি। তুমি কে বলো তো আগে তো কখনো দেখি নি?”

মৃধা এবার আমতা আমতা করে জবাব দিল,

— ” জ্বী, আমি মৃধা মেহরিন। আপনাদের কোম্পানির নতুন স্টাফ।

আফরোজ চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন,

— ” ওহ আচ্ছা, নতুন তুমি। তাই তো তোমাকে চিনতে পারি নি। তবে তোমার মধ্যে আমি অন্যকাউকে খুঁজে পেয়েছি।”

মৃধা কৌতুহল নিয়ে বলল,

–” আমার মধ্যে কাকে পেয়েছেন?”

আফরোজ চৌধুরী বলল,

–” আমি যেটা ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তবে অবশ্যই আমি একদিন বলব তোমায়। তবে সে সময় আজ নয়। ”

মৃধা আর কোনো কথা বলার সাহস করে উঠতে পারল না। সে চুপচাপ আফরোজ চৌধুরীর কথায় সম্মতি দিল। তারপর আফরোজ চৌধুরীকে বলল,

–” আজ তাহলে আসি। সন্ধ্যার আগে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে নয়তো মা চিন্তা করবে।আর আপনি অবশ্যই নিজের শরীরের খেয়াল রাখবেন সবসময়।”

— “তোমার মায়ের নামটা কী?”

আফরোজ চৌধুরীর এমন প্রশ্নে মৃধা বেশ অবাক হলো তবুও মুরব্বি মানুষের কথার পিঠে কিছু বলতে পারল না। শুধু বলল,

–“আয়েশা খানম”

আফরোজ চৌধুরীর মুখে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে আর কিছু না বলে মৃধাকে বিদায় জানাল। মৃধা চলে যেতেই তিনি আপনমনে ধীর কন্ঠে বললেন,

–” পেয়েছি, এতো গুলো বছর পর তার খোঁজ পেয়েছি আমি। এবার আমি ঠিকই তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনব। মান অভিমানের পালা মিটিয়ে সবকিছু আবার আগের মতো করে দিব।”

দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আফরোজ চৌধুরীর শেষাক্ত বাক্যটি অবলোকন করল আদ্র। সে ভ্রুঁ কুঁচকে মনে মনে ভাবল,

–” দাদুভাই আবার কার সন্ধান পেয়েছে নতুন করে? কাকে ফিরিয়ে আনতে চায় সে? আগন্তুক টি কে?

,,, ,,, ,,,

আয়ানদের বাড়ির ড্রইংরুমে অফিসের সকল স্টাফরা একত্র হয়েছে। উদ্দেশ্য সকলের বাড়ি ফেরার। ন্যায়রা বলছে সে এখন যাবে না পরে যাবে। মৃধার কেন জানি এই ন্যায়রাকে এখানে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও কিচ্ছু করার নেই। ও তো নিরুপমা। তাই নিজের মনের এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেল বাহিরে। যাওয়ার আগে সে লক্ষ করেছে আয়ান যেন কেমন করে তাকাচ্ছে তার দিকে। হয়তো তার এখানে আসাটা আয়ানের পছন্দ হয়নি। মৃধা চোখ ঘুড়িয়ে নিয়ে চলে এসেছে। আয়ানের সঙ্গে কথা বলার মতো মুড তার এখন নেই।

,,, ,,, ,,,

বাড়িতে গিয়ে মৃধা শুধু আফরোজ চৌধুরীর কথা গুলো মনে করছে। কার সঙ্গে তিনি মৃধার মিল পেয়েছেন? আর তিনি কেনই বা মৃধার মায়ের নাম জিজ্ঞেস করলেন? সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে মৃধার। অবশেষে হিসাব মিলাতে না পেরে সে বিরক্ত হয়ে ঘুমনোর চেষ্টা চালাতে লাগল।

পরদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল মৃধার। তার মা আজ এখনো ঘুমিয়ে আছে। মৃধা রোজকার মতো ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল। তার মাকে ও ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করতে বলল। তারপর দু’জনে মিলে নাস্তা তৈরি করতে গেল। আজ একটু ভিন্ন নাস্তা বানানো হচ্ছে অর্থাৎ একটি রুটির পরিবর্তে সকলের জন্য বেশি করে রুটি, ডিম ভাজা আর আলু ভাজা করেছে। আজকে মুগ্ধের এক্সাম নেই। ছুটি পরেছে আজ।রাত জেগে পড়াশোনা করার ফলে সে এখন বেঘোরে ঘুমচ্ছে। মৃধা মুগ্ধকে ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছে। শেষে মায়ের সাথে নাস্তা করে নিয়ে একা একাই অফিসের জন্য বেড়িয়ে পড়েছে।

অফিসে পৌঁছে মৃধা নিজের ডেস্কে যাওয়ার পথে হঠাৎই কেউ তাকে ডেকে উঠে। মৃধা পেছন ফিরে দেখে একটি ছেলে তাকে ডাকছে। ছেলেটি এই অফিসেই কাজ করে। মৃধা ছেলেটির কাছে যেতেই সে বলল,

–” আপনার নাম মৃধা তাই তো? আপনি এখানে নতুন? ”

মৃধা হাসিমুখে উত্তর দিল,

–“জ্বী, হ্যাঁ।”

ছেলেটি হাসোজ্জল মুখে মৃধার দিকে এক হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,

–” আমি নয়ন আহমেদ। এই অফিসের একজন স্টাফ।”

মৃধা নিজের হাত এগিয়ে নিয়ে যখনই নয়নের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে যাবে ঠিক তখনই পেছন থেকে কারো রাশভারি কন্ঠস্বর শোনা গেল।

–” কাজ বাদ দিয়ে এখানে কী হচ্ছে? ”

মৃধা আর নয়ন দুজনেই পেছন ফিরে তাকায়। ওদের পেছনে আয়ান রাগি লুকে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ গুলো রক্তিম আভা ধারণ করেছে।এটা দেখে মৃধা আর কিছু বলল না কিন্তু নয়ন আয়ানের কথার জবাবে বলল,

–” এই একটু পরিচিত হচ্ছিলাম, স্যার।”

আয়ান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

–” এটা কাজের জায়গা পরিচিত হওয়ার জায়গা নয়। তাই দ্রুত সবাই সবার কাজ করতে চলে যাও। আর ফারদার এমনটা যেন আর না দেখি।”

নয়ন আরও কিছু বলতে গেল কিন্তু আয়ান কিছু না শুনেই হনহন করে হেঁটে নিজের কেবিনে চলে গেল। যাওয়ার আগে মৃধার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেল। যে দৃষ্টি জানান দিচ্ছে মৃধার কপালে শনি ঘুরছে।

চলবে,

[ প্রিয় পাঠকমহল আমি ভীষণ ভাবে অসুস্থ তাই গল্প দিতে লেট হচ্ছে। প্রবলেম টা চোখের এজন্য বেশি সমস্যা হয়েছে। সবাইকে অপেক্ষা করানোর জন্য সরি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here