#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৩
সত্যিই তো মেয়েটার কথাগুলো মন্দ নয়। এমন কিছু ঘটলে যেকোন মানুষই দ্বিতীয়বার এই সমস্যায় পরতে চাইবে না।
_________________________________
বিভা অফিসে এসেছে পর্যন্ত তার পিছনে ঘুরছে সোমা যে কিনা বিভার অফিস কলিগ। বিভা বিরক্ত হয়ে বলল –
” কি সমস্যা সোমা আপু?”
–” বিয়ে খাবো কবে?”
–” কার বিয়ে?”
–” তোর বিয়ে! কার বিয়ে আর খাবো?
–” আমার বিয়ে খাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেও! সে আশা তোমার পূরণ হবে না!”
–” তা আর বলতে, কিপ্টুস মেয়ে বিয়েতে একটু মানুষজন খাওয়াদাওয়া করবে বলে বিয়ে করছে না। হুহ!
ও জানিস,আজ না সেদিনের সেই ছেলেটা এসেছিল! ”
–” কে?”
–“আরে কি যেন নাম আলমগীর না কি যেন তোর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল!”
বিভা কিছুটা চমকে গেল আলমগীর কেন বারবার আসছে? বিভা এবার কৌতুহল নিয়ে বলল –
–” কিছু বলেছে?”
–” না বলল তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়!”
–” ও,”
–“হুম, আচ্ছা ছেলেটা কেউ হয়তোর? মানে কোন আত্মীয়?”
–” না তো এমনি কলেজে থাকতে পরিচয়। সেখান থেকে মাঝে মাঝে কথা হতো এটাই।”
–” ও, আচ্ছা।”
–” হুম, আচ্ছা আপু কাজটা শেষ করে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলবো।”
–” আচ্ছা,”
বিভা ডেস্কের উপর জমানো কাগজপত্রগুলোকে ঠিক করতে লাগল। কাগজগুলো ঠিক করতে করতে হাতের সময় দেখতে লাগল আর জানালার দিকে তাকালো ইশশ আজ আবহাওয়াটা বেশ ভালো নয়। বাবাকে ফোন করে বলতে হবে গাড়ি যেন আগেই পাঠিয়ে দেয় আজ। ফোনটা বের করে দেখল ব্যালন্স শেষ! ওমা! এই না রাতে দেখল প্রায় পঞ্চাশের মত ছিল। এটিএম কার্ড ও তো নিয়ে আসেনি নাহলে এটিএম কার্ড দিয়ে মোবাইল রিচার্জ করা যেত! কি আর করার বাবার কলের জন্য অপেক্ষা করো আর নাহয় বাসে করে বাড়ি ফিরতে হবে। বিভা মন খারাপ করে সব কাজ করতে লাগল। সব কাজ শেষ করে অফিস থেকে বের হতেই দেখল আকাশটা আরও কালো মেঘে ছেয়েগেছে। এই বুঝি বৃষ্টি এলো! কিছুদূর এগিয়ে দেখল একটা দোকান সেখান থেকে মোবাইল রিচার্জ করে আবার বাস স্টপেজের কাছাকাছি আসতেই দেখল বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটাগুলো ক্রমশ বড় বড় আকৃতিতে রুপ নিতে লাগল।
তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে বাসস্টপেজের সামনে দাড়াতেই বাতাস আর কিছুটা ভিজে যাওয়াতে শরীরে শীত শীত ভাব লেগে আছে। এখন আবার শীত লেগে উঠল আজব! ঠান্ডা লেগে যাবে নাকি আবার?
বিভা আকাশের দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলল-
” তোরা সব বিপদ কি একই মায়ের পেটের ভাইবোন নাকি? এলে সব এক সঙ্গে আসিস? একটু কি আগে পিছনে আসতে পারিস না?”
নিজের মনে কথা বলতে বলতেই দেখল সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়িয়েছে। গাড়ি থেকে একজনন ছাতা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে দৌড়ে এদিকে আসছে। মুখটা দেখতে পারল না, না দেখেই বাস দেখতে লাগল। লোকটি আরেকটু এগিয়ে এসে বলল –
–‘ এ তো দেখছি সত্যিই বিভাবতী! যাক ভুল করে আর আসা হয়নি আমার!”
–” আপনি এখানে?”
–” এইতো এই মাত্র কর্মস্থল হতে আজকের মত ছুটি নিয়া আসিতে ছিলাম। পথিমধ্যে গাড়ির কাচেঁর মধ্য দিয়া আপনাকে দেখিতে পাইলাম তবে সংকোচ কাটেনি। সেই সংকোচ টাকে কাটাইতে গাড়ি হইতে নামিয়া আসিয়া দেখি আমার সংকোচকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাইয়া আমার চোখদুটো সঠিক হইয়া গেল!”
–” ঐ এইতবে ব্যাপার!”
–” জী, তা আজ গাড়ি আনেন নি?”
–দেখুন না আজ মোবাইলে ব্যালান্স নেই, বৃষ্টিও আজ পরতে শুরু করল আবার বাবার ফোন ও আজ আসেনি।
সব ঝামেলা একসঙ্গে এসেছে। এখন দেখি বাসে চড়ে যেতে হবে।”
–” বাসে চড়ে যাবেন কেন? আমার সঙ্গে আসুন, আমার গাড়িটা আছে কি করতে? বাড়ি দিয়ে আসি আপনাকে।”
–” তার প্রয়োজন নেই!”
–“অবশ্যই আছে!চলুন আমার সঙ্গে আজ, আপনাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসি। এই বৃষ্টিতে বাস থেকে নেমে কোথায় দাড়াবেন? ঝুম বৃষ্টি!
–” না কোন সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো!”
–” না, কোন সমস্যা আছে! অনেক সমস্যা আছে! সামান্য গাড়িতে ও কি উঠতে পারবেন না? এটুকু আবদার অন্তত পূরণ করতে দিন!” বিভা পরেছে মহা ঝামেলায় এই একরোখা ঘাড় ত্যাড়া ডাক্তার তার পিছু ছাড়বে না মনে হয় সহজে। উপায় নেই এর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার।
অবশেষে সবকিছু ভেবে বলল-
–” চলুন যাই! এত করে যখন বলছেন!”
গাড়ির সামনে ছাতা ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল বিভাকে ফ্রন্টসিটে বসতে দিয়ে ড্রাইভিং করতে লাগল ফাইয়াজ।
কি বুঝে গান চালিয়ে দিল। এমন আবহাওয়ায় খানিকটা গান চালানো যায়! এফএম রেডিওতে তখন বাজতে লাগল শ্রীকান্ত আচার্যর গান –
–” আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম!”
” শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!”
বিভা আড়চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ সাহেব গানের তালে তালে গুনগুনিয়ে আবার সুর তুলছে। বিভা কিছুটা বিরক্ত হলো এভাবে কোন পুরুষ মানুষ তার সামনে বসে গুনগুন করা বা অযাচিতভাবে কথা বলাটা বিভা পছন্দ করে না। একরাশ বিরক্ত নিয়ে সে বাহিরে চেয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর বাহির থেকে আবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ গুনগুন করে গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আর বিভার দিকে ফিরে হেসে দিয়ে বলল –
–” আমি গান শুনলে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা তাই একটু আধটু গুনগুন করি। এটা আমার বাজে স্বভাব!”
–” হুম তা তো দেখতেই পারছি।”
–” আপনি বিরক্ত হচ্ছেন, বুঝতে পেরেছি। ভদ্রতা দেখিয়ে বসে থাকবেন না ফটাফট সব বলে দিবেন। মন হালকা হয়ে যাবে!”
বিভা কোন উত্তর করল না চুপ করে বসে রইল। প্রায় ঘন্টাখানেক এর মধ্যে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে বিভার বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে দুজন দৌড়ে চলে এলো।
কলিংবেল এর শব্দে দরজা খুলেই সামনে দাড়ানো বিভাকে দেখে অবাক হয়েগেছে বিভার মা। অস্থির হয়ে বলে উঠলো –
–” কিরে এভাবে ভিজে আছিস, গাড়ি নিয়ে আসতে পারিসনি? একদম ভিজে জবুথবু হয়ে এসেছিস?”
–” গাড়ির কথা আর কি বলবো তোমায় পরে শুনাচ্ছি ও সব। ” পিছন ফিরে ফাইয়াজকে ডেকে বলে উঠলো-
–“আরে আসুন, কোথায় যাচ্ছেন?”
–” বাসায় যেতে হবে,”
–” আরে এটা কোন কথা? আসুন আমার সঙ্গে, আম্মু নূরিকে বলো চা করতে। আর আপনি আসুন!”
ফাইয়াজ ঘরে ঢুকেই বিভার মাকে সালাম দিল।
ড্রয়িংরুমে বসতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই চা সামনে নিয়ে বসলেন বিভার মা।
—” তোমার মা কেমন আছেন?”
–” জী আন্টি ভালো আছে।”
–” ও, তো সেদিন তোমার ফুফু এসেছিলেন সেই ফুফু কেমন আছেন?”
–” সবাই ভালো আছে,”
–” তোমার বাবা কি করতো যেন?”
–” বাবার নিজস্ব একটা কোম্পানি ছিল কনস্ট্রাকশন সাইটের। সেই কোম্পানিটা বাবা চালাতো, আমি অবশ্য চালাই তবে সময় করে উঠতে পারিনা মাঝেমাঝে দেখাশুনা করি। ”
—“বাহ! হাসপাতাল সামলাচ্ছো আবার বাবার রেখে যাওয়া কোম্পানিটার ও হাল ধরেছো।”
–” হাল ধরতে চাইলে ও পারছি না আন্টি বেশ টাফ দুটো সামলানো। আমার অনেক লস হচ্ছে কোম্পানিতে শুধু ইনভেস্ট করে যাচ্ছি বেনেফিট 100 % বাদ 60 % ও নেই।
ম্যানেজার যা বলছে তা মেনেই চলছি।”
–” ব্যবসা সবাই পারেনা আর তুমি তো অন্য প্রফেশনে আছো। ”
–হুম, সামনে বড় কোন নামকরা প্রজেক্টের হাতে সেল করে দেব। এ ছাড়া উপায় নেই! আম্মু অসুস্থ উনি ঠিক থাকলে এতদিন উনি সব সামলাতে পারতেন।”
বিভা গোসল করে রুমে এসে দেখল তার মা আর ফাইয়াজ সাহেব মিলে মোটামুটি গল্পের আসর জমিয়ে ফেলেছে। বিভা সেখানে বসতেই মা বলে উঠল তোরা কথা বল আমি আসি। ফাইয়াজ চাতে খানিকটা চুমুক দিয়ে বলল –
–” বাসায় এলাম ভাবলাম নিজের হাতে চা করে হয়তো খাইয়ে ছাড়বেন।”
–” আনবো নাকি?”
–” কি?”
–” চা!”
–” না লাগবে না অত চা খেলে তৃপ্তি পাবো না পেট একদম ফুলে যাবে। ”
চলবে।