অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_৩

0
7774

#অসুস্থ_ভালোবাসা
#লেখিকা : তিয়ানা তিথি
#পার্ট_3
.
.
.
আমি তো কথাটা শুনে পুরোই আকাশ থেকে মাটিতে পরলাম তারমানে সেই লোকটাই এই ছেলেটা!!? আমি ভয়ে পুরো গুটিয়ে গেলাম তারমানে এই ছেলেটা সন্ত্রাসী আমি আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালাম না হাটা শুরু করলাম কিন্তু আমার পুরো শরীর যেনো কাঁপছে পা যেনো আগেই বাড়ছে না।ছেলেটা আমাকে পিছোন থেকে ডাকছে না আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাইনা।
.
বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে একটা বই নিয়ে কখন থেকে এই পৃষ্ঠা ওই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যাচ্ছি কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছিনা।এখনো ভয়ে মনটা সেধিয়ে রয়েছে যদি ওই লোকটা কাল আবার আসে? না না আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।আচ্ছা লোকটা কেনো এসেছিলো আজ? যেই কারনেই আসুক না কেনো তাতে আমার কি? আমি কিছুতেই আর তার সামনে পরতে চাইনা।দেখলে কেউ বলবেই না যে ছেলেটা একজন সন্ত্রাসী ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়ালই ছিলনা।আম্মুর ডাকে ঘুমের দেশ থেকে ফিরে আসলাম…
“” উফফ মা মাত্রই তো ঘুমিয়েছি এখনি আবার ডাকছো কেনো?????
“” তিথি তুই না কাল বললি সকালে তোর একটা ক্লাস আছে? তাহলে এখন কেনো আবোল তাবোল বকছিস।
“” হ্যাঁ আছে তো কয়টা বাজে এখন?
“” ৯:২০ বেজে গেছে। উঠবি কি উঠবি না সেইটা বল।
“” কিহহহ্…!!!!আরো আগে ডাক দিবা না তুমি যে কি করো না মা…ভালো লাগেনা।
অনেক দেরি হয়ে গেছে তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। টেবিলে বসতে বসতে বললাম…
“” আম্মু খাওয়ার বেশি সময় নেই তারাতারি দাও।
“” তিথি আস্তে আস্তে খেয়ে নে…(বড় আম্মু)
“” খেতে খেতে বললাম,উহু…বড় আম্মু তুমি জানো না আজ একটা জরুরি ক্লাস আছে মিস করা যাবেনা আমি অলরেডি লেট।
“” আপু ভালো করে খেয়ে নে তা না হলে আম্মু সারাদিন এই আফসোসই করে যাবে।(তৃন্নি)
“” তিথি আরেকটু বস আমি অফিস যাওয়ার পথে তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যাবো।(ভাইয়া)
“” খাবার রেখে উঠতে উঠতে,ভাইয়া একটুও সময় নেই আমি যাচ্ছি তুমি চলে যেও…বাই।
“” দেখেছো মেয়েটা কিছুই খেলো না।(বড় আম্মু)
“” আম্মু আমার দিকে তো একটু নজর দাও(তৃন্নি)
“” তোর দিকে আবার কি নজর দিবো তুই তো দিব্বি খাচ্ছিস । এখন তারাতারি খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।(বড় আম্মু)
“” আরে ভাবি মেয়েটা কে একটু খেতে দাও। মা তুই খা আস্তে আস্তে।(আম্মু)
.
উফফ কতোটা লেট হয়ে গেলো। একটা রিকশাও পাচ্ছিনা আজকে মনে হচ্ছে আমার দিনটাই কুফা ভালো লাগেনা আর। এই মামা যাবা…
“” হো যামু আপনার লিগাই তো আইলাম আপামুনি।(সেই রিকশাওয়ালা)
“” উঠতে উঠতে, এতো বেশি কথা বইলো না তারাতারি যাও আমি আজকে অনেক লেট…
“” যেতে যেতে,হো আপামুনি। আমারে চিনতে পারছেন?
“” ভ্রুঁ কুঁচকে,এই তুমি সেই মামাটা না? ওয়েট আমার জন্য আসছো মানে???
“” থতোমতো খেয়ে, এইদিক দিয়া যাইতাছি আপনারে দেইখা মনে পইরা গেলো কি ভালা মানুষ আপনে তাই আইলাম। আপামুনি সত্যিই আপনি অনেক ভালা।
“” হয়েছে হয়েছে যাও তো…
ভালোগিরি করতে গিয়ে যে সেদিন কি বিপত্তি টা ঘটিয়েছি সেইটা তো শুধু আমিই জানি। সন্ত্রাসী একটা আমার পিছু পিছু কাল ভার্সিটি পর্যন্ত চলে এসেছে।কারো ডাকে বাস্তবে ফিরলাম…
“” আপামুনি আইসা পরছি…
“” এ্যা…হ্যা ওহ এসে পরেছি? আচ্ছা এই নেও তোমার ভাড়াটা।
“” হেসে হেসে,কি যে কন আপামুনি আপনে এতো ভালা মানুষ আর আমি কিনা আপনার থেকে ভাড়া নিমু?
বলেই রিকশা নিয়ে চলে গেলো আজব। ধ্যাৎ এতো কিছু ভাবার টাইম নেই আমার। যাক বাঁচা গেলো এখনো ক্লাস শুরু হয়নি শায়লা,নাঈম,টুম্পা ওরা সব আড্ডা দিচ্ছে আমি কাছে যেতেই নাঈম আর বাকি ছেলে গুলো সব সরে গেলো আজব তো…
“”এই শায়লা কিরে কি হইছে ওদের চলে গেলো কেনো?
“” কি জানি!!!!(শায়লা)
“” টুম্পার দিকে জিঙ্গাসা চোখে তাঁকালাম..
“” আমিও জানি না কি হলো!!(টুম্পা)
“” অথৈ এসে বলল, আরে তিথি তোকে আজ যা সুন্দর লাগছে না তাই বোধয় ওরা লজ্জা পাইছে। কারন তুই তো আর কোনো ছেলেকে পাত্তা দিসনা।
বলেই ওরা সবাই হাসতে শুরু করে দিলো আর আমি বাংলার পাচের মতো মুখটা করে বসে রইলাম। প্রথম ক্লাস শেষে বসে আছি হঠাৎ নাঈম এসে ক্লাসের সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল আজ আর কোনো ক্লাস হবেনা। তাই সবাই বেড়িয়ে পরলাম শায়লা আর আমি কথা বলছি আর খিলখিলিয়ে হাসছি আর হেটে চলেছি এমন সময় কালকের মতো আজকেও একটা গাড়ি এসে থামলো পথ আটকে আমি ভয় পেয়ে শায়লার হাত ধরলাম গাড়ি থেকে দুটি লোক নেমে শায়লাকে বলল তুমি বাড়ি চলে যাও উনি আমাদের সাথে যাবে বলেই আমার হাত ধরে গাড়িতে তুলে নিলো আর আমি চেচেয়ি বলছি কে কে আপনারা? আমাকে এইভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? একটি লোক বলে উঠলো।
“” ভাবি আস্তে!! আস্তে কথা বলেন টেনশন নিয়েন না আমরা থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি হবেনা।
“” ভাবি!!!!! কে ভাবি???
কেউ আর কোনো কথা বলল না শুধু হেসে গেলো। আমি তো এইদিকে ভয়ে কাঠ হয়ে গেছি গলা শুকিয়ে গেছে খুব পানি খেতে ইচ্ছা করছে । হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো। ওরা গাড়ির দড়জা খুলে আমাকে নামতে বলল। আমি নেমে চারপাশ টা দেখতে লাগলাম এইটা তো একটা বাড়ি চারপাশে সিকিউরিটির ব্যাবস্থা সবাই বন্দুক হাতে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে এদিকে তো আমি শেষ আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। একটা লোক বলল ভাবি ভিতরে চলেন। আমি আর কথা না বাড়িয়ে তাকে অনুসরণ করে ভিতরে গেলাম লোকটা আমাকে ভিতরে ঢুকতে বলে বলল ভাইয়া ভিতরে আছে আপনি যান। আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম কি আজব ব্যাপার বাড়ির ভিতরে তো কেউই নেই। আমি দাড়িয়ে এদিক সেদিক তাঁকাচ্ছি বাড়িটা খুব সুন্দর মনে হচ্ছে যার বাড়ি সে খুব রুচিশীল ব্যাক্তি বাড়িটা অনেক বেশি সুন্দর যেমন বাহিরটা তেমনি বাড়ির ভিতর টা হঠাৎ আমার পিছনে কারো আসার অনুভূতি হলো পিছন ফিরে তাঁকাতেই আমি আর আমি নেই ভয়ে আমার হাত পা আরো দিগুন কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলো…….
“” কেমন আছো তিথি?( মিষ্টি করে হেসে)
“” আ..আ..আ..প..নি..নি?
“” তুমি কাল কোনো কথা না বলে চলে গেলে কেনো?
“” (কি বলব বুঝতে পারছিনা আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে পুরো জমে গিয়েছে)
“” সেদিন যখন আমার জ্ঞান আসলো তোমার কথা জিঙ্গাসা করতেই ওরা বলল যে তুমি নাকি কাউকে কিছু না বলেই চলে গিয়েছো। তোমাকে তারপর অনেক খুঁজাখুজি করে খুঁজে বেড় করলাম। ওহ তুমি তো আমার নামটাই জানো না আমি অয়ন। তিথি তুমি এইভাবে ঘামছো কেনো?
.
বলেই আমার দিকে হাত বাড়ালো আর তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সেন্স আসতেই দেখি আমি একটা বিছানায় শোয়া আর ওই লোকটা মানে অয়ন আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে..
“” তিথি তোমার কি হয়েছিলো? এইভাবে সেন্সলেস হয়ে গেলে কেনো?
“” (আমি আস্তে আস্তে উঠে পিছনে সড়তে লাগলাম)
“” তিথি কথা বলছো না কেনো? আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গাসা করছি। আচ্ছা পানি খাবে?
“” (আমি শুধু পিছনে সড়ে যাচ্ছি আর অয়ন শুধু আমার কাছে আসছে)
“” তিথি নাও পানিটা খাও (গ্লাস টা সামনে এগিয়ে দিয়ে)
“” (আমি চুপ…….ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাঁকাচ্ছি)
“” তিথি…….. (জোরে চিৎকার করে)
“” জি..জ..জু..জ্বি…..(তোতলাতে তোতলাতে)
“” আমি তোমাকে পানিটা খেতে বলেছি(শান্ত গলায়)
আমি পানিটা ভয়ে তার কাছে থেকে নিয়ে এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললাম আর অয়ন হো হো হো করে হেসে উঠলো আর পুরো রুম যেনো ওর হাসির শব্দে গমগম করে উঠলো। আমি একবার তাঁকিয়ে আবার মাথাটা নিঁচু করে ফেললাম এক নজরে যা দেখলাম তাতেই আমি আবার নতুন করে ক্রাস খেলাম। এত্ত সুন্দর এই সন্ত্রাসী টা ভাবতেই অবাক লাগে….
“” তিথি তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?
“” না ..না ..মাা..নে আ..আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?
“” তুমি তো কাল আমার সাথে কোনো কথা বললে না দৌড়ে পালিয়ে গেলে তাই বাধ্য হয়ে এখানে নিয়ে আসলাম।
“” ক…ক…কে……নো থ্যাংকস ব…বলার জ…জন্য?
“”(তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল) না ভালোবাসি বলার জন্য…..
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here