অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_১১ ১২

0
6055

part 11+12 eksathe
অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_11
.
বলেই উনার হাতের নিচ দিয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে রান্না ঘরে পৌছে গেলাম। মন চাচ্ছে মরিচ দিয়ে কফি বানিয়ে দেই শয়তান একটা । লম্পট, গুন্ডা, লুচু, সন্ত্রাসী, বান্দর বকতে বকতে কফি বানিয়ে রুমে আসলাম। কিন্তু সন্ত্রসীটা কোথায় গেলো??? সামনে বেলকনিতে গেলাম না এখানেও নেই তাহলে গেলো কোথায়???????? আমার এই কষ্ট করে বানানো কফিটা এখন কে খাবে তাহলে?????? ভাবতে ভাবতে নিজেই চুমুক দিলাম কফিতে তারপর পিছোনের বেলকনিটাতে গেলাম দোলনায় যেই বসতে যাবো দেখি অয়ন বসে আছে…..
“” আপনি??? আমি তো ভাবলাম আপনি চলে গেছেন।
“” তুমি সত্যি একটা বোকা। আমি যদি চলে যেতাম তাহলে নিশ্চই বলে যেতাম আর দড়জাটাও নিশ্চই খোলা থাকতো??
“” হুমমম…তাই তো। আচ্ছা এই নিন আপনার কফি…
কফি টা অয়নের দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। অয়ন ও হাত বাড়ালো নেওয়ার জন্য কিন্তু হঠাৎ মনে পরে গেলো, উনি চলে গিয়েছে ভেবে কফিটাতে একটা চুমুক দিয়েছিলাম আমি। তারাতারি করে কফি টা সরিয়ে নিলাম…
“” কি হলো দাও।
“” না না এইটা দেওয়া যাবে না।
“” কেনো?
“” আপনি চলে গেছেন ভেবে আমি এইটা খেয়েছিলাম।
অয়ন আমার কথা শুনে একটা দুষ্টুমি মাখা হাসি দিলো। আমি ভ্রুঁ কুঁচকিয়ে জিঙ্গাসা করলাম..
“” কি??
“” কফি টা দাও।
“” না আপনি বসুন আমি বরং আরেক কাপ কফি বানিয়ে আনি।
যাওয়ার জন্য সামনে ঘুরতেই অয়ন আমার হাত ধরলো। আমি মাথা ঘুরিয়ে একবার আমার হাতের দিকে তাঁকালাম একবার অয়নের দিকে তাঁকালাম।
“” তোমাকে আমি এইটাই দিতে বলেছি।
“” না আমি আমার খাওয়াটা আপনাকে দিবনা।
“” তিথিইইই!!(একটু জোরে)
ভয়ে তারাতারি করে কফিটা দিয়ে দিলাম অয়নকে। অয়ন কফিতে চুমুক দিয়ে বলল…
“” কফি টা একটু বেশিইই মিষ্টি মনে হচ্ছে।
“” আমি তো মাত্র এক চামচ চিনি দিয়েছি!!!
“” তোমাকে সব বুঝিয়ে বলতে হয়। এই কফি তে আমার বউয়ের ছোয়া লেগে আছে তাই একটু বেশি মিষ্টি।
“” ওহ….আচ্ছা।……এ্যা….কি বললেন???
“” শুননি????
“” আপনার সব কথাই আজব।
অয়ন আমার হাত টান দিয়ে অয়নের পাশে দোলনায় বসিয়ে দিলো। তারপর এক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রাখলো। আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল..
“” জানো তো হাজবেন্ড আর ওয়াইফ একে অপরের এটো খেলে ভালোবাসা বারে। আমি সত্যি কফি টা খুব উপভোগ করছি। আমার মনে হচ্ছে এর আগে কখনো কফির স্বাদ এতোটা ভালো লাগেনি। আজ যেনো অন্যরকম তৃপ্তি পাচ্ছি।
আমি এই কাকে দেখছি?? একটু আগেই আমার সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করেছে আর এখন মূহুর্তের মধ্যেই চেঞ্জ সত্যি আজব।
“” তিথি জানো তো তুমি আসার আগেও আমার জীবনটা অন্যরকম ছিল। কখনো ভাবিনি আমি কোনো মেয়েকে ভালোবাসবো তাও এতটা!!!
আমি শুধু অবাক হয়ে শুনছি। আসলে বুঝার চেষ্টা করছি সব সত্যি শুনছি কিনা।
“” যেদিন আমি রক্তাকতো অবস্থায় পরে ছিলাম রাস্তায় সেদিন তো ভেবেই ছিলাম আমি আর বাঁচবো না। কেউ ভয়ে আমার কাছে আসছিলো না সবাই শুধু তাঁকিয়ে দেখছিলো। অবশ্য সেদিন আমি মরে গেলে কোনো আক্ষেপও থাকতো না।
অয়ন কথাগুলো বলে থামলো। আমার কেনো জানি অয়নের মরে যাওয়া কথাটা শুনে বুকে খুব কষ্ট অনুভব হলো। আমি ও অয়নের হাতটা নিজের অজান্তেই শক্ত করে ধরলাম। অয়ন কফি তে চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো…
“” হঠাৎ দেখলাম আমার কাছে একজন এগিয়ে আসছে। চোখে ঝাপসা দেখছিলাম কাছে আসতেই দেখলাম তুমি(আমার দিকে তাঁকালো তারপর আবারো সামনে তাঁকিয়ে বলতে লাগলো) মূহুর্তেই যেনো আমার মনে হলো আমাকে বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকার এক অনুপ্রেরণা খুঁজে পেলাম। আমি যেনো এতদিন তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।
আমাকে যেনো অয়ন তার কথার জালে আটকে ফেলেছে আমি সব ভুলে গেলাম আমি শুধু অয়নের দিকে তাঁকিয়ে ওর কথা শুনছি। অয়ন কফিটা এক চুমুকে শেষ করে আমার দিকে তাঁকালো…
“” ভালোবাসি তোমাকে অনেকটা বেশি। আমি শুধু এইটা জানি আমাকে বেঁচে থাকতে হলে তোমাকে চাই আমার। তোমাকে আমার খুব প্রোয়জন তিথি।
আমি কিছুই বলতে পারছিনা আমার হার্টবিট যেনো প্রচন্ড গতিতে উঠানামা করছে। আমার সমস্ত শরীর অসার হয়ে যাচ্ছে। অয়ন একটু একটু করে ওর মুখ আমার মুখের কাছে নিয়ে আসছে। আমি যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছি। অয়ন আমার একদম কাছে ওর ঠোট আমার ঠোটের কাছে চলে এসেছে। আরেকটু ফাঁকা জায়গা নেই ওর ঠোট আমার ঠোট কে স্পর্শ করলো যেই আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিতে যাবে তখনি অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো..
অয়ন আমাকে ছেরে দিলো ফোনের দিকে তাঁকালো।
“” দেখেছো কখন যে ৫ টা বেজে গিয়েছে আমি খেয়ালই করিনি। তোমার সাথে থাকলে আমার কোনো কিছুর প্রতি খেয়াল থাকেনা কোথায় যেনো হারিয়ে যাই।
কথাটা বলেই অয়ন হঠাৎ আমার কোমর জরিয়ে ধরে ওর দিকে হ্যাচকা টান দিলো। আমি ঝুক সামলাতে না পেরে দুহাতে ওর বাহুডোর জরিয়ে ধরলাম। অয়ন আমার মুখের একদম সামনে ওর মুখ এনে বলল…
“” তুমি আমাকে এইভাবে নেশা ধরিয়ে দেও কেনো..হুম??? তোমার এই নেশা যে প্রচন্ড বাজে নেশা আমাকে ক্রমশো মাতাল করে দিচ্ছে। আমি যে তোমার এই নেশায় দিন কে দিন আক্রান্ত হয়ে পরছি। আমি তোমার এই নেশায় পাগল হয়ে গিয়েছি চাইলেও এখন আর ছারতে পারবো না। তুমি প্লিজ কখনো আমাকে ছেরে যেওনা।
বলেই আমার কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাড়ালো আমি চোখ বন্ধ করলাম। অয়ন যখন কথা গুলো বলছিলো তখন ওর গলা ভারি হয়ে আসছিলো নিশ্বাস দ্রুত চলাচল করছিলো। আমাকেও যেনো নেশা ধরিয়ে দিচ্ছিলো আমি যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছি। অয়ন রুমে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে আয়না দেখে দাড়ি গুলো ঠিকভাবে লাগিয়ে নিলো। তারপর হালকা পিছু ঘুরে মিষ্টি করে একটু হেসে বলল…
“” আসি………
আমি ওর হাসিতে আবারো ক্রাশ খাইলাম আজকে আমাকে দেখছি পাগল করে দিবে এই ছেলে।
.
সবাই চলে এসেছে অনেক্ষন। আমি পিছোনের বেলকনিতে বসে আছি হাতে হুমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাসের বই সামনে টেবিলটাতে কফি রাখা কিন্তু আমার মন পরে আছে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোতে। আজ আমার এমন কেনো হলো আমি কেনো কোনো রিয়াক্ট করলাম না? আমি সবকিছু কেনো মেনে নিচ্ছিলাম? অয়নের কাছে আসা গুলোকে মনে পরতেই যেনো কেমন লাগছে শিউরে উঠছি ওর প্রতিটা স্পর্শের কথা মনে করে। অয়ন আসলে বহুবিরী ও আজ আমাকে ওর মায়াজালে আটকিয়েছিলো। আচ্ছা অয়ন আবার কোনো জাদু-মন্ত্র জানে নাকি? তাই হবে বোধয়!! সন্ত্রাসীরা সব পারে। আর অয়ন খুব ভয়ঙ্কর মায়াবী সন্ত্রাসী। ধ্যাত কি যে বলিনা সন্ত্রাসী আবার মায়াবী হয় কীভাবে? আমার মাথাটা বোধয় সত্যিই এবার যাবে। মিঃ অয়ন সন্ত্রাসী তুমি যাই করো না কেন আমি কখনো তোমার হবো না হুহ…….
.
কারো ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলাম…
“” এই …এই তিথি আপু।(তৃন্নি)
“” কি……..আবার ডাকছিস কেনো?
“” চাচ্চু কল করেছে তোর সাথে কথা বলবে।
“” ওহ তাই আব্বু??? দে…
“” এই নে…
তৃন্নি আমাকে ফোন টা দিয়ে পাশে দাঁড়ালো..
“” হ্যালো..আব্বু? তোমার সাথে কথা নেই যাও।(অভিমানি সুরে)
“” রাগ করেছে আমার তিথি মামোনি??
“” তুমি কতদিন হলো দেশের বাহিরে। তোমাকে দেখিনা খুব মনে পরছে।(মন খারাপ করে)
“” রাগ করিসনা নেক্সট উইকে চলে আসবো। হঠাৎ আরেকটা কাজে আটকা পরে গেলাম।
“” আচ্ছা তুমি ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করছো তো? আচ্ছা পেশারের ঔষুধটা খাচ্ছো তো?
“” হে রে মা খাচ্ছি টেনশন করিস না।(একটু হেসে)
“” আর হে আমরা সবাই খুব ভালো আছি তোমাকে খুব মিস করছি।
“” আচ্ছা মা বেশি রাত করিস না যা শুয়ে পর।
“” ওকে গুড নাইট।
“” গুড নাইট মামোনি।
বাবার সাথে কথা বলে যেনো খুব শান্তি লাগছে। মনটা ভালো হয়ে গেলো। তৃন্নি কে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম…
“” এই নে ধর…খেয়েছিস তোরা?
“” হুমম।
“” আম্মু কি করে?
“” ঘুমিয়ে গেছে । তানিম ও মাত্র শুইলো।
“” তুই ঘুমাস নাই কেন?
“” আমি মাত্র পড়ে উঠলাম। ঘুমাতে যাবো আর চাচ্চু কল দিলো।
“” আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পর। সকালে আবার তোর এক্সাম আছে।
“” হুমমম…তুমিও শুয়ে পরো।
তৃন্নি হাই তুলতে তুলতে ওর রুমে চলে গেলো। আমি ও রুমে এসে শুইলাম চোখটা বন্ধ করতেই মোবাইল টা বেজে উঠলো।
“” হ্যালো…
“” ঘুমাও নি এখনো?
অয়ন কল করেছে দুপুরের কথা গুলো আবার মনে পরে গেলো মূহুর্তে রাগ এসে ভর করলো..
“” ঘুমাতেই তো যাচ্ছিলাম। ঘুমাতে আর দিলেন কই?
“” আমার ঘুম তো তুমি কেড়ে নিয়েছো। তিথি আমি ঘুমাতে পারছিনা। তোমাকে খুব মনে পরছে।
“” তো আমি কি করবো??
“” আমার কাছে চলে এসো।
“” কিহহহহ্?????
“” মন চাচ্ছে তোমাকে নিয়ে আসি। বিয়ে ছারা এক কথা আর বিয়ের পর কি বউকে ছারা থাকা যায় বলো??
“” আমি আপনার বউ না।
“” তাহলে আমার বউ কি পাশের বাড়ির জরিনা?
“” হ্যাঁ তাই হবে হয়তো।
“” মাইর খাইছো???
“” (চুপ)
“” তিথি….এই তিথি।
“” কি????
“” আমি আজ সারা রাত জেগে থাকতে চাই।
এই কথা বলে কি ইঙ্গিত করতে চাচ্ছে ও??? আমি কথাটা কে এড়িয়ে গেলাম।
“” আমি ঘুমাবো এখন। ফোনটা রাখেন।
“” খুব ঘুম পাচ্ছে?
“” হুম
“” আচ্ছা ঘুমাও
“” (চুপ)
“” এই শুনো শুনো তিথি ।
“” কি???
“” আজকের দিনটার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ। তোমাকে আজ নিজের করে পেয়েছিলাম কিছুটা।
“” এইবার রাখি ফোনটা??
“” শুনো….ভালোবাসি তোমাকে তুমি শুধুই আমার ।
আর কোনো কথাই বললাম না কেটে দিলাম। এই কথাটা শুনলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
অয়ন আজ খুব খুশি তিথিকে এতটা শান্তভাবে কখনো কাছে পায়নি। আজ তিথিদের বাড়িতে গিয়ে যে এইভাবে তিথিকে কাছে পাবে ভাবতেই পারেনি। হয়তো তিথির মনে অয়ন একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে ভাবতেই অয়নের ঠোটের কোনায় হাসি ফুটে উঠলো। তিথিকে প্রতি মূহুর্তে অনুভব করতে পারে অয়ন। তিথিকে নিজের করে পাবার আশায় সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অয়ন।
.
আজ দুদিন পর ভার্সিটিতে এলাম। ক্লাস শেষে সবাই গল্প করছে আমি যেতেই দেখলাম নাঈম আর আশিক চলে যাচ্ছে। আমি আটকালাম…
“” এই দাড়া তোরা কোথাও যাবিনা।
“” যেতে দে তিথি(নাঈম)
“” দোস্ত দেখ তোরা এমন করিস না। কত দিন তোদের সাথে আড্ডা দেই না। আয় বস আজ জমিয়ে আড্ডা দিবো।
বলেই আমি নাঈম আর আশিক কে টেনে বসিয়ে দিলাম আর গল্পে মেতে উঠলাম সবাই। হঠাৎ একটা ছেলে এসে আমাকে ডাকলো।
“” জ্বি আমাকে বলছেন?
“” হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সবাই চোখ বড় বড় করে তাঁকালো। কারন পিছোনেই অয়ন দাঁড়িয়ে আছে ।
“” দেখুন আমি এইসব পছন্দ করিনা।
“” এইভাবে না বলো না তিথি। চলো একটু একসাথে বসে কফি খাই।(তিথির হাত ধরে)
আমি সাথে সাথে হাত ছারিয়ে শায়লাকে ডাকতে পিছু ফিরেই দেখি অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে অয়নকে। অগ্নিদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে মনে বলে উঠলাম আল্লাহ রক্ষা করো।
চলবে……..

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_12
.
আমি সাথে সাথে হাত ছারিয়ে শায়লাকে ডাকতে পিছু ফিরেই দেখি অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে অয়নকে। অগ্নিদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে মনে বলে উঠলাম আল্লাহ রক্ষা করো।
“” ক্লাস শেষ হওয়ার পর এখানে কি করো???(অয়ন)
“” ভাইয়া আমরা একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম।(ভয়ে ভয়ে বলল শায়লা)
“” তিথি চলো আমি তোমাকে বাসায় পৌছে দিচ্ছি।(অয়ন)
না না আজকে এর সাথে যাওয়া যাবেনা তাহলে সন্ত্রাসীটা আমাকে আজ মেরেই ফেলবে। আমি খুব দ্রুত বলে উঠলাম একটু হাসির রেখা টেনে…
“” থাক না আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা। আমি শায়লার সাথে চলে যাচ্ছি। এই আসি রে আমরা তোরা থাক বাই।(আমি)
বলেই শায়লার হাত ধরে টেনে হাটা শুরু করলাম। ওই ছেলেটা আবার পিছোন থেকে বলে উঠলো…
“” হেই তিথি তুমি তো কিছুই বললে না। আমি অনিক আর এইটা আমার নাম্বার নিয়ে যাও।
ছেলেটার কি মাথা খারাপ নাকি!!! ভাই তুই বাঁচতে চাইলে চুপ কর। আমি পিছু ফিরে বললাম…
“” নাম্বার লাগবে না।
আর একটুও দাঁড়ালাম না এক প্রকার দৌড়েই চলে আসলাম ওখান থেকে। উফফ আল্লাহ বাঁচাইলা তুমি।
“” এই তিথি তুই অয়ন ভাইকে এতো ভয় পাস এখনো?
“” ভয় পাবো না আবার সন্ত্রাসী একটা ।
“” ( তিথি যে মাঝে মাঝে কিসব বলে না সব একবারে মাথার উপর দিয়া যায়। মনে হয় রেগে আছে তাই হাজবেন্ড কে এইসব বলছে) এই তিথি চল না ফুচকা খাই।
“” শায়লা!!!!! তোর আবার এই সময় ফুচকা খাইতে ইচ্ছা করলো????
“” হে রে বাবা চল না…
বলেই আমাকে টেনে নিয়ে গেলো শায়লা। অবশ্য আমারও খুব পছন্দ। আর এই মামা ফুচকা টা যা বানায় না রিয়েলি অসাধারাণ। দুজনে মন ভরে ফুচকা খাচ্ছি। আর হঠাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো উফ আমার ফুচকা খাওয়ার সময় যে কল করছে তার খবর আছে। মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তাঁকাতেই দেখি অথৈ কি ব্যাপার ও কল দিলো কেন….
“” হ্যালো বল।
“” তিথি এইখানে ঝামেলা হইয়া গেছে।
“” মানে কেন কি হইছে????
“” অয়ন ভাই নাঈম আর আশিকরে তোর সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। আর ওই ছেলেটা অনিক ওরে!!!!!
“” ওরে কি???????
“” ওরে অয়ন ভাইয়ের লোক ইচ্ছা মত মাইর দিছে মনে হয় হাত পা ভাইঙ্গা ফেলছে। তারপর আবার নিজেই হাসপাতালে ভর্তি করাইছে।
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা। শুধু মাত্র সামান্ন প্রপোজাল দেওয়ায় তাকে এইভাবে মারতে হবে!!!!
“” এই তিথি কি হয়েছে?
“” ওই সন্ত্রাসীটা….
“” সন্ত্রাসী কে????
“” আরে অয়ন। অয়ন ওই ছেলেটা কে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ফেলছে।
“” কিহহ্???
“” আর ফুচকা খওয়া হইছে চল বাসায় চল।
“” হে চল।
.
বাসায় ঢুকতেই দেখি বড় আম্মুরা চলে আসছে। রুমে আসলাম কি হচ্ছে আমার সাথে এইগুলা? এইরকম ঘটনা ঘটবে আমার জীবনে কখনো চিন্তাও করি নাই। আজ কিনা একটা ছেলে আমার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আজ। এইভাবে আর কতদিন চলবে? আমি কি ওই সন্ত্রাসীটার হাত থেকে কখনো মুক্তি পাবো না? না আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। মোবাইলটা হাতে নিলাম। কল লিস্টে চেক করতেই নাম্বারটা পেয়ে গেলাম। হ্যা রিং হচ্ছে…
“” আজ আমার ভাগ্যটা এতো ভালো জানতাম না তো? আমার প্রিয়তমা নিজ থেকে আমাকে কল দিলো।
“” আপনি এইসব কি শুরু করেছেন???
“” কি করেছি আমি?
“” আমার ফ্রেন্ডরা আমার সাথে কথা বলতে পারবে না। কোনো ছেলেই আমার সাথে কথা বলতে পারবেনা। আমাকে কেউ প্রপোজ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিবেন। এইগুলো কি শুরু করছেন আপনি??
“” এই বিষয় কথা না বলি আমরা।
“” বারাবারির একটা সীমা থাকা দরকার আপনি এইভাবে আমার লাইফ টাকে হেল করে দিতে পারেন না।
“” তোমার এতো ছেলেদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন টা কি??? তোমার হাজারটা মেয়ে ফ্রেন্ড থাক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই বাট কোনো ছেলে ফ্রেন্ড তোমার থাকতে পারবেনা। ক্লিয়ার?????
“” আজব ওরা জাস্ট আমার ফ্রেন্ড ওদের নিয়ে আপনার এতো প্রবলেম কেনো। আপনার চিন্তাধারা এতো খারাপ…ছি ।
“” হ্যাঁ আমি এতো খারাপ। তুমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে পারবে না। তুমি যদি তোমার ফ্রেন্ডদের ভালো চাও তাহলে আর ওদের সাথে কথা বলবা না। আর আজকের পর কোনো ছেলে তোমাকে প্রপোজ করবে না আশা করি।
“” আমি একটা মেয়ে আমাকে কারো ভালো লাগতেই পারে প্রপোজ করতেই পারে তাই বলে তাকে এইভাবে মারতে হবে????
“” কেনো ছেলেটাকে তোমার ভালো লেগেছিলো??? তোমার হাত ও তো ধরেছিলো তখন খুব ভালো লেগেছিলো তাই না?
কি বাজে মাইন্ডের লোক যা মুখে আসছে তাই বলছে। রেগে গিয়ে বললাম….
“” হ্যাঁ আমার ভালো লেগেছিলো তাতে আপনার কি?
“” ভালো লেগেছে তাইনা?? এতক্ষন তো তাও হাসপাতালে রেখেছিলাম এখন ওরে আমি মেরেই ফেলবো।
“” কিহহহ্!! দেখেন আপনি এমন কিছু করবেন না। আমার জন্য দয়া করে আর কারো কোনো ক্ষতি করবেন না।
“” ওকে এইটাই লাস্ট। আমি যেনো আর কখনো এইসব না দেখি।
“” হুম
“” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তিথি।
“” আপনার ভালোবাসা অসুস্থ এইটা কে অসুস্থ ভালোবাসা বলে।
“” তোমার যদি তাই মনে হয় তাহলে তাই।
“” আপনার সাথে আমার কথা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে।
কেটে দিলাম এর সাথে কথা বলার থেকে সারাজীবন বোবা হয়ে থাকা অনেক ভালো। আমাকেও চিনে না সন্ত্রাসীটা বাবা একবার আসুক শুধু।
.
ভার্সিটিতে এখন আর আমার সাথে কেউ কথা বলেন।এমনকি মেয়েরাও আমার সাথে কথা বলতে ভয় পায় ওইদিনের পর থেকে।
“” দেখ তিথি তুই শুধু শুধু অয়ন ভাইয়ার উপর রাগ করছিস। অয়ন ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তো এমন করে।(শায়লা)
“” চুপ থাক তো। এই অসুস্থ ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেই।
“” ইসসস্ অয়ন ভাইয়ের মত যদি আমাকে কেউ ভালোবাসতো আমি ধন্য হয়ে যাইতাম।(অথৈ)
“” এতো সখ তাহলে যা না অয়নের গলায়ই ঝুইলা পর। তাহলে অত্যন্তপক্ষে আমি বেঁচে যাইতাম।
“” যা তিথি তুই যে কি বলিস না আমার লজ্জা লাগেনা। আর অয়ন ভাই তো তোকে ছারা কিছু বুঝেই না।(অথৈ)
“” তিথি অয়ন ভাই আসতেছে।(শায়লা)
অয়ন আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে। কোনো সন্ত্রাসীর রাগে আমার কিছু যায় আসে না।
“” আরে অয়ন ভাই আপনি এই দুইদিন কোথায় ছিলেন?(শায়লা)
“” ওই একটা কাজে দেশের বাহিরে যেতে হয়েছিলো।তোমরা কেমন আছো?(অয়ন)
“” আমরা ভালো। অয়ন ভাই আপনাকে আজকে যা লাগতেছে না পুরাই জোশ। ব্লাক শার্ট টাতে আপনাকে মানিয়েছে খুব।(অথৈ)
“” থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু তোমার বান্ধবি তো আমাকে দেখেও দেখে না।(অয়ন)
“” ওর কথা বাদ দেন ও তো মঙ্গলগ্রহের প্রাণী। আজ পর্যন্ত একটাও প্রেম করতে পারেনি তারপর আপনার সাথে যাও শুনলাম প্রেম করছে কিন্তু এখন দেখি আপনার নামে শুধু উল্টা পাল্টা কথা বলে। এমন হিরোর মত জামাই পাইছে তো তাই বুঝতেছে না।(অথৈ)
“” তোমরা একটু বুঝাও ওরে।(অয়ন)
ওদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে আর আমার দিকে একটু পর পর চোখ গরম করে তাঁকাচ্ছে ভিলেন একটা ।
“” তোদের গল্প তো বেশ জমে গেছে। তোরা গল্প কর আমি গেলাম। ক্লাস আর করবো না পরে কল করে পড়া নিয়ে নিব।(আমি)
আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই অয়ন আমার হাত ধরলো।
“” আচ্ছা তোমরা থাকো আমি তিথিকে নিয়ে যাচ্ছি।(অয়ন)
“” ছারেন বলছি আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।(আমি)
অয়ন আর আমার সাথে কোনো কথা বলল না আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তলল।
“” ভাই কই যাইবেন?(জনি)
“” বাসায় চল। (অয়ন)
“” আমি আপনার বাসায় যাবো না। আমাকে যেতে দিন ক্লাস আছে।
“” তুমি না একটু আগে বললা ক্লাস করবা না?(অয়ন)
“” আমি আমার বাসায় যাবো।
“” আমার বাড়িই তো তোমার বাড়ি।
“” আমি আপনাকে একবার বলছি না আমি আপনার সাথে আমার বিয়েটা মানি না।
“”( চুপ)
“” কি হলো আমাকে যেতে দিন প্লিজ। আজ আব্বু আসবে আমি আব্বুকে বলে দিব আমি তাদের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি।
“” বিয়ে করবা আবার? আমি তোমার বিয়ের সখ মিটাবো আজকে চলো বাসায়।
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here