অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_19
.
সারাবাড়িতে ক্যান্ডেল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। খুব সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে অয়ন ভাবছে তিথি আজ কি করতে চাইছে!!! অয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যান্ডেলের আলো ছারা আর কোনো আলো নেই। কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না অয়ন কয়েকবার তিথি বলে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। অয়ন ড্রয়িং রুম ছেরে সিড়ি দিয়ে উঠছে আর একটা মিষ্টি সুগন্ধি ভেসে আসছে। অয়ন রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো ক্যান্ডেল আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কিন্তু তিথি কোথায়???? হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে অয়ন পিছু ঘুরতেই দেখতে পেলো তিথি দড়জা লক করে দাঁড়িয়ে আছে। অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজ তিথিকে লাল শাড়িতে অয়ন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে অয়ন তিথির নেশায়। অয়ন ভাবছে তিথি এইরকম আবেদনময়ী হয়ে ইচ্ছে করে এসেছে যেনো খুব সহজে ঘায়েল করতে পারে।
তিথি এগিয়ে আসছে অয়নের দিকে। অয়নের শরীরে যেনো অদ্ভুত শিহরন বয়ে যাচ্ছে তিথি অয়ন কে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। এতটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে যে দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেনো আলাদা নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে। তিথি আস্তে আস্তে গহনা গুলো খুলছে আর আয়না দিয়েই অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। অয়নের দুর্বলতা তিথি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে তাই তো এতো আয়োজন অয়নকে নিজের করে ফিরে পাওয়ার। তিথির পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে অয়নের উপর জানে অয়নের সবটা জুরে শুধু তিথির অস্থিত্বই বিরাজমান।
তিথি অয়নের দিকে এগিয়ে আসছে অয়ন ঠাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন বেশ বুঝতে পারছে আজ তিথির জয় হবেই হবে। তিথি অয়নের একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে নিশ্বাসের গতি বেড়েই চলেছে দুজনের। অয়ন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে আছে অনেক আগেই। তিথি অয়নের দুই হাত ধরে নিজের কোমড়ে রাখলো তারপর একটু উঁচু হয়ে দুই হাতে অয়নের গাল ধরে মুখের সামনে মুখ এনে বলল।
“” আমি শুধু তোমার হতে চাই তোমাতে হারিয়ে যেতে চাই। তোমাকে নিজের করে নিতে চাই যেনো তুমি চাইলেও আমাকে আর দূরে সরিয়ে দিতে না পারো। আজ আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না…
কথা গুলো বলতে গিয়ে তিথির বার বার গলা ভারি হয়ে আসছিল আর অয়নের হার্টবিট প্রচন্ড গতিতে উঠা নামা করছিলো। কথা শেষ হতেই তিথি অয়নের ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো অয়নও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না……….
.
.
তিথির ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে অয়নের বুকে আবিষ্কার করলো। মাথাটা একটু উঁচু করে অয়নের দিকে তাঁকাতেই গতকাল রাতের কথা মনে পরে গেলো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তিথির। কীভাবে পারলো ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তিথির। অয়ন কি ভেবেছে কে যানে। তিথি নিজেকে অয়নের কাছ থেকে ছারিয়ে নিলো খুব সাবধানে। তিথির মন চাইছে না অয়নকে ছেরে উঠতে। মনে হচ্ছে এইভাবেই অয়ন ঘুমিয়ে থাকুক আর তিথি মন ভরে দেখবে। তিথি অয়নের কপালে একটু ঠোটের ছোয়া দিয়ে উঠে পরলো। যেনো অয়নের কাছে আর লজ্জায় না পরতে হয়। আচ্ছা অয়ন আবার আগের মত হয়ে যাবে তো!! ভাবতেই মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো তিথির। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো….
.
তিথি কফি নিয়ে রুমে ফিরে আসতেই দেখে অয়ন এখনো ঘুমাচ্ছে। হাজারো লজ্জাকে উপক্রম করে তিথি অয়নের পাশে গিয়ে বসলো। অয়নকে ডাকতেই অয়ন চোখ খুলে তাঁকালো…
অয়ন চোখ খুলেই তিথির দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো। অয়নের কাছে আজ তিথিকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে চোখে মুখে পূর্ণতার ছাপ। কতক্ষন এইভাবে তাঁকিয়ে রইলো দুজন দুজনার দিকে জানা নেই তিথিই আগে মুখ খুলল….
“” উঠো অফিসে যাবে না।
“”……….
“” তোমার কফি। (মিষ্টি করে হেসে)
অয়নের কি হলো নিজেও জানে না তিথির হাত থেকে কফির কাপ টা নিয়ে মেঝে তে ফেলে দিলো। তিথি বুঝতেই পারেনি অয়ন এমন কিছু একটা করবে। তিথি ভয়ে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তিথি পাথরের মুক্তির মতো ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
.
অয়ন কোনো কথা বলছে না নিজের মত রেডি হচ্ছে। তিথি আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। এবার তিথি অয়নের কাছে আসলো…
“” তুমি এমন কেনো করছো??
“”………
“” কাল রাতে তো আমাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেলো। তুমি এখন এমন কেনো করছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
“” …………
“” কি হলো কথা বলছো না কেনো????
“”…………..
“” এভাবে তুমি চুপ করে থাকতে পারো না।
অয়ন রাগি চোখে তিথির দিকে ফিরে তাঁকালো। তারপর বলতে লাগলো যা শুনার জন্য তিথি একদমই প্রস্তুত ছিল না…..
“” কাল রাতের কথা ভুলে যাও। যা ছিল তা শুধু মাত্র একটা এক্সিডেন্ট।
তিথি কথাটা শুনা মাত্রই কয়পা পিছু সরে গেলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না এইটা কি অয়ন বলছে???
“” অয়ন তুমি মজা করছো আমার সাথে তাইনা?(কান্না মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল তিথি)
“” তুমি যেনো আমাকে কি বলতে আমি লুচু?? তাই না???? জানোই তো কাল মাথা ঠিক ছিলনা। মেয়ে মানুষ সামনে থাকলে কি আর মাথা ঠিক থাকার কথা বলো? তাও এতটা আবেদনময়ী ভাবে এসেছিলে সামনে। তাই ওটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করো না।
“” না তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছো। কাল রাতের তোমার প্রত্যেকটা ছোয়ায় ভালোবাসা ছিল। আমার বুঝতে এতোটুকু ভল হয়নি।
“” সেইটা তোমার প্রবলেম। আমি আমার দিক থেকে তোমাকে ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিলাম।
তিথি কাঁদতে কাঁদতে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল…
“” তুমি মিথ্যে বলছো। বলো তুমি মিথ্যে বলছো?? তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না অয়ন।
“” ছারো আমাকে লেট হয়ে যাচ্ছে আমার ।
“” আমি ছারবো না তোমাকে । তুমি বলো যা বলেছো সব মিথ্যা তুমি আমাকে ভালোবাসো…
অয়ন আর কোনো কথা না শুনে নিজেকে ছারিয়ে চলে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। তিথি ওখানেই মেঝেতে বসে পরলো। চিৎকার করে কাঁদছে আজ তিথি। কি বলে গেলো এইসব অয়ন?? সবটা এক্সিডেন্ট!!! ভালোবাসা কিছুই ছিলো না। না তিথি আর কিছুই ভাবতে পারছে না। চোখের জল ও বাধ মানছে না….
.
অয়ন আর এক মুহূর্ত দাঁড়াতে পারলো না। তিথির কান্না দেখতে পারছিল না। কিন্তু ওর যে কি হয়ে গেলো নিজেও বুঝতে পারলো না এখন নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছে অয়নের। এইটা না করলেও পারতো। কিন্তু এটাও তো ঠিক এক সময় তিথিও তো অয়নকে কম কষ্ট দেয়নি প্রতিনিয়ত ঘৃণা আর অপমান ছারা কিছুই দেয়নি। বিশেষ করে বিয়ের ব্যপারটা অয়ন কিছুতেই ভুলতে পারছে না।
.
অয়নে কাজ করছিল হঠাৎ মনে পরলো এমন ভাবে কথা গুলো বলে এসেছে যদি তিথি ভুল কিছু করে বসে?? ভাবতেই অয়নের বুকটা কেপে উঠলো। অয়ন ফোন করলো বাসায়……
“” হ্যালো….
“” কে শান্তা??? তোর ম্যাডাম কোথায়????
“” স্যার ম্যাডাম ঘরেই আছে। কি হইছে স্যার?
“” নাহ কিছু না। তুই একটু তিথির উপর নজর রাখিস।
অয়ন একটু সস্তির নিশ্বাস ছারলো। আর ভাবতে লাগলো আজ যা হলো এরপর কি তিথি আর ওর সাথে সহজ হতে পারবে?? আর কি ওর কাছে আসবে?? তিথি আজকের পর আর অয়নের সাথে কথা বলবে কিনা এইটা ভাবতেও এখন অয়নের ভয় হচ্ছে। এইরকম আজ না করলেও পারতো। তিথি গতকাল রাতে সবথেকে সুখ দিয়েছিল অয়নকে। পূর্ণ করে দিয়েছিল অয়নকে আর তার বিনিময় অয়ন কি করলো ভাবতেই অয়নেত এখন রাগ হচ্ছে….
চলবে……….
(আপনারা চাইলে আগামীকালের পর্বে শেষ করে দিতে পারি গল্পটা। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)