গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ১৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
“আমি চলে এসেছি কাজলরেখা। আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো নাহ তোমায়। এইবার শুধু তোমাকে নিজের করে পাওয়ার প্রতিক্ষা। ”
কথাটি বলে-ই’ কেউ আনমনে হেঁসে উঠে। তখনি তাদের গাড়ি কাজলদের বাড়ির সামনে ব্রেক কষে। ড্রাইভার বলে উঠে,
“স্যার আমরা চলে এসেছি। ”
সে ড্রাইভারের কথা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে। ফাইনালি তারা চলে-ই’ এলো কাজলদের বাড়ি। নিতিয়া প্রথমে বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। নিতিয়ার পরে সেও বেড়িয়ে এলো।
নিতিয়া বলে উঠে-
“চলো ভাইয়া যাওয়া যাক। ”
নিতিয়া কথায় সে সায় দিলো।
দরজায় কলিংবেল বাজতে-ই’ কাজলের বাবা হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে-ই’ কাজলের বাবার মুখে ফুটে উঠলো হাঁসি। তিনি প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে বললেন,
“তনয় বাবা! তোমরা এসেছো? ”
_________
এদিকে,
আমি পা পিছলে সুইমিংপুলে পড়ে যাই। সুইমিংপুলটা কেমন যেনো গভীর থেকে গভীরতর হয়ে যাচ্ছে। আমি কেনো যেনো ঠায় পাচ্ছি নাহ। তার মধ্যে আবার পানিগুলো কেমন যেনো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি ছোট সাহেবের নাম করে আমাকে এখানে নিয়ে এসে, তারপর আমাকে এই রুমের মধ্যে লক করেছে। নিশ্চই কারো ষড়যন্ত্র।কিন্তু এখন আমাকে যেকরে-ই’ হোক সুইমিংপুল থেকে বেড়োতে হবে,কিন্তু পানির মধ্যে কাঁচের মতো কিছু ছিলো যা আমার পায়ে একেবারে গেঁথে গেছে। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে উঠি। এদিকে আমি সাঁতরে সুইমিংপুলের কিনারা যেতে পারছি নাহ। আমি নিজের সর্বোচ্চ চেস্টা করছি চিৎকার করার,কিন্তু টপ ফ্লোরে তো কেউ নেই। তাহলে কে শুনবে আমার আর্তনাদ?
রুদ্রিক বেশ চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক এগিয়ে গিয়ে নিজের বন্ধুদের কাছে গেলো।
রুদ্রিককে চিন্তিত দেখে পলক বলল,
“রুদ্রিক তোকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন? ”
রুদ্রিক চারপাশ চোখ বুলিয়ে বলে,
“কিছুক্ষন পরে-ই’কাজলের পারফর্মেন্স। এখন তো কাজলের স্টেজের থাকার কথা, কিন্তু কাজল কোথাও নেই। ”
রুদ্রিক কথা শুনে জেনি এগিয়ে এসে বলে,
“তাতে তোমার কী রুদ্রিক? ওই মেয়ে যেখানে খুশি থাকুক। তুমি ওকে নিয়ে একটু বেশি মাথা ঘামচ্ছে রুদ্রিক! ”
রুদ্রিক ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
“এই ফাংশন যেহুতু আমার দায়িত্ব। সুতরাং এই ফাংশনের প্রত্যেকটি প্রতিযোগির খোঁজ-খবর নেওয়াও আমার দায়িত্ব। আমি আশা করবো তুমি অন্তত এই ব্যাপারে নাক গলাবে নাহ। ”
জেনি চুপ হয়ে গেলো।
শোভন ও বলে উঠেন,
“আমার মনে হয় রুদ্রিক ঠিক বলেছে। কাজল কোথায় সেইটা আমাদের জানতে হবে। ”
সিথি ও সাদি ও এসে পড়ে।
সিথি এসে বলে,
“আমিও অনেক্ষন ধরে লক্ষ করছি কাজল কোথাও নেই। ফোনটাও ধরছে নাহ । আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে।”
সিথির কথা শুনে এইবার সাদিও কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়ে বলে,
“আমাদের মনে হয় সকলের মিলে চারপাশে একটু দেখার উচিৎ। ”
সাদির কথা শুনে সবাই একমত হয়।
সবাই চারপাশে দেখত শুরু করলো।
রুদ্রিক ও দুশ্চিন্তা নিয়ে কাজলকে খুঁজতে শুরু করলো।
ফাস্ট ফ্লোরের দিকে আসতে-ই’ রুদ্রিক কাজলের পায়ের নুপুরের দিকে চোখ পড়লো। রুদ্রিক নুপুরটি সযত্নে উঠিয়ে নিলো। কাজলের নুপুরএখানে তাহলে কী কাজল ভিতরে আছে? সন্দেহ জাগলো রুদ্রিকের মনে, কিন্ত দরজা তো বন্ধ। রুদ্রিক আর কিছু না ভেবে বলে উঠলো,
“কাজল তুই কী এখানে আছিস? ”
প্রায় অনেক্ষন ধরে পানিতে থাকার জন্যে আমার শরীর যেনো আশাড় হয়ে আসছিলো। গলা দিয়েও শব্দ বের হচ্ছে নাহ। মনে হচ্ছে এখুনি বোধহয় নিঃশ্বাস বেড়িয়ে যাবে। তখনি ছোটসাহেবের গলা পেতে-ই’ আমি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উঠার চেস্টা করি কিন্তু আমি ব্যর্থ।
আমি বুঝে গেলাম এখন আমাকে বুদ্ধিমত্তার সাথে সবকিছু করতে হবে। এইভাবে করলে ছোটসাহেব কিছুতে-ই’ আমাকে উদ্ধার করতে পারবে নাহ।
আমি নিজের কাঁচের চুড়ি গুলো সর্বোশক্তি দিয়ে ভেঙে ফেললাম যেনো কিছুটা শব্দ হয়।
আর পারলাম নাহ কিছু। চোখগুলো বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
ভিতর থেকে শব্দ আসতে-ই’ রুদ্রিক বুঝে গেলো কেউ ভিতরে আছে।
রুদ্রিক আর সময় নষ্ট না করে জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিলো। কিন্তু তবুও দরজা খুলছে নাহ। রুদ্রিক উপায় না পেয়ে পাশে থাকা রডে এনে জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিতে লাগলো।
এক পর্যায়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুঁলে দেখে
কাজল সুইমিংপুলে ভাঁসছে।
রুদ্রিক ‘কাজল’ বলে চিৎকার করে সুইমিংপুলে তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
রুদ্রিক কাজলকে কোলে তুলে সুইমিংপুল থেকে নিয়ে আসলো।
রুদ্রিক কাজলের গালে হাল্কা করে থাপ্পড় দিয়ে বলল,
“এই কাজল চোখ খোল প্লিয লক্ষিটি। একটিবার চোখ খোল। ”
কাজলের হাত-পা যেনো ঠান্ডা হয়ে আসছে। মুখগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। পড়নে শাড়ি একেবারে ভিজে গিয়েছে। পা থেকে হাল্কা করে ব্লিডিং হচ্ছে।
রুদ্রিক তার রোমাল বের করে কাজলের পায়ে ছোট্ট করে ব্যান্ডিজ করে দেয়, যেনো ব্লিডিং না হয়।
রুদ্রিকের এইবার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। সে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলল,
“কাজল প্লিয ওপেন ইউর আইস।
কে কোথায় আছিস? ”
রুদ্রিকের চিৎকার শুনে সিথিও সাদিসহ সকলের ফার্স্ট ফ্লোরে চলে আসে। জেনি সকলের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। সে তো শুধু চেয়েছিলো কাজলকে আটকিয়ে রাখতে। কিন্তু কাজলের তো একেবারে খারাপ’ অবস্হা।
সিথি কাজলকে এই অবস্হায় দেখে, কাজলের কাছে ছুটে যায়।
সিথি কাজলের এই অবস্হা দেখে কান্না করে দেয় একপ্রকার।
—–“কাজল! এই কাজল কি হয়েছে তোর? ”
শোভন বলে উঠে,
“কাজলের এই অবস্হা ঠিক কী করে হলো? ”
রুদ্রিকের কাজলের হাত রেখে বলে,
“আমি তোর কিচ্ছু হতে দিবো নাহ। কাজল।
তুই ঠিক হয়ে যাবি।”
সাদি কাজলের হাতের পার্লস চেক করে।
একদম স্লো চলছে। সাদি ঠোট ভিজিয়ে বলে উঠে,
“কাজলের অবস্হা ঠিক বলে মনে হচ্ছে নাহ। পার্লস একদম স্লো চলছে।”
রুদ্রিকের চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।
—-“ওয়াট! নাহ নাহ আমাদের আর দেরী করলে চলবে নাহ। এখুনি হসপিটালে নিতে হবে। সাদি,পলক,ইথান কলড দ্যা এম্বুলেন্স হারি অ্যাপ। ”
সাদি মাথা নাড়িয়ে এম্বুলেন্সে কল দেয়। সিথিও কেঁদে যাচ্ছে।
ইথান রুদ্রিককে শান্তনা দিয়ে বলে,
“আমরা দেখছি রুদ্রিক। তুই প্লিয উত্তেজিত হয়ে পড়িস নাহ।”
রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,
“কাজলের এই অবস্হা আর তুই বলছিস আমাকে
উত্তেজিত না হতে? ডেম ইট। ”
রুদ্রিকের কথার মাঝে-ই’ সাদি বলে উঠে,
“রুদ্রিক! এম্বুলেন্সকে কল করেছি। কিছুক্ষন পরে-ই’ চলে আসবে। আমাদের এখুনি কাজলকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ”
রুদ্রিকের কাজলকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নেয়। যেনো কাজল কোথাও না যেতে পারে।
রুদ্রিকের কান্না পাচ্ছে প্রচন্ড। কাজলকে এই অব্স্হায় সে সহ্য করতে পারছে নাহ। তার বুকে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে।
সাদির কথা শুনে রুদ্রিক কাজলকে কোলে তুলে নিয়ে বাইরে চলে যায়।
রুদ্রিকের পিছন পিছন বাকি সবাইও চলে যায়।
এদিকে জেনি ভয়ে গুটিয়ে যায়। সামান্য অপমানের জন্যে রুদ্রিক তার খারাপ অবস্হা করছিলো,কিন্তু যখন শুনবে কাজলের এই অবস্হার পিছনে সে দায় তখন কী হবে?
অন্যদিকে
কাজলকে জরুরী বিভাগে একটি কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে। ডক্টররা তাকে চেকাপ করছে।
সিথি সাদি ও রুদ্রিকের বন্ধুরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।
রুদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। সে বুঝে গিয়েছে কেউ ইচ্ছে করে-ই’ কাজলকে আটকে রেখেছিলো। তাকে পেলে সে জ্যান্ত পুতে দিবে।
রুদ্রিকের চোখ একপলক কেবিনের দিকে যেতে-ই তার চোখ থেকে নোনাজল বেয়ে পড়লো। রুদ্রিক
ফ্লোরে বসে পড়ে। তার চোখ দুটো শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
চলবে…..
বাকীটা আগামী পর্বে
(প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে গল্প দিয়েছি। কেউ ছোট বলবেন নাহ)