#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ২১
লেখিকা ঃ মারিয়া
বা মা কি কখনো মেনে নেবে?? তারপর রোশনির দিকে হেঁটে গেলাম। রোশনি আমাকে দেখে দোলনা থেকে উঠে বলল
চলে এসেছো??.
হ্যা চলো বাড়ি এখন।
রোহিত সামনে এসে বলল হাত বাড়ালো আমার কোলে আসার জন্য। আমিও ওকে কোলে তুলে নিলাম। ছেলেটার মুখ খুব মায়বী। এজন্যই হয়তো ও রোশনির এত প্রিয়৷ আজ সব ঠিক থাকলে এমনই একটা বাচ্চা আমাদের থাকতো।
হঠাৎ রোশনি বলল ওভাবে কি দেখছো হুমম।
ওর কথায় হুশ ফিরলো তারপর চোখ সরিয়ে বললাম না কিছু না।
রোহিতকে এক সিস্টারের কাছে রেখে আমরা গাড়িতে বসলাম। তারপর সোজা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে গেলাম মায়ের রুমে। মা তার রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আমি বাইরে থেকে ডাকলাম
মা আসবো??
মা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল হ্যা এসো।
আস্তে করে মায়ের পাশে গিয়ে বললাম এখনো রেগে আছো??
গম্ভীর গলায় বলল আমি কারোর উপর রেগে নেই।
দেখো মা পৃথিবীতে এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের বেবি হয় না। আজ যদি ইশুর সাথে এমনটা হতো। তাহলেও কি তুমি এভাবে মুখ ফিরিয়ে থাকতে।
মা এবার উঠে বললেন ইশু আমার মেয়ে হলেও সে এখন অন্য বাড়ির বৌ। আর সবার মত আমারও আশা থাকতে পারে এই বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে আলুথালু করবো। তুই আমার একটা মাত্র ছেলে। আমার আরেকটা ছেলে থাকলে আমি এমনটা করতাম না কখনোই। আর আমি তো বাচ্চার আশায় তোকে আরেকটা বিয়ে করতে বলছি না যে তুই তোর বউয়ের হয়ে ওকালতি করতে এসেছিস।
মা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।
আমার বোঝার আর কিছু বাকি নেই।
মা আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি। আর এটা একান্ত আমার সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে রোশনি কিছুই জানে না।
কি??
আমি একটা অনাথ বাচ্চা এডপ্ট করতে চাই।
কিই,,, কি বললি তুই এটা। এখন পরগাছা এ বাড়ির বংশধর হবে। সবকিছু ভোগ করবে। আমি বেঁচে থাকতে এসব কিছুই হবে না।
মা তুমি এভাবে ভাবছো কেন?? অন্য ভাবে বোঝার ট্রাই করো। এটা কত ভালো একটা কাজ। একটা এতিম অসহায় বাচ্চা একটা পরিবার পরিচয় পাবে।
মা হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল এটাই যদি তোর ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়। তাহলে এখনি এই ঘর থেকে চলে যা।
এই কথা শোনার পর ওখানে না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে এলাম।
তার পরের দিন রোশনি বলল আজ শপিংয়ে যাবে। কিন্তু কোন কারনে সেটা বলেনি। ১১ টায় একটা মিটিং শেষ করে ওকে নিয়ে মলে গেলাম। সেখানে গিয়ে ও ছোট বাচ্চাদের ড্রেস চুজ করছে। আমি জিজ্ঞেস করতেই বলল এগুলো আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য। আর কয়েকটা রোহিতের জন্য। দিন দিন রোশানির ওর প্রতি মায়া বেড়েই চলেছে। আর ছেলেটাও রোশনিকে ছাড়া কিছু করতে চায় না। মাদার আমাকে বলেছে সেই ব্যাপারে। আমিও ভাবছি কিন্তু দোটানায় আছি। একদিকে মা অন্য দিকে রোশনি।
দুই দিন ভাবার পর মাথা মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে ডিসিশন নিলাম। রাতে দুজনে একসাথেই বললাম আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
কথার মিল হয়ে যাওয়ায় দুজনেই হেসে ফেললাম।
তারপর রোশনিকে বললাম তুমিই বলো।
না তুমি বলো।
আমি বললাম আমি ভাবছিলাম আমরা যদি রোহিতকে এ বাড়ি আনি তাহলে কেমন হয়।
রোশনির মুখ দেখে মনে হলো ও খুব খুশি হয়েছে। বলল আমি ঠিক এই কথাটাই তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু মা কি মানবে??
দেখো রোহিত এত মিষ্টি একটা বাচ্চা ও যে কারোরই মন জয় করে নিতে পারে। আমার বিশ্বাস ও মায়ের মনও গলাতে পারবে।
রোশনি শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল thank you a lot. আমি অনেক এক্সাইটেড কখন যে সকাল হবে আর ওকে এ বাড়ি নিয়ে আসবো। ও কিন্তু আমাদের সাথেই থাকবে বুঝলে। তুমি বরং কালই ডুপ্লেক্স একটা বেড কিনে নিয়ে আসবে। নাহলে ওর একটু কষ্ট হবে। আর বেবিদের যা কিছু দরকার সবকিছু কিনে আনতে হবে। ও আমাদের ছেলে হয়েই থাকবে।
এভাবে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত রোশনি নানারকম প্লান করলো। সত্যি মা হতে না পারার যন্ত্রণা ও এতদিন সহ্য করেছে। আর কাল তার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। খুব ভোরে ও ঘুম থেকে উঠে রান্না সেরে নিলো। তারপর আমাকে ডেকে উঠিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠালো। মেয়েটা এত পাগলামি শুরু করেছে খুশিতে।
আমি একটু খোঁচা মেরে বললাম তোমার তো আদর করার লোক চলে আসছে। আমাকে কি আর আদর করবে??
রোশনি আমার গাল টেনে বলল তাই না। খুব হিংসুটে হয়েছো দেখছি। তোমার আদরের ভাগ আমার রোহিত কখনো বসাবে না বুঝেছো।
জিহ মহারানী। আমি রেডি এবার চলুন।
তারপর একসাথে বের হলাম। ড্রাইভ করে আশ্রমে গিয়ে প্রথমে মাদারের রুমে গেলাম। আর রোশনি গেলো রোহিতের কাছে ওকে রেডি করাতে। মাদার সবটা শুনে ভীষণ খুশি হলেন। আর বললেন খুব ভালো ডিসিশন নিয়েছো। গড তোমাদের মঙ্গল করুন। তারপর বললেন রোহিতের লাক টা খুব ভালো যে ও তোমাদের মত মা বাবাকে পাচ্ছে। এর মধ্যে রোশনি আর রোহিত দরজার সামনে দাড়িয়ে বলল
মাদার আসবো??
মাদার দাঁড়িয়ে বললেন হ্যা এসো।
ওরা ভিতরে আসার পর মাদার হাটু ভেঙে বসে রোহিতের কপালে একটা কিস করে বললেন God bless you my son. আমাদের দেখিয়ে বলল আজ থেকে এরাই তোমার মা বাবা। তোমার আপনজন। কখনো ওদের কষ্ট দিয়ো না।
রোহিত কি বুঝলো জানিনা শুধু মাথা নাড়ালো। তারপর আমরা মাদারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হলাম। অন্য বাচ্চারা ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে রোহিত বাই বলার জন্য। তারপর একেক জন করে রোহিতের সাথে হ্যান্ডসেক বা হাগ করলো। আবার কেউ ফুল টয় ডল কার্ড গিফট করলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসলাম। আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি আর ওরা দুজনে পিছনের সিটে বসা। রোশনি হাত দিয়ে বাইরের এটা ওটা দেখাচ্ছে। আজ মনে হলো আমরা পরিপূর্ণ হয়েছি।
বাসায় পৌঁছে রুমে গেলাম। আগে থেকেই কয়েকজনকে বলে রেখেছিলাম আর ওরা সেভাবেই রুমটা সাজিয়ে রেখেছে। শ্যামলি দেখতে আসলো অন্যান্য ফ্লাটের কয়েকজন আসলো শুধু মা বাদে। মাকে ডাকতে গেলাম কিন্তু গিয়ে দেখলাম দরজা লক করা। কয়েকবার টোকা দেবার পর বলল
আজ থেকে আমি তোদের মা নই। নিজের বৌ আর পালিত সন্তানের সাথে সুখে থাক।
মায়ের কথাটা কেমন বুকে বিঁধল। তবুও আবার বললাম একবার বাইরে এসো। আমার কথাটা শোনো।
আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। চলে যা এখান থেকে।
ওখান থেকে রুমে আসলাম। রোশনি বলল কি এলো না??
রোহিত বলল কে এলো না মা??
মা শব্দটা শুনে আমি রোশনি দুজন দুজনের দিকে তাকালাম।
রোশনি বলল কি বললে তুমি। আবার বলো??
মা।
রোশনি ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। আমার চোখ থেকেও অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়লো। এরপর থেকে আস্তে আস্তে করে রোশনি আমায় বাবা ডাকা শেখালো।
মাকে অনেক বোঝবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো লাভই হচ্ছে না।
আজ বিকালে আমি অফিসে আর রোশনি রোহিতের পেটে হাত রেখে গভীর ঘুমে মগ্ন। রোহিত আস্তে করে হাত সরিয়ে দরজাটা খুললো। তারপর পা টিপে টিপে মায়ের রুমে গেলো। সেখানে গিয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখছে। আমার আর মায়ের একটা ফটো বেডের পাশে রাখা। সেটায় হাত বুলালো। হঠাৎ বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আলমারির পাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। মা হাত মুখ মুছে রকিং চেয়ারে বসতে যাবে তখন পর্দার আড়ালে কারো একটা ছায়া। দূর থেকেই বলল কে?? কে ওখানে??
রোহিত ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে।
আমি বলছি কে ওখানে বেড়িয়ে এসো।
ও আস্তে আস্তে পর্দাটা একটু সরিয়ে আবার ছেড়ে দিলো। ওর এমন ছেলেমানুষী দেখে মায়ের খুব মজা লাগলো। আর চিনতেও পেরেছে। তারপর পর্দার পিছন থেকে বের করে নিজের সামনে দাড় করালো।
রোহিত বলল কে তুমি??
মা হেসে দিয়ে বলল আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই বলছো কে আমি?? আমি এই বাড়ির মালকিন।
তুমি মালকিন। তাহলে তোমাকে কি মালকিন বলে ডাকবো??
এবার মা একটু গম্ভীর হয়ে বললেন আমাকে কিছু বলতে হবে না।
না বলো না কি বলবো তোমায়??
বললাম তো কিচ্ছু বলতে হবে না।
এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল না তোমাকে বলতেই হবে।
ঠিক আছে ঠাম্মি বলবে। কিন্তু কারো সামনে নয় মনে থাকে যেন।
আচ্ছা। আর তুমি কি এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।
নাতো আমি তো এখানেই থাকি।
কই তোমাকে তো একদিনও দেখলাম না।
মা নিশ্চুপ হয়ে রইলেন।
এবার রোহিত মায়ের হাত ধরে বলল এখন থেকে তুমি আমাদের সবার সাথে থাকবে। একসাথে খাবে কেমন।তাহলে সবাই তোমাকে দেখবে আর তুমিও।
রোহিতের কথায় মায়ের মন ভরে গেলো। চোখ ছলছল করে উঠলো। আর ভাবলো সত্যি ই তো কতদিন ওদের দেখি না, কতদিন একসাথে খাইনি।
এসব ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেললেন। রোহিত চোখের জল মুছিয়ে বলল কেঁদো না ঠাম্মি। আজ আমরা সবাই একসাথে ডিনার করবো কিন্তু।
এর মধ্যে রোশনিকে রোহিতকে না দেখতে বাড়ির ওদিক দিয়ে ডাকাডাকি করছে। মা শুনে রোহিতকে ফিসফিসিয়ে বলল এখন তুমি ঘরে চলে যাও।
রোহিত মাথা নাড়লো।
মা ওকে বলল আর শোনো রোশনিকে বলবে না যে তুমি এ ঘরে এসেছিলে কেমন।
আচ্ছা।
যাও দাদুভাই।
চলবে,,,,,
( সবকিছু হ্যাপি হ্যাপি করে দিলাম। আশা করি হ্যাপি এন্ডিংও হবে)