#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ২৫ ( শেষপর্ব 🥺)
লেখিকা ঃ মারিয়া
আমি দেখলাম রোশনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। তারপর ওকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে রাখলাম। এর মধ্যে মা আর রোহিত ওই ঘর থেকে এসে দেখলো এই অবস্থা। আমার নিশ্বাস খুব ভারী লাগছে। ডক্টর কে তাড়াতাড়ি কল করে আসতে বললাম। মা ওর হাতের আর পায়ের তালু ডলছে, আমি পানির ছিটা দিলাম কিন্তু তাতেও ওর জ্ঞান ফিরল না। ভীষণ ভয় লাগছে । ডক্টর কেন এখনো আসছে না। রোহিত তো মা মা বলে ডেকেই যাচ্ছে। কিন্তু রোশনির কোনো সাড়াশব্দ নেই। প্রায় আধঘন্টা পর ডক্টর আসলেন। এত লেট করে এসেছে রাগ উঠলেও নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।
ডক্টর আমাকে কিছু কোয়শ্চন করলো। কখন পড়ে গেছে কিভাবে পড়লো এটা সেটা। তারপর উনিও চোখেমুখে পানির ছিটা দেবার পর কোনো রেসপন্স পেলেন না। তাই একটা ইনজেকশন পুশ করলেন। এর পর চোখের নিচ আর মুখ হা করে ওর জিহ্বা দেখলেন। পালস্ চেক করে বললেন
টেনশনের কিছু নেই। বরং খুশির খবরই আছে। আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছেন।
কথাটা শুনে আমি থমকে গেলাম। বারবার ডক্টরের কথাটা কানে বাজছে। আমি বললাম কি কি বললেন??
আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। ইনফ্যাক্ট দুমাসের।
এরপর রোশনি আস্তে করে চোখ খুললো। ওকে দেখে ডক্টর বললেন কংগ্রাচুলেশনস মিসেস দেবরায়। আপনি মা হতে চলেছেন।
রোশনি একবার অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। তারপর ডক্টরের দিকে।
মা বললেন ডক্টর আপনি শিওর তো।
আলবাদ শিওর। এতদিনের এক্সপেরিয়েন্স ভুল হবার কথা নয়। এরপর ও আপনাদের সন্দেহ হলে কাল একবার টেস্ট করিয়ে আসবেন। আমি এখন উঠি তাহলে।
আমিও ডক্টর কে এগিয়ে দিতে গেলাম।
রুমে এসে দেখি রোশনি মায়ের বুকে মাথা রেখে আছে। আমাকে দেখে রোশনি সোজা হয়ে বসলো। আর মা বলল আমরা ও ঘরে আছি। কোনো দরকার পড়লে ডাক দিস। এই বলে রোহিতকে নিয়ে চলে গেলো।
আমি রোশনির পাশে এসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ও বলল এটা সত্যি তো।
জানিনা। কিন্তু রোশনি আমাকে কয়েকটা কথা বলো তো।
কি??
ওর লক্ষনগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলাম। ও সবগুলোই বলল। তারপর একটু রেগে বললাম তাহলে আমাকে বলোনি কেন??
ও বলল আমি ভেবেছি হয়তো অন্য কারনে।
আমিও ভেবে দেখলাম এখানে রোশনির কোনো দোষ নেই। যা যা হলো ওর সাথে এমন ভাবাটা নরমাল।
তারপর দুজনে শুয়ে পড়লাম। পুরো রাতটাই আমাদের নির্ঘুম কাটলো। সকালে দুজনে রেডি হয়ে একসাথে বেরিয়ে পড়লাম ডক্টর শীলার কাছে। ওখানে গিয়ে ওনাকে সব বলার পর উনি রোশনিকে নিয়ে টেস্ট করাতে গেলেন। প্রায় একঘন্টা পর রিপোর্ট এলো। আবার আমরা মুখোমুখি বসা। রোশনি এবারও আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।
ডক্টর রিপোর্ট দেখে মৃদু হেসে বললেন আপনাদের আশা পুর্ন হতে চলেছে। রোশনি সত্যিই প্রেগন্যান্ট।
রোশনি খুশিতে নিজের মুখে হাত দিলো। আর আমিও খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে ডক্টরের সামনেই ওকে উপরে তুলে পুরো রুম ঘুরাতে লাগলাম। ডক্টর শীলা লজ্জায় হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।
ইয়ে আমি বাবা হবো। ছোট্ট একটা প্রিন্সেস আসবে।
রোশনি হাসতে হাসতে বলল নামাও এখন। সবাই দেখে ফেলবে তো। ওকে নামিয়ে বললাম তুমি জানো না কতটা আনন্দ হচ্ছে আমার। i love you. love you lot বলে কপালে একটা কিস করলাম।
এরপর মা খবরটা পেয়ে সবার কাছে ফোন করে করে বলল। আমাদের নতুন একটা অভিযান শুরু হলো। ডক্টরের কথামতো সবকিছু করছি। প্রতি সপ্তাহে টেস্ট করতে যাওয়া, ভালো করে খাওয়ানো। মা তো আচারের ডেস্ক বানিয়ে দিয়েছে আমাদের রুমে। রোশনি আর রোহিত মিলে সব শেষ করে দিচ্ছে।
আস্তে আস্তে তিনমাস পর রোশনির হাঁটাচলা করতে একটু অসুবিধা হতো। সেই সময় ওকে বাথরুমে দেওয়া নেওয়া আমিই করতাম। ওর পেটে অলিভ অয়েল লাগিয়ে দিতাম। রোহিত ও দুষ্টুমি খুব কম করতো। এই কয়েকমাস তো ওকে কিচেনেই যেতে দেয়নি মা।শ্যামলি ওর জামাকাপড় ধুয়ে দিতো। ঘর মুছে যেত। ওর পরে আমি আবার স্যাভলন দিয়ে পুরো রুম ক্লিন করতাম। ওর জন্য এই অফিসেও যাইনা। ম্যানেজারের কাধে সব দায়িত্ব। আমি শুধু মাঝে মাঝে গিয়ে ভিজিট করে আসি।
এর মধ্যে ইশুর ডেলিভারি পেইন উঠলো। ওকে হসপিটালে এডমিট করানো হলো। রোশনির কাছে মাকে রেখে আমি গেলাম। ইশুর ফুটফুটে টুইন ছেলে বেবি হয়েছে। নার্স একজনকে আমার কোলে আরেকজনকে রাজের কোলে দিলো। সদ্যজাত বাচ্চাদের মুখ এত মায়াবী হয়। আমি মামা হয়েছি। ওদের দেখে আমার নিজের বাচ্চার মুখ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সেটাতো এখনই সম্ভব নয়।
এরপর রোশনি সাতমাসে পা দিলো। ওর সাধের অনুষ্ঠান খুব ধুমধাম করে এ্যারেন্জ করলাম। ওর গ্রাম থেকে লোক এসেছিল। ইশুর পুরো শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের গেস্ট রিলেটিভ। তখন ওকে দেখে অনেকেই বলছিল হয়তো জমজ বাচ্চা হবে। সাধের অনুষ্ঠান শেষ করে পরের দিন সবাই চলে গেলো। আমরাও গেলাম ওর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে। ডক্টর বলল জমজ না কিন্তু একটা বাচ্চা আছে আর সুস্থ আছে। এরপর রোশনিকে নিয়ে প্রতি বিকালে পার্কে ঘুরতে যাওয়া, ওর ছোটখাটো সব ইচ্ছে পুরন করেছি।
দেখতে দেখতে ওর পেইন উঠলো। ওর চিৎকার কষ্ট দেখে আমিও কেঁদে দিয়েছিলাম। রোহিতকে তো সামলানোই যাচ্ছে না। মা কোনোভাবে ওকে ধরে রেখেছে। ওই সময়টা যে কত টেনশনের। সময় যেন যেতেই চায়না। অপেক্ষার অবসান ঘটল আমার বাচ্চার কান্নার আওয়াজে। নার্স হাসিমুখে এসে বলল অভিনন্দন আপনার খুব ফুটফুটে আর নাদুসনুদুস একটা মেয়ে হয়েছে। আর মা মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে।
কথাটা শোনার পর সত্যি বুক থেকে বড় একটা পাথর সরে গেলো। বললাম আমি কি একটু ভিতরে যেতে পারি।
হ্যা কিন্তু একটু পরেই মা বেবিকে বেডে দেওয়া হবে। তখন যেতে পারবেন।
কিছুক্ষণ পর আমাদের যেতে বলল। প্রথমে মা কোলে নিলো তারপর আমার হাতে দিলো। “আমার মেয়ে ” বলে ওর কপালে একটা ডিপ কিস করলাম।অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। তারপর রোশনির কোলে দিয়ে ওর কপালে একটা কিস দিলাম। আজ এত আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না।
প্রায় এক সপ্তাহ পর রোহিত রোশনির কোলে বসে আছে। মা তার পাশে বসা। আর রুশা আমার কোলে। আমাদের মেয়ের নাম রেখেছি রুশা। রোশনি নামের সাথে মিলিয়ে। মা বলল আমি একটা মানত করেছিলাম মনে আছে তোদের। সেটা কাল করতে চাই। আদি তুই দুই হাজার লোকের খাওয়ার সব এ্যারেন্জমেন্ট করবি।
কিন্তু মা তুমি তো বলেছিলে এক হাজার লোককে খাওয়াবে।
মা হালকা হেসে বলল তখন কি বুঝেছিলাম আমার দু দুজন নাতি নাতনিকে একসাথে পাবো। এক হাজার হলো আমার রোহিতের জন্য আর এক হাজার আমার রুশার জন্য। কি বলো দাদুভাই।
একদম ঠিক বলেছো ঠাম্মি।
এভাবেই হাসিখুশিতে আমাদের দিনগুলো কাটছে। রুশার ছোট ছোট হাত পা ছোঁয়ার সময় এক পরম তৃপ্তি পাই। রোহিত তো বনুকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। রোশনিও এখন সবসময় হাসিখুশি থাকে।
কেটে গেলো আরও পাঁচটা বছর,,,
আমি বেলকনিতে বসে চশমা ঠিক করে কফির মগে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। হঠাৎ গার্ডেন থেকে শব্দ পেলাম। ল্যাপটপটা অফ করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলাম মা, আমার পাঁচ বছরের মেয়ে রুশা, রোহিত আর রোশনি মিলে কানামাছি খেলছে। ওদের একসাথে দেখে মনটা ভরে গেলো। এটা আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর দৃশ্য। আর এভাবেই যেন থাকতে পারি সবসময়।
সমাপ্ত ❤️
[ যারা এই গল্পটা প্রথম থেকে পড়েছেন তাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ]