“এখনো_ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-11
“আচ্ছা বলুনতো–ঘাসের মাঝে সূচ হারিয়েছেন আপনি,সেটা কতো ভাবে খুঁজে বের করবেন।ইন্টার্ভিউ দিতে এসে এমন অদ্ভুত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তিতির কখনো ভাবতেই পারেনি।এ কেমন প্রশ্ন?
ওর এতো বছরের পড়াশুনা দিয়েও তো এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এমনেই ব্যাচারী আগের থেকেই নার্ভাস ছিলো।তার উপর অফিসে এসে চারদিকে এতো মানুষ দেখে আরো বেশি জেনো নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলো।
এতো সুন্দর আর স্মার্ট মেয়েদের মাঝে নিজেকে কেমন আদিম যুগের খালাম্মাদের মতো লাগছিলো।ব্যাচারী তিতির ভাবতেই পারেনি এরপর তো আরো বড় ঝটকা অপেক্ষা করছিলো ওর জন্য।”
–যখন দিনেশ প্রবেশ করলো অফিসে,আশেপাশের মেয়েদের মতো তিতির রিয়েক্ট না করলেও ভেতরে জেনো অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।কারণ দিনেশকে কেবল এতো দিন টিভিতে দেখেছে তিতির,মডেলিং লুকে কি যে সুন্দর লাগতো ছেলেটিকে।ভাবতো সবই বুঝি মেকআপের কারিশমা।কিন্ত দিনেশতো স্কিনের বাহিরেও অনেক সুন্দর ও হ্যান্ডশাম।শুকনো একটা ঢোক গিললো তিতির,তার মানে ইন্টার্ভিউ কি দিনেশ স্যার নিবে ভাবতেই কাঁপতে লাগলো তিতির।
-হ্যালো মিস কি ভাবছেন।দিনেশের জিঙ্গেসা দৃষ্টি জানতে চাইছে।
“কিছু না তো স্যার।তিতির একটু ঘাবড়ে উত্তর দিলো।”
-ওকে,আচ্ছা ওটা বলতে না পাড়লে তাহলে এটা বলুন।নিজের বসকে ইম্প্রেজ করার জন্য আপনি কি কি করতে পারবেন।
“কিছুক্ষন দিনেশের দিকে তাকিয়ে,এবার তিতির মুখ খুললো।অফিসের কাজগুলো নিষ্ঠার সাথে করে,নিজের দায়িত্ব গুলো যথার্থ ভাবে করলে।বস নিশ্চয় খুশি না হয়ে পারবেন না।আর আমার মনে হয়না একজন আদর্শবান বসকে এর বাহিরে ইম্প্রেশন করতে কিছু লাগবে আর।”
-দিনেশ বাকা হাসলো তিতিরের উত্তর শুনে।ওর এতো বছরের ক্যারিয়ারে এমন উত্তর খুবই কম শুনেছে দিনেশ।
তাই আরও একটু ভালো করে রিডিং করতে লাগলো তিতিরকে।তিতিরের পুরো ছি.বি টা ভালো করে আরো একবার চোখ বুলালো।এর পর তিতিরকে আপনি আসতে পারেন এবার বলে বিদায় দিলো।তিতির ভেবেই নিয়েছিলো এবারও বুঝি চাকরিটা আর হবে না।”
–দিনেশের কন্ঠশুনে তিতির আবার বর্তমানে ফিরে এলো।দিনেশ এক প্রকার জোর করেই ওকে ওর বাড়ীতে নিয়ে এসেছে তখন।আর তিতিরকে নিজের বেড রুমে রেখেই চলো গেলো অন্যরুমে একটু কাজ আছে বলে।
তিতির তাকিয়ে দেখে দিনেশ ওর একদম সামনে দাঁড়িয়ে আছে।একটু খেয়াল করে দেখলো, এর মধ্যে শাওয়ার নিয়ে ড্রেসও চেন্জ করে ফেলেছে দিনেশ।
‘দিনেশ তিতিরের সামনে কিছু কাপড় দিয়ে,যাও ফ্রেস হয়ে চেন্জ করে আসো তিতির।তোমার ড্রেসটা ঘেমে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’
-কিন্তু তিতির একরোখার মতো বসেই আছে।আর কখন ধরে বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেছে আমি বাড়ী যাবো।সময় মতো বাড়ী না গেলে বাবা মা টেনশন করবে খুব।
“দিনেশ একটু মুচকি হেসে,আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয় তিতির।নাকি বোকা।”
–তিতির দিনেশর দিকে তাকালো ওর দৃষ্টি খুবই সরল।
“দিনেশ তিতিরকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।তোমার বাবা মা কেউ বাসায় নেই তিতির।তোমার মামার বাড়ী গিয়েছে,দুদিন পর আসবে।তুমি কি ভেবেছো আমি এসব জানতে পারবো না।”
–তিতির চমকে গেলো তার মানে দিনেশ সব কিছু জেনে প্লানিং করেই আমাকে এখানে এনেছে।কিন্তু কেনো?আর এখন কি হবে ভাবতেই তিতির ভয় পেয়ে গেলো।
“দিনিশের গভীর নিশ্বাসগুলো আচড়ে পড়ছে তিতিরের মুখের উপর।তিতির হঠাৎ জেনো জমে গেলো।না পাড়ছে দিনেশকে সরাতে না পাড়ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে।আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো তাই।
“তিতির নড়তে পাড়ছিলো না,পাগুলো জেনো কেউ শক্ত করে ধরে রেখেছে।আর দিনেশও জেনো হঠাৎ করে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো।
তিতিরের শরীরের ঘ্রাণটা ভীষণ ভাবে কাছে টানছে ওকে।এই সেই ঘ্রাণ যা দিনেশকে আগেও পাগল করেছে।আজ তো আরো বেশি করে পাচ্ছে তীব্র থেকে তীব্র ভাবে।দিনেশ জেনো নিজের মাঝে নেই আজ।ওর নাক গিয়ে স্পর্শ করছে তিতিরের গলা ও ঘাড়ের সংযোগস্থলে।খুব তীব্র ভাবে টানছে তিতিরের শরীরের এই ঘ্রাণটা।ডুবে যেতে মন চাইছে তিতিরের মাঝে আজ।তিতিরকে খুব করে কাছে পেতে মন চাইছে।
দিনেশ খুব শক্ত করে তিতিরের হাত দুটো চেপে ধরলো।ওর চাহিদা টা জেনো আজ একটু বেশি প্রবল হয়ে গিয়েছে।মানতে মন চাইছে না কিছু।শুধু তিতির নামের এই মেয়েটিকে আজ হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে পুরো দেখতে চাইছে।
হঠাৎ তিতির নিজের স্বম্ভিত ফিরে পায়।আর নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দিনেশকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।”
–তিতিরের এবার ভীষণ রাগ উঠে গেলো।সমস্যা কি আপনার।কতোবার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকুন।কেনো এখানে এনেছেন আমাকে।আমি আর এক মুহুর্তেও এখানে থাকতে চাইনা।বাড়ী যাবো আমি বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
__________
“কোনও ছেলেকে আমার আশেপাশে সহ্য করতে পারতে না তুমি আয়নদা।তোমার কারনে স্কুল কলেজে আমার কোনও ছেলে ফ্রেন্ড ছিলোনা।এমনকি এলাকার ছেলেরাও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় পেতো।ব্যাপারটা আমার খুবই খারাপ লাগতো।আমি বুঝতে পারতাম না কেনো তুমি এমন করতে।
তুমি কখনো আমাকে তোমার অনুভূতিগুলোর সাথে পরিচয় হতে দেওনি।নিজের ভালোবাসাকে আড়ালে রেখেছো এতে আমার কি দোষ।
আমি ভাবতাম তুমি আমাকেও মায়া আপুর মতো বোন ভেবে এতো আদর করতে,কেয়ারিং করতে।বিশ্বাস করো কখনো তোমার নযরে আমি এর বাহিরে কিছুই দেখিনি।আমার জীবনে তোমাকে ছাড়া যদি কোনও পুরুষ এসেছে,সে শুধু রোহান ছিলো।”
–আবার সে নাম!নামটি শুনে মুহুর্তেই আয়নের চেহারার রং পাল্টে গেলো।হাতদুটো মুঠো করে নিজেকে কন্ট্রোল করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো আয়ন।ভীষণ একটা কষ্ট হচ্ছে মনে,শ্বাস নিতে পাড়ছে না মনে হয় ও।আয়নের এখন মনে হচ্ছে,কেউ জেনো আয়নকে ধরে বেধে গভীর জলে ফেলে দিয়েছে,সেখান থেকে আয়ন না পাড়ছে উঠতে না পারছে নিশ্বাস নিতে।তবুও নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছে।
কিন্তু কতোক্ষন?
“রোহান তোমার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না আয়নদা।তাইতো সাহস করেছে আমার কাছে আসতে,আমার সাথে কথা বলতে।আর তুমি তখন দেশে ছিলেও না।
আমি একটা মেয়ে,আর আমারও কিছু চাওয়া পাওয়া ছিলো।নিজের বান্ধবীদের মতো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুড়তে,আনন্দ করতে চেয়েছিলাম।আর তখনি রোহান আসে আমার জীবনে।
আমি জানি না রোহান আমার সাথে এমন কেনো করেছে।কিন্তু আমার মনে শুধু এতোটুকু প্রশ্ন বার বার আসছে,তুমি কি রোহানের সাথে এমন কিছু করছো।যা আমি জানি না,প্লিজ বলো।কারণ এর আগেও তুমি অনেক ছেলেদেরকে মারধর করেছে আমার জন্য।এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিলো।আমি শুধু জানতে চাই,রোহানের আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পেছনে তোমার হাত নেই তো আয়নদা। ”
–আয়ন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না,প্রিয়ুর মুখে অন্য ছেলের নাম এমনেই সহ্য হয় না।তার উপর সেই ছেলে চলে যাওয়ার পিছনে প্রিয়ু আয়নকেই সন্দেহ করছে।
এতোক্ষন চুপচাপ প্রিয়ুর সামনে বসে থাকলেও এবার জেনো মাথা গরম হয়ে গিয়েছে আয়নের।চেয়ারটাকে লাথি মেরে ফেলে দিলো।
আয়নের এহেমকান্ডে প্রিয়ু ভয় পেয়ে গেলো।এমনেই ও আয়নের রাগকে বাঘের মতো ভয় পায়।আর না বুঝে প্রিয়ু আবার একই ভুল করছে।
“আমাকে কি তোর জানোয়ার মনে হয়,নাকি কুকুর।বল?এতো কিছুর পরও তুই এখনো শুধু ওই ছেলের কথা চিন্তা করছিস আমার না।আমার অনুভূতি, আমার আবেগ,ভালোবাসার তোর কাছে কোনই মূল্যই নেই প্রিয়ু।
কথা বল প্রিয়ু,আমার দিকে তাকা।এখন কেনো চোখ রাখতে পারছিস না বল।প্রিয়ুর বাহুদুটো শক্ত করে চেপে ধরে আয়ন।আমার প্রশ্নের উত্তর দে প্রিয়ু।কেউ কিছু জিঙ্গেস করলে বলতে হয়,এতোটুকুতো মেনার্স আমি শিখিয়েছি তোকে নিশ্চয়ই। তাহলে বল।
কোথায় তোর রোহান।আমিতো চলেই গিয়েছিলাম তোর ধোকা পেয়ে।তাহলে তোর রোহানও কেনো চলে গেলো।নাকি তোকে দিয়ে ওর সাধ্য হাছিল হয়নি বলে চলে গেছে। আর এখন তার দোষ তুই আমার উপর চাপাচ্ছিস।
বল প্রিয়ু,কি নেই আমার।আর কি দিয়েছে এমন রোহান তোকে,যে তুই ওকে ছাড়া কিছু চোখেই দেখিস না।আমার মাঝে এমন কি নেই,যা তুই ওর কাছ থেকে পেয়েছিস বল প্রিয়ু।”
–প্লিজ আয়নদা স্টোপ! কিসব বলছো তুমি।প্রিয়ু কান্না করতে করতে বললো।
“আয়ন প্রিয়ুকে ছেড়ে দিয়ে প্রিয়ু থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলো। নিজের চুলগুলো দুহাত দিয়ে টানতে লাগলো হয়তো রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আমি ক্লান্ত প্রিয়ু…ভীষণ ক্লান্ত।তোর সাথে নিজের সাথে লড়াই করে করে আমি ক্লান্ত।তুই আমার সাথে ওই রোহানের তুলনা করছিস।যার আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলারও যোগ্যতা নেই।”
–টাকা দিয়ে কারো যোগ্যতা মাপা যায় না আয়নদা।আর আমি তো শুধু ছোট একটা প্রশ্ন……. আর বলতে পারেলো না প্রিয়ু।ধাক্কা দিয়ে প্রিয়ুকে বিছানায় ফেলেদিলো আয়ন।দু’হাত বিছানায় চেপে ধরে প্রিয়ুর উপর উঠে পড়লো।
আচামক এমন ঘটনায়,প্রিয়ু আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো।ঘামতে লাগলো প্রচুর।ঠোঁট দুটো কাঁপতে লাগলো।আয়ন মুগ্ধ হয়ে প্রিয়ুর ভীতুমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়নের চোখ বিচরণ করছে,প্রিয়ুর চোখ,ঠোঁট আর গলা বেয়ে নিচের দিকে,প্রিয়ুর সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত বুকের উঠানামার উপর।
আয়নের মনে আবার বিশাল ঝড় শুরু হতে লাগলো।প্রিয়ুকে কাছে পাওয়ার ওকে ছোঁয়ার।আয়ন চায় ওর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে প্রিয়ুকে ভালোবাসতে।নিজের কাছে আনতে।একদম বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে।আবার জেনো নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করতে আয়ন কয়েকটা জোড়ে নিশ্বাস ছাড়লো।
বল প্রিয়ু কি দিয়ে যোগ্যতা মাপবো।ও তোকে কি এমন সুখ দিয়েছে যা আমি তোকে দিতে পারবো না।বল….?আয়ন চিৎকার করে।
“প্রিয়ু ভয়ে এবার কেঁদেই দিলো জোড়ে।”
–আয়নের হুশ আসলো,ও কি করছে।সাথে সাথে প্রিয়ুকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো মাথা চেপে।নিজের উপরই রাগ উঠছে এখন।কেনো নিজের এই রাগটাকে সে কন্ট্রোল করতে পারেনা। কেনো?আয়ন আর কিছু না বলেই চলে গেলো কোথাও।
“প্রিয়ু কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো।হাটুতে মাথা গুঁজে নিজের সাথে নিজেই বলতে লাগলো।কেনো বুঝো না আয়নদা।বলে দিলেই ভালোবাসা হয়ে যায়না।ভালোবাসা মানেতো একটা নির্ভরতার হাত।যা আমি তোমার কাছ থেকে পেতে চাই।কিন্তু তুমি বার বার ভুল বুঝো আমাকে আয়নদা।কেনো একটু বিশ্বাস রাখতে পারোনা, কেনো ভরসা করোনা আমাকে।আমার প্রতি না থাকলেও নিজের ভালোবাসার প্রতি তো রাখো।
__________
“লিফট এর দরজা খুলার সাথে সাথে ম্যানেজার মারুফ তিয়াশের কোলে একটা মেয়েকে দেখে কিছুটা চমকে গেলো।স্যার আপনি ঠিক আছেন তো
আর এই মেয়েটি কে?অবাক করা চোখে।”
–দিশাকে কোলে নিয়ে লিফট থেকে বের হতে হতে বললো,আমার বউ।দেখতে পাচ্ছেন না তাইতো কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।আর শুনুন আমার বউয়ের চশমা আর পার্সটা আমার কেবিনে নিয়ে আসুন।বলেই
তিয়াশ দিশাকে কোলে করে নিজের কেবিনের দিকে হাটা ধরলো।অফিসের সব স্টার্ফরা চেয়ে চেয়ে ব্যাপারটা দেখছে আর উপভোগ করছে।কেউ কেউ তো কানাঘুষি শুরুও করে দিয়েছে।
মারুফও তারাতারি করে চশমা আর পার্সটা নিয়ে তিয়াশের কেবিনের দিকে ছুটলো।ব্যাপারটা তার কাছে ধারুন ইন্টেরেসটিং লাগলো।এরা সব ভাইরা কি একই রকম।সোজাসুজি কোনও কাজ করতেই পারেনা এরা।প্রথমে আয়ন স্যার বলা নেই কওয়া নেই বিয়ে করে ফেললো।আর তিয়াশ স্যারতো বউ নিয়ে সোজা অফিসেই চলে এসেছে।
“ভাই এই স্যাম্পল কোথায় পেলি।(অনিক)”
–লিফটে…. তিয়াশ একটু মুচকি হেসে।
“কিন্তু যে মেয়ে তোকে দেখলে দশ হাত দূরে থাকে সে আজ একেবারে কোলে এসে পড়েছে।ব্যাপারটা কি।”
–আরে,ওর অন্ধকারে বা বদ্ধঘরে ফোভিয়া আছে।লিফট বন্ধ হবার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো।আর যখন লাইটও চলে গেলো ম্যাডাম ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তাই বর্তমানে ম্যাডাম আমার কোলে।তুই কি ভাবিস এই মেয়ে সুস্থ থাকলে কি আমি ওকে কোলে তুলতে পারতাম।ধরার আগেই তো দৌড় মারে।
“অনিক হেসে দিলো তিয়াশের কথায়।কথাটা একদম সত্য।ভাই এতোক্ষন হলো,জ্ঞান ফিরছে না কেনো।মরেটরে গেলো নাতো।”
–কিসব বলছিস।দাঁড়া আমি দেখছি।তিয়াশ গ্লাশ থেকে পানি নিয়ে দিশার মুখে মারলো।
“মুখের উপর পানি পড়ায় ধড়ফড়িয়ে দিশা উঠে বসলো।ব্যাপারটা বুঝতে এক সেকেন্ড টাইম নিলো।
সামনে দুটো মানুষের অবেয়া দেখতে পাচ্ছে।তবে ভালো করে স্পষ্ট তাদের চেহারা দেখতে পারছে না।”
–তিয়াশ ব্যাপারটা বুঝতে পারে,তাই টেবিলের উপর থেকে চশমাটা নিয়ে দিশার চোখে পড়িয়ে দিলো।আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম তুমিতো আবার দিন কানা।
এখন দেখতে পাচ্ছোতো আমাকে।বলেই এক চোখ টিপ মারে।
“তিয়াশকে সামনে দেখেই দিশা ছিটকে দূরে চেপে বসে।
আ আমি এখানে কি করে এলাম।”
–দিশার এমন আচরণে তিয়াশ মোটেও অবাক হলো না।কারণ প্রায় এমনি হয়।তিয়াশকে দেখলেই কেনো জানি এই মেয়ে দূরে সরে যায়,ভয় পায়।মাঝে মাঝে তো দিশার বিহেভিয়ার দেখে মনে হয় তিয়াশ কোনও ডাকাত।দিশার যা মূল্যবান কিছু আছে সব লুট করে নিয়ে যাবে।
“দিশার প্রশ্নের উত্তর অনিক দিলো।কেমনে আবার তিয়াশের কোলে করে।এতোক্ষন তো কোলেই ছিলে,আর এখন আবার নাটক করছো।”
–কি???দিশা চমকে গেলো কথাটা শুনে।
“কি না ম্যাডাম জি।”
“তিয়াশ এবার সোজা প্রশ্ন করলো,আপনি এখানে কি করছেন মিস দিশা।”
–আ আমি তো আয়ন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
“তিয়াশ ভ্রুটা কুঁচকিয়ে কেনো?”
–আয়ন ভাইয়া আমাকে আসতে বলেছে তাই।
“ও! কিন্তু ভাইয়া তো এখনো আসেনি অফিসে।আর আসবে কিনা আজ তাও ঠিক নেই।তুমি এখানেই বসো,আমি ফোন করে জিঙ্গেস করছি,ভাইয়া আজ আসবে কিনা।”
__________
“নূর ভিলায় আজ রাতে ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।নিলীমা আর ওর পরিবারসহ কিছু ফ্যামিলি ফ্রেন্ডসদেরকেও ইনভাইট করা হয়েছে এই ডিনার পার্টিতে।আয়ন বাসায় এসেই উক্ত ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগলো।মায়া আয়নকে দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিনী তার নাক ডুকিয়ে দিলো এর মাঝে।
–ওই তো আসছে আমাদের আয়ন।দেখো না,ঘরে নতুন বউ অথচ ছেলে আমাদের সারাদিন শুধু অফিসেই সময় কাটায় কি কপাল! বলছি কি এখনতো বিয়ে হয়ে গিয়েছে নতুন বউকে একটু সময় দেও, তা না করে শুধু কাজ আর কাজ।…..কথাটা অনেকটা ব্যাঙ্গ করে বললো মোহিনী।যা আয়নের বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি।
আচ্ছা যাই হোক আয়ন দেখো কে এসেছে নিলীমাকে ইশারা করে।মেয়েটি কতো ভালো দেখো আগের কিছু মনে রাখেনি।তোমার প্রতি নাকি কোনও অভিযোগও নেই।এসব মেয়েরাই তো ঘরের লক্ষী হয়।আমি তো আমার তিয়াশের জন্য এমন একটা মেয়েই চাই।
“ফুফু যে আজকের সকালের অপমানের বদলা নিতেই এতোসব আয়োজন করেছে,তা আয়ন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।এই মহিনী ফুফুর রগে রগে চেনা ওর।কিছুতো প্লানিং করেছে, আয়ন মনে মনেই ভাবতে লাগলো।তা না হলে হঠাৎ এতো দরদ দেখানোর পাবলিক না উনি।
আয়নও এর শেষ দেখতে চায় তাই মুখে কিঞ্চিত হাসি টেনে সামনে এগিয়ে গেলো মেহমানদের সাথে কুশলবিনিময় করতে।”
–সবাই যখন আড্ডায় ব্যস্ত তখন আয়নের চোখ প্রিয়ুকে খুঁজছিলো।কোথায় মেয়েটি? নাকি এখনো মন খারাপ করে বসে আছে।আয়ন উঠে প্রিয়ুকে দেখতে যাবে তার আগেই,সারা আয়নের হাত ধরে ফেলে।
আরে আয়নদা কোথায় যাচ্ছো।এতো সময় পড়ে এসেছো আমাদের সাথে একটু বসতে তো পারো।
“হে আয়ন সারা ঠিকই বলেছে,বসনা।আমরা কিন্তু তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।নিলীমার বাবা কথাটা বললো।”
–না মানে,আংকেল আমি একটু প্রিয়ুকে দেখে আসছি।সবাই এখানে অথচ ও নেই।ও হয়তো জানেই না আপনারা এসেছেন।
“হুম ভালো কথা মনে করেছো,আমিও সেই চার্মিং লেডিকে দেখতে চাই,যার জন্য তুমি এতো পাগলামি করেছো।”
–আয়ন একটু লজ্জা পেয়ে গুলো,মিস্টার আমিনূর চৌধুরীর কথায়।
আমিনূর চৌধুরী নিলীমার পিতা।লোকটিকে আয়ন মন থেকে খুব শ্রদ্ধা করে।উনি যে কোনও বিষয়কে খুব সহয করে দেখেন।খুব বিচক্ষণ টাইপের মানুষ।উনি জ্ঞানিকে শ্রদ্ধা আর গুণি ব্যক্তিকে কদর করতে জানেন।উনার ব্যক্তিত্বটাই এমন।
“আয়নের ইশারায় পারুল প্রিয়ুকে আনতে গেলো।আর এদিক দিয়ে আয়ন নিলীমাকে বুঝার চেষ্টা করছে।কারণ নিলীমা একধরণের জেদি টাইপের মেয়ে,এতো সহযে সব কিছু ভুলে গিয়েছে ব্যাপার সত্যি আয়নকে ভাবাচ্ছে।আর একংগেজমেন্ট ভাঙ্গার পর নিলীমার সামনাসামনি তেমন আসিনি আয়ন।বিজনেস ব্যাপারে যেটুকু দরকার হতো তা তিয়াশই সামলিয়ে নিতো।কিন্তু আজ হঠাৎ করে বাসায় এসে পড়া তাও আবার ফুফুর একটা কলে।
আমার আর প্রিয়ুর সম্পর্ক অন্য স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক কিনা তাই দেখতে এসেছে ও।আয়ন মুচকি হাসলো নিলীমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে।
–প্রিয়ুকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকালো।আয়ন প্রিয়ুর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ওর মনে কি চলছে।তাই আয়ন নিজেই এগিয়ে গেলো প্রিয়ুর কাছে।নর্মালি প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে সবাইকে বুঝালো–প্রিয়ু আমার স্ত্রী আর আমার স্ত্রীর সাথে কোনও প্রকার বাজে ব্যবহার বা অপমান জনক কথাবার্তা মোটেও পছন্দ করবো না।বিশেষ করে নিলীমাকে।
আয়ন ও প্রিয়ুর জুটি দেখে সবাই খুশি হওয়ার অভিনয় করলেও কে যে কেমন আয়ন তা খুব ভালো করেই জানে।এরাই বাহিরে গিয়ে আবার কানাঘুষা করবে।
সবই নকল,মুখশধারী।
চলবে…।