“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-১২

0
4359

“এখনো_ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part:12

“ফাকা রাস্তায়,হাইওয়ে দিয়ে বাইকটি ছুটে যাচ্ছে কোনও এক অজানা পথে,শহরের কোলাহল থেকে দূরে।শো,শো বাতাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে দুজনের শরীরটাকে।বুকের সামনে রাখা হাতদুটি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আয়নকে।এই শক্ত হাতের বাধনের মালিক আয়নের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে উপভোগ করছে রাতের খালি শহরটিকে।
কি সুন্দর লাগছে রাতের ঢাকাকে।দিনের কোলাহল পূর্ণ শহর রাতের আধারে জেনো ঘুমিয়ে গিয়েছে।চারদিক কি নিরব নিস্তব্ধতা।রাস্তাটাও ফাকা। মাঝে মাঝে শুধু দূর থেকে আসা কিছু গাড়ী পাশ কাটিয়ে চলে যায়।”

–হঠাৎ করে রাতের আকাশটাও পরিবর্তন হতে লাগলো।তারাভরা আকাশটাকে জেনো ঘন কালো মেঘ এসে লুকিয়ে ফেলছে।সাথে বইছে ঠান্ডা হিমেল বাতাস।দিনের প্রচণ্ড পঁচা গরমে হঠাৎ করে আসা এই ঠান্ডা বাতাসটি শরীরে জেনো কাটা ধরিয়ে দিচ্ছে,তার উপর যদি বাইকটি হাই স্প্রিডএ চলতে থাকে।
প্রিয়ুর ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো।হঠাৎ শরীরে এমন শীতলতা স্পর্শ করায় প্রিয়ুর চোখ বুঝে ঘুমও আসতে লাগলো।কিন্তু ও নিজেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সামলাতে।তা না হলে যেকোনও সময় পড়ে গিয়ে এক্সিডেন্ট হতে পারে।

“আয়নায় প্রিয়ুকে ঘুমে ঝিমুতে দেখে আয়ন রাস্তার একপাশে বাইক দাঁড়া করালো।”

–হঠাৎ বাইক থামায় প্রিয়ু চমকে আয়নের দিকে তাকালো,থামলে কেনো!আমরা কি এখানেই নামবো।চারপাশে একবার তাকিয়ে প্রিয়ু।কারণ রাস্তাটা অনেকটা নিরব।আর আশেপাশেও কিছুই নেই।
–নাম,বাইক থেকে।আয়ন বলে উঠলো প্রিয়ুকে।
–‘কেনো’
–আবার প্রশ্ন করছিস।নাম আগে।
–‘প্রিয়ু ভয়ে নেমে গেলো।’
–আয়ন কিছুক্ষন মুগ্ধ হয়ে এই অন্ধকারের মাঝেও প্রিয়ুর ভীতুমাখা মুখটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।প্রিয়ু ভয় পেলেই মুখটা কেমন বাচ্চাদের মতো করে ফেলে।আর তখন আয়নের মন চায় প্রিয়ুকে খেয়ে ফেলতে।এতো কিউট কেনো এই মেয়েটি।তাইতো আয়ন চাইলেও এই মেয়েটি থেকে দূরে সরে থাকতে পারে না।
আয়ন মুচকি হেসে,সামনে বস সোনা।তুই হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে।

“না না,আমি ঘুমাবো না।প্রমিজ।”

–প্রিয়ু!!!তুইও খুব ভালো করে জানিস তোর ঘুম খুব ভারী।আর একবার চোখ লেগে গেলে,কিছুই করতে পারবি না।
“সত্যি বলছে আয়নদা।কিন্তু সামনে কিভাবে।”

–প্রিয়ুর ভাবনার মাঝেই আয়ন বাইক থেকে নেমে প্রিয়ুকে দুহাতে জড়িয়ে উপরে তুলে প্রিয়ুর দুপাকে নিজের কোমরের সাথে ক্রস করিয়ে দিলো।
“আয়নের হঠাৎ এমন করায় প্রিয়ু কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেলো।ছোট ছোট চোখগুলো দিয়েই আয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।”
–কিন্তু আয়ন নিজের রিয়েকশন পরিবর্তন না করেই প্রিয়ুকে এভাবে নিয়েই বাইকে বসলো।প্রিয়ুকে পুরোপুরি নিজের ব্যালেন্সে রাখার জন্য নিজের গেন্জির ভেতর প্রিয়ুকে ডুকিয়ে ফেললো।
আয়নের পড়নের গেন্জিটা তুলনা মূলক ভাবে ঢিলাই ছিলো কিছুটা,আর এটাকে টানলে তো আরো বড় হবে।তাইতো প্রিয়ুর মতো পুচকি মেয়ে অনায়াসে জায়গা পেয়ে গেলো।

“প্রিয়ু কিছু বলতে যাবে তার আগেই,আয়ন প্রিয়ুর হাত দুটো নিজের খোলা পিঠের দিকে ছড়িয়ে,শশশশ…আর কোনও কথা না।প্রিয়ুর মাথাটা কাধের উপর রেখে,ঘুমা সোনা।এখন আর তোর ঠান্ডাও লাগবে না আর ঘুমাতেও পারবি শান্তিমতো।প্রিয়ুকে এভাবে নিয়েই আয়ন আবার বাইক স্ট্যার্ট দিলো।”

–প্রিয়ু লেপ্টে আছে আয়নের খালি বুকের সাথে।আয়নের বুকের হার্ট বিটের ধুপধুপ শব্দটি এতোই জরে বিট করছে যে প্রিয়ু জেনো এই নিস্তদ্ধ রাতেও তা খুব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।প্রিয়ুর ভেতরেও একটা ভালোলাগা কাজ করছে।তাই আয়নকে নিজ থেকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এমন একটা নির্ভরতা পূর্ণ জায়গারই তো প্রয়োজন ছিলো প্রিয়ুর।আজ পেয়ে জেনো সব ভুলে আয়নের সাথে মিশে গেছে প্রিয়ু।

“ভালোবাসা মানে তো একটা নির্ভরশীল হাত।
ভালোবাসা মানে এক জোড়া চোখ অপলক চেয়ে থাকা।
ভালোবাসা মানে তো আমি আছিতো পাগলি,তোর সাথে তোর কাছে।
ভয় কিসের।”

–আয়নের ভেতরে জেনো আবার তোলপাড় হতে লাগলো।প্রিয়ুর শরীর থেকে আসা জেসমিন ফুলের পারফিউমের ঘ্রাণটা আয়নকে মাতাল করে তুলছে।তবুও আয়ন নিজেকে যথাসাধ্য কন্ট্রোল করে রেখেছে।বাতাসে প্রিয়ুর চুলগুলো উড়ে আয়নের মুখে আচড়ে পড়ছে।আয়নের ভালোই লাগছে তবে এতে বাইক চালাতে সমস্যা হতে পারে তাই একহাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে প্রিয়ুর কাধে রাখলো।আর প্রিয়ুর মাথায় একটা গভীর চুমো একে দিলো আয়ন।

“এ কেমন আসক্তিতে জোরালি আমায়,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে।আগে তুই জানতি না বলে তোর থেকে দূরে থাকা সম্ভব ছিলো,কিন্তু সোনা এখন!এখন তোর কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব না।
কবে নিজ থেকে আমাকে একটু ভালোবাসবি,কবে আমার ডাকে সারা দিবি।আমি যে তোর ভালোবাসার তৃষ্ণার্ত ভীষণ তৃষ্ণার্ত।হয়তো সেদিন জোর করেছি,কিন্তু আমি যে তবুও অপূর্ণ।তোর ভালোবাসার অভাব এই জীবনে,খুব অভাব।”
__________
“বেলকানিতে বসে গিটার বাজাচ্ছে দিনেশ আর গুন গুন করে গান গাইছে।সাথে সাথে ভেসে আসছে অতিতের কিছু স্মৃতি।
তিতিরের সাথে দিনেশের প্রথম দেখা হয়েছিলো যেদিন।ইন্টার্ভিউ দিতে আসা তিতিরকে দেখে দিনেশ নিজের অজান্তেই বলে উঠেছিলো।”

“কি অপরুপ লাবণ্যময়ী সুন্দরী।”

–টানা টানা চোখ,আর তাতে হালকা করে কাজল দেওয়া।যা চোখদুটোকে অসম্ভব মায়াবী করে রেখেছে।এই মায়ার সাগরে যে কেউ ডুব দিতে চাইবে।খাড়া নাকটায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম,কেমন পাথরের মুক্তার মতো চিকচিক করছিলো।গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটদুটো আর ডান গালের তিলটা জেনো মেয়েটার সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো।এই অধুনিক যুগেও কোনও মেয়ের এতো বড় চুলও হয় তা দিনেশের জানা ছিলোনা।আর লম্বা ঘন চুলগুলোকে একটা বেনুনি করে রেখেছে,যা মাঝা ছাড়িয়ে পড়েছে তখনো।

“নীল রংয়ের চুড়িদারটা জেনো ফুটে উঠেছে মেয়েটির সাদা ধবধবে শরীরটায়।যা এতো স্ম্যাট মেয়েরা নিজের এতো দামী পোষাক দিয়েও পারিনি।দুহাতে দুটো চুড়ি,কিন্তু মুখে নেই কোনও মেকআপ।তবুও জেনো মেকআপে ডাকা এসব মেয়েদের তুলনায় অতুলনীয়।”

–দিনেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তিতিরের দিকে।একটা মেয়েকে ন্যাচারাল ভাবেও এতো সুন্দর কি আসলেই লাগতে পারে।দিশানের চোখই সরছিলো না তিতিরের উপর থেকে সেদিন।দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিতিরকে পুরো রিডিং করে ফেললো দিনেশ এক পলকে।
তাইতো তিতিরকে একটু জালানোর জন্যই, ইনটার্ভিউতে কিছু অদ্ভুট প্রশ্ন করেছে দিনেশ।শুধু মাত্র তিতিরের মুখের এক্সপ্রেশন দেখতে।তিতির নামের এই মেয়েটিকে আরো জানতে সেদিন চাকরীটা তিতিকেই দেওয়া হয়।এতে অবশ্য অনেকেই অবাক হয়েছিলো,কারণ দিনেশের মতো এতো স্ম্যাট বসের পি এ এই খালাম্মা।কিভাবে?

“তিতিরের চাকরী হবার পর,প্রথমে দিনেই তিতির বুঝতে পারলো,বেশির ভাগ স্টার্ফরাই তিতিরকে এড়িয়ে চলে।আসলে এতো বড় ফ্যাসেন হাউজ অফিসে তিতিরের মতো মেয়ে অনেকটাই বেমানান।কিন্তু তিতির তার যোগ্যতা জানতো তাই এসব কিছু সব সময় এড়িয়ে চলতো।শুধু নিজের কাজের দিকে ফোকাশ করতো।আর এসব কিছু দিনেশকে তিতিরের প্রতি আরো মুগ্ধ করতো।
‘তিতির তো এমন ছিলো,অফিসে ওর পিছে সবাই ওকে খালাম্মা করে ডাকতো তাতেও ও কিছু বলতো না কাউকে।কারণ এতে তিতিরের কিছু যায় আসে না।অধুনিকতা মানে এতো নয়,আমাকে শরীর দেখিয়ে পোশাক পড়তে হবে,তাহলেই সে স্ম্যাটের টাইটেল পেয়ে যাবে।শালীনতা বজায় রেখেই পোশাক নির্বাচন করা দরকার সবার তিতির মনে করে।”

–কিন্তু তিতিরের সব বিষয় এমন চুপ করে সহ্য করা দিনেশের পছন্দ হতো না।তাই নিজেই স্টার্ফদের শাসাতে চাইলো।কিন্তু তিতির বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
“মিস তিতির এতোটাও ভালো হওয়া ভালো না,নিজের লড়াইটা লড়তে শিখুন।”
–কে বলেছে আমি ভালো স্যার।তিতির মুচকি হেসে,আমি আমারটাই দেখছি,তবে নিজের মতো করে।
“দিনেশ ভ্রুটা কুচকিয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে,আসলে ও তিতিরের কথার মানে বুঝতে পারছে না তাই।”
–স্যার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে কিছু পাগলা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠে।ওটা কুকুরের স্বভাব তাই করে।কিন্তু আমরা কুকুর না।আমরা তো আশরাফুল মাকলুকাত।সৃষ্টির শেরা জীব।আমাদের আল্লাহ তাআলা বিবেক দিয়েছেন,বুদ্ধি দিয়েছেন।আর তা এসব বোকা মানুষের পিছনে ব্যয় করতে না।
আর আপনি আমার তরফ থেকে কিছু বললে,সমস্যা আরো বাড়বে।কানাঘুষো আরো হবে।তাই আমাকেই হ্যান্ডেল করতে দিন এসব।প্লিজ।
“সেদিন দিনেশ সত্যি ভীষণ আবাক হয়েছিলো তিতিরের এমন ব্যবহারে।কোনও মানুষ এভাবেও কি ভাবতে পারে।”

–হঠাৎ বৃস্টির ঝাপটায় দিনেশ সম্বিৎ ফিরে পায়।কিছু একটা মনে করে বেলকানি থেকে উঠেই তিতিরের রুমের দিকে হাটা ধরে।একটু আগে রাগের বসে তিতিরকে একটা থাপ্পড় মারে দিনেশ।এরপর পরই ওখান থেকে চলে আসে দিনেশ।

“রুমে প্রবেশ করে দেখে যে, তিতির এখনো ডিনারটাও করেনি।চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।”
–দিনেশ গিয়ে তিতিরের সামনে হাটুগেরে বসে পড়লো।
“দিনেশকে দেখেই তিতির মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো।”
–দিনেশ তিতিরের মুখটা দুহাতে ধরে,সরি লক্ষীটি। আমি এমন করতে চাইনি,কিন্তু তোমার বার বার বাড়ী যাওয়ার কথা শুনে রাগ উঠে গিয়েছিলো।আম সরি….!

“স্যার কেনো বুঝতে পারছেন না,এসব করে কিছুই পাবেন না।”
–জানি!কিন্তু আমি যে তেমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা,কেনো বুঝো না তুমি।
“আমার আর আপনার মাঝে বিশাল বড় একটা দেওয়াল আছে,ধর্মের দেওয়াল।যা পার করতে না আমি পারবো,না আপনি।তাহলে কিসের সম্পর্ক।প্রত্যেক সম্পর্কের একটা নাম দিতে হয়।কিন্তু আপনি যা চাইছেন সে সম্পর্কের কোনও নাম হয়না।আর নাম ছাড়া সম্পর্কের কোনও মানে হয় না।”
–দিনেশ তিতিরের মুখটা নিজের মুখের সামনে এনে,চোখে চোখ রেখে বললো,একটা সত্যি কথা বলবে তিতির।
“তিতির তাকিয়ে আছে দিনেশ কি জিঙ্গেস করবে তা জানতে। ”
–‘ভালোবাসো আমায়।’
“তিতির কিছু বলতে পারলো না,শুধু তাকিয়ে আছে দিনেশের চোখের দিকে আর নিরবে কিছু জল গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দিনেশের হাতে।”
–তিতির চুপ করে রইলো।দিনেশ তিতিরের নিঃশব্দ থাকাকে হ্যা ধরে তিতিরের চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে নিজেই বললো,
জানি তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসো।হয়তো আমার থেকেও বেশি।সেটা তোমাকে মুখে বলতে হবে না তিতির।আমি জানি তুমি ভয় পাচ্ছো।কিন্তু আমার উপর একটু বিশ্বাস রেখো আমি সব ঠিক করে দেবো।কিন্তু এরপর আমার থেকে দূরে যাওয়ার কোথাও চিন্তা করবে না।মনে রেখো এই দুনিয়ার বুকে আজও এমন কেউ জন্ম হয়নি যে তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে।এমনকি তুমি নিজেও না।

“তিতির হঠাৎ দিনেশকে জড়িয়ে ধরলো,ওর হাত দুটো শক্ত করে। ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো তিতির।নিজের সব কষ্টগুলো ভুলতে চাইছিলো আজ দিনেশের বুকে মাথা রেখে।”
___________

“মহিনীর মুখে নিলীমার প্রশংসার ফুলঝুরি শুনতে শুনতে তিয়াশ ও অনিক কিছুটা বিরক্তবোধ করছে।যা ওদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।কিন্তু মাকে কিছু বলতেও পারছে না তিয়াশ।”
–তবে তিয়াশ ছাড়ার পাত্রও না।ও জানে কাকে কিভাবে জব্দ করতে হয়।তাই!
জানো নিলীমা,আমাদের প্রিয়ুও কিন্তু কম না।ঠিক না,অনিক।
‘অনিকও সায় দেয় ওর কথায়।’

–তিয়াশের এমন কথায় মহিনী বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।এখানে প্রিয়ু আসলো কিভাবে তিয়াশ।দাঁতেদাঁত চেপে কথাটা বললো মেহিনী বেগম।এরপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে।কিসের সাথে কি তুলনা করছিস।কোথায় হীরা আর কোথায় কয়লা।

“হে মা ঠিকই বলছো।আমাদের প্রিয়ু কিন্তু একটা হীরা। তা আবার প্রত্যেক দোখানে পাওয়া কোনও সস্তা হীরা না।দোখানের সবথেকে মূল্যবান হীরাটা,যা দোখানদার নিজেও লোভে কাউকে দিতে চায় না।আমাদের প্রিয়ুও কিন্তু সেই হীরার মতো।
দেখো না,আমাদের আয়নদাও তার মূল্যবান হীরাকে কাউকে দেয়নি,একদম পার্মান্টেটভাবে নিজের কাছে এনে ফেলেছে।আসলে কি জানো হীরার কদর তো আর সবাই করতে পারো না।হীরার কদর তো একজন জোহুরীই পারে করতে।”

–তিয়াশের কথা শুনে প্রিয়ু ভীষণ লজ্জা পেতে লাগলো।কিসব কথা বলছে তিয়াশ ভাই,তাও আবার বড়দের সামনে।মাথা ঠিক আছে তো।

“আর আয়ন মুচকি হাসছে, ও জানতো ওর ভাইরা ছাড়ার পাত্র না।ভাইগুলো আয়নের জন্য জান দিতেও চিন্তা করবে না,আর সেখানে ভাইয়ের জানকে কেউ অপমান করবে তা তো আরো আগে মেনে নিবে না ওরা।”

“আর আমাদের আয়নদার মতো বিচক্ষণ জোহুরীই আর কোথাও নেই।এটা অবশ্যই নিলীমার থেকে আর কে বলতে পারবে।এতোদিন ধরে দাদা ভাইয়ের সাথে বিজনেস করে আসছে,ওটা অন্য কথা প্রত্যেকটা কাজই কোনও না কোনও ভুল করেই আসছে।আর তা দাদা ভাইকেই ঠিক করতে হচ্ছে।”

“নিলীমা দাঁতেদাঁত চেপে কথাগুলো হজম করছে।”

–মহিনী চোখ রাঙ্গিয়ে ছেলেকে বললো,তাতে কি।ও চেষ্টা তো করছে।মিডেলক্লাশ মেয়েদের মতো নিজেকে রান্না ঘরে সীমাবদ্ধ তো করেনি।এটাই বা কয়জনে পারে।এটার জন্যও যোগ্যতা থাকতে হয়।

“হুম, তুমি ঠিকই বলেছো মা।কিন্তু জানো কি মিডেলক্লাশ মেয়েদের একটা বিশেষ গুণ থাকে যা হয়তো তোমাদের মতো হাইক্লাশের মেয়েদের মাঝেও নেই।”
–তাই নাকি,আমিও শুনি কি তা।নিলীমা অনেকটা রেগে কথাটা বললো।

“স্বামীর মন জয় করা।কিভাবে নিজের স্বামীকে খুশি করতে হয়,আর সবথেকে বড় নিজের স্বামীকে সম্মান করতে হয়।একজন মিডেলক্লাশ মেয়েদের দুনিয়াটা খুব ছোট থাকে,তাই তাদের চাহিদাও কম।এসব মেয়েরা সবাইকে আপন করতে জানে।জানে শ্রদ্ধা করতে।আর কিছু নাই জানুক কাউকে যে অপমান করতে নেই তা খুব ভালো করেই জানে।
ওসব বাদই দেও।তুমিতো দাবি করতে তোমার থেকে নাকি বেশি আয়নদাকে কেউ চেনে না।তাহলে তুমি কিছু প্রশ্নের উত্তর দেও নিলীমা,তাহলেই বুঝা যাবে তুমি কতোটা যোগ্য।আর তোমার পাল্লা কতেটা ভারী ছিলো।
তুমিতো আয়নদার সাথে প্রায়ই দুবছর ধরে আছো। তাহলে অবশ্যই আয়নদার পছন্দ অপছন্দ কিছুতো অবশ্যই জানো।”

–হুম,অনেকটা কনফিডেন্স হয়ে নিলীমা।
“ওয়েল,তাহলে বলো ভাইয়ের পছন্দের খাবার কি।”
–কি আবার গ্রিণ ভেজিটেবিল সালাদ,আয়ন প্রায়ই ওটাই খায়।
“আয়ন এতোক্ষন পর হেসে জবাব দিলো,না নিলীমা।ইউ আর রং”
–তাহলে!নিলীমা অনেকটা বিস্ময় হয়ে।
“প্রিয়ু বলতো দাদা ভাইয়ের পছন্দের খাবার কি।”
–প্রিয়ু তিয়াশের দিকে তাকিয়ে একবার নিলীমার দিকে তাকিয়ে বললো বিরিয়ানি।
“ওয়াট নোনসেনস্! আমি কখনো আয়নকে এসব ওয়েলি খাবার খেতে দেখেনি।”
–কারণ দাদা অনেকটা হেলথ কনসার্ন। আর দাদা বাহিরে তেমন এসব খায়ও না।খুব খেতে মন চাইলে আয়নদা মামীকে বলবে বা প্রিয়ুকে।আর কারো হাতের বিড়িয়ানির টেস্ট আয়নদার তেমন পছন্দই হয়না।

“নিলীমার রাগে কান দিয়ে মনে হয় ধোঁয়া বের হচ্ছে,এভাবে অপমান হতে হবে এখানে এসে জানলে আসতোই না ও।”

–মোহিনী বুঝতে পারলো,প্রিয়ুকে অপমান করতে এদের এনেও কোনও লাভ হলো না।ওর নিজের ছেলেই যেখানে এই মেয়ের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে পরদের দোষ দিয়ে কি লাভ।
“তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,ডিনার মনে হয় রেডি হয়ে গিয়েছে।চল সবাই আমরা ডিনার সেড়ে নি।”

“ডিনার টেবিলে,সারা গিয়ে নিলীমার পাশে বসলো।নিলীমা অবশ্য আয়নের পাশে বসতে চেয়েছিলো।কিন্তু আয়নের একপাশে প্রিয়ু আরেক পাশে তিয়াশ গিয়ে বসে পড়েছে।তাই ব্যাচারীকে হতাশ হয়ে অন্য জায়গা দখল করতে হলো।”

–সারা নিলীমার কাটা গায়ে আরো একটু নুনের ছিটা মারলো।দেখেছো ভাবী।ও সরি তুমি তো এখন আমাদের ভাবী না।আসলে সত্য বলতে কি জানো আপু, আমি মন থেকে তোমাকে ভাবী ভেবেই নিয়েছিলাম।কিন্তু সবই কপাল।তা না হলে, তোমার জায়গায় এই প্রিয়ু কি করে এখানে।যার আমাদের বাসার কাজের লোক হবারও যোগ্য নেই,দেখো সে আজ এই বাড়ীর রানী।

“সারার কথায় নিলীমা সারার দিকে তাকালো।”

–মানে, আয়নদা তো এই বাড়ীর রাজাই,দেখো না তার উপর কেউ কথা বলতেই পারে না বাড়ীতে।তাহলে তার বউতো রানীই হবে।বলতে গেলে মহারানি।

“সারার কথায় নিলীমার গা জ্বললেও কথাগুলো তো সত্যিই।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়ন আর প্রিয়ুর দিকে তাকালো।
আয়ন কি সুন্দর করে প্রিয়ুকে খাবার সার্ভ করছে।প্রিয়ুর পছন্দের খাবারগুলো প্লেটে দিয়ে প্রিয়ুর সাথে চোখের ইশারায় কিছু কথাও বলছে।”

–নিলীমার রাগ উঠছে প্রচণ্ড রাগ।আয়নকে প্রিয়ুর সাথে এভাবে দেখে।
“এই রাগটাকে আরো একটু হওয়া দিলো সারা।দেখেছো নিলীমা আপু।প্রিয়ুতো আয়নদাকে একেবারে হাতের মুঠোতে নিয়ে নিয়েছে।শুধু কি আয়নদা দেখলেনা তিয়াশ ভাইও কেমন প্রিয়ুর ঢাল হয়ে গেলো।এই মেয়েটা আমার সব ভাইদের উপর কালো যাদু করেছে।ওকে ছাড়া কেউ আমাকেও চোখে দেখে না।”

এদিক দিয়ে আয়ন খাবার খেতে খেতে চিন্তা করছে আজকের দিনটাই খারাপ ছিলো।প্রিয়ুর মুখটা দেখেই আয়ন বুঝতে পারে প্রিয়ুর মনের অবস্থা।তাই মনে মনে প্লানিং করে রেখেছিলো,ডিনারের পর সবাই যখন চলে যাবে তখন আয়নও প্রিয়ুকে নিয়ে লং ড্রাইভে ঘুড়িয়ে নিয়ে আসবে।মেয়েটি রাতে ঘুড়তে বেশ পছন্দ করে।”

চলবে…।

(প্লিজ কমেন্ট করবেন।কেমন হচ্ছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here