“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-19
“নিস্তদ্ধ একটি রাত।চারদিক ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে,রাতের শহরটি।সাথে কিছুটা জনমানব শূন্য পরিবেশ।সারাদিন বৃষ্টি পড়ায় পিচঢালা রাস্তাটিও গাড়ীর লাইটের আলোয় কেমন পিচ্ছল পিচ্ছিল দেখাচ্ছে।হালকা ঠান্ডা বাতাস চলতি গাড়ীর জানালা দিয়ে এসে শরীরটাকে কেমন শীতল স্পর্শ করছে।আর বাতাসের এই স্পর্শ শরীরের সাথে মনটাকেও চাঙ্গা করে দিতে যথেষ্ট।
তবে এসব কিছু উপেক্ষা করে তিয়াশের স্থির দৃষ্টি এখন সামনে দাঁড়ানো সাদা মাইক্রোটির দিকে।
মাঝ রাস্তায় ওদের গাড়ী ওভারট্যাক করে থামানোর সাথে সাথেই তিয়াশের সন্দেহ হয়,অবস্থা যে ভালো না।তাই দেরি না করে তিয়াশ সাথেসাথে গাড়ীর জানালার গ্লাশ গুলো বন্ধ করে,গাড়ীর ভেতরের লাইটটাও নিভিয়ে দিলো।”
–আড় চোখে একবার দিশাকেও দেখে নিলো,মেয়েটি এখনো ঘুমিয়ে আছে।দ্রুতো পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে দিলো।আর এখন নিজেও অপেক্ষা করছে পরবর্তী কি হয় তা দেখার জন্য।তিয়াশ একবার ভেবেছিলো গাড়ীটি পিছনে ব্যাক করবে,কিন্তু এতে একটা সমস্যা ছিলো।ওদের সাথে রিভলভার আছে কিনা,তিয়াশের জানা নেই।আর তিয়াশকে পিছনে ব্যাক করতে দেখে যদি ওরা এলোপাতড়ী গুলি ছুড়ে তাহলে হয়তো কিছু একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।তাই তিয়াশ ওই অপশনটা বাদ দিলো আপাততো।ওটা অনেকটা রিস্কি ওদের জন্য।মিনিমাম দশ মিনিট লড়াই করে বেঁচে থাকতে পাড়লেই হবে।এরপর ব্যাকআপ এসে পড়বে ওদের বাঁচাতে।”
“তিয়াশ বসে আছে ওর টয়োটা এলিয়েন গাড়ীটিতে।কিছুক্ষন পর সামনের গাড়ী থেকে প্রায় সাত আটজন মুখশধারী লোক নেমে দাঁড়ালো।সত্যি বলতে তিয়াশ কিছুটা ভয় পাচ্ছে তবে নিজের জন্য না দিশার জন্য।তিয়াশ ভাবেছে ওরা সর্বাচ্চ আমাকে মেরে ফেলতে পারবে কিন্তু দিশা!দিশার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার চান্স বেশি আছে।তাই তিয়াশ একটু টেনশড! তবে তা সামনের লোকদের সামনে প্রকাশ করলো না।নিজেকে যথাসম্ভব অব্যক্ত করলো।”
–কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে গাড়ীর আয়নায় একটি কাগজ ধরলো,তিয়াশ লক্ষ্য করলো কাগজটিতে কিছু লিখা আছে,
“চুপচাপ গাড়ী থেকে নেমে পড়ো।আমরা মেয়েটিকে হার্ম করতে চাইনা।কিন্তু তুমি আমাদের কথা না শুনলে তোমার সাথে মেয়েটির অবস্থাও খুব খারাপ হবে।আর বুঝতেই পাড়ছো আমরা কি করতে পারি।তাহলে বলো কি চাও?”
–কাগজটি পড়ে তিয়াশ একবার দিশার দিকে তাকালো।কি নিষ্পাপ মুখখানি।মেয়েটি এই রাতে বের হতেই চায়নি।আমি বরং জোড় করে নিয়ে এসেছি।এখন আমার কারণে ওর সাথে কিছু হলে,এই অপরাধ বোধ আমাকে কুড়েকুড়ে খাবে সারাজীবন।আমি নিজেকে কখনো মাপ করতে পাড়বো না।তাই তিয়াশ সিদ্ধান্ত নিলো,ও একাই গাড়ী থেকে বের হবে।নিজের যা হওয়ার হোক তবুও দিশার একচুলও পরিমান ক্ষতি হতে দিবে না।
“সিট বেল্টা খুলে তিয়াশ গাড়ী থেকে বের হয়ে গাড়ীটি লক করে দিলো।যাতে দিশার ঘুম ভাঙ্গলেও বাহিরে বের হতে না পাড়ে।তিয়াশ দাঁড়িয়ে আছে মুখশধারী লোকগুলোর সামনে।নিজের ভয়কে সাইডে রেখে,নির্বিকারে প্রশ্ন করেই ফেললো কি চাই তোমাদের।”
–মুখশধারী থেকে একজন সামনে এসে,তোর লাশ।
“তিয়াশ মুখে কিছুটা হাসি টেনে,তাই নাকি।খুব ভালো কথা।কিন্তু তার আগে এটাতো বলো ভাই।কে পাঠিয়েছে তোমাদের।আর কতো টাকা দিয়েছে।”
–সেটা তুই যেনে কি করবি।তোর আজ মৃতুও নিশ্চিত এটাই শেষ কথা।
“আরে ভাই,এতো হাইপার হচ্ছো কেনো।দেখো তোমাদের সাথে আমার কোনও পারসোনাল দুশমনি নেই।তাহলে তোমাদের নিশ্চয় আমাকে মারার কোনও কারণ নেই।শুধু একটা কারণ ছাড়া।আর সেটা হলো টাকা!!
কতো টাকায় আমার জীবনটা কিনতে হবে সেটা বলো।”
–ওই আজাইরা প্যাঁচাল পারবিনা।আমরা একবার কথা দিলে কাজ না করে পিছুপা হই না।আর বেঈমানিও করিনা।এই কথা বলেই লোকগুলো এগিয়ে এলো তিয়াশকে মারতে।তাদের একেক জনের হাতে কিছু না কিছু ছিলো যা তিয়াশকে আঘাত করার জন্য যথেস্ট ছিলো।
‘কোনও কিছুর শব্দে দিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আর চকিতে চোখ খুলেই সামনে তাকাতেই দিশা–তিয়াশ বলে একটা চিৎকার করে…..।’
_________
“শোফাতে শরীরটা কিছুটা এলিয়ে পাগুলো সামনের ট্রি টেবিলের তুলে,কোলের উপর লেপটপটা রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু ইমেল চেক করছে আয়ন”।
‘চেয়ারায় তার গম্ভীরতা আর একটু টেনশড লাগছে।কিছুক্ষণ পর পর নিজের দুআঙ্গুল দিয়ে মাথাটাও চেপে ধরছে।’
–প্রিয়ু বিছানায় বসে আইস্ক্রিম খেতে খেতে আড় চোখে বারবার আয়নকে পর্যবেক্ষণ করছে।কিছু একটা বলতে মনটা উসখুস করেছে ওর।কিন্তু আয়নকে দেখে মনে হয় কোনও একটা বিষয় নিয়ে রেগে আছে বা টেনশড,কিন্তু এই দুটোর মধ্যে কোনটা ঠিক প্রিয়ু তা বুঝতে পাড়ছে না।
“প্রিয়ু আজকে রোহানের সাথে দেখা হবার কথা শেয়ার করতে চায় আয়নের সাথে।কারণ আয়ন যদি পড়ে জানতে পারে তাহলে খুব রাগ করবে,সাথে কষ্টও পাবে।প্রিয়ু ওদের মধ্যে আর কোনও কনফিউশন বা সন্দেহ চায় না।তাই নিজের জড়তা কাটিয়ে সাহস করে আয়নকে ধীর কন্ঠে ডাক দিলো ,আয়নদা।”
–আয়ন মুখে কিছুটা বিরাক্ত নিয়ে,হুম জবাব দিলো।কিন্তু প্রিয়ুর দিকে একটিবারও তাকালো না।
“আয়নের এমন ছন্নছাড়া বিহেভিয়ার দেখে,প্রিয়ুর কিছুটা রাগ উঠে গেলো।মানে কি আমাকে এভাবে ইগনোর করার।প্রিয়ু ঝটপট বিছানা থেকে উঠে আয়নের ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো।
–আয়ন তখনো তাকায় নিই একবারও প্রিয়ুর দিকে।কারণ একটাই আয়ন প্রিয়ুর উপর রেগে আছে।আজকে প্রিয়ুর রোহানের সাথে কফি হাউজে দেখা করার কথা আগেই যেনে গিয়েছে।আর তা জানার পর থেকেই আয়নের মনে আবার একটা চাপা রাগের সাথে,ইনসিকিউর অনুভোব করছে।প্রিয়ু আবার রোহান রোহান বাজনা বাজাবে না তো।পুরোনও প্রেম মনে আবার নতুন করে জেগে উঠলে এবার আয়ন কি করবে।নিজেকে কিভাবে সামলাবে।আবার না প্রিয়ুকে আঘাত করে ফেলে রাগের বশে।এসব ভয়ে প্রিয়ুকে যতোটা পাড়ছে এভোয়েড করে যাচ্ছে সেই তখন থেকে।”
–আয়নদা শুনছো।প্রিয়ু একটু জোড় গলায়।
“হুম,বল।শুনছি আমি।”
–কিছু বলার ছিলো তোমায়।কিন্তু তার আগে প্রমেজ করো রাগ করবে না।আর আমাকে বকবেও না।
“আয়ন এবার না চাওয়া সত্যেও প্রিয়ুর দিকে তাকালো।প্রিয়ুর শান্ত এই দৃষ্টি যেনো আয়নের কোথাও গিয়ে লাগলো খুব।মনটাও কু ডাকছে ওর।আয়নের ভয় লাগছে, ওর মনের ভাবনা আবার সত্য না হয়ে যায়।কিন্তু তবুও ওকে জানতে হবে প্রিয়ুর মনে কি চলছে।তাহলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।কিন্তু এটা সত্য যে আমি এবার তোর আর আমার মাঝে কাউকে আসতে দেবো না।কাউকে না।আয়ন নিজেকে কিছুটা শান্ত করে, অশান্ত দৃষ্টিতে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,বল কি বলবি?আমি রাগ না করার চেষ্টা করবো।কিন্তু প্রমেজ করতে পারবো না।আর যা বলার তারাতারি বল।আমি একটু ব্যস্ত এখন। ”
–প্রিয়ু কিছুটা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে রোহানের সাথে দেখা করার কথা সব বলে দিলো।এমনকি ওদের মধ্যে কি নিয়ে কথা হয়েছে তাও।যাতে করে আয়নের মনে প্রিয়ুর প্রতি কোনও নতুন সন্দেহ না আসে।প্রিয়ু বলেই আয়নের দিকে তাকায়।আয়ন রাগ করেছি কিনা জানতে।
‘কিন্তু বোকা প্রিয়ু আয়নের চেহারা দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না,তাই অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে আয়নের অভিব্যক্ত জানতে।’
–আয়ন আশা করেনি,প্রিয়ু যে ওর কাছে সত্যটা স্বীকার করবে।ভেবেছিলো প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলে হয়তো ও সত্যটা অস্বীকার করবে,এড়িয়ে যাবে।কিন্তু প্রিয়ু কি সহযে সব বলে দিলো,একটুও সংকোচন ওর মাঝে নেই,তার মানে কি?ও আবার আমাকে ভরসা করতে শুরু করেদিয়েছে। আবার আগের মতো সব শেয়ার করছে।আয়নের বিষণ্ণতা ঘেরা মনটা মুহুর্তেই ভালো হয়ে গেলো।
আয়ন ভেতরে ভেতরে খুশী হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না।তাই প্রিয়ুকে কিছু না বলে কোল থেকে লেপটপটা রেখে প্রিয়ুকে হাতের ইশারায় সামনে আসতে বললো।
“এবার প্রিয়ু ভয় পেয়ে যায়,ভাবে আয়ন আজ সত্যিই ওকে মনে হয় মাইর দিবে।প্রিয়ু একপা পিছিয়ে,মাথা নাড়ে।তার মানে ও আয়নের কাছে আসতে চায় না এখন।
-প্রিয়ু একটু ভীতু মুখে স্পষ্ট করে বলে,দেখও আয়নদা আমি সত্যি বলছি,আমি জানতাম না ওখানে রোহানও থাকবে।এটা জাস্ট একটা কোইন্সিডেন্ট। ব্যাশ!আমার মনে হলো,তোমাকে এটা বলার প্রয়োজন তাই বলছি।কিন্তু…।”
–প্রিয়ুকে চুপ থাকতে বলে চোখের ইশারায়,আবার ইশারা করে নিজের কাছে আসতে।
“এবার প্রিয়ু সাহস করে ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আয়নের কাছে আসতেই,আয়ন একটান দিয়ে প্রিয়ুকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়।এবার বল, কি যেনো বলছিস।”
–আ আমি ক কি বলছি।আর ত তুমি আ আমাকে এভাবে কেনো ট টানলে।ছাড়ো আমায়।
“আরে বা!আয়ন প্রিয়ুর কোমড়টা শক্তহাতে জড়িয়ে।ছোট বাচ্চাদের তো কোলেই রাখতে হয় জানিস না।আর আমিতো তোকে সেই ছোটবেলা থেকে কোলে পিঠে মানুষ করে এতো বড় করলাম।তাহলে আমার নযরে তো এখনো তুই সেই ছোট্ট প্রিয়ু,যে আমার সামনে হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুড়তো।”
–ছিঃআয়নদা।তুমি আসলেই একটা নির্লজ্জ লোক।কি সব বলছো।আর ছাড়ও আমায়।তোমার সাথে কোনও কথা নেই।প্রিয়ু আয়ন থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে।
“আয়ন প্রিয়ুকে আরো একটু শক্ত করে ধরে,এসব কি বলছিস।আমি তোর সাথে এই মুহুর্তে নির্লজ্জের কি করেছি।তোকে কি আমি চিমটি দিয়েছি নাকি চুমো দিয়েছি।তবে প্রথমটা দিতেই পারি,কিন্তু দ্বিতীয়টা!ওটা দিবো কি করে,তুই তো বাচ্চা একটা মেয়ে।তাই না!”
‘-এক কাজ করি কাল অফিস থেকে আসার সময় আমাকে ফোন করে মনে করিয়ে দিস, আমি একটা ফিটার নিয়ে আসবো তোর জন্য।ঠিক আছে লিটল গার্ল।’
–প্রিয়ু ভীষন রেগে গেলো,ওকে বারবার বাচ্চা বলে কি বোঝাতে চাইছে আয়নদা,ও কিছু বুঝে না।একদম না ও সব বুঝে,কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না।তাই রেগে হাতের কাছের কুশনটা দিয়ে আয়নকে মারতে লাগলো সমানে।
খারাপ আয়নদা!বাজে আয়নদা!কি বললে আমি বাচ্চা, উঁহু!কোন দিক দিয়ে বাচ্চা।চোখে দেখো না,কানা লোক বলে আয়নকে মারতে থাকে।
“হাসতে হাসতে হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুর হাত দুটো চেপে ধরে।আর সুযোগ পেয়ে আরো একটু কাছে টেনে আনে।এতে করে আয়নের গরম নিশ্বাস প্রিয়ুর মুখের উপর আছড়ে পড়ে।প্রিয়ু বিস্ময় দৃষ্টিতে আয়নের চোখের দিকে তাকাতেই,কেমন ঘোর ঘোর লাগে প্রিয়ুর।কেনো জানি আয়নের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দৃষ্টি সরাতে পাড়ছে না প্রিয়ু।আয়নের কঠোর দৃষ্টি হয়তো প্রিয়ুকে অনুমতিই দিচ্ছে না।”
–আয়ন একদম ওর মুখটা প্রিয়ুর মুখের সামনে এনে বললো,বাচ্চাই তো,তাইতো আমার অনুভূতিগুলোর সাথে খেলা করতে মঝা লাগে তোর।আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে দূরে ঢেলে দিস বারবার।আমার চাওটাকে দেখেও না দেখার ভ্যান করিস।আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তোর,আমার মনের ভেতরের ছটফটানীতে তুই খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করিস।খুব মঝা লাগে তাইনা,আমাকে কষ্ট পেতে দেখে।সব বুঝিস তবুও সারাক্ষণ অবুঝের মতো থাকিস।তুই কি মনে করিস আমি কিছুই বুঝি না।তুই বাচ্চা হতে পারিস আমি না।
“প্রিয়ু কিছুটা ভীতু কন্ঠে বলে,এ এ ম ন ক কোন কিছুই না।তুমি ভুল বুঝছো।”
–তাই নাকি,তাহলে আজও আমি ভুল….আর কথা বলতে পাড়লো না।আয়নের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।আয়ন আড় চোখে মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো নামটি কার।নামটি দেখার সাথে সাথে আয়ন ফোনটি রিসিভ করলো।ফোনটি কানে রেখেই বললো,টেন মিনিট।জাস্ট টেন মিনিট ওয়েট কর।আম কামিং।
“সাথে সাথে প্রিয়ুকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আলমারি থেকে নিজের পারসোনাল রিভলভারটি বের করে নিলো।”
-“রুম থেকে বের হতে নিলে প্রিয়ু সামনে এসে দাঁড়ায়।তুমি এই সময় এটা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।”
–আয়ন খেয়াল করলো,প্রিয়ুর মুখে আয়নের জন্য চিন্তার চাপ।তা দেখে অদ্ভুত একটা সুখ লাগলো আজ আয়নের মনে।প্রিয়ুর গালে একহাত রেখে,একটু কাজ আছে সোনা,আমি তারাতারি এসে পড়বো।এটা বলেই আয়ন প্রিয়ুকে পাশ কাটিয়ে বের হতে নিলেই প্রিয়ু আয়নের একহাত ধরে ফেলে।
“-আয়ন পিছনে ঘুরে একটু হাসি দিয়ে,আমি একা যাচ্ছি না,অনিক, রবিন আর সাথে আমার গার্ডরাও আছে।চিন্তা করিস না।কিন্তু এখন আমাকে আর্জেন্ট এক জায়গায় যেতে হবে।”
–প্রিয়ুর মন মানছিলো না,তবুও হাতটি ছেড়ে দিলো।কিন্তু ওর মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিলো না,আয়নকে এভাবে ছাড়তে আজ কেনো জানি।
“আয়ন প্রিয়ুর অস্থিরতা বুঝতে পেরে,প্রিয়ুর কপালে একটি স্নেহময় আদর দিয়ে চলে গেলো।”
__________
“হসপিটালের করিডরে বসে আছে আয়নের পুরো পরিবার।প্রিয়ুও চুপচাপ বসে আছে,আর বারবার অপরেশন রুমের লাল লাইট এর দিকে তাকাচ্ছে।পাশে বসা দিশা ছিঁচকাঁদুনীদের মতো কেঁদে যাচ্ছে যা দেখে প্রিয়ুর আরো বেশি বিরক্ত লাগছে।কিছু বলতেও পাড়ছে না,কারণ প্রিয়ু এখন কিছু বললেই এই মেয়ের কাঁদার গতি আরো বাড়বে।তার থেকে ভালো চুপ থাকা।”
–এদিক দিয়ে মহিনী বেগম ছেলের দুঃখেকাতর কি হবে,সে তো বারবার দিশার দিকে সন্দেহ নযরে তাকিয়েই কুল পাচ্ছে না।কারণ দিশার এভাবে মরা কান্নার কারণ কি?আর সব থেকে বড় কথা কার জন্য কাঁদছে।আর এতোরাতে এই মেয়ে এখানে কি করছে।এসব হাজারো ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত করে রাখছে উনি।
“-তখনই হসপিটালের একজন নার্স এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,মিস্টার তিয়াশ এখন ঠিক আছে,উনার ইনজুরি গুলো তেমন মারাত্মক নয়।আপনারা চাইলে উনার সাথে দেখা করতে পারেন।নার্সের বলতে দেরি,মহিনী বেগম আর সারা তৎক্ষনিক কেবিনের ভেতরে চলে গেলো তিয়াশের সাথে দেখা করতে।সাথে আয়নের বাবা মাও।অনিক দিশাকে ইশারা করলো ভেতরে যাওয়ার জন্য।
–দিশা একবার প্রিয়ুর দিকে তাকালো।কারণ প্রিয়ুকে এই অবস্থায় একা ছেড়ে কিভাবে যাবে।
“প্রিয়ু ব্যাপারটা বুঝতে পারে,তাই দিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আমি ঠিক আছি দিশা।তোর তিয়াশ ভাইয়ের কাছে যাওয়া প্রয়োজন এখন।ভাইয়া তোকে দেখতে না পেয়ে হাইপার হবে।যা তুই।
প্রিয়ু অপরেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো।”
“-দেয়ালে পিঠটা হেলান দিয়ে বসলো প্রিয়ু।চোখ দুটো বন্ধ করার সাথে সাথে বেয়ে পড়লো কিছু না জানা অনুভূতির নোনা জল।যা অনেক কষ্টে এতোক্ষন আটকে রেখেছিলো প্রিয়ু।বুকের ভেতরে অস্বাভাবিক ব্যাথা করছে।নিশ্বাসটা নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে মনে নিজেই কয়েকবার বিড়বিড় করে বললো,আয়নদা ঠিক আছে।কিছু হবে না।”
–মন আর মস্তিষ্কের অসীম যুদ্ধে প্রিয়ু তার নিজের অব্যক্ত অনুভূতি গুলোকে খেয়ালই করছে না।ওর মন কাঁদছে,ছিনছিন ব্যাথা করছে,তাও আবার কার জন্য। আয়ন!
সেই আয়ন যে আয়নকে প্রিয়ু ঘৃর্ণা করে,পালিয়ে যেতে চায় সব সময়।আজ সেই আয়নের জন্যই প্রিয়ু বিচলিত হয়ে পড়েছে।প্রিয়ু নিজেও জানে না,ও কখন এই ঘৃর্ণা করা ব্যক্তিটির প্রেমে পড়ে গিয়েছে হয়তো।”
“কিছুক্ষন আগের কথা,
-“তিয়াশের উপর মুখশধারী লোকগুলো হামলা করে।তিয়াশও যথাসম্ভব প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।কিন্তু বলে না,একজন হলেও চলে,তবে সাত আট জন লোকের সাথে পাড়াটা এতো সহয না।আর তিয়াশতো কোনও ফিল্মের হিরো না যে একসাথে সবাইকে হিটপটাং করে দিবে।তিয়াশ অনেকটা ঘায়েল হয়ে পড়েছে।আর তখন দিশাও গাড়ীতে বসেই চিৎকার করতে থাকে তিয়াশের এমন অবস্থা দেখে।”
–কিছুক্ষন পরই আয়ন,অনিক আর রবিন এসে পড়ে ওদের গার্ড সহ।লোক আসতে দেখে একজন মুখশধারী দূর থেকেই তিয়াশের উপর গুলি চালালে আয়ন দ্রুতো গিয়ে তিয়াশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে।আর তখনই গুলিটি গিয়ে লাগে আয়নের ডান হাতে।
“আয়নকে আহতো হতে দেখে, আয়নের গার্ডরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায় মুখশধারীদের লক্ষ্য করে।
–আয়নও মাটিতে বসে পড়ে।অনিক গিয়ে দৌড়ে আয়নকে ধরে।এর পর গার্ডরা আয়ন আর তিয়াশকে ধরে গাড়ীতে বসিয়ে গাড়ী স্টার্ট দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।রাস্তা থাকা অবস্থায় পরিবারের সবাই
কে ইনফোর্ম করে দেওয়া হয়।
“এদিক দিয়ে রবিন নিকটস্থ থানায় ইনফোর্ম করে দেয় ব্যাপারটা।যেহেতু অনেক মুখশধারী গুলিতে মারা গিয়েছে।রবিন চালাকির সাথে কেশটা পুরো উল্টিয়ে দেয় যে এরা আয়ন মাহবুভ কে মারতে এসেছিলো।তাই পালা আক্রমণে গার্ডদের হাতে মারা যায়।এই ঘটনায় মিস্টার আয়নও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতো হয়েছে।তা না হলে,একটু ঝামেলা হতো এসব নিয়ে।রবিন সব কৌশলে সব ঝামেলা দূর করে ফেলে।”
–প্রিয়ুসহ পরিবারের সবাই খবর পেয়েই হসপিটালে চলে আসে।আর তখন থেকেই প্রিয়ু অপরেশন থিয়েটের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“অপরেশন থিয়েটারের লাল বাতিটি নিবে গেলো।ডাক্তার বেরিয়ে এসে প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে বললো,মিসেস মাহবুভ।”
–ডাক্তারের গলা শুনে প্রিয়ু চকিতে তাকালো,আর সাথে সাথে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আয়নের অবস্থা জানতে।
“-মধ্যবয়স্ক ডাক্তার প্রিয়ুকে একটু ভালো করে দেখলো।ভাবছে,বয়স কতোই বা হবে এই মেয়ের,এতো অল্প বয়সে বিয়ের যে কি প্রয়োজন পড়ে বুঝি না।আজ পেশেন্ট এর যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে এই অল্প বয়সেই বিধবার পদবী লেগে যেতে জীবনে।”
–প্রিয়ুর ডাকে ডাক্তার সম্বিৎ ফিরে পায়।আর একটু সরল হাসি দিয়ে,আপনার হাসবেন্ড এখন ঠিক আছে।ভাগ্য ভালো গুলিটি হাতে লেগেছে, তা না হলে অনেক বড় ক্ষতি হতো।
“আমি কি দেখা করতে পারি একবার।প্লিস ডক্তর।”
–এখন না।আমরা আগে তাকে কেবিনে সিপ্ট করবো,তখন দেখতে পারবেন।
প্রিয়ুর সাথে কথা বলেই ডক্তর চলে গেলো,হয়তো অন্যকোনও রোগী দেখতে।
চলবে…।