“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-২০

0
3641

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part:20

“ঝিরিঝিরি করে অবিরাম বৃষ্টির পড়ছে বাহিরে।মাঝে মাঝে বাতাস ক্ষেপে উঠে বিশাল উঁচুতলা দালান গুলোকে আঘাত করছে।প্রকৃতি যেনো নারায আজ।বিদ্যুৎ চকমকানোর মাধ্যমে নিজের ঝংকার জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পরিবেশেকে।আর এই বর্ষণ রাতেই আয়ন অনেকক্ষণ অজ্ঞান থাকার পর বেশ রাতে আয়নের জ্ঞান ফিরে এলো।চোখ খুলেই মাথার উপরের সাদা সিলিং ফ্যানটির উপর দৃষ্টি পড়লো সর্বপ্রথমে।এরপর চোখটি সরিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে একবার পর্যবেক্ষণ করে যেনে নিলো ও কোথায় আছে বর্তমানে ।একটু নড়াচড়া করতে গিয়ে বুঝতে পারলো ডান হাতে গুলি লাগার কারনে হাতটি নাড়াতে পাড়ছে না।হাতটি ব্যান্ডিজ করা।”
-ঘড়ির কাটায় রাত তিনটে বাজতে দশ মিনিট।বেডের পাশের সিটে আয়নের বামহাতটি কেউ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আয়ন প্রথমে একটু অবাক হলেও পরক্ষণে বুঝতে পাড়লো কে সে।
“একচিলতি হাসি ফুটে উঠলো আয়নের মুখে এই কষ্টের মাঝেও।আয়ন হালকা করে হাতটি প্রিয়ু থেকে ছাড়িয়ে প্রিয়ুর মাথায় রাখলো।আর তখনই দেখতে পেলো প্রিয়ুর চোখের কিনারায় শুকিয়ে যাওয়া জলের ছোপ ছোপ দাগগুলো।আয়ন তার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে ছুঁয়ে দিলো প্রিয়ুর চোখের চারপাশের মসৃণ ত্বকটি।হালকা হেসে মনে মনেই বলতে লাগলো -লোকে বলে,
“ভালোবাসার মানুষের চোখের জল নাকি সহ্য করার মতো না,কিন্তু দেখ তোর চোখে জল দেখে আমার ভেতরে কেমন সুখ সুখ লাগছে।তার মানে কি?আমি কি আসলেই অদ্ভুত প্রেমিক।যে প্রেমিকার জলে নিজের সুখ খুঁজে পায়।”

–অনিক কিছুক্ষন পর পরই দুভাইয়ের রুম চেক করছে।তিয়াশ সুস্থ তাই ওকে নিয়ে টেনশন নেই আর ওর সাথে সারাও আছে।কিন্তু আয়নের জ্ঞান ফিরেছে কিনা তাই চেক করতে আসে একটু পরপর।আর এখনো এসেছে,আয়নের জ্ঞান ফিরেছে কিনা দেখতে।আয়নকে সুস্থ দেখে,অনিক খুশিতে কিছুটা পেনিক হয়ে পড়ে,আয়নদা তুমি ঠিক আছো তো।কিছু লাগবে তোমার।দাঁড়াও,আমি এখনি ডক্তরকে ইনফোর্ম করে আসছি। ওয়েট!

“আয়ন অনিকের এমন বাচ্চামো স্বভাবে কিছুটা বিরাক্ত হয়ে একটা হালকা ধমক দিলো,যেমন মিছেমিছি বাচ্চাদের দেয় শান্ত করতে,ঠিক তেমনি।
অনিক আমি ঠিক আছি।এতো উত্তেজিত হবার কিছুই নেই,রিলেক্স।তৎক্ষনিক অনিকের কাছে তিয়াশ কেমন আছে তাও জানতে চাইলো আয়ন।
“-ও ঠিক আছে দাদা,তুমি ওসব চিন্তা করো না।আর রবিন অদিকটাও সামলিয়ে নিয়েছে।তাই ডোন্ট ওয়ারি।”

–আয়ন কিছুটা রাগ দেখিয়ে ওকে এখানে থাকতে কেনো বলেছিস।প্রিয়ুকে দেখিয়ে অনিককে প্রশ্ন করলো।জানিস না,ওর ঘুম খুব ভারী।আর হসপিটাল গুলোও এখন নিরাপদ না।ঘুমের মধ্যে কোনও অঘটন ঘটে গেলেও,কিছুই বুঝতে পাড়বে না এই মেয়ে।

“আমি জানি দাদা,তাইতো কিছুক্ষন পরপর চেক করে যাই সব ঠিক আছে কিনা।এছাড়া তোমার গার্ডরাও কেবিনের বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে।সো ডোন্ট ওয়ারি।শুধু ডক্তর,নার্স ছাড়া কারো এই রুমে প্রবেশের পারমিশন নেই।আমি সেই ব্যবস্তা করেই দিয়েছি।আর এই ম্যাডাম মুখে যতোই বলে তোমাকে ঘৃর্ণা করে,অথচ আজ তোমাকে এই অবস্থায় দেখে নিজেই সব থেকে বেশি কেঁদেছে যানো।আমিতো বারবার নিশেধ করেছি তোর এখানে থাকার প্রয়োজন নেই,আমি আছি তো।কিন্তু জানোই তো কতোটা জিদ্দি ও।তোমাকে ছাড়া নাকি কোথাও যাবে না।এখানেই নাকি থাকবে।তাই বাকি সবাই ওকে রেখেই বাসায় চলে গিয়েছে,সকালে আসবে দেখা করতে।

–অনিকের কথা শুনে আয়ন হাসলো।ওর ভালো লাগছিলো।খুব বেশিই ভালো লাগছিলো।যেমন তেমন ভালোলাগা না,কিছু প্রাপ্তির সুখ যেনো মনের ঘরে উকি দিয়ে গেলো।এ এক অন্যরকম শান্তি।এই শান্তিতে শরীরের কোনও চাহিদা নেই।তবে মনের ঘরে কেউ চুপি করে এসে সন্ধ্যার সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে হঠাৎ যেনো আলোয় ভরে তুললো এমন লাগছিলো।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে অনিকের দিকে তাকিয়ে, আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি ভাই।

“হুম,বলো।কি করবো।”

–এই পাগলিটাকে উঠিয়ে আমার বামসাইডে শুইয়ে দিয়ে যা।সারারাত এভাবে থাকলে,সকালে ঘাড়ের ব্যাথায় নিজে কান্নাকাটি করে আমাকেই জ্বালাবে।

“আমিই…..!কিছুটা বিস্মিত হলো আয়নের এমন আবদারে অনিক।কারণ আয়ন একটু ইনসিকিউর ফিল পারসন।তা যদি হয় প্রিয়ুর ব্যাপার তাহলে কথাই নেই। তাইতো নিজের ভাইদেরও খুব কম কম ঘেষতে দিতো প্রিয়ুর সাথে।আজ সেই ভাই বলছে তার বউকে কোলে তুলে তার পাশে শুয়ে দিতে।আশ্চর্য!”

–হুম তুই!তুই ছাড়া কি আর কেউ আছে এখানে।আর তুই কি মনে করিস আমি যাকে তাকে আমার বউকে টাচ করার অনুমতি দিবো।হাত না ভেঙ্গে ফেলবো।
শুধু তুলে আমার পাশে শুয়ে দিবি।ব্যাশ!তাও আবার বোন ভেবে নিজের।

“অনিক একটু কেশে দিলো।মাইরি,দুনিয়াতে আয়নদাকেই মনে হয় একপিস স্যাম্পল হিসেবে পাঠিয়েছে খোদা।তা না হলে কেউ নিজের আপন ভাইকে সন্দেহ করে।প্রিয়ু ঠিকই বলে,আস্থ একটা খারুস আমার ভাই।”
______________

“সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরই প্রিয়ু নিজেকে আবিষ্কার করলো আয়নের বুকের উপর। শুয়ে আয়নকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রিয়ুর নরম কোমল হাতদুটো দিয়ে।প্রিয়ু দ্রুতো উঠে বসলো।কি আশ্চর্য!আমি এখানে কি করে এলাম।আমি তো,উফ!মনে হয় ঘুমের ঘোড়ে এখানে এসে পড়ছি।আমিও না ঘোড়ার মতো মরার গুম ঘুমাই।আয়নদা উঠে আমাকে এভাবে দেখলে কি ভাবতো।হয়তো বলতো,ছিঃ প্রিয়ু তুই কতোটা নির্লজ্জ।অসুস্থ ব্যক্তিকেও ছাড় দিস না।”

–হঠাৎ প্রিয়ুর আয়নের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো, একটি নিষ্পাপ ঘুমন্ত মায়াভরা চেয়ারা।যা দেখে প্রিয়ুর ভীষণ মায়া হলো।আয়নকে নিষ্পলক ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো এই প্রথম।ঘুমিয়ে থাকলে আয়নদাকে ভারী সুন্দর লাগে দেখতে।চোখের পাপড়ীগুলো ঠিক মেয়েদের মতো ঘন ও বড়।নাকটা তোতাে পাখির ঠোঁটের মতো চৌকা।আর ঠোঁটগুলো নিকোটিনের পুড়ে কফিকালারের মতো হলেও কেনো জানি দেখতে বেশ লাগে।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে আরো একটু এলোমেলো করে দিলো প্রিয়ু।এমন অগোছালো আয়নদাকে দেখে একদম কলকাতার রসগোল্লার মতো লাগছে। মন তো চায় পুরোটা খেয়ে ফেলি।ইস!

“এসব ভাবতেই প্রিয়ু একটা সাংঘাতিক কাজ করে ফেললো।টুপ করে আয়নের কপালে নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দিলো।আর নিজের এহেম কান্ডে প্রিয়ু নিজেই লজ্জায় লালনীল হয়ে গেলো।”
–আমি ইহা কেমনে করিলাম।আমার ধারা এসব কেমনে হলো।হে খোদা আমি কি এই ছেলের রুপের জালে ফেঁসে যাচ্ছি।নো নো নো.. এতো তারাতারি হলে কেমনে হবে।এই খারুসটা আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে।কাল রাতেও এই মহান ব্যক্তিটির জন্য কান্নার সাগরে কতোবার ডুব দিয়ে আসলাম।কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিলো এই অতল সাগরে হয়তো আমি নিজেও তলিয়ে যাবো।আর এই সাহেব কে দেখো কতোটা শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে এখন।অন্যের ঘুম হারাম করার ওস্তাদ।ফাজিল লোক কোথাকার।

“দরজার শব্দে প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে,আস্থে করে বেড থেকে নেমে দরজা খুলতে যায়।তাকিয়ে দেখে একটি অল্প বয়সী নার্স দাঁড়িয়ে আছে,মুখে তার মুচকি হাসি।
প্রিয়ু তার এই হাসির কারণ বুঝতে পারলো না,তবে নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,আসুন না, দরজাটাতো খোলাই ছিলো।
–নার্স মুখে মিষ্টি হাসি লাগিয়ে রেখেই বললো,আমি জানি দরজাটা খোলা ছিলো।আসলে ডক্তরের রাউন্ডের সময় হয়ে গিয়েছে।যেকোনও সময় এই রুমেও এসে পড়বে।কিন্তু কাল রাতে যখন আমি চেক করতে এসেছিলাম স্যারের জ্ঞান ফিরেছে কিনা।তখন আপনাকে স্যারের পাশে শুয়ে থাকতে দেখলাম।স্যারও আপনাকে পরম যত্নে একহাত দিয়েই জড়িয়ে রেখেছিলো,যাতে আপনি পড়ে না যান।আমি কিছু বলতে নিলে তখনই স্যার আমাকে চোখের ইশারায় আস্তে কথা বলতে বললেন,যাতে আপনার ঘুম নষ্ট না হয়।আর এটাও straightly ভাবে বলে দিয়েছেন আপনি ঘুম থেকে উঠার আগে কোনও মেল ডক্তর যাতে রুমে না আসে।তাই আমি দেখতে এসেছি আপনি ঘুম থেকে উঠেছেন কিনা।একটা সত্যি কথা বলি,আপনি অনেক ভাগ্যবান।এমন ভালোবাসা আর কেয়ার আগে কখনো দেখিনি।আমি এই হসপিটালে এমনও দেখেছি অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে স্বামী একবারও আসেনি।আর সেখানে আপনার স্বামী নিজের কথা ভাবার আগে আপনার সুবিধা অসুবিধা গুলো খেয়াল করেছে।আমি দোয়া করবো আপনাদের দুজনের জন্য।সুখে থাকুন।
নার্স চলে গেলো।আর প্রিয়ু আয়নের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,মানুষটিকে যতোটা খারাপ ভাবতাম ততোটা না।হয়তো পরিস্থিতি আর সময়টাই আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।কিন্তু মানুষটিতো আগেরই।”

–আয়নের ঘুম ভাঙ্গতেই প্রিয়ুকে দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় পেলো।দুজনের চোখের মিল হওয়ার সাথে সাথে,আয়ন প্রিয়ুকে একটু মুচকি হেসে শুভ সকাল জানালো।আয়নের মুখের এই অমায়িক হাসিতে কিছুক্ষণের জন্য প্রিয়ু যেনো ফ্রিজ হয়ে গেলো।
এতো সুন্দর কেনো আয়নদার হাসিটি।একদম মারাত্মক।বুকে গিয়ে লেগে কেমন খোঁচা দেয়। আগে কেনো আমি দেখি নিই এই হাসিটি।নাকি দেখেও দেখিনি।
__________
“সকাল হতে না হতে আয়নকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো পরিবারের সবাই।এমনকি তিয়াশও নিজের কেবিন ছেড়ে এখানেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।প্রিয়ু ব্যাচারী কি আর করবে কিছুই বুঝতে পাড়ছে না।অসহায়ের মতো দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া।সবার এমন হু হতাশ আয়নের একদম ভালো লাগছে না।আয়ন বরারবই একটু কঠিন ধাছের মানুষ।কান্না কাটি এসব একদম নিতে পারেনা।যার করণে আয়নের মেঝাঝ অনেক চটে গেলো এখন।
কি হলো তোমরা এমন ড্রামা করছো কেনো।আমি কি মরে গেছি।”
–আয়নের মা,আচল দিয়ে নিজের চোখ মুখ মুছে,কিসব বলছিস বাবু।মরুক তোর দুশমন।আর এখন কি শান্তিমতো কাঁদতেও পাড়বো না আমি।
“কাঁদো মন খুলে কাঁদো বাট এখানে না।বাসায় যাও সব।আমি এসব তামাশা একদম টলেরেট করবো না।”
–আয়ন,কিসব বলছো।সবসময় এমন উগ্র মেঝাঝ ভালো না।নিজের পরিবারের ইমোশনকে একটু রিসপেক্ট করতে শিখো।
“বাবা তুমি জানো আমার এসব ইমোশন ড্রামা একদম পছন্দ না।তাই সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে যাও।এখানে তোমাদের আর কোনও প্রয়োজন নেই।সুস্থ হলে আমি নিজেই বাসায় এসে পড়বো।”
–আয়নের এমন ব্যবহারে প্রিয়ুও কিছুটা অবাক হলো।কিন্তু কিছুই বললো না।কিন্তু সবার সাথে যখন প্রিয়ুও বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কেবিন থেকে বের হতে নিলে,আয়নের একটা চিৎকারে থমকে দাঁড়ালো।
“তোকে আমি যেতে বলেছি,আগ বাড়িয়ে নাচতে নাচতে কোথায় যাস।বাড়ীতে কাকে রেখে এসেছিস ফাজিল মেয়ে যাওয়ার জন্য এতো ছটফট করছিস।”
–প্রিয়ুতো স্থদ্ধ হয়ে গেলো।কি বলে এই খবিস।কাল সারারাত কতো কান্নাকাটি করলাম যাতে এই লোকটার কিছু না হয়।আর এখন একটু সুস্থ হয়ে আমার উপরই তেজ দেখাচ্ছে।শালা হারামি একটা।মানুষ হবে না আর এই জীবনে।

“পুরো একসপ্তাহ পরে আয়ন বাসায় এলো।আর এতে বাসার সবাই অনেকটা খুশি।কিন্তু আয়নের মুখে টেনশন ভরপুর।কারণটা ছিলো,আয়ন এখনো জানতে পারেনি হামলাটা কে করিয়েছে।আর তিয়াশের সাথেই বা ওদের কি শত্রুতা।নাকি এটা জাস্ট শুরু।ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের উপর এ্যাটাক করে কেউ ওকে দূর্বল করতে চাইছে।আয়ন কিছুই বুঝতে পারছে না।পরবর্তী কি পদক্ষেপ নিবে তাও জানে না।তবে পরিবারের সবার কিছুদিনের জন্য বাহিরে অবিরাম চলাফেরায় আয়ন কার্ফু জারি করে দিয়েছে।প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ীর বাহিরে যাওয়া আসা করতে পারবে না।একটা জিনিস খুব ভাবাচ্ছে আয়নকে ওরা কেবল তিয়াশকে মারতে চেয়েছে।অথচ দিশাকে হাতও লাগায় নিই। স্ট্রেঞ্জ!”

–এসবের মাঝে একজনের হাল বেহাল হয়ে গিয়েছে।সে হলো আমাদের প্রিয়ু।আজকাল তো প্রিয়ু উঠতে বসতে খাইতে আয়নকে একটু বেশিই গালাগালি করে তবে তাও মনে মনে।যা একটু ক্রাশ খেয়েছিলো আয়নের উপর।কিন্তু এই কয়েকদিনে আয়নের অত্যাচারে সব যেনো চিপাগলি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে।আয়ন কখনো ইচ্ছা করে বা কখনোও অনিচ্ছায় প্রিয়ুকে খুব জ্বালিয়েছে এ কয়েকদিনে।আয়নের খাবার হতে শুরু করে সব কিছু প্রিয়ুকে করতে হয়েছে।সব থেকে বিপাকে পড়েছিলো,আয়নের শরীরটা মুছতে গিয়ে।আয়ন যখন শুধু তোয়ালটা পরে ওর সামনে বসে ছিলো।তখন প্রিয়ুর কলিজা গুর্দা মনে হয় সব শুকিয়ে গিয়েছে।এক বিশাল মরুভূমির তৃষ্ণা যেনো ওকে ভর করেছে।অথচ ও তিনগ্লাশ পানি খেয়েছে তবুও যেনো শুকনো জমিটা একটু উর্বর হচ্ছে না।আয়ন প্রিয়ুর কান্ডগুলো বসে বসে খুব এন্জয় করেছে।
একদিন রাতে তো প্রিয়ু মহা বিরক্ত হয়েছিলো আয়নের উপর।যখন হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুকে ঘুম থেকে ডেকে বলে,আমি বাথরুমে যাবো।প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হয়ে সেদিন বলেছিলো,তো আমি কি করবো।তোমাকে কলে করে নিয়ে যাবো।নাকি এখন আমাকে তোমার প্যান্টের চেনটাও খুলতে হবে,এরপর বড় কাজ সারার পর ধোয়ায় দিতে হবে।
আয়ন হাসতে হাসতে বলে,এখনো এতোটা করুন দিন আসেনি তোর। আর ডোন্ট ওয়ারি আমার বাম হাতটি মনে হয় তোর উপর দয়া করেই আল্লাহ সচল রেখেছে।তা না হলে ওটাও করতে হতো।
আয়নদা….।প্রিয়ু একটু চিৎকার করে উঠে।কতোটা বাজে তুমি।ছিঃ….

“সেদিন হসপিটাল থেকে যাওয়ার পর দিশা কেবল একদিন এসেছিলো তিয়াশকে দেখতে। এরপর এই মেয়ের আর কোনও খবর নেই।তিয়াশ অনেকটা হতাশ হয়ে গেলো দিশার এমন আচরণে।তিয়াশের সাথে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো,অথচ এই মেয়ের মনে কি একটুও কষ্ট হয় নাই।এতোটাই কি খারাপ আমি।সমস্যা টি বলতে হবে ওকে।পেয়েছে কি আমাকে।”
____________
“অনেকদিন বেড রেস্টের পর আয়ন নতুন উদ্দামে আবার অফিসে আসা শুরু করলো।এতে প্রিয়ুরও কিছু হাত আছে।এ কয়েক সপ্তাহ প্রিয়ু আয়নের অনেক সেবা করছে।আয়নও অনেকটা অবাক হয়েছিলো।কিন্তু মনে মনে খুশিও ছিলো।
–আয়ন অফিসে এসেই দিনেশকে ভিডিও কল দিলো।দিনেশকে কাজের জন্য ইটালি যেতে হয়েছে।তাইতো ও আয়নের এই অবস্থায় ও দেখতে আসতে পারেনি।তোর কাজ শেষ হবে কবে।
“আরো সময় লাগবে রে।আগে বল তুই কেমন আছিস এখন।”
–আলহামদুলিল্লাহ, দেখতো পাচ্ছিস।
“হুম,মনে হয় বউ আজকাল একটু বেশি সেবা করছে জনাবের।আগের থেকে আরো বেশি হ্যান্ডশাম হয়ে গিয়েছিস।”
–শালা,তুই আবার ইটালি গিয়ে জেন্ডার চেন্জ করিসনি তো।আমার তো সন্দেহ হচ্ছে তোকে নিয়ে।এমনেই অনেক কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে তোকে নিয়ে,দিনেশ স্যার বিয়ে করছে না কেনো।কোনও সমস্যা নয় তো।হা হা।
“ভাইরে,ভাই! মুখে লাগাম লাগা।কেউ শুনলে সত্যি মনে করবে।তাহলে আমার তিতির কি হবে।এমনেই মেয়েটা ধরা দেয়না।তার উপর এসব শুনলে ওর ত্রিসীমানায় ডুকতে দিবে না।”
–তাতে কি বেশি সন্দেহ হলে,বিয়ের আগে হানিমুনটা সেড়ে নিবি।তোকে চেক করাও হয়ে যাবে।
“হুম,সবাইকে কি নিজের মতো ভাবো।আর তিতির প্রিয়ু না।বুঝলি!”
–মানে কি তোর।প্রিয়ু খারাপ।আয়ন একটু রেগে গেলো।
“আরে ভাই তা বলছি না।প্রিয়ু মেন্টেলি অনেকটা স্ট্রোং।এতোটুকু বয়সে ওর উপর কম ঝড় যায়নি।তার উপর তোর মতো ডেবিলের সব কিছু সহ্য করে মেয়েটি চুপচাপ।কিন্তু কখনো নিজেকে ভাঙ্গতে দেয়নি।বরং নতুন উদ্দামে আবার সামনে বাড়ে।কিন্তু তিতির একজন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে।সব কিছু করার আগে ওর ভয় হয়।খুব তারাতারি ভেঙ্গে পড়ে।মনের সাহস টা খুব কম ওর মধ্যে।”
–হুম,বুঝতে পাড়ছি।চিন্তা করিস না,একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
“আচ্ছা,হামলাকারী সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিস।”
–না রে,খুব স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার।এতো সাপাইয়ের সাথে কাজটি করেছে যে কোথাও কোনও ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
“ওকে,সাবধানে থাকিস।হয়তো আবারও হামলা হতে পারে।এখন দেখার বিষয় হচ্ছে,নেক্সট কার উপর হবে।”

চলবে…।

পাঠক,নেক্সট, নাইস,এফ….এসব কমেন্ট এর মধ্যে পড়েনা।অথচ আপনারা কমেন্ট করতে কৃপটামি করেন।ভালো খারাপ যাই হক,দুলাইন লিখে আমাকে জানাবেন।তাহলে গল্প সামনে বাড়াতেও ভালোলাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here