“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-২২

0
3670

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-22

“আপা কেনো বুঝতে পাড়ছেন না,আমি এটা পাড়বো না।আর আয়নও কখনো রাজি হবে না।আপনি তো নিজ চোখেই দেখতে পাড়ছেন ছেলেটা আমার প্রিয়ুকে কতোটা ভালোবাসে।আমি যদি ওকে বেশি বাধ্য করি তাহলে,ও সব কিছু ধ্বংশ করে দিবে।সাথে নিজেকেও।”
–আমি এতো কিছু শুনতে চাই না ইরফাত।তুই ওয়াদা করেছিলি,আমার মেয়ে এই বাড়ীর বউ হবে।আর এখন তুই পল্টি মারছিস ইরফাত।আমি আগেও বলেছি সারা এই বাড়ীর বউ না হলে তোদের জন্য ভালো হবে না।
-‘আর এই যে মহারানী, আসমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে।আপনি তো মনে হয় চানই না আমার মেয়ে এই বাড়ীর বউ হোক।তাই তো দেখছি আজকাল ওই মেয়েটাকে কিছুই বলেন না।একদম লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন।আপনার প্রশ্রয় পেয়েই মেয়েটি দেখি নিজের ইচ্ছা মতো চলছে ফিরছে ঘুরছে।আর আপনি ভাবমূর্তির মতো চেয়ে চেয়ে দেখছেন।আপনার কারণেই এই মেয়ে এতো সাহস পেয়েছে।আরে এই বাড়ীতে আসার পর পর যদি আপনি ওকে ওর যোগ্যতা দেখিয়ে দিতেন তাহলে এই মেয়ের এখনো এই বাসায় থাকার সাহস হতো না।কবে না উল্টা পায়ে দৌড় লাগাতো।কিন্তু আপনার তো সেই গুনটাও নেই।কেমন শ্বাশুরী আপনি।শ্বাশুরীদের নামই ডুবিয়ে দিলেন।
–আচ্ছা মহিনী আপা আমি বুঝতে পাড়ছি না,আপনার বীন কেনো এক জায়গায় এসেই বন্ধ হয় প্রতিবার।আপনি শুধু শুধু আমাকে দোষ দেন।আয়নকে চিনেন না আপনি।সামান্য সেদিন প্রিয়ুকে একটা বড় চিতল মাছ কাটতে দিয়ে ছিলাম।ম্যাডামের মাছ কাটতে গিয়ে একটু হাত কেটে গেছে বলে আয়ন এসে পুরো বাড়ী মাথায় তুলে ফেল ছিলো।এতো কাজের লোক থাকতে প্রিয়ুকে কেনো রান্না ঘরে যেতে হয়েছে কাজের লোকের সাথে সাথে আমারও ক্লাশ নিয়েছে।এরপর ও বলবেন আমার দোষ।আরে ছেলে আমার সারাদিন অফিসে থাকলে কি হবে,বাড়ীতে কি হয় না হয় তা কিভাবে যেনো ছেলের কানে চলে যায়।আর আয়নকে তো জানেন কতোটা রাগী।প্রিয়ুর ব্যাপারে ওর কাছে কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।এরপর আর কি বলতে পারি।ছেলেমেয়ে বড় হলে তাকে বুঝানো যায়।কিন্তু না বুঝলে তাকে তো মারার ভয় দেখিয়ে কাজ করা যায় না।

“হুম!হয়েছে,এতো ন্যাকা ড্রামা আর আমাকে দেখাতে হবে না।তুমি যে কতো কাজের তা জানা আছে আমার।এখন ভাবো প্রিয়ুকে কিভাবে তাড়িয়ে সারাকে আনা যায় এই বাড়ীতে।”

–মা এএএ।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশ আর অনিক।কি বলছো এসব।আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড।
“তিয়াশ,মুখ সামলিয়ে কথা বলো।আমি তোমার মা।ফ্রেন্ড নই।”
–আমিও জানি তুমি আমার মা।তাইতো অবাক হচ্ছি।আর তোমার কি লজ্জা করলো না কথাটি বলতে। কিভাবে ভাবলে আয়নদা প্রিয়ুকে ছেড়ে দিবে।এটা কখনো সম্ভব না।আর কোনও কারনে ছেড়ে দিলেও প্রিয়ুর জায়গা কাউকে দিবে না।
“ওটা পরে বুঝা যাবে।আগে একবার মেয়েটা আয়নের জীবন থেকে সরে তো যাক। তারপর দেখা যাবে আয়ন অন্য কাউকে গ্রহণ করে কিনা।আর তুই কেমন ভাই বলতো।কোথায় বোনের সংসার গোড়াতে সাহায্য করবি,তা না করে ওই মেয়েটার দালালি করছিস।তুই সত্যি কি আমার ছেলে।”
–মা,অন্যের সংসার ভেঙ্গে সেখানে নিজের জন্য তাজমহল গড়া যায় না।সংসার ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গার সমান।আর কেনো তুমি আয়নদার পিছনে পড়ে আছো।আমার বোন কোনও ফেলে দেওয়া জিনিস না যে ওকে কেউ বিয়ে করবে না বলে তুমি এসব করছো।

“তুই চুপ থাক।বড়দের মাঝে কথা বলতে আসবি না।তাছাড়া ইরফাত আমাকে ওয়াদা করেছে সারা এই বাড়ীর বউ হবে।বাবার ওয়াদা কি ছেলের পূরণ করা দায়িত্ব নয়।”
–তিয়াশ কিছু বলতে নিবে,ওকে থামিয়ে অনিক ওর বাবা মাকে জিঙ্গেস করলো কাহিনী কি এই ওয়াদার।

“ইরফাত সাহেব বলা শুরু করলো,আসলে অনিক সারা যখন ছোট ছিলো তখন ওকে আমার খুব ভালো লাগতো।আর আমি মনে মনে চেয়েও ছিলাম ওকে এই বাড়ীর বউ করবো একদিন।তাই আবেগের বশে আপাকে ওয়াদা করে ফেললাম।তখন সত্যি আমি জানতাম না পরিস্থিতি এমন হবে।তখন তো আয়ন আর প্রিয়ুর কোনও কাহিনীও ছিলো না।কিন্তু আয়ন প্রিয়ুকে পছন্দ করায় সারাকে নাকচ করে দিলো।তাহলে এখন আমি আর কি করতে পারি বল।আয়ন প্রিয়ুকে বিয়ে না করলে একটা উপায় বের করা যেতো।কিন্তু এখন!”
–অনিক কিছুক্ষন ভেবে,ফুফু আপনি কি চান সারা এই বাড়ীর বউ হোক তাইতো।
“হুম।মুখ ভার করে।”
–ওকে,তাহলে আমি বিয়ে করবো সারাকে।
“মানে।মহিনী বিস্মিত হয়ে।”
–মানে,আমি আমার বাবার ওয়াদা পালন করবো।আমি বিয়ে করবো।কিন্তু একটা শর্ত আপনি দাদা আর প্রিয়ুর লাইফ থেকে দূরে থাকবেন।ওদের সংসারের দিকে নযরও দিবেন না।
“আর ইউ সিরিয়াস অনিক।না মানে,আমি আ স লে।তুই কোনও চাপে পড়ে করছিস না তো।”
–নো তিয়াশ।দেখ আমার কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই।তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি কখনো কোনও রিলেশনেও নিজেকে জড়ায় নিই।তাহলে আমার সারাকে বিয়ে করতে কোনও সমস্যা নেই।আজ না হয় কাল বিয়ে তো করতেই হবে,তাহলে সারা কেনো না।
“না! এ কি করে হতে পারে।মহিনী একটু চিল্লিয়ে।”
–কেনো হয় না মা।তুমিতো চাইলে এই মাত্র সারাকে এই বাড়ীর বউ বানাতে।তাহলে সমস্যা কি এখন?অনিকও তো এই বাড়ীর ছেলে ।
“না মানে।আমি তো আ…”।
–ওই আশা বাদ দেও।সারার বিয়ে হলে অনিকের সাথেই হবে।তা না হলে এই বাড়ীর স্বপ্ন ভুলে যাও মা।

“ইরফাত সাহেব আর আসমা বেগম নিরবতা পালন করছে।কে কাকে বিয়ে করছে,কেনো করছে।এতো সব আজাইরা চিন্তা এখন তারা ভাবতে চায় না।এই ঝামেলা মিটতে পারলেই চলে।”
___________
“সারাদিন আজ প্রিয়ু অনেক আনন্দ করেছে।প্রিয়ুর সাথে থেকে আজ আয়নও যেনো তার শৈশব কালের পুরোনও স্মৃথিগুলো আরেক বার ফিরে পাওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছে।সময়ের আড়ালে ঢেকে যাওয়া স্মৃতিগুলো আজ আবার উকি দিয়ে উঠেছিলো।শৈশবের সোনালী রোদ্দুর আজ আবার সারা গায়ে মেখেছে আয়ন।ব্যস্ত নগরীর এই ব্যস্ত শহরে,চারদিকে ইট পাথরে ঘেরা চার দেয়ালের মাঝে এসি রুম থেকে বের হয়ে আজ যেনে মনটা প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছে।
প্রকৃতির হাওয়ার সাথে ভেসে আসা মিষ্টি ঘ্রানটা নাকে এসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে সকল ক্লান্তি দূর করে ফেলে নিমিষে।প্রত্যেকটি মানুষের মনের কোনে তার শৈশবকাল ঘাপটি মেরে বসে থাকে।অপেক্ষায় থাকে,একটু উকি দেওয়ার সুযোগ খুঁজে।”

–গাড়ী ছুটছে শহর থেকে দূরে।সারাদিনের ছুটাছুটিতে কিছুটা ক্লান্ত এসে ভিড় করছে শরীরে।তবে মনটা যেনো ফুরফুরে।প্রিয়ু রাতের শহরটিকে চোখ ভরে দেখছে।আয়নের ফোনটা বার বার বেজে বন্দ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আয়নের যেনো সেদিকে কোনও খেয়ালই নেই।
“আয়নদা ফোনটা ধরো।কখন ধরে বেজে চলছে।সমস্যা কি?”
–আয়ন আড় চোখে একবার প্রিয়ুকে দেখে আবার সামনে তাকালো।আজ ফ্রেন্ডসরা লেট নাইট পার্টির আয়োজন করেছে।সবাই হয়তো এসে পড়েছে, আমি এখনো কেনো আসি নিই।তাই ফোন করছে হয়তো।
“তাহলে তোমার ওখানে যাওয়া উচিৎ। তা না হলে সবার মন খারাপ হবে।”
–নাআআ,আমি যাবো না।লেট নাইট পার্টি হবে,তুই এমনেই টায়ার্ড ফিল করছিস।
“তাহলে তুমি আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে যাও।তাহলেই তো হলো।আয়ন কিছু বলবে তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠলো।এবার স্কিনে দিনেশের নামটি ভেসে উঠলো।আয়ন মুখে হাসি নিয়েই ফোনটি রিসিভ করে,কিরে শালা।তুই কবে আসলি।”
–আজ সকালে।কিন্তু তুই এখনো আসিস নিই কেনো।একবার আয় দেখ,চারদিকে কতো পরী ঘুরছে।দেখেই পাগল হয়ে যাবি।
“তাই নিই,তাহলে তো তিতিরকে একটা ফোন দিতেই হয় আমার কি বলিস।ওই পরী বাসায় থেকে কি করবে বল।পার্টিতে আসলে সবাই একটু দেখার সুযোগও পাবে।”
–হারামি!খুন করুম তোরে আমি।তুই আমার বন্ধু নামে দুশমন।
“আরে বাহ!তোমারটা দেখলে মানুষ খারাপ।আর তুমি পর নারী দেখলে কোনও সমস্যা নাই।মামু এটা কেমন আইন।”
–ওই বন্ধ কর তোর লেকচার,আসবি কখন ওটা বল।
“পসিবল না রে।আজ প্রিয়ুর সাথে বের হয়েছিলাম।এখনো ও আমার সাথে।”
–সমস্যা কি, ওকে নিয়ে আস।আরে এতোদিন কাজিন হিসেবে পরিচিত দিয়েছিস ফ্রেন্ডসদের সামনে।এখন আমাদের ভাবী হিসেবে দিবি।চিন্তা বাদ দিয়ে চলে আস কিছুক্ষনের জন্য।
“আয়ন ফোনটা কেটে,প্রিয়ুর দিকে তাকালো।সারাদিনের ক্লান্তির চাপ তো আসে মুখে।কিন্তু তবুও কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে প্রিয়ুকে।এই মেয়েটিকে সাধারণ মাঝেও অসাধারণ লাগে কেনো।আয়ন আজও বুঝতে পারেনা।তাই তো আয়ন বার বার না চাইতেও প্রেমে পড়ে যায়।আয়ন প্রিয়ুকে রাজি করে নিলো নিজের সাথে যাওয়া জন্য।অনিচ্ছা থাকা সত্যেও প্রিয়ু পার্টিতে যেতে রাজি হয়ে গেলো।”

–পার্টিতে ঢুকতেই প্রিয়ুর মাথা ব্যাথা আড়ম্ব হয়ে গেলো,এতো লাউড মিউজিক।আর চারদিকে বিভিন্ন রং এর লাইট জ্বলছে।
“প্রিয়ু তোর কি খারাপ লাগছে।তাহলে আমরা চলে যেতে পারি।”
–নাআআ,না। সমস্যা নেই।এভাবে চলে গেলে সবার মনটা খারাপ হবে।আমি বরং ওখানকার সোফাতে গিয়ে বসি তুমি সবার সাথে দেখা করো গিয়ে।
“আয়ন প্রিয়ুকে কর্ণারে একটা সোফাতে বসিয়ে দিলো।এখানে মিউজিকের সাউন্ড কম তাই।
তুই এখানেই থাকবি।আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবি না।ওকে!

“প্রিয়ুও মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ বসে রইলো।পার্টিতে সবাই একটু আড় চোখে দেখছিলো প্রিয়ুকে আর একটু হাসাহাসিও করছিলো।তাদের হাসার কারণটা সম্পর্কে প্রিয়ু খুব ভালো করেই অবগতো।কারণ প্রিয়ু সকালের নীল শাড়ীটি এখনো পড়া।আর এধরনের পার্টিতে শাড়ী কে পড়ে।তাই প্রিয়ু একটু আনকমফর্টেবেল ফীল করছে।তখনই আয়ন এসে আবার হাজির হলো।সাথে অর কিছু ফ্রেন্ডসদের নিয়ে।দিনেশকে প্রিয়ু আগে থেকেই চিনে।কিন্তু বাকি সবার সাথে তেমন পরিচয়ই নেই।”
–আয়ন সবার সাথে প্রিয়ুর পরিচয় করিয়ে দিলো।আয়নের বিয়ে সম্পর্কে অনেকেই জানে না।তাই প্রিয়ুকে দেখেই বন্ধুরা টোন মারা শুরু করে দিলো।
“ওই তুই বিয়া করলি কবে রে।আর আমাদের দাওয়াত দিলি না কেনো।এতো টাকা কমাই করোস,আর বিয়ে করেছিস চুপিচুপি।ভাই সব ঠিক আছে তো।”
–আরে তেমন কিছু না,এমনেই হঠাৎ এর উপর হয়ে গেলো।বলার সুযোগ পাইনি।বিয়ের দাওয়াত পাসনি তাতে কি,তোদের জন্য গ্র্যান্ট পার্টির আয়োজন করবো আমি।মন ভরে এন্জয় করিস।ঠিক আছে।
“আয়নের অন্য এক ফ্রেন্ড ফারদিন সন্দেহ দৃষ্টিতে আয়নকে প্রশ্ন করলো।আয়ন মাহমুভ বিনা করণে কোনও কাজ করে না।তাহলে বিয়ে!আর চোখে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে একবার,ভাবি আবার পেগনেন্ট নাতো।”
–আয়নের সব বন্ধুরা কেমন চাতক পাখির মতো আয়নের দিকে তাকিয়ে আছে,জানতে ঘটনা আসলে কি?
“আর ব্যাচারী প্রিয়ু এতোগুলো ছেলের লাগাম ছাড়া কথাবর্তা শুনে ওর ফুলা গালের অংশটুকু লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।কেনো যে ও আসলো এসব ফাজিল লোকদের সামনে।মনে মনে এখন নিজেকেই বকছে।”
–ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দিনেশ সবগুলোকে ধমক দিলো একটু,অই তোরা যাতো এখান থেকে।শুধু শুধু আমার পিচ্ছি ভাবীটাকে অস্বস্তিতে ফেলছিস।ভাবী কিন্তু কেঁদে দিবে এখন।
“সবাই একসাথে হেসে দিলো।আয়নও সুযোগ পেয়ে মিটমিটে হাসছে।”
–প্রিয়ুর মেঝাজ গরম হয়ে যাচ্ছে বলে,ফ্রেন্ডদের চোখ টিপ মেরে অন্যদিকে পাঠিয়ে দিলো আয়ন।প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে দেখে কেমন গাল ফুলিয়ে রাখছে।আয়ন প্রিয়ুর কাছে এসে রিলেক্স প্রিয়ু ওরা শুধু মজা করছিলো।এতো রাগ করার কিছুই নেই।”
“-আমি বাসায় যাবো।দাঁতেদাঁত চেপে।”
–ওকে,বাট ওদের বলতে হবে।তুই বস আমি বলে আসছি।প্রিয়ুর কাছে দিনেশকে রেখে আয়ন ফ্রেন্ডসদের বায় বলতে গেলো।
“দিনেশ ও প্রিয়ু চুপচাপ সোফায় বসে আছে।দিনেশ ওয়েটারকে বলে দুটো ড্রিংক ওর্ডার করলো।তবে নিজের জন্য ড্রিংক আনলেও প্রিয়ুর জন্য সোপ্ট ড্রিংকস এনেছে।ওয়েটার ড্রিংকস দুটো টেবিলে রেখে গেলো।”
–তো কেমন আছো প্রিয়ু।বৈবাহিক জীবন কেমন চলছে তোমাদের।
“এই তো ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ।ভালোই সব।”
–সব ভালো থাকলে আয়নকে একসেপ্ট করতে পাড়ছো না কেনো প্রিয়ু।
“প্রিয়ু কিছুটা চমকে গেলো।প্রিয়ু জানে আয়ন আর দিনেশ খুব ঘনিষ্ঠ। সবই শেয়ার করে দুজন দুজনার সাথে।কিন্তু এই মুহুর্তে এই প্রশ্নের উত্তর প্রিয়ুর নিজের কাছেও নেই।কেনো সে একসেপ্ট করতে পাড়ছে না আয়নকে।অতিতের কাজের জন্য আয়ন বারবার অনুতপ্ত হয়েছে কিন্তু প্রিয়ুর মন কেনো এতো দ্বিধায় পড়ে আছে,কিছুই বুঝতে পারছে না।”
–দিনেশের কথায় প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে পায়,এখনো সময় আছে নিজের জিনিসটি নিজের করে নেও।সময় থাকতে অধিকার খাটাও।না হলে হারিয়ে ফেলবে।এমনেই তোমার জিনিসের উপর অন্য কারো নযর পড়ে আছে।দিনেশ ইশারায় আয়নের দিকে দেখালে।

“প্রিয়ু পিছনে ঘুড়ে দেখে,একটা মেয়ে আয়নের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।ভালো করে একটু লক্ষ্য করার পর দেখতে পারে,মেয়েটি আর কেউ না নিলীমা।নিলীমা আয়নের হাত ধরে ওকে ডান্স ফ্লোরের দিকে টানছে।আয়ন না করার পরও শুনছে না।কিছুটা ড্রাংক হয়তো।তাইতো বারবার আয়নের বুকের উপর পড়ে যাচ্ছে।বাহানায় আয়নকে বারবার এখানে ওখানে স্পর্শ করছে।”
–প্রিয়ু নিলীমাকে আয়নের এতো কাছে দেখেই মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।মনে মনে বললো,এই ডাইনী এখানে কি করছে।আর ওর সাহস কি করে হলো আমার স্বামীকে স্পর্শ করার।শয়তান মহিলা,লজ্জা স্মরম কি নাই তোর।পুরুষ দেখলেই ঢলে পড়তে মন চায়।এইসব মহিলা গুলোর জন্যই সমাজ এতোটা নষ্ট হচ্ছে।
রাগের বশে প্রিয়ু টেবিলে রাখা দিনেশের ড্রিংকসটা একঢোকে খেয়ে ফেলে।
“আর দিনেশের হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না সেই মুহুর্তে ।”
__________
“প্রিয়ু একটা হিচকি তুলে,কেমন বোকা বোকা চেহারায় দিনেশের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো,এটা কি ছিলো ভাইয়া।আমার না কেমন কেমন লাগছে।”
–প্রিয়ু রিলেক্স, আই থিংক তোমার নেশা হয়ে গিয়েছে।দাঁড়াও আমি আয়নকে ডেকে আনি।
“আরে আমার এখনো নেশা হয়নি।কিন্তু কেনো।একটু কাঁদোকাঁদো ফেস বানিয়ে।”
–ও,মনে হয় কম খেয়েছো।আরো একগ্লাশ খাওয়া দরকার ছিলো।
“সত্যি!তাহলে আমি আরো খাবো।পাশ দিয়ে ওয়েটা কারো জন্য হয়তো ড্রিংকস নিয়ে যাচ্ছিলো।প্রিয়ু সেটা ছিনিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেললো।এবারও বড় একটা হিচকি তুললো।”
–এরপর চোখ ঘুড়িয়ে আয়নকে খুঁজতে লাগলো।নিলীমার সাথে আয়নকে দেখে প্রিয়ুর আবার রাগ উঠে গেলো।ঢুলুঢুলু পায়ে এগিয়ে গিয়ে,আয়নের সামনে দাঁড়ালো।
“আয়ন প্রিয়ুকে এ অবস্থায় দেখেই ৪২০ভোল্টেজ ঝটকা খেলো।আর ইউ ওকে প্রিয়ু।”
–প্রিয়ু,ঠোঁটটা উল্টিয়ে মাথা নাড়ে না।
“তুই ড্রিংক করেছিস।”
–এবারও মাথা নাড়িয়ে না বলে।আমিতো কোক খেয়েছি।তিতা কোক।কিন্তু আমি তোমাকে আমার তিতা কোকের হিসেব কেনো দিবো।আগে বলো,এই ডাইনী এখানে কি করে।
“প্রিয়ুর কথা শুনে নিলীমা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।হাউ ডেয়ার ইউ?আর তুমি আয়নের পিছনে পিছনে এখানেও চলে এসেছো।”
–সেট আপ!বেশরম মহিলা।
“কি?আমি মহিলা।তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে মহিলা বলার।ইউ স্টুপিট গার্ল।”
–বাহ রে,মহিলা কে মহিলা বলবো না তো কচি খুকু বলবো।ও আচ্ছা তাহলে নিজেকে কচি খুকু মনে করেই আমার জামাইয়ের কোলে বসার প্লানিং করছিস।সাহস কি করে হলো তোর।আর কখনো আমার স্বামীর আশেপাশে দেখলে কেটে কুচিকুচি করে শাক রেঁধে এলাবাসীকে মিলাদ পড়িয়ে খাইয়ে দিবো।

“আয়ন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আসলে বুঝতে পাড়ছে না কি বলবে ও।রাগ করবে প্রিয়ুর ড্রিংকস করার জন্য,নাকি খুশি হবে প্রিয়ু আয়নকে নিজের স্বামী বলে দাবী করছে শুনে।”
–আর এদিক দিয়ে দিনেশ সহ আয়নের বাকি বন্ধুরা প্রিয়ু আর নিলীমার ঝগড়াটা খুব এন্জয় করছে।
“আয়ন তুমি এমন হা হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো।তোমার বউ কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছে।”
–আরে রাখ তোর ইনসাল্ট।যার নিজের কোনও ইজ্জত নেই,তার আবার মান কি সম্মান কি।আর এই খবিশ(আয়নকে উদ্দেশ্য করে)।তুই ওর সাথে আজকাল অফিসে নিশ্চয়ই কোনও ইটিসপিটিস করিস।তাইতো বলি এখন আমার থেকে দূরে দূরে কেনো থাকিস।আগে তো সারাক্ষণ আমার পিছে পিছে ঘুড়তি।আর এখন আমাকে ভাও দিস না।কেনো?এই ডাইনীর জন্য।

“আমি সব বুঝতে পারছি এখন রাতে….আয়নের এতোক্ষণ পর হুস এলো।আর সাথেসাথে প্রিয়ুর মুখটা চেপে ধরে হাত দিয়ে।তা না হলে এই মেয়ে আজ ওর ইজ্জতের কাচ্চি বিড়িয়ানি বানিয়ে ফেলবে নির্ঘাত।দিনেশের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালে,দিনেশ ইশারায় সরি বলে।ইচ্ছে করে করিনি দোস্ত।”
এই আয়ন ছাড়না ভাবীকে,আমরাও শুনি তুই কি কি করিস না আজ কাল ভা….আয়ন আর বলতে দিলো না।
সেট আপ গাইস্।আর না।এমনেই আজ অনেক হয়েছে।তোরা আবার শুরু করিস না।তা হলে এই পাগলীকে সামলানো যাবে না।”

–আয়ন প্রিয়ুকে কোনও রকম মুখ চেপেই বাহিরে নিয়ে এলো।কিন্তু প্রিয়ুকে শান্ত করতে পাড়ছে না।হাত পা ছুটাছুটি করছে আয়নের আবদ্ধ থেকে মুক্তি পেতে।

“একে নিয়ে গাড়ী চালানো যাবে না।আয়ন বুঝতে পারছে না এতোটুকুতে এই মেয়ে এতো মাতাল কি করে হলো।আয়ন উপায় না পেয়ে দিনেশের গাড়ীতে উঠে দিনেশকে কল করলো।”

চলবে…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here