“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-23
“হঠাৎ গভীর রাতে তারবিহীন মুঠোফোনটা বেজে উঠলো।তিতি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম চোখে না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে নিলো।ঘুমের মধ্যে বিরক্ত একদম পছন্দ না তিতির।কিন্তু কেউ যদি দরকারে ফোন করে থাকে তাই কিছু না ভেবেই আননোন নাম্বর সত্বেও রিসিভ করে নিলো।কানের কাছে ফোনটি নিয়ে কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বলার পরও যখন অপর পাশ থেকে কোনও রিসপনস পাচ্ছিলো না।তখন খানিকটা বিরক্ত হয়েই ফোনটা রেখে দিতে নিলো।কিন্তু তখনই কানে একটা চেনা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসলো।খুব পরিচিত এই কন্ঠ।তিতিরের ঘুমটা মুহুর্তেই উড়ে গেলো।নিশ্বাসটা ভারী হতে লাগলো।পরিচিত কন্ঠটি আরো একবার শুনার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহে ফোনটা কানের কাছেই সেটে ধরে রাখলো।মনটা চাতক পাখির মতো ছটফট করতে লাগলো আরো একবার তার কন্ঠ শুনতে।কিন্তু ফোনের অপর পাশের লোকটি খুবই নির্দয়।তিতিরকে জ্বালাবার জন্য একদম চুপ করে রইলো।”
–দিনেশ তিতিরের বাড়ীর সামনেই গাড়ী পার্ক করে বসে আছে।ফোনের অপর পাশে বসে থাকা তিতির এর অনুভূতির গভীর নিশ্বাসগুলোর এলোমেলো প্রতিধ্বনি এই নিস্তদ্ধ রাতে ফোনই বেশ অনুভোব করছে।ওর খুব ভালো লাগছে।তাইতো চুপ করে আছে।দিনেশ জানে দিনেশ ফোন না কাটলে তিতিরও কাটবে না।বরং সারা রাত অপেক্ষা করবে।তবুও এই মেয়ে মুখ দিয়ে এক ফোটাও কথা বলবে না।কিন্তু দিনেশের যে অনেক কিছু বলার আছে।অনেক কিছু বুঝার আছে।তাই নিরবতা ভেঙ্গে দিনেশই বললো,আমি নিচে ওয়েট করছি তোমার জন্য।নিচে আসো।ফোনের ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসছে না।দিনেশ অপেক্ষা করছে তিতির এর জবাবের।
“কিছুক্ষণ পর মিষ্টি কন্ঠে একটা মেয়ে বলতে লাগলো,অ অনেক র রাত হয়ে গিয়েছে।ক কেউ দেখলে।আ আমি এখন আসতে পারবো না।”
–দিনেশ মুচকি হেসে গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে একটু আড়ামে বসে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।এরপর আবার বলা শুরু করলো,আমি খুব ক্লান্ত তিতির।এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষগুলোর সাথে ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে পরিশ্রান্ত আমি।আমার এই ক্লান্ত রাতের প্রশান্তি তুমি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে…যানো তিতির ভেতরটা খুব জ্বালাপড়া করছে আজকাল।সইতে এখন খুব কষ্ট হয় তোমার থেকে দূরে থাকতে।আমি জানি না তুমি কিভাবে নিজেকে এতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারো।কিন্তু আমি যে আর পাড়ছি না।আমার এই নিঃস্ব জীবনে তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন তিতির।তুমি নির্দয় হতেই পারো।কিন্তু আমি জানি আমার তিতির নির্দয় না।সে আসবে।তার একবিন্দু জল দিয়ে আমার ভেতরের সব কষ্ট গুলো নিবারণ করবে।আমি অপেক্ষা করবো তার জন্য এটা বলেই দিনেশ ফোনটা কেটে দিলো।চুপ করে বসে সময় গুনছে দিনেশ।ও জানে তিতির আসবে।নিজের জন্য না,দিনেশের জন্যও না।বুকের ভেতরে যে ছোট্ট মনটা আছে,তার জন্য।যা কারো কথা শুনে না।জাত,ধর্ম, উঁচু, নিচু কিছুই বুঝতে চায় না।ভীষণ বেহায়া এই মন।কেনো যে কথা শুনে না।তাহলে তো এতো কষ্ট পেতে হতো না।
“পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর তিতির আসলো।পড়নে তার এখনো রাতের পোশাক।ওড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে কোনও রকম তাড়াহুড়া করে বাড়ীর বাহিরে এসে দেখে বাড়ীর সামনেই দিনেশের গাড়ীটি দাঁড় করানো।তিতির ঝটপট গিয়ে গাড়ীর দরজাটি খুলে বসেই কোনও রকম ভনিতা ছাড়াই দিনেশ কে তারা করতে লাগলো,কি বলবেন তারাতারি বলুন।কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে।কিন্তু তিতির বুঝতে পারিনি দিনেশের মনে কি চলছে।
–দিনেশ তিতিরকে কিছু না বলেই গাড়ীটি স্টার্ট দিলো।যা তিতির একদমই আশা করে নিই।দিনেশের এহেম কান্ডে প্রচণ্ড রেগে গেলো তিতির।”
“-গাড়ী গিয়ে থামলো একটা লেকের পাড়ে।তিতির সারা রাস্তায় টেনশন আর রাগে আর একটা কথাও বলেনি দিনেশের সাথে।হঠাৎ গাড়ীর দরজা খুলার শব্দে তিতির সম্বিৎ ফিরে পায়।দিনেশ দরজা খুলে ওর সামনে একটা হাত দিয়ে ইশারা করছে,হাতটি ধরে গাড়ী থেকে নামতে।তিতিরের প্রথমে ইতস্তত হলেও পরে কিছু একটা ভেবে দিনেশের হাতে নিজের হাতটি রাখে।
পুরো লেকটি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।লেকের মাঝে বসার ব্যবস্তা করে খুব সুন্দর করে লাইটিংও করা হয়েছে।সাথে লাল সাদা লাভ সেপের বেলুন দিয়ে চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দিনেশ তিতিরের হাতটি ধরে হাটা ধরলো বাঁশ দিয়ে তৈরি রাস্তাটিতে।এটার চারপাশও একই ভাবে সজ্জিত।”
“তিতির যতই সামনে বাড়ছে ততই অবাক হচ্ছে।সামনে একটি গোল টেবিল রাখা।টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা।দুপাশে দুটো চেয়ার।একটু সামনে এগোতেই কেকটির উপরের লিখা চোখে ভেসে উঠলো তিতিরের।
-হেপি বার্থ ডে মাই ডিয়ার তিতির-।
তিতির অবাক হয়ে দিনেশের দিকে তাকালো।ও নিজেই ভুলে গিয়েছিলো ওর জন্মদিনের কথা অথচ এই মানুষটির সব মনে আছে।মূলত্ব দিনেশ এই কারনেই এতো তাড়াহুড়া করে দেশে ফিরেছে আজ।ও কিছুতেই আজকের দিনটি মিস করতে চায় নিই।ক্যান্ডেলটি জ্বালিয়ে তিতিরকে আরো অবাক করে পিছন দিয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে,তিতিরের হাতের উপর হাত রেখে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,হেপি বার্থ ডে মাই লাভ।
–আর এতেই তিতির যেনো শেষ।সামনের কোনো কিছুর প্রতি তিতিরের আর কোনো খেয়াল নেই।দিনেশ এতো কাছে আসায় তিতির কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।মনে মনে নিজেকে সব থেকে খারাপ গালিগুলো দিলো।কেনো বারবার এতোটা দূর্বল হয়ে যায় ও এই মানুষটাকে দেখলে।এতোটা বেহায়া কেনো আমি।কেনো আমি বারবার নিজেকে হারিয়ে ফেলি এই মানুষটির মাঝে।
“দিনেশ ও তিতির কেক কেটে দুজন দুজনাকে খাইয়ে দিলো।তিতিরকে অবাক করে দিয়ে,দিনেশ নিজের পকেট থেকে একটা সাদা পাথরের ডায়মন্ড রিং বের করে,তিতিরের সামনে হাটু গেড়ে বসে তিতিরকে প্রোপজ করে,ডু ইউ মেরি মি তিতি।আই কান্ট লিভ ইউদাউট ইউ।প্লিজ একসেপ্ট মি।দিনেশ রিং ধরে বসে আছে তিতিরের উত্তর জানতে।”
–অজানা একটা ভালোলাগা কাজ করলো তিতিরের মাঝে দিনেশের কথাগুলো শুনে।হাজার মেয়ের ক্রাশ এই ছেলেটি শুধু ওকে ভালোবাসে।ওকে পেতে চায়।যা ভাবলেই অবাক লাগে।নিজেকে খুব লাকি মনে হলেও মুহুর্তেই নিজেকে আবার সামলিয়ে ফেলে।কারণ তিতির জানে এই সম্পর্কের কোনও পরিনিতি হবে না।সমাজ ধর্ম কেউ ওদের মেনে নিবে না।সবাইকে উপেক্ষা করে এই সম্পর্কে জড়ালেও সম্পর্কটাকে কখনো একটা পবিত্র নাম দিতে পাড়বে না।অনেক কিছু ভেবেই চোখ দুটো বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে তিতির দিনেশকে না বলে দেয়।
“মুখের উপর এমন না তিতির আগেও বলছে।কিন্তু আজ যেনো একটু বেশি রুডলি লাগলো না টা দিনেশের।চোখমুখ শক্ত করে দিনেশ তিতিরের দিকে তাকালো।”
__________
“হোটলের সাদা ধবধবে চাদর বিছানো বেডের উপর পা দুটো ঝুলিয়ে প্রিয়ু অর্ধমাতাল হয়ে শুয়ে আছে।মাথায় ওর অদ্ভুট চিন্তা ভাবণা ঘুরঘুর করছে।সারা রাস্তায় আয়নকে প্রশ্ন করতে কারতে কান দুটো জ্বালাপড়া করে দিয়েছিলো।আয়ন রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই টুপ করে আয়নের গালে একটা কিস করে দেয়।সেই মুহুর্তে আয়ন নিজের সব অনুভূতিগুলো চেপে ধরে তাকিয়ে ছিলো প্রিয়ুর দিকে।আজ আয়নের রাগ উঠছে না,অভিমানও হচ্ছিলো না।প্রিয়ুর ছোঁয়ায় ওর শরীরটা বরং আবার যেনো জেগে উঠছিলো।”
–রাত বাড়ছে, চারদিকের নিস্তদ্ধতা তাই জানিয়ে দিচ্ছে। রাতের এই আধারের সাথে সাথে আয়নের ভেতরের অস্থিরতাটাও যেনো বাড়ছে।রুমের লাইটগুলো বন্ধ।চাঁদের আবছা আলোতে বালকানিতে দাঁড়িয়েই আয়ন প্রিয়ুর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাতাসে জানালার সাদা পর্দাগুলোও উড়ে এসে আয়নকে কিছুটা বিরক্ত করছে।
“প্রিয়ু হঠাৎ কি মনে করে উঠে বসলো।আর সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে কিছুটা ভরকে গেলো।হাত উঠিয়ে শাসিয়ে বলতে লাগলো,ওই কি দেখিস এভাবে।আমি কি পাগল নাকি জোকার।এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।চোখ উঠিয়ে তোর গুটি খেলবো আবার তাকালে আমার দিকে।প্রিয়ু মনে হয় নিজের মধ্যেই নেই,কোনও রকম ঢলতে ঢলতে আয়নের কাছে এসে দাঁড়ালো।চোখগুলো অলরেডি কেমন ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে প্রিয়ুর।আয়ন বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ু হার্ড ড্রিংকস করেছে।তাই নিজেকে সামলাতে পাড়ছে না।আর এখন আবলতাবল বকে যাচ্ছে।
–প্রিয়ু ঢুলে পড়ে যেতে নিলে আয়ন তৎক্ষনিক ধরে ফেলে,নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।আয়নের বুক থেকে নিজেকে তুলে প্রিয়ুর উষ্ণ হাত দিয়ে আয়নের গালদুটো ধরে খুব যত্নের সাথে।চোখে চোখ রেখে বলে,কেনো করলে আমার সাথে এমন।একটু কি আমাকে বুঝতে মন চায় নিই তোমার।একবার কি বিশ্বাস করা যায় নিই আমাকে।আমি ভাবতাম তুমি আমাকে সবথেকে বেশি জানতে।কিন্তু সেই তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে না।একবার বিশ্বাস করে,কাছে এসে ভালোবেসে আমাকে ডাকতে আমি সারা না দিয়ে কি পাড়তাম বলো।কিন্তু তুমি সব সময় তোমার জিদ আর ইগোর কারণে আমাকে কষ্ট দিতে।তাহলে বলো কিভাবে ভালোবাসি তোমায় এখন আমি।আমার ভয় হয় জানো,ভীষণ ভয় হয় তুমি যদি আবার আমাকে ছুঁড়ে ফেলো দেও।আবার আমাকে ভুল বুঝো।আবার আমাকে একা ফেলে চলে যাও।তাহলে আমি কি করবো বলো।অজান্তেই প্রিয়ুর কন্ঠে ভেসে উঠছিলো প্রিয়ুর ভেতরের কষ্টগুলো দলা বেধে।যা ও এতোদিন চেপে রেখে দিয়েছিলো নিজের মাঝে।আয়নকে বলতে সাহস পায় নিই।কিন্তু আজ প্রিয়ু নিজের না বলা সব অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ব্যস্ত আয়নের কাছে।আজ ও সব বলবে,নিজের অভিমানের ঝুড়িটি আয়নের কাছে সোপে দিবে।”
–আয়ন চুপ হয়ে প্রিয়ুর মুখের অভিব্যক্তগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো।আয়নতো চাই প্রিয়ু বলুক,ওর নিজের মাঝে লুকানো না বলা হাজারো কথাগুলো বলুক।আয়ন শুনতে রাজি।আর আজ মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো যেনো আয়ন পেয়েও গেলো।কমপক্ষে জানতে তো পাড়ছে প্রিয়ুর ভেতরে চলছে কি।আয়নও নিজের শক্ত দুহাতের তলিতে প্রিয়ুর মুখটা ধরলো,একবার শুধু,একবার বিশ্বাস করে দেখ এবার।এই জীবনে আর কখনো তোর হাত ছাড়বো না।শুধু একবার সুযোগ দিয়ে দেখ ভালোবাসার।তোকে কখনো নিরাশ করবো না।শুধু একবার কাছে টেনে নেয় আমায় আমি তোর সব কষ্টগুলো নিজের মাঝে শুষে নিবো।কখনো তোকে একা ছাড়বো না সোনা।শুধু একবার আমাকে একসেপ্ট করে দেখ।তোর সব অভিযোগ দূর করে দিবো।তোর অভিমানের ঝুড়িটি আমি খালি করে দিবো।শুধু একবার আয়ন বলে ডাক।তোর মুখে নিজের নামটি শুনতে আমি অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছি।বল সোনা।একবার কি পাড়বি আমায় ক্ষমা করতে।আমি সব ঠিক করে দেবো।
“আয়নের ভেতরের পীড়াগুলোর সাথে ওর অনুতপ্তও যেনো প্রিয়ু দেখতে পাড়ছে আজ।তবুও কেনো জানি ভরসা করতে পাড়ছে না।হঠাৎ আয়নের হাতের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো প্রিয়ু।ছাড়ো আমাকে,তুমি একটা বাজে,খবিশ লোক।নিজের যখন যা মন চাইবে তাই আমাকে করতে বাধ্য করো।কখনো আমার অনুভূতি জানার চেষ্টা করো নিই।ছাড়ো আমায়।আমি বলবো না কখনো ভালোবাসি।বলবো না।কি করবে খারুস!
“আয়ন প্রিয়ুকে আরো কাছে টেনে নিলো।এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে প্রিয়ু।”
–কি বেশি হে!কি? তুমি যা বলবে তাই হবে।না হবে না।কি করবে?
“আয়ন কিছু না বলেই প্রিয়ুর গলায় মুখ গুজে দিলো।প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে আরো কাছে টেনে নিলো।বল প্রিয়ু আমি যখন তোকে এভাবে স্পর্শ করি তোর ভালো লাগেনা।বল না।আমার স্পর্শ গুলো তোকে কি ভীষণ পিড়া দেয়।যেখানে ভালোবাসা না থাকে সেখানে শরীরের চাহিদাও থাকে না।তাহলে কেনো আমার স্পর্শে তুই কেপে উঠিস বারবার।আমাকে বাধা দেওয়ার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলিস।বল!আয়ন আস্তে আস্তে গলা ছেড়ে নিচে নেমে আসছে।আমি কি এগবো প্রিয়ু।তোর মন সায় না দিলে আমি থেমে যাবো।কিন্তু একবার এগলে আর বাধা মানবো না।”
–প্রিয়ু নিশ্চুপ।প্রতিবারের মতো এবারও প্রিয়ু কিছু বলতে পাড়লো না।তবে আয়নের ছোঁয়ায় প্রিয়ু পাগল হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে সামলাতে চেয়েও পাড়ছে না।এ কেমন অনুভূতি।কেনো এমন লাগছে।প্রিয়ুর নেশার ঘোর যেনো হঠাৎ ই কমে যেতে লাগলো।
“প্রিয়ুর চুপ থাকাকে হা মনে করে আয়ন প্রিয়ুকে দুহাতে তুলে নিলো।প্রিয়ু আজ আর বাধা দিলো না।সম্পর্কটাকে প্রিয়ু একবার সুযোগ দিতে চায়।ভুলগুলো শুধরিয়ে আয়নের হাতটি ধরে সামনে এগিয়ে যেতে চায়।নিজেও একবার হারাতে চায় আয়নের মাঝে।ভেতরের জমে থাকা কষ্টগুলো পুটলি বেধে দূরে ফেলে দিতে চায়।আয়নের অতিরিক্ত চাওয়া আর ভালোবাসাকে নিজের চাদর করে জড়িয়ে নিতে চায়।একবার সব কিছু ভুলে স্বাভাবিক হতে চায়।তাইতো আজ প্রিয়ু আর আয়নকে বাধা দিলো না।আজ ওদের ভালোবাসা একতরফা হবে না।দুটি মনের মিলন হবে,দুজনের সান্নিধ্যে।
__________
“আরভিনকে আয়ন অস্ট্রলিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।একটু আগেই প্রিয়ুর কথা হলো ছোট ভাইটির সাথে।প্রথমে প্রিয়ু এই নিয়ে খুব রাগ করেছিলো আয়নের সাথে।এতোটুকু একটা বাচ্চাকে কেনো এতেদূর পাঠালো।ও একা কিভাবে কি করবে।কিন্তু পরে আরভিনের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো আরভিন ওখানে ভালো আছে।হ্যাপি আছে।ওখানে আয়নের পরিচিত এক বাঙ্গালি পরিবারের সাথে আছে।তবুও প্রিয়ুর মন মানছিলো না।মায়ের আদর দিয়ে আরভিনকে বড় করেছে প্রিয়ু।তাইতো কষ্টটাও একটু বেশি পাচ্ছে ভাইকে ছাড়া।কিন্তু কি করবে?এখানেও আনা সম্ভব না।সবাই মানলেও আসমা বেগম যে ব্যাপারটা ভালো চোখে নিবেন না,তা প্রিয়ু ভালো করেই জানে।অশান্তি হবে সংসারে।তাই এই বিষয় এখানেই রাখলো।আয়ন কথা দিয়েছে,আরভিনের ভ্যাকেশন শুরু হলে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।পুরো ভ্যাকেশন ও এখানেই থাকবে।”
–আয়ন অনিকের রুমে দাঁড়িয়ে আছে।অনি আমি এসব কি শুনছি।
“কি আয়নদা?একটু বিস্মিত হয়ে।”
–তুই সারাকে বিয়ে করছিস।তুই জানিস না ও কেমন।ওর মা কেমন।
“আয়নদা আমি জানি ফুফু কেমন,কিন্তু তাই বলে যে সারাও মহিনী ফুফুর মতো হবে এমনতো নয়।হয়তো ও তিয়াশের মতোও হতে পারে।সারাকে আমরা চিনিই বা কতোটুকু।আর তুমি তো যানো আমি প্রেমটেম করতে পাড়িনা।তাই বিয়েতেই মত দিয়ে দিলাম।”
–কিন্তু…।অনিক আয়নকে থামিয়ে দিলো।দাদা তোমার সারার প্রতি বিশ্বাস নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমার প্রতি তো আছে।
“আয়ন আর কিছুই বলতে পাড়লো না।ভাই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।তাই আয়ন আর কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর তখনই সারার সাথেও দেখা হয়ে গেলো বাহিরে।সারা আয়নকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে, দাঁড়াও সারা বলে ডাক দেয়।”
–সারা আয়নের ডাক উপেক্ষা করার সাহস পেলো না।তাই আয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“আমি জানি না এমন কি হয়েছে,যার কারণে আমার প্রিয় ভাইটি আমাকে একবার না জানিয়ে এতোবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।যাই হোক।ও খুশি থাকলেই আমি খুশি।মনে রেখে সারা যদি কোন উল্টাপাল্টা কারণ বা তোমার মা আর তোমার মাথায় অন্যকোনও চিন্তা থাকে এই বিয়ে নিয়ে আর আমি যদি ভবিষ্যৎ এ এসব জানতে পারি তাহলে সেদিনই হবে তোমাদের শেষ দিন।আমি কিন্তু কাউকে ক্ষমা করবো না।মনে রেখো।”
–আয়ন চলে গেলো সারাকে ছোটখাটো একটা ওয়ার্নিং দিয়ে।আর সারা অগ্নি চোখে আয়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।এতোক্ষণ এই বিয়ে নিয়ে সংশয় ছিলো সারার মনে,কিছুতেই বিয়েটা করবে না বলে অনিককে না বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু আয়নের তিক্ত কথায় নিজের মত পাল্টিয়ে ফেললো সারা।এখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো ও এই বিয়েটা করবেই।আর এক ভাইয়ের মাধ্যমে আরেক ভাইয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে।
“আয়ন রুমে এসেই কোটটা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে।ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ উঠছে।সারা যে এতোকাল ওকে পছন্দ করে আসছে তা আয়ন খুব ভালো করেই জানে।কিন্তু রাতারাতি ওরই ভাইকে কোন উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে চাইছে তাই বুঝতে পাড়ছে না।নিজের রাগ টাইয়ের উপর ঝাড়তে গিয়ে যেনো আরো ফেঁসে গেলো আয়ন।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।অনেক জোড়াজোরিতে ও খুলতে পাড়ছে না।অস্বস্তি লাগছে আয়নের এখন।”
–প্রিয়ু বালকানি থেকে এসে আয়নের এমন অবস্থা দেখে হতোবম্ভ হয়ে গেলো।এ কি করছো তুমি ছাড়ো।এতে তো আরো ফেঁসে যাবে গলায় এটা।দাঁড়াও!প্রিয়ু তারাতারি কেঁচি দিয়ে টাইটা কেটে ফেললো।দেখলে সহয একটা সমাধান।অথচ এতোক্ষণ কতো কষ্ট না করলে।রাগ দেখিয়ে সব কিছু পাওয়া যায় না।মাঝেমাঝে ধৈর্য ধরে সময়ের আশায় ছেড়ে দিয়ে দেখতে হয় কি হয়।রাগ মানুষকে ধ্বংশ করে।
“আয়ন একটু শান্ত হয়ে প্রিয়ুকে টোন মেরে বলে,কিন্তু আমার রাগ তোকে আমার কাছে আসতে বাধ্য করেছে।দেখ এখন তুই আমার কতো কাছে।প্রিয়ুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।”
–আজাইরা কথাবার্তা তোমার।ছাড়ো বলছি।আমিও না পাগল কার কানে বীন বাজাচ্ছি।
“আজকাল ম্যাডামের একটু সাহস মনে হয় বেশি হয়ে গিয়েছে।ঈদানিং লেকচারটা একটু বেশি ঝাড়ছিস বলে মনে হয় না তোর।”
–হুম,উচিত কথা বললে,সবারই লেকচারই মনে হয় বুঝলে।এই যেমন এখন তোমার মনে হচ্ছে।
“তাই নাকি,এতো শেয়ানা কবে থেকে হলি শুনি।আজকাল উচিত কথাও বলা হচ্ছে।দাঁড়া!আয়ন প্রিয়ুকে শুড়শুড়ি দিতে লাগলো।প্রিয়ু আয়ন থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াতে লাগলো রুমের মধ্যে।”
–আয়নদা ভালো হবে না বলে দিলাম।
“ফাজিল মেয়ে আবার আমাকে আয়নদা বলছিস।তোকে না বলেছি শুধু আয়ন বলে ডাকবি।”
–উঁহু বয়েই গেছে,এতোবড় বুড়োব্যাটাকে নাম ধরে ডাকলে পাপ হবে পাপ।ঘোর পাপ।আমি তো পাবলিকের সামনেও তোমাকে আয়নদা বলেই ডাকবো।
“আচ্ছা, তাহলে দাঁড়া।পালাচ্ছিস কেনো।আমিও দেখি আমার পিচ্ছি বউটার কতো সাহস।”
–আমাকে কি তোমার নিলীমা মনে করেছো।বললেই লাফাতে লাফাতে কোলে এসে বসে পড়বো।
“এ কেমন অপবাদ প্রিয়ু। আমি কবে আবার নিলীমাকে কোলে বসালাম।আমিতো তোকেই কোলে নিয়ে বাঁচি না।কিন্তু মনে হয় এবার ব্যাচারীকে একবার চান্স দেওয়া দরকার।এমনেই সারাদিন আমার সাথে দেবদাস হারানো পারুর মতো মুখ করে থাকে অফিসে।দেখতে একদমই ভালোলাগে না।কিন্তু কোলে নেওয়ার কথা শুনলে নিশ্চয় খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিবে কাল অফিসে।দাঁড়া আমি ফোন করে এখনই খুশির সংবাদটা দিয়ে দিই।”
“প্রিয়ু দৌড়ে এসে আয়নের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে ছুড়ে মারে।প্রিয়ুর কান্ড দেখে আয়ন একটা বাকা হাসি দেয়।প্রিয়ু কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়ন ধরে ফেলে।আরে খুকুমনি কোথায় যাবে এখন।কোলে উঠার শখ না তোমার।চলো তোমাকে শুধু কোলে না,সাথে আদরও করে দেবো কেমন।বলো কোথায় কোথায় দিবো।আমি আবার অনেক ধরনের আদর দিতে পাড়ি।
–প্রিয়ু জোড়ে একটা চিৎকার করতে চায়,নাএএএএ।
কিন্তু!থাক আর বললাম না।
চলবে…।