“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-26
‘আজ তিনদিন হলো প্রিয়ুর কোনোও খোঁজ নেই।আয়ন আকাশ পাতাল এক করে দিয়েছে।তবুও কোনও হদিস মিলছে না।চারদিকে পুলিশ হতে শুরু করে নিজের লোকও লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।সারাদিন নিজের কাজ কর্ম ফেলে আয়ন প্রিয়ুকে হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।সেই সকালে বের হয়,রাতে ফিরে।খাওয়া নেই, ঘুম নেই চোখে।আয়ন এখন খুব ক্লান্ত।কি করবে,কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পাড়ছে না।শুধু যানে প্রিয়ুকে ওর চাই।একটু শান্তির জন্য।প্রিয়ুর বুকের উষ্ণ গরমই পাড়বে আয়নের এই অচেতন মনটিকে এখন একটু প্রশান্তি দিতে।কিন্তু কোথায় প্রিয়ু?’
–অনেকদিনের ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে আয়ন।চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা জল।কি অদ্ভুত না এই ভালবাসা।পাথরের বুকেও ফুল ফোটানোর ক্ষমতা রাখে।তবুও যেনো তার বিন্দু মাত্র অহংকার নেই।যেখানে মানুষ তার ক্ষনিকের সৌন্দর্যের মহে অন্ধ হয়ে যায়,অথচ এই ভালোবাসা নামক বচনটির পরিসীমা অসীম তবুও নেই কোনও দম্ভ।আমরা কেনো এমন হতে পরি না
‘আয়ন ভেসে যাচ্ছে অতিতের কিছু মধুময় স্মৃতিতে।’
–কিছুদিন আগের কথা,আয়ন অফিস থেকে ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসেই হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।প্রিয়ু তখন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলো। আয়নের এই বাজে অভ্যাসটা প্রিয়ুর একদম পছন্দ না।প্রায়ই আয়ন অফিস থেকে এসে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় এভাবে শুয়ে পড়ে।আর চোখ দুটো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে শুয়ে থাকে।আজও তাই করলো।
‘তাই প্রিয়ু নিজের টেপ রেকডিং বাজানো শুরু করে দিলো।আয়নকে বারবার ফ্রেস হওয়ার তাগিদ দিতে লাগলো।কিন্তু আয়নের কানে কিছু ডুকছে বলে,মনে হয় না।’
–তাই প্রিয়ু আয়নের হাত ধরে টেনে উঠাতে চাইলে,আয়ন একটু রেগে যায়।
‘সমস্যা কি?এমন করছিস কেনো।ফেরার পর থেকেই দেখছি কানের সামনে কখন ধরে কা কা করেই যাচ্ছিস।কি? হয়েছে কি?এতো রিয়েক্ট কেনো করছিস।আমার রুম,আমার বিছায়নায় কি শান্তি মতো এখন একটু শুতেও পাড়বো না।বল!সমস্যা কি?একটু চেঁচিয়ে।
‘-কিছু না!বলেই,প্রিয়ু চুপচাপ পড়ার টেবিলে বসে পড়লো।’
–আয়ন একটা দীর্গ শ্বাস ছাড়লো।প্রিয়ুর সাথে এমন আচরণ ওর মোটেও করা উচিত হয়নি।তবুও কেনো যে নিজেকে আটকাতে পাড়লো না।আজকাল মাঝে মাঝে খুব বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলে ও প্রিয়ুর সাথে।বলা বাহুল্য মানুষ তার প্রিয় মানুষটির উপরই সব রাগ ঝাড়তে পারে কারণে অকারণে।আয়ন ও নিজের ফ্রাস্টেশন গুলো প্রিয়ুর উপরই উঠালো।
……………………………….
‘শাওয়ারের ঠান্ডা জল আয়নের শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছিলো।আর আয়নের মাথায় ভর করছে কিছু অজানা টেনশন।আজ রবিন কনফার্ম করলো আজগর আলীর মার্ডার হয়েছে।তাই তো এতো আকাশ পাতাল করেও তার খোঁজ পায়নি এতোদিন আয়ন।এই আজগরই তো ছিলো একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে জানা যেতো কারা প্রিয়ুর সাথে এমন করছে।প্রিয়ুর ফেক ভিডিও বানিয়ে ওকে বদনাম করার পিছনে কার হাত ছিলো।আর কেনো?’
“কিন্তু আজগরের মৃত্যুর সাথে সব যেনো শেষ।এখন কিভাবে জানবে আয়ন,এই টেনশনই ভর করছে ওর মস্তিষ্ক জুড়ে।চেনা শত্রুর সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু অচেনা শত্রু থেকে বাঁচা সহয না।আর এসব টেনশনের পিড়ায় আয়ন প্রিয়ুর সাথে খারাপ ব্যবহার করে বসে।”
–আয়ন শাওয়ারটা বন্ধ করে,নিজের ভেজা চুলগুলো হাতের সাহায্যে পিছনে সরিয়ে সিনের জলে ভেজা আয়নায় নিজের নগ্ন শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে।ফর্সা শরীরটা শাওয়ারের ঠান্ডা জলে কেমন লালচে হয়ে গিয়েছে।হাতের সাহায্যে গোলাটে আয়না থেকে জলটা মুছে নিলো।মুখে কিঞ্চিত বাকা হাসি দিয়ে আয়ন নিজেই নিজেকে সান্ত্রনা দিতে লাগলো।আমি তোর কিছুই হতে দিবো না সোনা।তোকে আগে যেমন আগলে রেখেছি,এখনো রাখবো।তার জন্য আমাকে একটু কঠোর হতে হলে হবো।
“আয়ন কিছু মনে করে বাথরুম থেকেই প্রিয়ুকে ডাক দিলো।”
–প্রিয়ু ভ্রুকুচকে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালো।একটু আগের ঘটনা প্রিয়ু এখনো ভুলেনি।তাহলে এখন কেনো আয়ন ওকে এভাবে ডাকছে।শয়তান লোক।কখন কি মতলোব আটে মনে কিছুই বোঝা যায় না।একদম গিরগিটির মতো রং বদলায়।এখন আবার বাথরুমে গিয়ে ডাকছে।কেন রে…তোকে কি এখন আমি গোশল করিয়ে দেবো।প্রিয়ু মনেমনেই বিড়বিড় করে যাচ্ছে।ভীষণ রেগে আছে।আয়নের ঈদানিং এমন হুটহাট আচরণ গুলো একদম সহ্য হয়না।
“আর এদিক দিয়ে আয়ন বাথরুমে থেকেই প্রিয়ু প্রিয়ু করেই যাচ্ছে কতোক্ষণ ধরে।আয়নের চিৎকারে প্রিয়ুকে অবশেষে জবাব দিতেই হলো।”
‘-কি হয়েছে,কি চাও?’
–চাই তো তোকে।কিন্তু আপাততো তোয়ালটা দিলেই হবে।আয়ন একটু হেসে।
“অসহ্যকর লোক!এতোক্ষণ বকে,এখন বলে কি তোকো চাই।কথাটা একটু ব্যাঙ্গ করেই বলে প্রিয়ু।তোওয়ালটা নিয়ে দরজায় নক করলে,আয়ন ওর পুরুষালি ভেজা হাতটি এগিয়ে দেয়।আয়নের ভেজা হাত দিয়ে তখনো চুয়ে চুয়ে পানি ঘরের মেঝেতে পড়ছিলো।”
‘-প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হয়ে তোয়ালটা দিতে নিলে,হঠাৎ আয়ন তোয়াল সহ প্রিয়ুকেই টেনে শাওয়ারে দাঁড় করিয়ে দেয়।মুহুর্তে প্রিয়ু পুরো কাক ভেজা হয়ে যায়।রাগে দুঃখে প্রিয়ু আয়নের দিকে তাকাতেই,আয়নের চোখের চাওনি দেখেই কেপে উঠে প্রিয়ু।কি ভয়ংকর এই মানুষটির চাওনি। চোখ দিয়ে মেরে ফেলতে পারে।নেশা কাকে বলে?আজ যেনো প্রিয়ু হারে হারে টের পাচ্ছে।আর তাই প্রিয়ুর যেনো নেশাগ্রস্ত লাগলো নিজেকে।এক অমানসিক চাওয়া ভর করছে প্রিয়ুর মনে।মুখ দিয়ে অনেক কিছু বলতে চেয়েও যেনো বলতে পাড়লো না।আয়নের শরীর থেকে ভেসে আসা সদ্য গোশল করা পুরুষালী শাওয়ার জেলটার গন্ধটা খুব তীব্র ভাবে পাচ্ছিলো ও।অদ্ভুত শিহরণে জেগে গেলো প্রিয়ুর সারা শরীর।প্রিয়ুর দৃষ্টি আটকে ছিলো তখনও,আয়নের পশমবিহীন খোলা বুকটার দিকে।’
‘আর আয়নও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ুর দিকে।দুজনের মধ্যে কোনও কথার আদানপ্রদান চলছিলো না,তবুও যেনো দুজন দুজনার অনুভূতির অসীম খেলা মেপে নিলো চোখে চোখ রেখেই।এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।যার নাম নেই,গন্ধ নেই, আছে শুধু কিছু অনুভূতি আর অনুভূতি। কিছুক্ষণ এভাবেই থাকার পর শাওয়ারের ঠান্ডা জলে ভিজার কারণে প্রিয়ুর শীত শীত লাগছে।ঠান্ডায় হঠাৎ প্রিয়ুর ঠোঁট গুলোও কাঁপতে লাগলো।’
–আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে থেকেই শাওয়ারটা বন্ধ করে দিলো।আরো একটু কাছে চলে এলো প্রিয়ুর।আর এতে আয়নের নিশ্বাসের গরম বাতাস আচড়ে পড়ছে প্রিয়ুর সারা মুখে।প্রিয়ু বুঝতে পাড়ছে না,কেউ না ছুঁয়ে শুধু তার কাছে থাকার অনুভূতি দিয়ে কিভাবে ঘায়েল করতে পারে।প্রিয়ু ঘায়েল হচ্ছে ভীষণ ভাবে!
“আয়নও যেনো প্রিয়ুর কাপাকাপা ঠোঁট,বিস্মিত মুখের লাল আভায় কেমন বিমোহিত হয়ে পড়ছে।হাত বাড়িয়ে ঠোঁট দুটো স্পর্শ করতেই প্রিয়ু চমকে আয়নের দিকে তাকালো।
“হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে আয়নের সম্বিৎ ফিরে এলো।চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে।খুলতেও কষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ চোখগুলো বুঝে থেকে একটু সময় দিলো।এরপর ধীর চোখে সামনে তাকালে মায়াকে দেখতে পায়।আয়ন আশা করেনি বোনকে এসময় দেখবে।মায়া পেগনেন্ট।সিক্স মানথ্ রানিং চলছে।কিছু কম্পলিকেশন এর জন্য ডাক্তার জার্নি একদম নিশেধ করেছে।তাইতো অনিকের বিয়েতেও তেমন কিছুই করতে পারেনি।অথচ প্রত্যেকবারের মতো এবারও আয়নের কষ্ট কমাতে চলে এসেছে বোন।”
–কেমন আছো আপু।মায়ার একটা হাত ধরে।বাবু কেমন আছে।ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করোতো।আর তুমি কেনো এই শরীর নিয়ে আসতে গেলে।আসছো তো আসছো তার উপর এতোরাত জেগে আছো।এসব কি আপু?এই সময় অনিয়ম কিন্তু একদম ঠিক না।
“মায়া স্নেহের সাথে আয়নের মুখে হাত রেখে, তুই ঠিক আছিস তো ভাই।”
–আয়ন যেনো স্নেহের এই স্পর্শটিরই অপেক্ষাই করছিলো।মায়ার হাতটি মুখে চেপে ধরেই ডুকরে কেঁদে দেয়।নিজের আবেগ গুলো বোনের কাছে কিছুতেই লুকাতে পাড়লো না আর।
“আমি ঠিক নেই আপি,একদম না।ও আমাকে আবার ছেড়ে চলে গেছে।কিভাবে পাড়লো আপি।আমি কি করবো।আমার ভালোবাসাও ওকে আটকাতে পাড়লো না।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,ও আবার চলে গেছে।আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আপু।তাহলে কি ওসব মিথ্যা ছিলো এতোদিন।শুধুই কি অভিনয়।ও কেনো চলে গেলো আপু।কেনো?আমি কোথায় খুঁজবো ওকে এবার।আমার যে সহ্য হচ্ছে না আর আপু।আমি মরে যাবো।ওকে ছা….ড়া কি…. ভাবে থাক…বো।
…………………………………………..
তিনদিন আগের সকাল,
“আয়ন আর প্রিয়ুর দিনগুলো খুব ভালোই কাটছিলো।প্রিয়ুও ধীরেধীরে আয়নের ভালোবাসায় যেনো আসক্ত হয়ে পড়ছিলো।আয়নকে ছাড়া ওর এখন চলেই না।সারাদিন চোখের থেকে দূরে থাকলেও মন থেকে দূরে ছিলো না।আয়ন নিজের ভালোবাসায় প্রিয়ুকে এমন ভাবে জড়িয়েছে, প্রিয়ু হয়তো চাইলেও দূরে থাকতে পাড়বে না।শরীরের সাথে সাথে ওদের মনটাও যেনো একসূত্রে বেধে গেছে।সবকিছু ভালোই চলছিলো।এমনকি প্রিয়ু গায়ব হবার সকালটাও আয়নের জন্য খুব সুন্দর ছিলো।প্রিয়ু আয়নের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলো,এই সময় এলার্ম ক্লকের আওয়াজে প্রিয়ু জেগে গেলো।আর আয়নের হাতের মাঝ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো।আয়ন আবারও ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আরও একটু থাক না সোনা।”
–একদম না,আমাকে কলেজের জন্য রেডি হতে হবে।আর তোমাকে অফিসের জন্য সো ফাস্টলি উঠে পড়ো আমাকেও ছাড়ও।
“কিন্তু আয়নের এখন আর কোনও সারা নেই।যেমন স্কুল কামাই করার জন্য বাচ্চারা ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে থাকে,প্রিয়ুরও এখন আয়নকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।আয়ন প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমানোর ভান করছে,প্রায় আধও ঘন্টা ধরে। প্রিয়ু আয়নকে সরানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু!কোনও কাজ হচ্ছে না।আয়ন যেনো আরো শক্ত করে আটকে দিলো প্রিয়ুকে।”
–আয়ন উঠো,আমি জানি তুমি জেগে আছো।তাই ভান করে লাভ নেই।কি বাচ্চামো শুরু করলে।আমার লেট হয়ে যাবে আজ ভার্সিটিতে পৌঁছাতে।
“আয়নের মনে হয়না কোনও কথা কান দিয়ে মগজে ডুকেছে।ও আরো গভীর ভাবে প্রিয়ুর গলায় মুখ ডুবিয়ে একটা কিস করলো।মুহুর্তে প্রিয়ু শিউরে উঠলো।আয়নকে আবারও ধাক্কাতে লাগলো।কি করছো কি তুমি?সকাল সকাল এসব কি শুরু করছো।তোমার নামে মামলা দেওয়া দরকার।জানো!যখন তখন বউকে জ্বালাবার।”
–আয়ন এবার প্রিয়ুর গলায় নাকটা ঘষতে ঘষতে বললো,যা কর গে গিয়ে।পুলিশ কি আমি ডাকবো নাকি তুই।কিন্তু আমার এক স্বর্থ আছে।আমার সাথে তোকেও জেলে রাখতে হবে।আর দুজনকে একটি হ্যানকেপ দিয়ে আটকাতে হবে।তাহলেই হবে, আমার কোনও সমস্যা নেই।
“কেনো?কেনো?আমি কেনো তোমার সাথে একই হ্যানকেপ পড়ে জেলে যাবো।আমার ওখানে কি কাজ।”
–কেনো মানে!আমি আছি না।আমি একা জেলে কারসাথে রোমান্স করবো।সঙ্গী থাকলে হাসতে হাসতে কেটে যাবে রাস্তে। কথায় আছে না।
“হু,মামা বাড়ীর আবদার পাইছো।”
–আয়ন হেসে বলে…না!মামার শয়তান মাইটাকে পাইছি।
এটাই ছিলো প্রিয়ুর সাথে আয়নের শেষ কথা।এরপর প্রিয়ুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আয়নের।প্রিয়ু প্রতিদিনের মতো যথারীতি ভার্সিটি তো গিয়েছিলো কিন্তু ফিরে আর আসেনি।
চলবে…।