#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“যা না যা। তাড়াতাড়ি এই বাড়ি থেকে বিদেয় হ। তোর সাথে এক বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। তুই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমি ও ফুড়ুৎ করে উড়াল দিবো আমার নীলের কাছে।”
অন্তর সবকিছু গুছিয়ে মল্লিকাকে ক্রস করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ির গার্ডেনে চলে গেলো। মিসেস অরুনীমা কাঁদতে কাঁদতে অন্তরের পিছু পিছু গেলো। অনন্যা হন্তদন্ত হয়ে ওর মিঃ সারাফারাজ চৌধুরীর নম্বরে ফোন লাগাল। উনি গত কাল রাতেই অফিসের কাজে ঢাকা গিয়েছে। কল বাজার সাথে সাথেই সারফারাজ চৌধুরী কলটা রিসিভ করে ফেলল। অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,
—–“আব্বু… ভাইয়া বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে কল দিয়ে থামাও।”
সারফারাজ চৌধুরী দুজন ক্লাইন্ডের সাথে কথা বলছিলো। উনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,
—-“হোয়াট? উইদাউট রিজন অন্তর বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে এর মানে কি?”
—-“রিজন আছে আব্বু। আসলে ভাবীর সাথে ঝগড়া করেই ভাইয়া বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে।”
—-“তোমার গুনধর ভাই বিয়ের পরের দিনই মল্লিকার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হাউ ফানি। এমন কথা তো আমি আমার বাপের জন্মে শুনি নি। একচুয়েলি তোমার ভাই ইচ্ছে করে নাটক করছে। আমার মান সম্মান নিলামে তুলার জন্য। আমাকে নাজিমের কাছে ছোট করার জন্য। আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। আমি এ ও জানি তোমার ভাই এখন চট্টগ্রাম রওনা দিবে। ঐ নীল চোখধারী মেয়েকে খোঁজার জন্য।”
সারফারাজ চৌধুরী টাই টা নাঁড়িয়ে চাড়িয়ে চোখে, মুখে রাগান্বিত ভাব ফুটিয়ে বলল,,,,,
—–“যে করেই হোক তোমার ভাইকে আটকাও অনন্যা। আমি এখন হুট করে বাড়ি আসতে পারব না। তোমার ভাইয়ার নাম্বারে কল করলে ও তোমার ভাই এখন কলটা রিসিভ করবে না। টোটালি ইগনোর করবে। সো তুমি আর আম্মু মিলে যে করেই হোক অন্তরকে থামাও। আমি সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি ফিরছি।”
অনন্যা কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,
—-“ওকে আব্বু চেষ্টা করছি।”
কথাটা বলেই অনন্যা কলটা কেটে দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো। মিসেস অরুনীমার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মল্লিকা ন্যাকা কান্না করছে। অন্তর গাড়িতে বসে এতক্ষনে গাড়ি হাই স্পিডে ছেড়ে দিয়েছে। অনন্যা দৌঁড়ে এসে ও অন্তরকে পায় নি। এর আগেই অন্তর ছোঁ হয়ে চলে গেছে। অন্তর গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মল্লিকা ধপ করে মাটিতে বসে ন্যাকা কান্না করছে আর বলছে,,,,,,
—–“শুধুমাএ আমার ভুলের জন্য আমার বর বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। নতুন বউকে একা রেখে চলে গেলো। এখন আমি কি নিয়ে এই বাড়িতে থাকব। কার উপর ভিওি করে এই বাড়িতে সংসার করব। কার বাচ্চার মা হবো। আমার তো অনেক শখ ছিলো এগারোটা বাচ্চার মা হওয়ার। পুরো এক্টা ফুটবল টিম। এবার আমার কি হবে? আমি কোন মুখে এই বাড়িতে থাকব। কি আশ্বাসে এই বাড়িতে মুখ বুঝে পড়ে থাকব? আমার তো সব শেষ হয়ে গেলো।”
মিসেস অরুনীমা কাঁদতে কাঁদতে মল্লিকার পাশে বসে মল্লিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,
—–“প্লিজ মা কেঁদো না। অন্তর ফিরে আসবে। কাল তো তোমাদের বউ ভাত। এর আগেই অন্তর চলে আসবে। ওর আব্বু ঠিক ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসবে। অন্তর নেই তো কি হয়েছে আমরা আছি না? আমরা তোমাকে দেখে, শুনে রাখব। তুমি আমাদের আশ্বাসে এই বাড়িতে থাকবে। সংসার করবে। আমার এগারোটা নাতি, নাতনীর মা হবে। পুরো বাড়িতে আমার নাতি, নাতনীরা খেলাধূলা করবে। আর আমি মন, প্রাণ ভরে ওদের দেখব। আঃহ কি শান্তি।”
মল্লিকা কান্না থামিয়ে মুখ বাঁকা করে মিসেস অরুনীমার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—-“শখ কতো দেখো, এগারোটা নাতি, নাতনীর মুখ দেখবে। এগারোটা বাচ্চা কাচ্চা সাপ্লাই করতে করতে আমি অলরেডি কবরে ঢুকে যাবো। আমি তো জাস্ট ড্রামা করছিলাম। উনি কিনা সত্যি সত্যি ধরে নিলো? এতে আমার কি? আমার তো কোনো রকমে ভাওতাবাজি দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। অন্য এক্টা টেকনিক খাটিয়ে আমাকে ও বাপের বাড়ি চলে যেতে হবে। এই বাড়িতে আর এক মুহূর্ত ও থাকা সম্ভব না। নীলের জন্য প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। ভার্সিটিতে আমাকে না পেয়ে নীল নিশ্চয়ই বাড়ি চলে যাবে আমাকে খুঁজতে। কোনো রকমে যদি জানতে পারে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তো পুরো বাড়িতে হাঙ্গামা মাঁচিয়ে দিবে। সাথে আমার ও ব্যান্ড বাজাবে। না না এটা হতে দেওয়া যাবে না। যে করেই হোক আগে আমাকে নীলের সাথে দেখা করতে হবে। না হয় নীলের পাগলামী বেড়ে যাবে। তখন আমি হাজার চেষ্টা করে ও নীলকে সামলাতে পারব না। পুরো ভাইলেন্ট হয়ে যাবে।”
কথা গুলো বিড়বিড় করেই অন্তরা আবার কান্নার সুর তুলে বলল,,,,,
—–“না শ্বাশুড়ী আম্মু। আমি আর এক মুহূর্ত ও এই বাড়িতে থাকব না। যেখানে আমার স্বামীই নেই সেখানে আমি থেকে কি করব? আপনার ছেলে যেদিন বাড়িতে ফিরবে ঐদিন আমি ও এই বাড়িতে ফিরব। এর আগে না। আর এটাই হবে আমার ভুলের শাস্তি।”
কথাগুলো বলেই মল্লিকা বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা ভার্সিটির রাস্তায় মোড় নিলো। মিসেস অরুনীমা আর অনন্যা অসহায় দৃষ্টিতে মল্লিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। দুজনই নিরুপায় হয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। মিসেস অরুনীমা বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকেই ল্যান্ড লাইন থেকে সারফারাজ চৌধুরীকে সব জানিয়ে দিলো। সারফারাজ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে ঠায় বসে রইল। উনি কোনো রকমে মিটিং সেরেই চট্টগ্রাম উনার বড় বোনের বাড়ি গিয়ে অন্তরকে নিয়ে আসবে।
অন্যদিকে,,,,,,,
অন্তর এলোমেলোভাবে ড্রাইভ করছে আর চোয়াল শক্ত করে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“কিছুতেই আর বাড়ি ফেরা যাবে না। বাড়িতে ফিরলেই ওরা আমাকে জোর করে ঐ মেয়ের সাথে সংসার করাবে। মেয়েটা অসম্ভব ঝগড়ুটে আর অসভ্য। ওর সাথে কিছুতেই সংসার করা যাবে না। তাছাড়া আমি তো অন্য একজনকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি আর অন্য কাউকে বউ হিসেবে মানতে পারব না। খুব জলদি আমি ঐ নীলাভ চোখের মালিককে খুঁজে বের করব। ফুফুর বাড়ি গিয়ে আমার প্রথম কাজ হলো রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে আমার কল্পনার রানীর খুঁজ করা।”
কথাগুলো বলেই অন্তর মলিন হেসে খুব স্পীডে গাড়ি ছেড়ে দিলো।
প্রায় বিশ মিনিট পর,,,,,
মল্লিকা হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির কাছাকাছি চলে এলো। হাঁটতে হাঁটতে মল্লিকার পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য ওর আপাতত নেই। তাই সে পায়ের উপর পুরো দমে অন্যায় করে চলছে। ভার্সিটির গেইটের সামনে আসতেই মল্লিকা নীলকে দেখতে পেলো। বাইকের উপর বসে নীল এক্টা সুন্দুরী মেয়ের কাঁধে হাত রেখে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা কেমন লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে চোখের সামনে এমন ঢলাঢলি দেখে।
মল্লিকা আর দেরি না করে চোখ,মুখ লাল করে নীলের সামনে তেড়ে গেলো। নীল মল্লিকাকে দেখার সাথে সাথেই মেয়েটার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বাইক থেকে নেমে পড়ল। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নীল চোখ দিয়ে কিছু এক্টা ইশারা করল। মেয়েটা আর দেরি না করে ভার্সিটির গেইটের ভিতর ঢুকে গেলো। নীল এক গাল হেসে মল্লিকার মুখোমুখি দাঁড়াল। মল্লিকা মুখটা কালো করে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে নীল ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মল্লিকাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখছে।
নীলের এমন চাহনীতে মল্লিকার কেমন অস্বস্তি লাগছে। লাল শাড়ি ভেদ করে মল্লিকার ধবধবে সাদা পেটটা দেখা যাচ্ছে। এই জন্যই নীল কুদৃষ্টিতে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা নীলের চোখ অনুসরণ করে দেখল, নীল মল্লিকার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথেই মল্লিকা শাড়িটা খুব ভালোভাবে পেটে পেঁচিয়ে নিলো। নীল মাথাটা ঝাঁকিয়ে মল্লিকার পেট থেকে চোখ সরিয়ে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—-“হঠাৎ করে শাড়ী পড়লে কেনো? আগে তো আমি হাজার চেঁচালে ও শাড়ী পড়তে না।”
মল্লিকা কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,,
—-“হুট করে মন চাইল শাড়ী পড়তে। তাই পড়ে নিলাম। কেনো নীল? তুমি খুশি হও নি?”
নীল বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“খুব খুশি হয়েছি মল্লিকা। শাড়ী পড়লে তোমাকে পুরো হট লাগে। তখন নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়ে।”
মল্লিকা কপাল কুঁচকে বলল,,,,,,
—-“ছিঃ নীল প্রশংসা তো অন্তত ঠিকভাবে করতে শেখো। হট, কুল এসব কি?”
—-“তুমি বুঝবে না ডার্লিং। তোমাকে এমন রূপে দেখে আমার মাথা ঠিক নেই। চলো আমরা কোথাও ঘুড়তে যাই। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব।”
মল্লিকা মাথাটা নিচু করে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“ইসসসস আমার ও তো কতো ইচ্ছে ছিলো এভাবে লাল শাড়ী পড়ে নীলের সাথে ঘুড়তে যাওয়া। এই দিনটা এসেছে ও। তবে এখন আমার হাতে সময় নেই। নীলের সাথে কথা বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে হবে। শ্বাশুড়ী আম্মু হয়তো এতক্ষনে আব্বুর কাছে কল করে সব জানিয়ে দিয়েছে। আমি সিউর বাড়ির সবাই আমার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। ফিরতে এক্টু লেইট করলেই অনেক বড় ক্যাচাল হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি নীলের সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরতে হবে আমার।”
কথাগুলো বলেই মল্লিকা নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,
—–“না নীল আজ না। আমরা অন্য কোনো দিন ঘুড়তে যাবো। ঐ দিন আমি আরো বেশি করে সেজে আসব। ঠিক তোমার মনের মতো। এরপর দুজন একসাথে অনেক ঘুড়ব, খাবো দাবো, সারাদিন একসাথে কাটিয়ে এরপর বাড়ি ফিরব। আজ বরং আমি আসি নীল।”
মল্লিকা কথাগুলো একটানা বলে যেই না বাড়ির রাস্তায় পা বাড়াবে অমনি নীল মল্লিকার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে মল্লিকাকে নীলের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মল্লিকা খুব জোরাজুরি করছে নীলের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। নীল কিছুতেই মল্লিকাকে ছাড়ছে না। মল্লিকা বেশ তেজী কন্ঠে নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“এসব কি হচ্ছে নীল রাস্তার মাঝখানে? লোকজন কি ভাববে আমাদের?”
নীল বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“লোক জনদের এতোটা সাহস হয় নি যে, নীল আর ওর গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকাবে! ওরা জানে নীল কতোটা জঘন্য। ঠিক চোখ উপড়ে নিবো সব গুলোর।”
কথাগুলো বলেই নীল সুযোগ বুঝে যেই না মল্লিকার পেটে হাত দিতে যাবে অমনি মল্লিকা নীলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। নীল কিছুটা ব্যর্থ হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—-“প্লিজ মল্লিকা আমার ফ্ল্যাটে চলো না। আজই আম্মু, আব্বুর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো। আজ ওরা দুজনই বাড়িতে আছে।”
মল্লিকা মনটা খারাপ করে বলল,,,,,,
—-“স্যরি নীল আজ কোথাও যেতে পারব না। খুব তাড়া আছে আমার। আব্বুর সাথে আজ আমায় এক জায়গায় যেতে হবে। বাড়িতে হয়তো আব্বু আমার জন্য ওয়েট করছে। আমি জাস্ট তোমার সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। তোমাকে এক নজর দেখে নিয়েছি এতেই আমার শান্তি। আমি বরং যাই। পরে তোমাকে টেক্সট করে জানিয়ে দিবো কবে আমরা দেখা করছি। ওকে?”
নীল কিছুটা উতলা হয়ে বলল,,,,,,
—-“প্লিজ মল্লিকা তাড়াতাড়ি এক্টা ঠিকঠাক দিন বের করে আমাকে জানিও। তোমার থেকে দূরে থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না। সারাক্ষন তোমার আশে পাশে থাকতে মন চায়। ইদানিং তোমাকে ছেড়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। প্লিজ আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা করো।”
মল্লিকা এক গাল হেসে বলল,,,,,
—-“খুব শীঘ্রই আমরা দেখা করব নীল। তুমি চিন্তা করো না।”
মল্লিকা কিছুটা লজ্জামাখা কন্ঠে আবার বলল,,,,,,
—–“লাভ ইউ নীল!”
নীল বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“লাভ ইউ ঠু ডার্লিং।”
মল্লিকা পিছু ফিরে বাড়ির রাস্তায় মোড় নিলো। নীল পিছন থেকে চেঁচিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকাকাকা….টেক্সট টা যেনো আমার ফোনে তাড়াতাড়ি আসে। আর কিছুদিন দেরি হলে কিন্তু আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে উঠব। জোরর করে তোমাকে বাড়ি থেকে তুলে আনব।”
মল্লিকা শুকনো ঢোক গিলে পিছু ফিরে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“তোমাকে এসব কিছুই করতে হবে না নীল। আমি নিজেই তোমার কাছে চলে আসব।”
কথাগুলো বলেই মল্লিকা বাড়ির রাস্তায় দৌঁড়াতে লাগল। নীল মুখটা কালো করে হাত দুটো মু্ষ্টিবদ্ধ করে মল্লিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,
—-“ধ্যাত পাখি আজ ও হাত থেকে ফসকে গেলো। এই দুই মাস এতো কষ্ট করে ও এই ধুর্ত মেয়েকে আমি বসে আনতে পারছি না। ঠিক কোনো না কোনো ভাবে উড়াল দিচ্ছে। অন্য কোনো মেয়ের জন্য আমার এতোটা খাটতে হয় নি। কেবল মাএ এই মেয়ের জন্য আমার এতোটা টাইম ওয়েস্ট করতে হচ্ছে। এই এক সপ্তাহের মধ্যেই মল্লিকার চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করতে হবে। যে করেই হোক ওকে আমার বেড পার্টনার করতে হবে।”
এর মাঝেই নীলের ফোন বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে নীল বাঁকা হেসে ফোনটা রিসিভ করে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,,,,,
—–“জাস্ট টেন মিনিট’স ওয়েট জানু। ফ্ল্যাটের চাবিটা নিয়ে রুমে ঢুকে পড়ো। আমি দৌঁড়ে আসছি।”
কথাগুলো বলেই নীল বাইকে উঠে ওর ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দিলো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর মল্লিকা পায়ে হেঁটে ওর বাড়ি অব্দি পৌঁছে গেলো। হাঁফাতে হাঁফাতে সে বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকার সাথে সাথেই মল্লিকার আম্মু মিসেস লিজা ঠাস করে মল্লিকার গালে এক চড় বসিয়ে দিলো। মল্লিকা গালে হাত দিয়ে চোখে এক রাশ জল নিয়ে মিসেস লিজার দিকে তাকিয়ে আছে। তমার আব্বু মিঃ নাজিম সোফায় থম মেরে বসে আছে। আজ উনি কোনো প্রতিবাদ করছে না। মল্লিকা মিঃ নাজিমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিঃ নাজিমকে চুপ করে থাকতে দেখে মল্লিকা যেই না ঠোঁট উল্টে কাঁদতে যাবে এর আগেই মিসেস লিজা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,
—–“তোমাকে কি আমরা এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছিলাম মল্লিকা? তুমি কিভাবে পারলে শ্বশুড় বাড়ি থেকে এমন ফাউল এক্টা এক্সকিউজ দিয়ে একা একা এই বাড়িতে চলে আসতে? তোমার বিবেকে বাঁধে নি? শুধুমাএ তোমার উগ্র ব্যবহারের জন্যই অন্তর বাধ্য হয়েছে বাড়ি ছেড়ে যেতে। তুমি তোমার দোষ ঢাকার জন্য এই বাড়িতে চলে এলে? তোমাকে বুঝতে হবে তুমি এখন বিবাহিত। এক কদম বাড়ানোর আগে তোমাকে ভেবে চিন্তে বাড়াতে হবে। সব দিক ভেবে তোমাকে ডিসিশান নিতে হবে। যখন যা মন চাইবে তখন তাই করার অধিকার নেই তোমার। আমাদের ই দোষ। আমরা তোমাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারি নি। ছোট বেলা থেকে অতি আদরে আদরে তোমাকে বাঁদড় বানিয়েছি। যার ফল এখন আমাদের ভোগ করতে হবে।”
মল্লিকা মাথাটা নিচু করে ফুঁফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
#চলবে,,,,,,,
(গল্পটা কি পাঠকদের ভালো লাগছে না? রেসপন্স খুব বাজে ভাবে কমছে। ভালো না লাগছে বলে দিবেন, গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো।)