অভিশপ্ত বাসর রাত.পর্ব -১২

0
3890

“”””””””””অভিশপ্ত বাসর রাত”””””””””””

……………..পর্ব -১২………………….

মেহবুব গাড়ির লুকিং গ্লাস দিয়ে
সাবিহাকে
দেখছিল যতক্ষন পারছিল।এক সময় মোড়
ঘুরতেই সাবিহা আয়না থেকে হারিয়ে
গেল।দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল
করল ওর চোখের কোনা ভিজে
উঠেছে,চোখটা ঝাপসা হয়ে আছে।
চশমাটা খুলে চোখটা মুছল,ওর ইচ্ছা
করছিল চিৎকার করে কাঁদতে। মেয়েরা
কত সহজেই কাঁদতে পারে,নিজের
বুকের মধ্যকার কষ্টগুলো কান্নার
মাধ্যমেই বের করে দিতে পারে আর
ছেলেরা শত ব্যাথা সত্ত্বেও তা পারে
না।ব্যাথাগুলো দলাপাকিয়ে বুকের
মধ্যেই থেকে যায়,সময়ের সাথে
সাথে তা আরও বাড়ে।মেহবুবেরও এখন
সেই অবস্থা। বাসায় বোনকে কথা দিয়ে
আসছে যে ভাবিকে নিয়ে আসবে
এখন গিয়ে কি বলবে?? মা বাবা সাবিহাকে
কত ভালবাসে, ওর জন্য তারা মেহবুবের
সাথেও কথা বলে না ঠিক করে।তাছারা ও
তো সাবিহাকে আস্তে আস্তে
ভালবেসেছিল।ওর কথাবলা,হাসা, খুনসুটি সব
কিছু।,রিতার দেওয়া কষ্টগুলো ভুলতে
চেয়েছিল।কখনই সাবিহাকে তা বলে
উঠতে পারে নি কারন ও ভয় পেত যদি
সাবিহা ওর প্রতি ক্ষোভের বশত ফিরিয়ে
দেয় তখন ও বাঁচতেই পারবে না।আর
যখন বলে উঠল তখন সব শেষ!!!!
মেহবুব অফিসে গেল সোজা, বাসায়
ফিরলো না।চাইল যে অফিসের কাজের
মধ্যে ডুবে থাকলে কিছুটা মন খারাপ
কমবে আর কাজ হতে ফেরার পথে
ওর ল’য়ারের সাথে দেখা করবে।
কিসের কি কাজেই মন ফিরাতে পারছিল না।
সারারাতের এত লম্বা জার্নি তারপরও ইচ্ছা
করে অফিসে থাকল,বারবার মোবাইল
বের করে ওদের একএে ঘুরার
সময়ের সেলফি গুলো দেখছিল।
-আমার লজ্জা লাগে আপনার সাথে ছবি
তুলতে।
-কেন?দেখছো সবাই কত সুন্দর করে
ছবি তুলে আর তুমি একজন নাক কুচঁকানো
বুড়ি,শুধু নাক কুঁচকাও।
-আমি মোটেই বুড়ি না,আপনি নিজে
বুড়ো।
-ওই তো তুমি আমার পুচঁকি বউ খালি ঢং কর।
সাবিহাকে ও কত মজা করে বিভিন্ন ভাবে
ভেঙাত আর ও ঠোট ফুলাত বারবার।আচ্ছা
সাবিহা কি এসব স্মৃতি ভুলে গেছে? হয়ত
ও খারাপ ছিল কিন্তু ওদের এসব স্মৃতি
গুলো তো মেহবুব কোন ভনিতা
করে নি বা ওকে কষ্ট দেয় নি তাহলে
সাবিহা কি পারবে সব ভুলে যেতে?ভাবল
হয়ত সাবিহা পারবে কারন ও তো ওকে
ভালবাসেনি উলটো সবসময় ওর বউ
হিসেবে ওর অবহেলাই
পেয়েছে,বিভিন্ন দিক দিয়ে চোখের
পানি ছাড়া তো মেহবুব ওকে কিছুই দেয়
নি।
নাহ্ এদিকে সাবিহা ঠিকই ভুলতে পারছিল
না
ওকে।এতদিনের একটা সম্পর্ক যার
মধ্যে হাসি কান্না সব পেয়েছে শুধু বাকি
ছিল ভালবাসা শব্দটার।তাও পেয়েছে,এই
একটা শব্দ ছিল ওর কাছে সবচেয়ে দামি
যখন বুঝতে পেরেছে জীবনে
পরিবারের মানুষ ছাড়াও অন্য আরও একজন
মানুষের ভালবাসা দামী। যে হবে ওর
জীবন সগুী।এই প্রকাশ করার মুহূর্তের
জন্য ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করেছে অনেকদিন।কিন্তু আজ যে
ভাবে এই মুহূর্তটা আসল নিজেই ভাবতে
পারে নি যে মেহবুবের মনে এটা জন্ম
নিয়েছে ওরই অজান্তে, যেখানে ও
মেহবুব সম্পর্কে শুধু খারাপ ধারনাই
রেখেছিল।মেহবুবের প্রতিটা সঙ ওর
অসহ্য লাগত, বাধ্য হয়ে চলত এমনকি
খুলনায় ওকে দেখেও কি খারাপ আচারন
করত,ওকি একবারও ভেবেছিল
মেহবুবের মনে এসব ছিল।ওকে
কখনই কিছুই বুঝতে দেয় নি ও।ওর সাথে
কাটানো খারাপ সময়গুলোর স্মৃতিও আজ
মনে পরলো।
ওদিকে মেহবুব বিকেলে কোনমতে
কাজ শেষ করে উকিলের কাছে গেল
তাকে বললো যত তারাতারি সম্ভব
ডির্ভোস পেপার তৈরি করতে।সব কাজ
শেষ করে বাসায় যখন ফিরলো ও
পুরো পুরি বিদ্ধস্ত।কোনমতে
খেয়ে শুয়ে পরলো, বেডসাইট
টেবিলে ওদের ওয়েডিং ছবিটা দেখল।
মনে পরল যখন সাবিহার সাথে রাতে
ফোনে কথা বলত তখন বার বার ছবিটার
দিকে তাকাত, উঠে গিয়ে ছবিটা
আলমারিতে রেখে দিল নইলে ও রাতে
ঘুমুতেই পারবে না কিন্তু তাতেও রেহাই
নেই সোফাটার দিকে তাকিয়ে থাকল
শেষমেষ নিজে উঠে সোফায়
শুলো।কুশনে মাথা এলিয়ে দিয়ে
ভাবতে লাগল ও আসলে সাবিহার সাথে
কতটা খারাপ করছে,একটা মেয়ে কত
সপ্ন নিয়ে আসছিল আর সেখানে ও
দিনের পর দিন মেয়েটাকে বিছানার
বদলে সোফায় থাকতে দিত আর নিজে
বিছানায় মাতালের মতো শুয়ে থাকত।হঠাৎ
টের পেল ওর গা গরম হয়ে যাচ্ছে,
মনে হয় জর আসবে।গরমে
কয়েকদিন দৌড়াদৌড়ির ফল!!
পরদিন সকালে মেহবুবের ঘুম ভাঙল
মায়ের হাতের ছোয়ায়। -কি রে তোর
এত জর আর এখনও ঘুমাচ্ছিস বাবা?তুই
ছোট বাচ্চা?
-টের পাই নি মা।
-তা কেন টের পাবি?মা ছাড়া দেখভালের
আর কে আছে?
মেহবুব বুঝল মায়ের এ নাটক সাবিহা
পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে,হলোও তাই।
অনেক কথা বলার পর সে সাবিহার কথা
উঠাল,
-কত সখ করে বউ আনছিলাম সাবিহার
মতো মেয়ে আমার ছেলের সেই
সুখ সইবে কেন!!?
-মা তুমি না আমাকে ঔষধ দেবার কথা
বলছিলা? তো দাও।
-হ্যা পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুই আগে ফ্রেশ হ
তারপর কিছু খ আগে।
ওর বোন ট্রেতে করে ওর জন্য
খাবার আর ঔষধ নিয়ে আসলো। -কিরে
তুই কিভাবে অসুস্থ হলি?ভাবি তোকে
ধোলাই দিছে?
-আমি কি তোর মত শয়তান?
-তা আর বলতে? আচ্ছা ভাবিকে ফোন
দে জিজ্ঞেস কর কি কি ঔষধ খাবি?
-পারবো না তোর ভাবি ভাল ডা. না।সে
আমার ট্রিটমেন্ট ভাল করে করে না আর
তুই যা তো ভাগ এখান হতে।
-তুই না বলেছিলি ভাবি আসবে তা কেন
আসে নি?
-ওর কাজ আছে তাই ব্যস্ত।সে আসবে
না।
-ধূর!! হাহ্ বুঝি না তোর মতিগতি বুঝলি?আমি
মাকে বললাম।
ওর বোন মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল।
যাক্ ওই বলুক গিয়ে মাকে,ওর ইচ্ছে
নেই।আসলে কোথাও মনের মধ্যে
ওর বলছিল যে সাবিহা আসবে।
মেহবুব নাস্তা আর ঔষধ খেয়ে কোন
মতে অফিসে গেল,দুপুর নাগাত জর
আরও বাড়ল।বুঝলোনা হঠাৎ ওর শরীর
এতটা কেন খারাপ হলো আগে তো
হয় নি।সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কত
ট্রেনিং করেছে, ওর শরীর সবসময়
ফিট থাকত আজ সামান্য একটু জরে এত
কাহিল অবস্থা!! মা ফোন দিয়ে বাসায়
যেতে বলল ও ওভাবল আসলে ওর
রেস্ট দরকার।
বাসায় যাবার পথে সাবিহার হসপিটাল
সামনে
পরল,ওর মনটা মোচর দিয়ে উঠল।আচ্ছা
সাবিহা কি জয়েন করেছে?একটু দেখে
যাবে?বা ওর বাসা তো হসপিটালের
কাছেই গিয়ে দেখে আসবে ওর ‘ডাবিহা
ম্যাম’ কি করছে?নাহ্ এখন সাবিহার সাথে
দেখা করার মানে নেই,অনেক বিরক্ত
করতো ওকে।তাছাড়া ওরা একজন
আরেকজনকে দেখলে যদি দূর্বল
হয়ে যায়!! সাবিহার হসপিটালের পাশেই
ফুচকা ওয়ালাকে দেখে ওদের ফুচকা
খাওয়ার দৃশ্য মনে পরল।একদিন ওরা খাচ্ছিল
আর বরাবরের..
…………………………..চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here