গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ২০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমি যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলাম এতোবছর ‘তনয় ভাই’ মানুষটি দেখে। সে-ই’ মানুষটি যখন অন্যকারো হয়ে গেলো তখন বোধহয় আমার গোটা পৃথিবীটা-ই’ যেনো থমকে গিয়েছিলো। যাকে একসময় আমি খুব করে ভালোবাসতাম। খুব করে চাইতাম। তনয় ভাই মানুষটার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে-ই’ তো সেই সিলেট থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলাম। কখনো ভাবিনি জীবনের এই পর্যায়ে এসে, ‘তনয় ভাই’ নামক মানুষটির সাথে আবারো মুখোমুখি হতে হবে।
তনয় ভাইয়ের পিছন থেকে নিতিয়া ‘সারপ্রাইজ ‘ বলে আমার কাছে ছুটে এসে, আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“এইসময় তুই আমাকে এবং তনয় ভাইয়াকে আশা করিসনি তাইনা? হুম বুঝেছি। আসলে আমরা তোকে না জানিয়ে-ই’ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
আংকেল এন্ড আন্টিকেও আগে থেকে সব জানিয়ে রেখেছিলাম শুধুমাত্র তোকে ছাড়া। কেননা আমরা তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে এসে,তোর এই অবস্হার কথা শুনে
আমরা কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানিস? সত্যি তনয়া ভাইয়া ঠিক-ই’ বলে তুই সত্যি বেখায়ালী। ”
_____________
এদিকে,
জেনির ভয়ে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। জেনির বুঝতে বাকি রইলো নাহ রুদ্রিক সবকিছু-ই’ জানে।
রুদ্রিক জেনির দিকে এগিয়ে এসে বলে উঠলো,
“কি হলো ডার্লিং হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলে কেন?
আমাকে দেখে তুমি ভয় পাচ্ছো। হাও স্ট্রেঞ্জ! ”
জেনি কিছুটা ভিতুস্বরে বলল,
“আসলে তোমাকে এইসময় আমি আশা করিনি। তাই আর কি। ”
রুদ্রিক জেনির হাতদুটো চেপে ধরে বলে,
“আচ্ছা জেনি কাজলকে যখন পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ। তখন কোথায় ছিলে তুমি? ”
জেনি থমথমে গলায় বলে,
“আমজ আবার কোথায় থাকবো? তোমাদের সাথে-ই’ ছিলাম। ”
রুদ্রিক জেনির চুলের মুঠি ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
“একদম মিথ্যে বলবেনা জেনি। তুমি যদি ভেবে থাকো। মিথ্যে বলে আমার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে তাহলে তুমি সবথেকে বোকা। ইথানকে দিয়ে আমি সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করিয়েছি। যে ছোট ছেলে কাজলকে আমার নাম বলে ফার্স্ট ফ্লোরে নিয়ে গিয়েছিলো, সেই ছেলেকে খুঁজে বের করা হয়েছে। সেই ছেলে কার কথাতে এই কাজ করেছে জানো? তোমার কথাতে। ”
জেনি নিজের চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
“রুদ্রিক প্লিয আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এইসব কিচ্ছু জানিনা। ”
রুদ্রিক এইবার ঠাস করে জেনির গালে চর বসিয়ে দেয়। চরের তীব্রতা এতোটা-ই’ ছিলো যার জন্যে জেনির ঠোট বেয়ে ফিনকি রক্ত গড়িয়ে পড়ে।
জেনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রুদ্রিক জেনিকে ছেড়ে, চিৎকার করে বলে উঠে,
“একদম মিথ্যে বলবেনা জেনি। আগেরবার কাজলকে অপমান করেছিলে তখন তোমাকে ওয়ার্ন করেছিলাম,কিন্তু তুমি শুনোনি জেনি। তোমার জন্যে আমার কাজল এতোটা কষ্ট ভোগ করেছে। তোমাকে
আমি সহজে ছাড়বো নাহ। ”
রুদ্রিকের বলা ‘আমার কাজল ‘ শব্দটি এখনো কানে ভাজছে জেনির। রুদ্রিক আবারো চিৎকার করে বলে উঠে,
“এইবার তুমি দেখবে আমার কাজলকে কষ্ট দেওয়ার
কি ভয়ংকর শাস্তি হতে পারে। তোমার মডেলিং করার ইচ্ছে? ওকে ফাইন। তোমার গোটা মডেলিং ক্যারিয়ার আমি ডিস্ট্রয় করে দিবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে জেনি কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রিকরে পা ধরে বলে,
“দয়া করো রুদ্রিক প্লিয এমনটা করোনা। আমাকে দয়া করো। আমরা দরকার পরলে কাজলের কাছে ক্ষমা চাইবো। তবুও এমনটা করোনা। ”
রুদ্রিক জেনির কথা শুনে জোড়ে জোড়ে হেঁসে উঠে।
রুদ্রিক হাটু গেড়ে বসে জেনির গাল জোড়ে চেপে ধরে বলে,
“একদম আমার কাজলের আশেপাশে থাকার চেস্টা করবেনা। এইসব করার আগে তোমার ভাবার উচিৎ ছিলো। এইবার রাফসিন শেখ রুদ্রিকের ভয়ংকর রুপ দেখার জন্যে প্রস্তুত হও। তোমার গোটা জীবন নরক করে তুলবো মাইন্ড ইট।”
কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিকে জেনিকে ধাক্কা দিয়ে, গটগট করে বেড়িয়ে যায়। জেনি ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়।
_________
অন্যদিকে,,
আমি কিছুটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বাবা-মার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম। যার অর্থ তনয় ভাইয়ার এমন হঠাৎ আগমনের কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি নাহ।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কি এতো ভাবছিস মা? ”
আমি বাবার দিকে তাঁকিয়ে কিছুটা সংকচে নিয়ে বললাম,
“বাবা আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। মানে এখানে ঠিক কি হচ্ছে? ”
——“কাজলরেখা! আপাতত তুমি রেস্ট নাও। আস্তেধীরে সবকিছু জানতে-ই’ পাবে। ”
কথাটি বলে-ই’ তনয়া ভাইয়া এগিয়ে হাঁসলেন হাঁসিমুখে। ‘কাজলরেখা ‘ নাম শুনে বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
বাবা ও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ। মা তুই বরং রেস্ট নে।
বাসায় গিয়ে তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। ”
কথাটি বলে বাবা, মা ও ছুটকি বেড়িয়ে গেলো।
তনয় ভাই ও আমার দিকে খানিক্টা মিষ্টি হেঁসে নিতিয়ার সাথে চলে গেলেন।
আমার মাথা যেনো হ্যাং হয়ে আসছে। নিতিয়ার কথা অনুযায়ী তো তনয় ভাই তার স্ত্রী ও সন্তানের সাথে ভালো ছিলেন। তাহলে কিসের জন্যে উনি এখানে এলেন?
আমার ভাবনার মাঝে-ই’ সাদি ভাইয়া ও সিথি চলে আসলো। সিথি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,
“কাজল! আংকেল আন্টির সাথে একজন ভদ্র লোক ছিলো এবং একটা মেয়ে ছিলো। কারা তারা? তুই চিনিস তাদের? ”
আমি সিথির দিকে একপলক তাঁকিয়ে খানিক্টা দম নেওয়া গলায় বললাম,
“যদি বলি একসময় সেই ভদ্র লোককে আমি ভালোবাসতাম? ”
আমার কথা শুনে সাদি ভাইয়া ও সিথি যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
সাদি ভাইয়া খানিক্টা নিচু গলায় বললেন,
“এইসব কি বলছো কাজল?”
আমি ওদের দিকে তাঁকিয়ে স্থির চোখে তাঁকিয়ে বললাম,
“সবকিছু-ই’ সত্যি বলছি। জানতে চান আমার সেই বিষাদময় অতীত? তাহলে শুনুন।”
—“আমি সিলেটে মামা-মামির সাথে থাকতাম। সিলেটের এক কলেজে-ই’ পড়াশুনা করতাম আমি। কলেজে নিতিয়া ছিলো আমার বেস্টফ্রেন্ড। নিতিয়ার মামাতো ভাই ছিলো ‘তনয় ভাই’। নিতিয়াদের বাড়িতে গেলে-ই’ তনয় ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হতো। তখন তিনি সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করে একটি কম্পানিতে জয়েম করছিলেন। উনি ছিলেন যথেষ্ট স্মার্ট ও জ্ঞানী। সব বিষয়ে-ই’ উনার টুকটাক জ্ঞান ছিলো। যা আমার সবথেকে ভালো লাগতো। সময় পেরিয়ে গেলো। কখন যেনো নিজের অজান্তে-ই’ আমি তনয় ভাই নামক মানুষটাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিলাম,কিন্তু তনয় ভাইয়ের মনের খবর আমি জানতাম নাহ। তাই আমি ঠিক করলাম নিজের মনের কথা আমি ‘তনয় ভাই ‘কে জানিয়ে দিবো। আবেগের বয়স ছিলো তখন এতো ভেবে চিন্তা কিছু করেনি। কিন্তু প্রপোজ করার দিনে এমনভাবে সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন..
সবুজ রংয়ের শাড়ি পড়ে আয়নায় নিজেক্র খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলাম। তখনি আমার মামি এসে আমার থুতনিতে চুমু খেয়ে বললেন,
“কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে।”
আমি হেঁসে উঠি। আমার মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“বেস্ট অফ লাক মা! আল্লাহ যেনো তোর সব মনের ইচ্ছে পূরন করুক। ”
তনয় ভাইয়ার ব্যাপারে আমার মামা-মামি সবকিছু-ই’ জানতো। আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,
“দোয়া করো আমাকে।”
আমাদের কথার মাঝে-ই’ কলিং বেল বেজে উঠে।
মামি গিয়ে দরজা খুলে দেখে তনয় ভাই। সাথে একজন মেয়েও আছে।
আমি এগিয়ে আসলাম। তনয় ভাইয়ের সাথে অন্য একজন মেয়েকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম বটে।
তনয় ভাই এগিয়ে এসে বললে,
“কাজল মিট মাই ফিয়ন্সি তানিয়া।
আমরা একে-অপরের সাথে প্রায় ৩বছর ধরে রিলেশনশিপে ছিলাম। এতোদিন আমার জব ছিলো নাহ বলে আমরা বিয়েটা করতে পারছিলাম নাহ। এইবার আমরা ঠিক করেছি সামনে মাসে-ই’ বিয়েটা করে ফেলবো।”
কথাটি শুনে যেনো আমি থমকে গেলাম এক মুহুর্তের জন্যে।
তনয় কিছু একটা ইশারা করলো তানিয়াকে। তানিয়ে হাঁসিমুখে এসে কাজলের হাত একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“টেক ইট। আমাদের বিয়েতে কিন্তু তোমাকে আসতে-ই’ হবে। ”
______বর্তমানে,
অতীতের কথা মনে পড়তে-ই’ আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। সাদি ভাইয়া ও সিথি উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। আমি আবারোও দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
এদিকে,,,
রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের দিকে পা বাড়ায়। হাতে তার লাল টকটকে বেলী ফুল। কাজলর খুব পছন্দ। রুদ্রিক মুচকি হেঁসে কাজলের কেবিনের সামনে গিয়ে, এমন কিছু শুনে……
বাকীটা আগামী পর্বে…
চলবে কী?
(সারাদিন আজ বাসায় ছিলাম নাহ। ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনোরকম হাবিজাবি লিখেছি)