মেঘে ঢাকা চাঁদ পর্ব-৯

0
1271

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৯)
সায়লা সুলতানা লাকী

ইস্টিশনে গাড়ি আগে থেকেই রেডি ছিল। রেহেনা বেগম আগেই জানিয়েছিলেন যে নাজমুল সাহেব আসছেন এবার ওদের সাথে। তাই হিমেলের মামারা গাড়ি নিয়ে আগেই চলে এসেছিল তাদের রিসিভ করতে।

বাড়ি পৌঁছাতেই দেখল বাড়িতে বিরাট আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বছরের এই একদিন তাদের গ্রাম বাসীর হকের কথা মনে হয় আর তাই তা যথাসাধ্য চেষ্টা চলে পূরণ করার। এরপর আর সারাবছর গ্রামের আর কোন কথা মনে থাকে না। বিষয়টা লাবন্যের বরাবারই বিরক্ত লাগে। এর আগেরবার যখন এসেছিল তখন একটা ভাঙা সাঁকো দেখে বড় মামাকে বলেছিল গ্রামবাসীর হকের কথা যখন চিন্তা করছো তখন একবেলা এমন করে না খাইয়ে সে টাকায় এই সাঁকোটা ঠিক করে দাও। ওপাড়ের ছেলেমেয়েরা একটু শান্তিতে স্কুলে যেতে পারবে । বাচ্চাগুলো ভিজে এ পাড়ে এসে জামা পালটিয়ে পরে স্কুলে যায়। জিনিসটা কতটুকু প্যাথেটিক ভেবে দেখেছো?” উত্তরে মামা শুধু হেসে ছিল আর বলেছিল “রেশমা তোর মেয়েতো নেত্রী হবেরে বড় হয়ে।” ব্যস এইটুকুতেই শেষ আর কোন কথা বলেন নাই এই বিষয়ে। এরপর রেশমাই নিষেধ করেছিল লাবন্যকে গ্রামের কোন বিষয় নিয়ে কোন কথা না বলতে। তাই লাবন্যও বিশেষ কিছু আর বলে নাই।

সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসেছে একসাথে এরই মধ্যে ছোট মামি বলে উঠলেন “কি ব্যাপার এবার দেখি দুই বোন একসাথে আসছেন? বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না?”
হিমেল চেয়েছিল এই বিষয়টা নিয়ে কেউ কিছু যেন না বলে কিন্তু টের পেল সবাই এই বিষয়েই বেশি মজা পাচ্ছে। কেউ মিলিয়ে দিবে না তবে ঘি ঢালতে ভুল করবে না কেউ তা একেবারেই ক্লিয়ার। অবস্থা দেখে সবটা উপর আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিল, যা হয় তা দেখা যাবে। রেহেনা বেগম নিজেকে বেশ সংযত রাখার চেষ্টা করছেন যাতে নাজমুল সাহেবের সামনে কোন ঝামেলা না হয়। তাই আর এই কথার কোন উত্তর দিলেন না। ভিতরে চলে গেলেন তার বরের জন্য খাবারদাবারের ব্যবস্থা দেখার জন্য। রেশমা সবসময়ের মতোই বেশ চুপচাপ আছে। সবার অবাধ্য হয়ে বাসা ছাড়ার পর অনেক কষ্টে আবার বাসার সাথে নিজের যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে তাই নতুন করে আর কোন ঝামেলায় জড়ানোর সাহস পায় না। ওর ওই এক কাজের খেসারত এই বাসার মানুষ অনেক গুনেছে। সেই কথা মনে হলে এমনিতেই ও অনেক ছোট হয়ে যায় নিজের কাছে।
লাবন্য যতবার মায়ের সাথে এসেছে ততবারই সবার কটাক্ষ সহ্য করতে দেখেছে মা’কে। মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করেছে পরে মায়ের আদেশেই চুপ থাকে। নানি ইদানিং একটু নরম হয়েছেন, মাঝে মধ্যে রেশমাকে কাছে নিয়ে বসে সুখদুঃখের কথা বলেন আর শুনেন। এইটুকুই রেশমার জন্য মনে হয় অনেক বেশি পাওয়া হয়।

সকালের নাস্তার পর সবাই যে যার মতো করে কাজে লেগে গেল। রেশমাও নিজ থেকেই রান্নাঘরে ঢুকল যদিও জানে ওখানে রেহেনা বেগমও আছেন। নাজমুল সাহেব রৌশনের প্রশ্নবানে আটকা পড়লেন আর হিমেল মামাদের সাথে কাজে বাড়ির বাহিরে চলে গেল। লাবন্য সবসময়ের মতো মামাতো ভাইবোনদের সাথে গল্পগুজবে বসল।

দুপুরের আগে থেকেই মেহমানরা একে একে আসতে শুরু করল। গ্রামের মহিলারা বাড়ির ভেতরে এসে জড়ো হতে শুরু করল সাথে তাদের বাচ্চারাও। বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের ভীড়ে রেশমা সুযোগমতো সাথে আনা এক লাগেজ কাপড় চোপড় বিতরণ করল এতে কিছু আছে নতুন বাকি সব রৌশন আর লাবন্যের পুরানো কাপড় যা ছোট হয়েগেছে বা এক দুইবার পরে আর পরা হয় নাই। এটা ও যখনই আসে তখনই করে। এই বিষয়টাতে রেশমার মায়ের সাথে ও মিল খুঁজে পান ওর মা। তিনিও এক সময় এমনই করতেন। বাড়ি আসার সময় বাচ্চাদের বছরে জমা হওয়া পুরানো কাপড়গুলো বাড়িতে এনে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।

জুম্মার নামাজ শেষে খাওয়া দেওয়া শুরু হল। পুরুষরা সব বাড়ির বাহিরে খেতে বসল। আর বাড়ির ভিতরে মানে ঘর গুলোতে গ্রামের একটু গন্যমান্য ঘরের মহিলারা খেতে বসেছেন। এত মানুষের ঢল দেখে রীতিমতো শহর থেকে আসা মানুষগুলো এই এক দিনেই হিমশিম খেতে থাকে। ঘরের ভিতর মহিলাদের খাওয়ার অবস্থা দেখে লাবন্য বাহিরে বারান্দায় এসে বসল। তখনই চোখ পড়ল গ্রামের এই গরীব বাচ্চা আর মহিলাদের উপর। এরাই এসেছে সবার আগে কিন্তু এদের খাবার দেওয়ারই কোন খবর নাই। বাচ্চাগুলোর মুখ শুকিয়ে গেছে। হাতে পুরানো জামাকাপড় নিয়ে মলিন মুখে খাবারের আশায় বসে আছে, এটা দেখে লাবন্যের খুব মায়া হল। হঠাৎ কি হল নিজেই উঠে ওড়না পেচিয়ে কোমড়ে বেঁধে এই মানুষগুলোকে বাড়ির ভিতরে বসিয়ে দিল সারিবদ্ধ ভাবে এরপর বাহিরের ডেকোরেশনের থালা এনে নিজে একাই সবাইকে খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নিল। হিমেল খাবার নিতে বাড়ির ভিতের আসতে যেতে এই দৃশ্য দেখে মনে মনে অনেক খুশি হল। পুরুষদের খাওয়া শেষ হলে পরে এদেরকে বসানোর কথা ছিল। কিন্তু পুরুষের লাইন এত বড় যে কখন নাগাদ শেষ হবে তা বলা মুশকিল। বছরে একবারই যখন খাওয়ায় তখন আশেপাশের গ্রামের থেকেও আসে কেউ আর মিস করতে চায় না এই প্রোগ্রামটা। লাবন্যও মনে করেছিল ভিতরের এই কয়জন মহিলা আর বাচ্চাই বুঝি সদস্য, কিন্তু খাওয়াতে বসে দেখে সে সংখ্যা ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলছে। আর যেহেতু নিজ থেকেই শুরু করেছে তাই আর পিছিয়ে গেলো না। সম্পন্ন করার তাগিদেই কাজ করতে লাগল।
আসরের আযানের পরও চলল এই খানাপিনা। সব শেষ করে লাবন্য একেবারে ক্লান্ত হয়ে যখন বারান্দায় ধপাস করে বসল তখন রেশমা কাছে এসে আস্তে আস্তে বলল “আমার রাজকন্যা কি এখন খুব ক্লান্ত আর ক্ষুদার্ত? ”
“না তোমার রাজকন্যা এখন তৃপ্ত ও ভালোলাগায় পরিপূর্ণ। ” একটু হেসে লাবন্য উত্তর দিল।
“আমি কি কখনও কাউকে বলেছি, যে আমার মেয়েটা কোটিতে একটা। ”
“উঁহু, বলোনি, তুমি প্রচন্ড কৃপণ টাইপের মা। এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে এর আগে আর বের হয়নি।”

হয়েছে মা মেয়ের এত রংঢং, এবার আসো সবাই খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। বড় মামির ডাকে দুজনই উঠে ভিতরে চলে গেল খাওয়া দাওয়া করার জন্য।

সন্ধ্যায় সব উঠে গেল বড়মামার পাকাবাড়ির ছাঁদে। প্রতিটা রুমের যে অবস্থা তাতে বসার কোন উপায় নাই। তাই এখন রুমগুলা পরিস্কারের কাজ চলবে। ছাঁদে বড় করে বিছানা পাতা হয়েছে ওখানেই সবাই বসল। লাবন্যের মামাতো ভাইগুলো সব বড় বড়, কেউ চাকরি করছে কেউ ব্যবসা।বিয়ে করেছে শুধু একজন। ভাবি প্রেগন্যান্ট তাই তাদের বাবার বাড়িতে আছেন। দুইটা বোনের বিয়ে হয়েছে, তাদের একজন বর সহ এসেছেন সাথে দেবরও আছে। আরেকজন দুই দেবর নিয়ে এসেছেন। মিনু আপার বর খুব ব্যস্ত মানুষ তার শশুর বাড়ি আসার মতো সময় খুব কমই হয়। লাবন্যের নানি বলেন মিনু পেয়েছে ওর বড় ফুপুর ভাগ্য। কথাটা শুনেই লাবন্যের মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে এমন জীবন নিয়ে একটা মানুষ কীভাবে সুখের হাসি হাসতে পারে। বড় খালার জীবনটা ও খুব কাছ থেকে দেখেছে। সেখানে খালুজির কাছে তার কোন মূল্য আছে বলে মনে হয়নি। কখনও খালামনির কোন প্রশংসা তিনি করেছেন বলে শুনেনি। হয়তো খালামনি এইসব কষাঘাত সহ্য করতে করতে আজকের তিনি হয়েগেছেন রুক্ষমনের একজন।

ছাঁদে বোনদের দেবররাও এসেছেন, আর তাদের সাথে আনমেরিড কাজিনগুলো খুব দুষ্টুমি করছে।তাদের কাছে লাবন্য ছোট বাচ্চা তাই ও ওর মতো করেই এককোনে বসে রইল। এরই মধ্যে হিমেল আসল উপরে, আর ওকে দেখেই ছোটমামার মেয়ে তন্বী এগিয়ে আসল
” হিমেল ভাইকেতো আজ বড্ড মিস করছি, ভাই আসার পর থেকেই দেখছি চাচ্চুদের আর আব্বুর সাথে বাহিরে বাহিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছো। তুমি কি আমাদেরকে ভুলে গেলা নাকি?”

“নারে ভুলি নাই। যে কাজে আসছি তাতেই আগে মনোযোগ দিয়েছিলাম। এখন কাজ শেষ তাইতো তোদের ভীড়ে ফিরলাম।” বলে হিমেল লাবন্যকে একটু দেখে নিল।

“তা তুমি কবে যাচ্ছো হুমাপুর কাছে?”

“এখনও ঠিক করিনি” বলতে বলতে লাবন্যের দিকে এগিয়ে এল। লাবন্য চুপচাপ ইয়ারফোন কানে গুঁজে চোখ বন্ধ করে বসেছিল। সামনে এসে হিমেল কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে আবার বলল
“এটা রাখ তোর কাজে লাগবে।”
“কি এইটা?”

“ঔষধ ”
“ঔষধ দিয়ে কি করব?”
“একটু পরেই টের পাবি। তখন কোথায় খুঁজবি। তাই নিয়ে এলাম।”

“বাব্বা, হিমেল তুই দেখি লাবুর অনেক খেয়াল রাখিস।”বলতে বলতে মিনু এসে বসল লাবন্যের সামনে।

“আপা দেখেছো আজকে, ও একাই মনে হয় একশোর বেশি মানুষকে খায়িয়েছে। অবাক হলাম ওর এক্টিভেটিস দেখে।ও কবে এত স্ট্রং হল?”

“তা অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস, আজ দাদিও বারবার এই কথাই বলছিলেন। ”

“হুমম আম্মুওতো বলল রেশমার মেয়ের তেজ আছে বলতে হবে!” বলে তন্বী হিহিহি করে হেসে উঠল।

হিমেল লাবন্যের কপালে হাত দিয়ে একটু চেক করে ওর পাশে বসতে বসতে বলল
“হুমম তেজতো আছেই, না থাকলে এত বড় দায়িত্বটা কীভাবে পালন করল। সবাইতো আর সব পারে না। তেজতো আর সবার থাকে না। মানে তেজস্বীতো আর সবাই হয় না।”

“আরে কি করছো তুমি?”

“দেখলাম জ্বর আসছে কি না? আলহামদুলিল্লাহ এখনও আসে নাই। কিন্তু তুই এমন মনমরা হয়ে পড়ে আছিস কেন? বছরে এই একটা সময় আমরা সব কাজিন এক হই। সবার সাথে এনজয় কর। মুড অফ করে আছিস কেন?”

“টায়ার্ড লাগছে।”

“ওকে আমরাই তোর পাশে বসলাম সবাই মিলে আড্ডা দিতে।”
লাবন্য চুপ করে ইয়ারফোনটা নামিয়ে রাখল, ও জানে হিমেল ওর পাশে বসার সুন্দর ফন্দি এঁটেই এসেছে। এখন আর কেউ কোন খারাপ কিছু বলবে না। মনে মনে খুশিই হল তাতে কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

“আরে তোরা বুঝিস নাই, দেখছিস না কানে ইয়ারফোন লাগানো ছিল। নিশ্চয়ই কারউ সাথে কথা বলছিল। বয়সটাইতো এমন। নতুন নতুন ভার্সিটিতে ঢুকেছে চোখে এখন রঙিন চশমা, যা দেখছে তাই রঙিন।বুঝিস না কেন তোরা?” মিনু হাসতে হাসতে বলল।

“এই লাবন্য তুই কি প্রেম করছিস নাকি? তোরতো আমাদের মতো আটঘাট বাঁধা নাই। চাইলেই প্রেম করতে পারিস। কি সুন্দর জীবন তোর। তা করিস নাকি প্রেম ট্রেম। ছেলে কি করেরে? বল আমাদের একটু শুনি। বিশ্বাস কর কাউকেই বলবো না। ফুপিকেও না। যদিও ফুপি জানলে তোর জন্য তেমন কোন অসুবিধা হবে না। কারন সে নিজেইতো এই লাইনে হেঁটেছেন তাই তোকে নিশ্চয়ই বাঁধা দিবেন না।”
সবার কথা চুপচাপ শুনছিল লাবন্য, কারউ কোন কথার উত্তর দিবে না এমনটাই ইচ্ছা মনে।

“আচ্ছা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ছোট খালামনির বিষয়টা নিয়ে দেখছি সবাই একটু বেশিই রিয়েক্ট করে, কেউ মনে হয় বিষয়টাকে ভুলতেই পারে না। সবাই সব কথার মধ্যে খালামনিকে একট খোঁচা দিয়ে তবেই থামে। কিন্তু এর কারনটা কি আমি তাই আজও আবদি বুঝতে পারিনাই। প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে যে কাউকে ভালো লাগতেই পারে, পছন্দ হতেই পারে। নিজের জীবন সঙ্গী নিজে পছন্দ করাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু না। জীবন সঙ্গী পছন্দ করার রাইট আমাদের ধর্মও আমাদেরকে দেয় তবে কেন এত ঝামেলা করে সমাজ সংসার?”

“ভাইরে যত সহজভাবে বললি বিষয়টা তত সহজ না। জীবন সঙ্গী পছন্দ আর বংশের মুখে চুনকালি মেখে পালিয়ে যাওয়া দুইটা এক কথা না। ফুপু পালিয়ে গিয়ে সবার নাক কেটে ছিলেন। তার এই কাজের খেসারত আমরা দিয়েছি প্রতি পদে পদে। উঠতে মানা, বসতে মানা।কারউ সাথে কথা বলতে মানা। ভার্সিটিতে পড়তে মানা।আরও যে কত কি তা আর কি বলব! ”

“কিন্তু একটা সময় পর যখন নানানানি বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন তখন অন্যদেরও সহজভাবে মেনে নেওয়া উচিৎ ছিল।”

“দাদা মেনে নেয়নি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আর দাদি মেনে নিয়েছে ধর্মীয় অযুহাতে। বাবা মায়ের অমতে বিয়ে সম্পন্ন হয় না।ফুপুর বিয়েটা জায়েজ করার জন্যই দাদি মেনে নিয়েছেন। তেমনটাই আম্মু বলেছেন।”

“মেয়ের অমতে বিয়ে দেওয়াটাওতো জায়েজ না।”

হুমম, এই পরিবারে বিয়ের আগে আমাদের মতামত নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ফুপুরও নেওয়া হত নিশ্চয়ই। তখন ফুপু তার ইচ্ছের কথা বলতে পারতেন কিন্তু এভাবে পালিয়ে—–

“খালামনি ভালো বলতে পারবেন আসল কারন টা কি? কেন সে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। হয়ত তার সে রকম মনের জোর ছিলো না বড় ভাইদের সাথে ফেইস করার বাবার সাথে ফেইস করার।”

“বাদ দে পুরোনো কথা। এখন বল লাবন্য তোর কথা বল। তোর খবর কি? ”

“আমার কোন খবর নাই। কি বলব আপা?”

“আরে ভয় পাচ্ছিস নাকি? ” বলে হি হিহি করে হেসে উঠল তন্বী।

“আমি ভয় পাই না৷ ভয় আমাকে ভয় পায়। আমি ভীরুদের দলের না। এমন কোন পরিস্থিতি হলে নিজেই নিজের পেরেনটসকে ম্যানেজ করে নিব। পালাবো কেন?”

“কিন্তু তোর পালানো উচিৎ তবেই ফুপু তার ভুলটা বুঝতে পারবে।”

“আহ ভাবি ! বাদ দেন এসব কথা। আপনার এই সুন্দরী বোনকে এই প্রথম দেখলাম তার সাথেও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। তার লাবন্যতায় মুগ্ধ সাথে সাহসিকতায় একেবারে ফিদা হয়ে গেলাম বলে একজন হেসে উঠল।

লাবন্যের এমন কমেন্টে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। সে চুপচাপ বসে হিমেলকে দেখছে। হিমেল চোয়াল শক্ত করে বসে আছে। চেহারা দেখে মনে হল ওর ইচ্ছে করছে এক ঘুষি মেরে লোকটার হাসি বন্ধ করে দিবে এখনই।

রেহেনা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে নাজমুল সাহেবকে খুঁজছেন তখনই রেশমা সামনে এসে দাঁড়ালো।
“আপা তুমি কি দুলাভাইকে খুঁজছো? দুলাভাই বাহিরে বড় ভাইয়ার সাথে বসে আছেন। তুমি দাঁড়াও আমি ডেকে দেই।”

” দেখ তোর সাথে কোনরকম ঝামেলায় আমি যেতে চাই না। হুমার বাবা এই প্রথম এখানে এসেছেন তার সামনেতো আরও চাই না কোন ঝামেলা হোক। তাই বলছি, সাবধান ওর সামনে কখনোই যাবি না। ও তোকে সহ্য করতে পারে না।এই ভুলটা করিস না কখনও । জীবনেতো আর ভুল কম করলি না। এবার একটু শুধরেনে নিজেকে, নাহলে সামনের দিনগুলোতে পস্তাবি।”

“বুঝলাম না আপা? দুলাভাইয়ের কেন আমাকে অসহ্য লাগবে? আমিতো তার কোন ক্ষতি করিনাই। দুলাভাই আমার বিয়ের আগে আমাকে কত আদর করতেন। অথচ বিয়ের পর এখন আমাকে চেনেই না এমন একটা ভাব নিয়ে থাকেন । আসলে সমস্যাটা যে কোথায় তাই বুঝলাম না। তোমরা আমাকে ক্ষমা করতে পারোনাই তাই এখন দুলাভাইও এমন করে। ”

“তুই নিজেই যখন সমস্যা তখন অন্য কোন সমস্যা আলাদা করে আর কি বুঝবি?”

“আপা আমি লিখনকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি। তুমি জানো আমার এই সম্পর্ককে বাসার কেউ মেনে নিতো না। আর আমিও ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারতাম না। তাই বাসা থেকে বের হয়ে আসা ছাড়া আর কোন পথই খুঁজে পাইনি সেদিন।”

“শুধু নিজেরটাই ভেবেছিলি, তোর এই ডিসিশনের পর কি ঘটতে পারে তা একবারও ভাববার ইচ্ছে হয় নাই তোর? ”

আপা বিশ্বাস কর, আমার তখন এত কিছু ভাবার মতো মন-মানসিকতা ছিল না। আমি তখন ভালোবাসার ঘোরে ছিলাম। আমার এভাবে চলে আসার খবরে আব্বা যে স্ট্রোক করবে তা বুঝতে পারি নাই। বুঝলে নিশ্চিয়ই আমি এমন করতাম না। আপা আমাকে ছোট বোন বলেই নাহয় একটু দয়া কর, প্লিজ আপা একটু দয়া কর।আমাকে ক্ষমা করে দাও।বলেই কেঁদে ফেলল রেশমা।

“শুধু কি স্ট্রোক, তুই আরও কত কি ঘটিয়েছিস জানিস? দয়ার কথা বলছিস? আমি তোকে দয়া করিনাই তো কে করেছে শুনি? হুমার বাবা তোকে দয়া করে নাই তো কে করেছে? আমাদের দয়াতেইতো তুই সংসার করে খাচ্ছিস, আবার নতুন করে কিসের দয়া চাস? তোকে করার মতো আর কোন দয়া আমার অবশিষ্ট নাই। সেদিন যদি দয়া না করতাম তবে খুনের দায়ে তোকে জেল ফাঁস দিতে চাইতাম।”
“খুন? আপা কি বলছো তুমি? কাকে খুন করেছি আমি? ” রেশমা হঠাৎ করেই চমকে উঠল খুনের কথা শুনে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here